স্নেহার মৃত আইডির সাথে সাফির ঘটে যাওয়া পূর্বের ঘটনা সুপ্তিকে খুলে বলল নিলয়। সুপ্তির বুঝতে বাকি রইল না সাফির সাথে যেটা হচ্ছে সেটা কোন ভাবেই স্বাভাবিক নয়। কোন এক কারণে স্নেহার আত্মা তানভীরের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। আর সেই প্রতিশোধের রেশানলে সাফি প্রতিনিয়িত স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে! কিন্তু, স্নেহার সাথে কি এমন হয়েছিল? যার প্রতিশোধ নিতে স্নেহার আত্মা এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে! নিলয় কে উদ্দেশ্য করে সুপ্তি বলল;
— ভাইয়া, স্নেহার ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন? নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল;
— তেমন কিছুই জানি না! তবে সুপ্তি আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল;
— তবে কি ভাইয়া? সাফি কিছুক্ষণ ভেবে বলল;
— স্নেহা ছিল সাফির গার্লফ্রেন্ড!
নিলয়ের কথা শুনে সুপ্তির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল! পূর্বে সাফির কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল সুপ্তির তা জানা ছিল না৷ কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য সুপ্তি যেন স্তব্ধ হয়ে রইল। নিজেকে সামলে সুপ্তি বলল;
— সাফি আমাকে কখনোই সুপ্তির ব্যাপারে কিছু বলেনি। পূর্বে তার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল! সেটাও সে আমায় বলেনি। নিলয় বুঝতে পারল সুপ্তি কথাটা শুনে বেশ কষ্ট পেয়েছে। সুপ্তিকে সান্ত্বনা দেয়ার মত ভাষা নিলয় খুঁজে পেল না! তবুও বলল;
— দেখ! যা হবার তা তো হয়েই গেছে৷ এসব ভেবে কষ্ট পেও না। স্নেহার সাথে সাফির পরিচয় ভার্চুয়ালে হয়েছিল। তারপর সম্পর্কে জড়ায়! সুপ্তির চোখের কোণে জল জমেছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না৷ যাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সে কিনা! কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে সুপ্তি বলল;
— ভাইয়া, স্নেহার সাথে সাফির সম্পর্কের ব্যাপারটি হয়তো অতিত হয়ে গেছে। কিন্তু, স্নেহার আত্মহত্যার পিছনে নিশ্চই কোন কারণ লুকিয়ে আছে। আর তার জন্যই তার আত্মা এতটা বিভিৎস হয়ে উঠেছে! নিলয় সুপ্তির কথায় একমত পোষন করে বলল;
— হতে পারে। কিন্তু, তানভীরের এহেন ভয়ঙ্কর আত্মহত্যার পিছনে কি স্নেহার আত্মা জড়িত?
— জড়িত কিনা সেটা তখন জানতে পারব যখন আমরা সত্যিটা জানতে পারব। স্নেহার সাথে কি এমন হয়েছিল যার জন্য তাকে আত্মহত্যা করতে হলো! নিলয় কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলল;
— কিন্তু আমরা সত্যিটা জানব কিভাবে? সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বলল;
— আমার মনে হচ্ছে স্নেহার মৃত্যুর পিছনে সাফির ও হাত আছে। নয়তো, স্নেহার কথা শুনলে সাফি আতঙ্কিত হবে কেনো? সুপ্তির কথা শেষ হতেই নিলয় বলল;
— সাফি তো স্নেহাকে ভালোবাসত। তাহলে স্নেহার মৃত্যুর কারণ সাফি কিভাবে হবে? সুপ্তি কিছুটা রূঢ় কণ্ঠে বলল;
— সেটা সাফিই ভালো বলতে পারবে! স্নেহার আত্মহত্যার আড়ালে লুকায়িত সত্যিটা আমাদের জানতেই হবে! আপনি শুধু আমাকে একটু হেল্প করবেন। নিলয় জিজ্ঞেস করল;
— কি হেল্প?
— আজ বিকেলে আপনি আমার সাথে সাফিদের বাসায় যাবেন। সত্যিটা আমরা সাফির মুখ থেকেই জানব!
— কিন্তু, ও কি আমাদের সত্যিটা বলতে চাইবে? নিলয়ের কথা শুনে সুপ্তি মৃদু হাসি দিয়ে বলল;
— বলবে না কেনো? তাকে যে বলতেই হবে! কেনো সে স্নেহার নাম শুনলে ভয়ে আতকে উঠে?
