ডিভোর্স পেপারটা একটু আগে হাতে পেলাম। কাগজটা হাতে নিয়ে হাসছি। কারন আজকে আমার বিবাহের এক বছর পূর্ণ হলো। আমি হাতে নিয়ে ভাবছি যদি সাইন করে দেই তাহলে আমার স্ত্রীর সাথে আমার এখনি সব শেষ। আবার অন্য দিকে বাবা মায়ের কথার শব্দ পাচ্ছি। বাবা মা নিজেদের মাঝে কথা বলছিলেন।
মাঃ ছেলেটাকে একটু বুঝাও। আমাদের জন্য জেনো ওর সুন্দর জীবনটা নষ্ট না করে।
বাবাঃ অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কিছুই শুনছে না। আমাদের বয়স হয়েছে। কতদিন বেচে থাকবো ঠিক নেই। আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসলেই হয়।
মাঃ আমিওতো তাই বলি। আমাদের জন্য ও নিজের সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছে ওরে বুঝাও তুমি।
বাবাঃ গত একবছর ধরে বুঝিয়েই আসছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা৷
এখন মার গলার শব্দ শুনে বুঝাই যাচ্ছে মা কান্না করছেন। আর এই দিকে আমি হাসছি। ভাবছি আমার মা ছোট ছোট বিষয় নিয়েই কান্না শুরু করে দেন।
হ্যা এইটা আমার জন্য খুব ছোত বিষয় কারন আমার থেকে আমার বাবা মাকে যে আলাদা করতে চাইবে তার জন্য আমার জীবনে কোনো মূল্য নেই৷ এর পর বাবা মার রুমে যাই৷ এই দিকে কাগকে সাইনের কথা ভুলেই গেছি। আমি মার কাছে গিয়ে আম্মুর হাত ধরে আম্মুকে বলিঃ মা তোমার মনে আছে ছোট বেলায় আমার সাথে কেউ খেলতে চাইতোনা। তখন আমি বাসায় এসে কান্না করতাম। আর তুমি বাবাকে ফোন দিয়ে বলার সাথে সাথে বাবা সব কাজ ফেলে চলে আসতো। আমার রুমে খেলনার অভাব ছিল না। তার পরেও বাবা আমার কান্না থামানোর জন্য আমাকে আবার খেলনা কিনে দিতো। সারাদিন তোমরা আমার সাথে খেলা করতে। একটা সময় পর আমার বন্ধু হিসেবে তোমাদের আমি দেখেছি। অন্য কারো সাথে আমি বেশি মিশতাম না।
এখন আমি বড় হয়েছি৷ এখন অনেক বন্ধু আছে৷তাই বলে আমার পুরনো বন্ধুদের ভুলে যাবে এতটা সার্থপর আমি নই। যাকে ভালোবাসতাম তার সাথে বিয়ের কথা বলার সাথে সাথে তোমরা রাজি হয়ে গিয়েছিলে। একবার জানতেও চাওনি মেয়ে কেমন। কারন তোমরা জানতে আমি কখনো তোমাদের ছোট করবোনা। কিন্তু দেখ সেই আমার জন্যই তোমরা এখন কত কষ্টে আছো।
মাঃ ধুর কি বলিস৷ সন্তানের জন্য বাবা মারা কখনো কষ্টে থাকে না৷ তাই বলিকি তুই আমাদের এই কথাটা রাখ। আমাদের জন্য তোর সংসার ভেঙ্গে ফেলিস না৷
আমিঃ মা যেই সংসার কখনো ছিলোই না। তা থাকা না থাকা নিয়ে আমার কিছুই আসে যায় না।
বাবাঃ তুই যদি ডিভোর্স নিস তাহলে আমার সাথে কথা বলবিনা।
আমিঃ বাবা তোমাদের অভিমান আমি মেনে নিবো। কিন্তু তোমাদের কেউ অপমান করলে আমি তা মেনে নিবো না।
এর পর আমি রুম থেকে চলে আসি। রুমে এসে ডিভোর্স এর কাগজটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি,ভাবতে থাকি একটা বছর পার হয়ে গেলো কত কিছু হলো৷ একটা মেয়ে ছিল খুব মিষ্টি। যার হাসির মায়ার আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম৷ নাম ছিল মেঘলা। হ্যা এই হলো আমার স্ত্রী বলা যায়৷ কারন এখনো কাগজে সই করিনি৷ ওকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমার জন্য সঠিক। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই কেমন জানি দেখতাম মেঘলা কেমন করে। আর বাবা মাও কেমন জানি কষ্ট মাখা হাসি নিয়ে আমার সামনে আসে। যে বাবা আমার সাথে প্রতিদিন আড্ডার আসর বসাতেন। সে এখন আমার সাথে কোনো দরকার ছাড়া কথা বলেন না৷ঠিক মাও একরকম। কথা খুব কম বলেন। আমি মেঘলাকে অনেক জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু ও বার বার বলে কই কিছুই না৷ কিন্তু মেঘলা মিথ্যে বলে তা আমি প্রতিবার বুঝতে পারি৷ এভাবে প্রায় আমাদের বিয়ের ৮ মাস চলে যায়৷ একদিন রাতে আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরি। হঠাৎ বাবা আমাকে ডাক দেন। আমি খুব খুশি হই। কারন ভাবলাম বাবা হয়তো ঠিক হয়ে গেছেন। রুমে গিয়ে দেখি বাবা মা একসাথেই।
