আমার গার্লফ্রেন্ড রুপা খুব চালাক ছিলো এবং খুবই কিপটে ছিলো,৩ বছরের রিলেশনে আমাকে ১ টা সুতাও দেয় নি গিফট।একসময় আমি তার চালাকি বুঝতেই পারতাম না। না,ভুল বলছি,কখনোই তার চালাকি আমি বুঝতে পারি নি। সে আমার কাছে কখনো কিছু সরাসরি চাইতো না।কিন্তু তার উপস্থাপন ছিলো অনেক ড্রামাটিক।আচ্ছা বুঝিয়েই বলি আপনাদেরকে।
ধরুন তার একটা ড্রেস পছন্দ হলো,সে কিন্তু আমাকে বলবে না নিরব,আমাকে এই ড্রেস টা কিনে দাও। উহু,নিজের দাম সে কমাবে না। সে তখন আমার পাশে বসবে,বসে অনেকক্ষণ অনেক ধরনের মজার গল্প বলবে,রুপা আবার রেগুলার বল্টুর জোক্স পড়ে,তাই তার কাছে হাসির গল্পের অভাব হয় না। তারপর আমাদের রিলেশন যে কি পরিমাণ সুন্দর ভাবে চলতেছে সেই কথা আমাকে বুঝাবে,অন্যদের রিলেশনে ঝগড়া হয়,রাগারাগি হয় অথচ আমি অতি মাত্রায় ভালো বলেই আমাদের রিলেশন নির্বিঘ্নে চলতেছে,প্রসংশা শুনে তো আমার বুকের ছাতি আরো ৪ ইঞ্চি বেড়ে যেতো। তারপর কৌশলে বলবে,জানো আমার বান্ধুবী মিলিকে তো জানো তুমি,নাম শুনছো না আমার কাছে??
আমিঃ না মনে করতে পারতেছি না,আচ্ছা বলো কি হইছে তার।
রুপাঃ ওর বফ আছে না,মানে কি বলবো উনি এতো বেশী পাগল মিলির জন্য,ধরো রাত ১২ টা বাজে,মিলি যদি বলে যে এখন সকাল ৯ টা উনি তাই বলবে যে অবশ্যই এখন সকাল ৯টা,দেখো কি সুন্দর রোদ উঠছে,আমার তো খুব গরম ও লাগতেছে মিলি। আবার ধরো মিলি একটা গরু দেখিয়ে বললো,রাতুল ওটা কি ছাগল??? উনি বলবে,হ্যাঁ ছাগলই তো,দেখো ছাগলের ২ টা বাচ্ছা দুধ খাচ্ছে ৩ নাম্বার বাচ্চা টা অকারণে লাফাচ্ছে।
ধরো এখন পৌষ মাস অনেক শীত, কিন্তু মিলি বললো,কি ব্যাপার বলো তো,চৈত্র মাস কি শুরু হয়ে গেলো নাকি,গরম লাগছে কেনো,রাতুল ভাই বলবে,সঠিক কথা বলেছো তুমি,আমার তো ঘামে শার্ট ভিজে গেছে,আমি তো ফ্লোরে শুয়ে আছি গরমে,বিয়ের আগেই রুমে এসি লাগিয়ে নিবো,তুমি তো গরম সহ্য করতে পারবে না আমার একটা মাত্র বৌ তুমি। তবে যতো যাই করুক না কেনো,তোমার মতো কিছুতেই হতে পারবে না।তোমার মতো ভালো মানুষ হওয়া কি চাট্টিখানি কথা??? আমার সাত জন্মের ভাগ্য তোমাকে পেয়েছি। মিলির সাথে আজকে আসার সময় দেখা,তো আমাকে দেখিয়ে বললো দেখ রাতুল আমার জন্য কি সুন্দর ২ টা ড্রেস নিয়ে এসেছে,এতো পাগল ছেলেটা, আমাকে বলা নেই কওয়া নেই ড্রেস নিয়ে হাজির,কি সব পাগলামি যে করে ও।
আমিও কি কম নাকি,আমিও বলে এসেছি যে নিরব আমাকে আরো বেশী দেয়,তোর রাতুল ২ টা দিছে নিরব হলে ৪টা ছাড়া নিতোই না ড্রেস। তুমি ভাবতে পারো,ও কি পরিমাণ শো অফ করে রাতুলকে নিয়ে।মনে হচ্ছে যেনো ওর বয়ফ্রেন্ডই ওরে ভালোবাসে দুনিয়ার আর কেউ তার গার্লফ্রেন্ডকে ভালোবাসে না। ভাবখানা এমন যেনো তুমি কিনতেই পারবে না কখনো। এই কথার পরে কি আর আমার বসে থাকা মানায়,আপনারাই বলুন???