নিলয়ের সাথে কথা শেষে সুপ্তি বাসায় চলে গেল। স্নেহার আত্মহত্যার পিছনে বড় কোন কারণ আছে সেটা বুঝতে তার বেগ পেতে হল না। কিন্তু, তানভীর কি করেছিল? সে কেনই বা এতটা নৃশংস ভাবে আত্মহত্যা করল? বিকেলে নিলয় কে সাথে নিয়ে সুপ্তি পৌছে গেল সাফিদের বাসায়৷ সাফির আম্মু দু’জন কে দেখে বেশ খুশিই হলো। নিলয় বেশ কিছুদিন পর সাফিদের বাসায় এসেছে। কিন্তু, সুপ্তি প্রায় আসে সাফিকে দেখতে। কিছুক্ষণ তারা সাফির আম্মুর সাথে কথা বলে সাফির রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ভিতর থেকে সাফির রুমের দরজা লক করা। সুপ্তি দরজায় কড়া নাড়লো৷ কিন্তু, সাফি দরজা খুলছে না৷ ঘুমিয়ে আছে ভেবে সুপ্তি ডাক দিল;
— সাফি! সাফি দরজা খোল! তবুও সাফি দরজা খুলছে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সুপ্তি পুনরায় ডাক দিল;
— সাফি! আমি সুপ্তি। দরজা খোল!
ভিতর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ এলো। দরজা খুলতে সাফি চিৎকার দিয়ে বলল;
— স্নেহা! তুমি একদম ভিতরে আসবে না। চলে যাও এখান থেকে!
সাফি ভয়ে কাঁপতে লাগল। দৌড়ে রুমের কোণায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে রইল। সুপ্তি রুমের ভিতিরে এগিয়ে গেল৷ পিছন পিছন নিলয় ও আসল। পুরো রুমটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। রুমের সব জানালা বন্ধ৷ সুপ্তি লাইটের সুইচ দিতেই বাতি জ্বলে উঠল।
সাফি কিছুতেই লাইটের আলো সহ্য করতে পারছে না। চোখের সামনে দু’হাত ধরে রেখেছে৷ নিলয় এগিয়ে গিয়ে বলল;
— আরে! ভয় পাচ্ছিস কেনো? আমি নিলয়। দেখ! সুপ্তিও এসেছে সাফি চোখের সামনে থেকে দু’হাত সরিয়ে দেখল। হ্যা, তার সামনে সুপ্তিই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু শুধু স্নেহা ভেবে ভয়ে সে গুটিসুটি মেরে আছে। আকস্মিক হাসি দিয়ে সাফি বলল;
— সুপ্তি! তুমি কখন আসলে? সুপ্তি এগিয়ে এসে বলল;
— এইতো একটু আগেই এসেছি৷ সাফি উঠে বিছানায় বসে দু’জন কে বসতে বলল। সাফির ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। নিলয় দাঁড়িয়ে রইল। সাফির কাছে বসে সুপ্তি জিজ্ঞেস করল;
— আচ্ছা! তুমি আমাকে দেখে স্নেহা বলে চিৎকার দাও কেনো? যখন-ই আসি তখনি তুমি এমন কর। কিন্তু, কেনো? সাফি মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। নিলয় বুঝতে পারল সাফির কাছে এর উত্তর নেই! তাই সাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল;
— সাফি, স্নেহা দু’বছর পূর্বে মারা গেছে৷ তার কোন অস্তিত্ব নেই! তুই কেনো স্নেহার কথা বলে চিৎকার করিস? সুপ্তির দু’হাত জড়িয়ে ধরে সাফি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। বাচ্চাদের মত কাঁদতে দেখে সাফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সুপ্তি জিজ্ঞেস করল;
— সাফি! কাঁদছ কেনো? কি হয়েছে বল আমায়! কান্না জড়িত কন্ঠে সাফি বলল;
— ও আমাকে বাঁচতে দিবে না সুপ্তি! আমাকে মেরে ফেলবে! নিলয়ের দিকে সুপ্তি তাকাল৷ ইশারা, দিয়ে নিলয় কে জিজ্ঞেস করতে বলল কে সে? নিলয় জিজ্ঞেস করল;
— সাফি, কে তোকে বাঁচতে দিবে না? কে তোকে মেরে ফেলতে চায়? সাফির কান্না যেন কিছুতেই থামছে না৷ সাফির হাত শক্ত করে ধরে সুপ্তি বলল;
— কেউ তোমাকে মারতে পারবে না। আমি আছি তো! শুধু বল কে তোমাকে মারতে চায়? সাফি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল;
— স্নেহা! স্নেহা আমাকে বাঁচতে দিবে না৷ ও আমাকে মেরে ফেলবে… নিলয় জিজ্ঞেস করল;
— স্নেহা তোকে মারবে কিভাবে? ও তো অনেক আগেই আত্মহত্যা করেছে!