আমিঃ হ্যা বাবা বলো।
বাবাঃ আমরা তোকে এখন যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবি। এবং আমাদের কথা রাখবি।
আমিঃ তোমাদের কথা আমি কখনো না রেখেছি৷ বলো তোমরা।
বাবাঃ আমরা ঠিক করেছি আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো। কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে।
আমিঃ এইসব কি বলছো বাবা? আমিকি তোমাদের কোনো কষ্ট দিয়েছি? দিয়ে থাকলে বল। আমি মাফ চেয়ে নিবো।
মাঃ আরে না না। শোন আমরা বুড়ো হয়েছি৷ তোদের সাথে আছি একা একা লাগে৷ ওইখানে আমাদের বয়সের অনেকেই আছে। আমাদের খুব ভালোও লাগবে। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক গুলা জমা কষ্ট। কিন্তু মা মুখে হাসি নিয়ে কথা গুলা বলছেন।
আমিঃ মা বাবা আমি জানি তোমরা আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো। আচ্ছা মেঘলা কিছু বলেছে?
মাঃ আরে না না। বউমা কত লক্ষি।
আমিঃ তাহলে আমি এই বিষয়ে আর কিছুই শুনতে চাইনা। তোমরা আমার কাছে থাকবে। আর কিছুই শুনতে চাই না। কি হয়েছে তা ভালো করে জানি। এর পর এই বেপারে আমি কথা বলবো।। বলেই আমি রুম থেকে বেড়িয়ে আসবো দেখি কে জেনো দরজার পাশে থেকে চলে গেল। বাড়িতে আর শুধু মেঘলা ছিল। আমি রুমে যাই।আর আমার মাথায় ঘুড়ছিল কি এমন হলো যে বাবা মা এইসব বলছেন। কারন আমি ঠিক বুঝতে পারছি মা বাবা মন থেকে এমন কিছুই বলছেন না। রুমে গিয়ে মেঘলা রুমে বসে আছে। কেমন জানি মোখ গোমরা করে। আমাকে দেখেই শুয়ে পড়লো। আমি ওর পাশে শুতেই-
মেঘলাঃ বাবা মা কেনো ডেকেছিলেন?
আমিঃ এমনি।
কারন আমি জানি ও সব শুনেছে। তাও প্রশ্ন করার কারন আমার কিছুই মাথায় ঢুকলো না।।এখন আমার কিছুটা সন্দের হচ্ছে মেঘলার উপর। কিন্তু মেঘলা যেভাবে আমাকে বলেছিলা বিয়ের আগে যে ও বাবা মাকে ভালোবাসবে আমার মত। আর ওত এমন না৷ কিছুই মাথায় ঢুকছে আমার। পরেরদিন অফিসেও কাজে মন দিতে পারছিনা। তাই হাফ বেলায় বাড়ি ফিরে আসি৷ যেই কলিং বেলে চাপ দিবো ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পাই। মেঘলার গলার, ও কার উপর জেনো চিল্লাচিল্লি করছে৷ ভালো মত শুনে দেখি আমার উপর।
মেঘলাঃ একটা কাজ ঠিক মত করতে পারেন না। আমার নতুন জামাটা নষ্ট করে দিলেন। আর আপনারানা বললেন যে চলে যাবেন। পোলারটা বসে বসে খেতে কষ্ট হয়না আপনাদের। আমাদের জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছেন।
মা কান্না মাখা কন্ঠেঃ আজকে আবার বলবো। তুমি ভেবোনা বউমা আমরা বেশিদিন থাকবোনা৷ চলে যাবো। তোমাদের শুখের সংসারে আমরা বাধা হবো না। এইসব শুনে আমি পুরো স্তব্ধ৷ চোখের সামনে সব ঝাপসা। আমি এইসব কি শুনছি। যাকে আমি আমার পরিবারের অংশ করলাম। সেই আমার পরিবারটাকে আলাদা করে দিচ্ছে৷ কলিংবেলটা চাপ দিতেই মা দরজা খুলে দিলেন। আমি কি করবো আমি জানি না। খুব রাগ হচ্ছিলো। আর সব থেকে বেশি নিজেকে পাপি মনে হচ্ছিলো।আমার বাবা মার জন্য এমন একটা বউ আনলাম। আমি মেঘলাকে কিছুই না বলে রুমে গেলাম।, মেঘলা আমাকে দেখে রুমে চলে আসলো।
মেঘলাঃ তোমার কি হলো? এই সময় বাসায়? আবার কিছুই বললেনা?