আমিঃ চলো তো আজ আমিও কিনে দিবো তোমাকে।মিলি তো বুঝে নাই রাতুলের চাইতে ও বেশী ভালোবাসতে পারে নিরব।
রুপাঃ না না দরকার নাই, কি বলো।আমার তো লাগবেই না ড্রেস বাদ দাও ( উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো)
আমিঃ না আজ কিনে দিতেই হবে তোমাকে,অতঃপর ৪ টা ড্রেস,১ টা শাড়ি কিনে আমার মানিব্যাগের দফা রফা হয়ে গেলো।
এভাবেই দিন যাচ্ছিলো,আমি আবুল কিন্তু বুঝতেই পারলাম না ওর সুক্ষ্ম চাল গুলো। দিন কেটে যাচ্ছে আমিও আব্বার ক্যাশের টাকা চুরি করে করে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছি। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে,ওর একটা বান্ধবীর সাথে দেখা হলো একদিন। তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে রুপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। আগামী পরশু ওর গায়ে হলুদ।তারপরের দিন বিয়ে। অথচ রুপা আমকে কিছুই বলে নি। রাগে তখন আমার মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করতেছে।কিন্তু এভাবে রেগে গেলে তো হবে না। ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। ভাবতে ভাবতেই রুপার ফোন।
আমিঃ হ্যাঁ রুপা বলো।
রুপাঃ এক্ষুনি নিউমার্কেট আসো তো,আমার একটা ফ্রেন্ডের গায়ে হলুদে যাবো,আমার কিছু কেনাকাটা করা লাগবে।তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো কেনাকাটা করতে।
আমিঃ আচ্ছা আসো,আমি আসতেছি।
এবার আমার মোটা মাথা কাজ করতে শুরু করলো,রুপা কি ভেবেছে ওর গায়ে হলুদের কেনাকাটা ও আমার টাকায় করবে??? উহু এবার ওরে একট শিক্ষা দেওয়া যাবে,একেবারে উচিৎ শিক্ষা। নিউমার্কেট যাওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় রুপাও চলে এলো।
রুপাঃ চলো,তো অনেক জিনিসপত্র কেনা লাগবে
আমিঃ তোমার বান্ধুবীর হলুদ,তোমার কি এতো কেনাকাটার দরকার??.একটা শাড়ি হলেই তো হয়।
রুপাঃ বুঝতেছো না তুমি,পরে বুঝিয়ে বলবো,এখন আগে কিনতে দাও।
আমিঃ চলো,আমার ও কয়েকটা জিনিস কিনা লাগবে,তোমার যা যা লাগবে নাও। রুপা বুঝে গেছে,আমাকে মুরগী বানাতে পেরেছে,শাড়ি,চুড়ি,গায়ে হলুদের গয়না,অনেক কিছুই নিলো রুপা,আমিও কম কিসের,৩ টা পাঞ্জাবি,২টা শার্ট,৫টা টি-শার্ট,২টা প্যান্ট,পারফিউম,জেল,কুতা সবই নিলাম। রুপা যখন ক্যাশের দিকে আসতে নিলো,আমিও তখন পকেট থেকে ফোন বের করে,ব্যস্ত ভংগিতে কথা বলা শুরু করলাম,
~কি বল্লেন,এক্সিডেন্ট????
ও মাই গড কিভাবে??? কোন হাসপাতালে আছেন এখন,হ্যাঁ হ্যাঁ আমি এক্ষুনি আসতেছি। রুপাঃ কি হলো কার এক্সিডেন্ট হইছে??? আমি শপিং ব্যাগ গুলো শক্ত করে ধরে রেখে বল্লাম,রুপা আমাকে এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে,তাড়াতাড়ি আমাকে ৫ হাজার টাকা দাও প্লিজ,আমার খুব কাছের এক বন্ধুর এক্সিডেন্ট হইছে,রুপা হতভম্ব হয়ে ৫০০০ টাকা বের করে দিলো।যেহেতু আমি কখনো চালাকি করি নি,কিছুটা বোকাসোকা আমি তা রুপাও জানে,একজন আদর্শ বয়ফ্রেন্ডের সব গুন আমার মাঝে বিদ্যমান আমাকে সন্দেহ করার কোনো চান্সই রুপার নাই।
শপিং ব্যাগ গুলো আর ৫০০০টাকা নিয়ে বের হয়ে এলাম। আজকে প্রচুর শান্তি লাগতেছে। রুপা কে কল দিয়ে বল্লাম,”তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা রইলো রুপা,আমি তো তোমার খুব ভদ্র বয়ফ্রেন্ড ছিলাম,তাই তোমাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলতে পারি নি,এতোদিন আমার ওয়ালেটের সাথে যেই অত্যাচার করছো তুমি কৌশলে আজ কৌশলে আমিও তার শোধ নিলাম,শোধবোধ হয়ে গেছে আজ,ভালো থাকিও” রুপার নাম্বার টা ব্লকলিস্টে দিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে গেলাম,ধান্ধাবাজি টা আজ সেলিব্রেট করাই লাগবে।