সাফি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইল। এখন আর কাঁদছে না। কিন্তু দু’চোখ বেয়ে পানি পরছে। সুপ্তির দিকে তাকিয়ে সাফি বলল;
— জানো সুপ্তি! স্নেহার আত্মা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। আমাকে ও বাঁচতে দিবে না!
সুপ্তি বলল;
— সাফি, আজ তুমি আমাদের সত্যিটা বলবে! স্নেহা কেনো তোমাকে মারতে চায়? আর কি কারণে স্নেহা আত্মহত্যা করল? সাফি কিছু বলছে না। নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে নিলয় বলল;
— আমরা কাউকে কিছু বলব না। তুই আমাদের সত্যিটা বল! সুপ্তির দু’হাত চেপে ধরে সাফি বলল;
— আমি তোমাদের আজ সব বলল। কিন্তু, তার আগে তুমি কথা দাও সত্যিটা জানার পর আমাকে কখনো একা রেখে চলে যাবে না!
— আচ্ছা ঠিক আছে। কথা দিলাম তোমাকে কখনো ছেড়ে যাব না!
সুপ্তির কথা শুনে সাফি বলতে লাগল; স্নেহার সাথে আমার পরিচয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। আমি তখন শখের বসে জনপ্রিয় গানগুলো কভার করতাম । একদিন তানভীর বলল; ” আরে দোস্ত, তুই তো ভালই কভার করিস। তোর কভার করা গানগুলো ভিডিও করে যদি তোর আইডিতে দিস মন্দ হবে না! “। তানভীরের কথা শুনে আমি কভার করা গানগুলো তানভীর কে দিয়ে ভিডিও করি। তারপর সেই ভিডিও ফেইসবুক আইডি তে আপলোড করি!
আপলোড করা প্রথম গানটি সবার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেল। ভিডিও অনেক শেয়ার হলো। প্রতিনিয়ত রিকুয়েষ্ট আসতে লাগল৷ এভাবেই আমি কভার করা গানগুলো তানভীর কে দিয়ে ভিডিও করে আপলোড করতে থাকি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভার্চুয়ালে কভার করা ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। প্রতিদিন ইনবক্সে শুভেচ্ছা বার্তা আসত। একদিন ” মায়াবতী স্নেহা ” নামের আইডি থেকে মেসেজ রিকুয়েষ্ট আসে৷ প্রোফাইল ঘুরে ভালো লাগায় রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করি। শুরু হয় কথা বলা।
অপরিচিত মেয়েদের সাথে কথা বলে টাইম পাস করতাম। কিছুদিন আলাপচারিতা শেষে প্রপোজ করত। আমিও একসেপ্ট করে টাইম পাস করতাম। এত কিছুর মাঝেও মায়াবতী স্নেহার সাথে আমার কথা হত৷ আস্তে আস্তে স্নেহাও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। অনেক চেষ্টা করত আমাকে বোঝানোর জন্য সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি বুঝেও না বুঝার ভান করতাম। তানভীরের সাথে সব শেয়ার করতাম। প্রতিদিন কয়টা প্রপোজ পেয়েছি তা বলে দু’জনেই তামাশা করতাম। তানভীর বলত ভার্চুয়ালে কোন মেয়ের সাথে সিরিয়াস রিলেশনশিপে না যেতে। ও আমাকে বুঝাত, ভার্চুয়াল শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ! অনলাইনে স্নেহার সাথে তানভীর কে পরিচয় করিয়ে দিলাম বন্ধু পরিচয় দিয়ে। তানভীরের সাথে স্নেহার চ্যাট হত। তানভীর কে সে ভাইয়া বলে ডাকত। প্রতিদিন আমার সাথে যেসব নিয়ে চ্যাট হত তা স্নেহা তানভীরের সাথে শেয়ার করত। তানভীর এসে আমাকে সব বলত।
অনেক চেষ্টা করেও স্নেহা যখন আমাকে বোঝাতে ব্যর্থ হলো সে আমাকে ভালোবাসে। তখন, তানভীরের শরনাপন্ন হল। স্নেহা তানভীরকে খুব বিশ্বাস করত৷ নিজের আপন কোন ভাই ছিল না বলে তানভীরকে বড় ভাইয়ের মত ভাবত। তানভীর কে বলল স্নেহা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা কিছুতেই বলতে পারছে না! তানভীরের কাছে তাই হেল্প চাইল। সেদিন তানভীর এসে আমাকে সব খুলে বলল। আমি প্রথমে রাজী হলাম না। তানভীর বলল; ” দোস্ত, সেই একটা মাল! টাইম পাস কর মজা পাবি “। অবশেষে তানভীরের কথায় রাজী হলাম। শুরু হলো আমাদের ভার্চুয়াল রিলেশন!