আমিঃ আমার সব ভুল শোধরানোর জন্যই আজকে বাড়ি ফেরা।
মেঘলাঃ মানে?
আমিঃ তোমার বাড়ি যাবো জামা গুছাও। খুব ইচ্ছে করছিল ওর দুই গালে দুইটা মারি। কিন্তু মায়ের কথা ছিল ওর গায়ে কখনো হাত দিতে পারবোনা৷
মেঘলাঃ ও অনেকদিন আগে বলেছিলাম নিয়ে যেতে তাইতো।ইয়ে ইয়ে।।
মেঘলা আমার দিকে খেয়াল না দিয়ে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিল। এর পর বেরিয়ে গেলাম৷ মেঘলা আগেই গাড়িতে চলে গেছে। আমি পরে যাচ্ছি।
মাঃ কিরে কই যাচ্ছিস?
আমিঃ ভুল ঠিক করতে।
বলেই বেরিয়ে যাই। ওর বাড়িতে যাই। ওর বাড়িতে যেতেই ওর মা বাবা আর ওর বড় ভাই এবং তার স্ত্রী এসে আমার খবর নিচ্ছেন। আমি কোনো কথার উত্তর না দিয়েই সবার সামনে জিজ্ঞেস করি মেঘলার ভাইয়াকে-
আমিঃ তো মেঘলার বাবা মাকে কবে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসছেন। এত বড় বোঝা তারা, তাদের কিভাবে রাখবেন। আপনার স্ত্রীর হয়তো সমস্যা হয়।তো কবে দিয়ে আসবেন। কথাটা শুনে সবাই আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছেন। মেঘলাও থ। মেঘলার বড় ভাইঃকি বলছো এইসব মাহিব? ৷ বাবা মারা হলেন ঘরের বেহেশত। আর তাদের আমি রেখে আসবো বৃদ্ধাশ্রমে?
মেঘলাঃএই তোমার কি হলো? এইসব কি আজে বাজে বকছো?
আমিঃ ও হ্যা এইসব তো এখন আজে বাজে। কারন তোমার বাবা মারা বেহেশত।আর আমার বাবা মারা ডাস্টবিন?
মেঘলা কথায় হয়তো বুঝে গেছে। ও চুপ করে আছে।
আমিঃ কি হলো মেঘলা চুপ কেনো? আমিতো ভাবছি তোমার আর আমার বাবা মাকে একসাথেই রেখে আসবো? তুমিতো খুশি হবে তাইনা?
মেঘলার বড় ভাইঃ তোমার হলো টাকি বুঝতেছি না।
আমিঃ হাহা। আসলে আমার পুরো দুনিয়াটাই পালটে গেছে। আপনি আপনার বোনকেই জিজ্ঞেস করুন।
মেঘলার বড় ভাইঃ মেঘলা মাহিবের হয়েছে কি? মেঘলা চুপ?