সারদিন স্নেহার সাথে চ্যাট করতাম। বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমাকে বড্ড বেশিই ভালোবাসে! কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি না। আমি শুধু টাইমপাস করতাম। সেটা স্নেহা কখনোই বুঝতে পারেনি! আমাকে অন্ধ বিশ্বাস করত। তাই আইডির পাসওয়ার্ড ও নিয়ে নিলাম। মাঝে মাঝে স্নেহার আইডিতে লগইন করে এক্টিভিটি দেখতাম। তানভীর আর আমার সাথে ছাড়া কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলত না! বড্ড বেশি ভালোবাসত আমাকে। এতটুকু বলে সাফি নিশ্চুপ হয়ে রইল। সুপ্তি, নিলয় দু’জনেই মনযোগ দিয়ে শুনছিল। কিন্তু, সাফির আকস্মিক নিশ্চুপ হয়ে যাওয়াতে দু’জনের মনযোগে ছেদ পরল। সুপ্তি কৌতুহলী হয়ে বলল;
— চুপ হয়ে গেলে কেনো? বল!
সাফি পুনরায় বলতে লাগল; ভার্চুয়ালে রিলেশনে শুধু চ্যাট করে মজা নেই বুঝতে পারলাম। একসময় চ্যাট করার প্রতি বিরক্তি চলে আসে। কিন্তু, স্নেহার সারা দিন-রাত চ্যাট করলেও যেন বিরক্তি আসত না। তানভীর কে বললাম আমি আর স্নেহার সাথে সম্পর্ক রাখব না। কারণ জানতে চাইলে বললাম চ্যাট করার প্রতি বিরক্তির কথা। তানভীর আমাকে ভার্চুয়াল রিলেশনে টুইস্ট আনার জন্য নূড পিক, সেক্স চ্যাট করার কথা বলল। আমিও ওর কথামত স্নেহার সাথে এসব করার আগ্রহ দেখালাম! প্রথম প্রথম স্নেহা রাজী হত না। বলত আনইজি লাগে। তবুও ভালোবাসে তাই বাধ্য হলো। শুরু হলো ভার্চুয়াল রিলেশনের টুইস্টিং রিলেশনশিপ। ঠিক তখনি তানভীর বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে স্নেহা সাথে কথা বলা শুরু করে। স্নেহা ও কোন কিছু না ভেবেই তানভীরের সাথে শেয়ার করত আমাদের সাথে কি চ্যাট হত।
এভাবেই কেটে গেল কয়েক মাস। শুধু ভার্চুয়ালেই স্নেহার সাথে চ্যাট, ভিডিও কলে কথা বলে সন্তুষ্ট থাকতে পারলাম না। তানভীর কে বললাম স্নেহার সাথে আর ভার্চুয়ালে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। কোনভাবে দেখা করা যায় কিনা। তানভীর বলল; ” স্নেহা তোর প্রতি দূর্বল হয়ে পরেছে। তুই চাইলেই সম্ভব! “। তানভীর কে বললাম স্নেহার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে৷ স্নেহার সাথে তানভীর কথা বলে ম্যানেজ করল৷ আমরা প্রথম দেখা করলাম। স্নেহা পাশের জেলায় থাকত। তাই দেখা করতে তেমন একটা অসুবিধে হলো না। এমনি ভাবে কিছুদিন পর পর পার্কে, রেস্তরায় দেখা করতাম। মাঝে মাঝে আমার সাথে তানভীর ও যেত। এভাবে কয়েকবার দেখা করার পর স্নেহাকে বললাম আমি ফিজিক্যাল রিলেশন করতে ইচ্ছুক! স্নেহা কিছুতেই রাজী হলো না। তানভীরের পরামর্শে দু’দিন আইডি ডিএক্টিভ করে রাখি!