মেঘলার বড় ভাইঃ কিরে চুপ কেনো? এই দিকে মেঘলার বাবা মা পুরা থ। তারা কিছুই বলছেন না। এর পর সব বললাম যা যা আমি দেখেছি শুনেছি। মেঘলার বাবা মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছেন।
মেঘলার বাবাঃ তুই আমার মেয়ে? তুই বাজে কাজটা করতে পারলি। তুই জানিসনা শশুর শাশুরিরা দ্বিতীয় বাবা মা হয়।
মেঘলা মাঃ তোকে বড় করে ভুল হয়েছে আমাদের। তুই অন্য একটা শুখের সংসার এভাবে নষ্ট করবি জানলে তোকে বিয়েই দিতাম না।
মেঘলাঃআমিতো শুধু,,, মেঘলার বাবা সাথে সাথে ওর গালে একটা থাপ্পর মারবেন তখনি আমি থামিয়ে দিয়ে-
আমিঃ বাবা আমাকে মাফ করবেন। আসলে আমি এভাবে আপনাদের বলতে চাইনি। আমি আমার বাবা মাকে অনেক ভালোবাসি। ওকেও বাসি। কিন্তু তাই বলে এইসব মেনে নিতে আমি পারবোনা। আমি চললাম। আর হ্যা মেঘলা ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়ে দিও। আমি সই করে দিবো।
মেঘলার মাঃ না না বাবা আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে৷
মেঘলার বড় ভাইঃ না মা নষ্ট ও নিজেই করেছে। ও আমার বোন। কিন্তু তুমি ভাবো মা। আমি যদি এমন করতাম৷ তুমিকি আমাকে মাফ করে দিতে বা আমার বউকে? এইবার মেঘলার মা চুপ করে কান্না করতে থাকেন।
মেঘলার বাবাঃ বাবা একটু ভেবে দেখ৷ এইটা কোনো সমাধান নেই?
আমিঃ আছে এইযে ডিভোর্স। আমি চলি প্লিজ।আপনারা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবেন। মেঘলা আমার পায়ে পরে ক্ষমা চাচ্ছেঃপ্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি এমনটা আর করবোনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
আমিঃ হ্যা দেখেছি৷ যেই মা বাবা আমার জন্য সারাদিন দোয়া করেন। এখনো আমার ভালো মন্দ খেয়াল রাখেন। তাদের তুমি অপমান করলে।তাও কতদিন হলো আমি জানি না। আমি আর কিছুই না বলে বাড়ি ফিরে আসি৷ মেঘলা ডাকছিল আমি শুনিনি। কেনো জানি ওর শব্দটাও আমার কাছে বিষের মত লাগছিল। বাড়িতে আসতেই-
মাঃ কিরে বউমা কই? এর পর সব বলি।
মাঃ এ তুই কি করলি?
আমিঃ যা করেছি ঠিক করেছি। মা বাবাকে ডাক দিয়ে আনেন। বাবা মা কিছু বলার আগেই আমি তাদের পায়ের কাছে পরে কান্না শুরু করি৷
আমিঃ মা বাবা আমাকে মাফ করে দাও। আমার জন্য তোমাদের এত অপমান হতে হলো।আমি ছেলে হওয়ার যোজ্য নই।
বাবাঃ মাহিব ওঠ বাবা। কি হয়েছে। মা বাবাকে বলে দেন।
বাবাঃ আরে কিছুই হয়নি৷ বউমার কথায় আমরা কিছুই মনে করিনি৷
আমিঃ হ্যা আমি জানি৷ ছোট থেকে আমি যাই ভালোবাসি সব পেয়েছি৷ তাই এইটাও তোমরা মেনে নিবে। কিন্তু আমি পারবোনা। এর পর রুমে চলে আসি। মেঘলা ফোন করছে। আমি ফোন ধরেই দেখি কান্না করছে।
আমিঃ তোমার কন্ঠটাও বিষাক্ত লাগছে। প্লিজ অন্য কারো সাথে এমন করো। আমি দোয়া করি তোমাএ জীবন ভালো হোক।
বলেই ফোন রেখে দেই। এর পর কিভাবে যেনো ৪ মাস চলে যায়। আজকে ডিভোর্স পেপারটায় সই করে মনে শান্তি লাগছে৷ আমি বাবা মার রুমে গিয়ে বাবা মাকে জরিয়ে ধরে হাসি দিয়ে বলি দেখ আমি ঠিক আছি৷ সব সময় আমাকে হাসতে দেখতে চাওতো। আমার কাছে যতদিন আমার এই দুই জান্নাত থাকবে আমি সব থেকে খুশি থাকবো। এর পর পেপার গুলো দিয়ে আসি৷ এর পর আর ওর সাথে কথা বলিনি। ভুলে যাচ্ছি এমন নর-পশুকে যার কাছে আমার জান্নাত গুলো ধুলো মনে হয়।।