দু’দিন আইডি ডিএক্টিভ থাকায় তানভীর কে স্নেহা সব খুলে বলে। তানভীর আশ্বস্ত করে আমি স্নেহাকেই বিয়ে করব। অনেক ভেবে চিন্তে স্নেহা রাজী হলো। কিন্তু, শর্ত জুড়ে দিল সেফ প্লেসের কথা বলে। আমিও তানভীরের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম তানভীরের আম্মু যখন বেড়াতে যাবে তখন ওদের বাসায় নিয়ে যাব। তানভীরদের বাসার কথা শুনে স্নেহা আপত্তি করেনি। অতঃপর সুযোগ বুঝে স্নেহাকে নিয়ে যাই তানভীরদের বাসায়। সারাদিন দু’জন একে অপরে সাথে মিশে যাই। কেটে যায়, একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সময়! সাফি আবার থেমে গেল! সুপ্তি কিছু বলছে না দেখে নিলয় বলল;
— সাফি, তারপর কি হলো? বল! সাফি বলল;
— আজ না অন্য একদিন বলব! সাফির কথা শুনে সুপ্তি রাগান্বিত কণ্ঠে বলল;
— আজ না মানে! এক্ষুনি বলবে…
সুপ্তির ধমক শুনে সাফি বলতে শুরু করল; পরিকল্পনা মাফিক তানভীরদের বাসায় স্নেহার সাথে অন্তরঙ্গের মুহূর্ত তানভীর ভিডিও করে রাখে। অবশ্য আমিই ওকে বলেছিলাম ভিডিও করে রাখতে! কিছুদিন পর স্নেহার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলাম। ওর সাথে টাইম পাস করার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না! তাই এভয়েড করতে শুরু করলাম।
সুই সুযোগ তানভীর লুফে নিল। স্নেহাকে অনলাইনে সময় দিয়ে আমার অনুপস্থিতি বুঝতে দিতে চাইত না! তবু স্নেহা আমাকে বার বার কল দিয়ে কন্ট্রাক্ট রাখতে বলত। একদিন তানভীর আমাকে জানায় ও স্নেহার সাথে ফিজিক্যাল করতে ইচ্ছুক। আমিও তাতে সায় দিলাম। স্নেহাকে কিভাবে রাজী করাতে হবে সেটাও বলে দিলাম। স্নেহার সাথে আমার অন্তরঙ্গের ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল করতে বললাম!
তানভীর ঠিক তাই করল আমি যেটা বলেছিলাম। তানভীরের প্রতি ধারণা আর সো কলড ভাইয়ের প্রতি বিশ্বাসের ভয়ঙ্কর পরিণতি স্নেহার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। স্নেহা রাজী না তানভীরকে অপমান করে! স্নেহার প্রতি তানভীরের ক্ষোভ জন্মে গেল। আমাকে সব খুলে বলতেই আমি যেন প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম স্নেহার প্রতি। কিভাবে পারল সে আমার বন্ধুকে অপমান করতে! তানভীর স্নেহার আইডির পাসওয়ার্ড দিয়ে বলি আমাদের অন্তরঙ্গের ভিডিও স্নেহার আইডিতে আপলোড করতে।
তানভীর ক্ষোভে ঠিক তাই করল। মায়াবতী আইডি থেকে ভিডিও ছড়িয়ে পরল ভার্চুয়ালে। গ্রুপে গ্রুপে শেয়ার হচ্ছে ভিডিও লিঙ্ক! বেঁচে থাকার জন্য স্নেহার সম্মান টুকুও কেড়ে নিলাম দু’জন! সেদিন রাতেই স্নেহা আমাদের প্রতি অসীম ঘৃণা নিয়ে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। সাফি মাথা নিচু করে বসে আছে। নিলয় যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সুপ্তি নিশ্চুপ হয়ে সাফির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! যেই চোখে অশ্রু ঝরছে সেই চোখেই সাফির প্রতি তীব্র ঘৃণা আর ক্ষোভে রক্তিম রঙ ধারণ করেছে!
ভার্চুয়ালে বিশ্বাস করা সো কলড ভাইয়ের কৃতকর্মের প্রাপ্য শাস্তি স্নেহার আত্মা তানভীরকে বিভৎস আত্মহত্যার মাধ্যমে দিতে পেরেছে! কিন্তু, প্রকৃত ভালোবাসার মানুষের বিশ্বাস ঘাতকতা কিংবা প্রতারণার প্রাপ্য শাস্তি স্নেহার আত্মা সাফিকে দিতে পারেনি! হয়তো স্নেহার প্রকৃত ভালোবাসাই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাফি বেঁচে আছে! প্রকৃত ভালোবাসার প্রিয় মানুষ সুপ্তিও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কেননা, সাফি চির দিনের জন্য স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। সাফি যতদিন বেঁচে রবে, ” মায়াবতী স্নেহার ” মৃত আইডির অশরীরী আত্মা তাকে ততদিন তাড়া করবে!