যোগ্যতা

যোগ্যতা

আজ আমি নীলার কাছে আমার মনে অনুভূতিগুলো আত্ম-প্রকাশ করব। দীর্ঘ চারটি বছর আমি সব কিছু খুব গুরুত্ব সহকারে ভেবেছি। আজ আমি একদম নিশ্চিত আমি তাকে আমার পাশে দেখতে চাই। আজ সারাদিন আমি ফেসবুকের এক্টিভ স্টেটাস অন করে বসে আছি। সচরাচর আমি ফেসবুকে কখনো আসি না বা আসলেও এক্টিভ স্টেটাস অফ থাকে। আজ সারাদিন অন করে বসে আছি তারি অপেক্ষায়। আমি আমার নিজের সম্বন্ধে খুব ভালো করেই জানি। আমি কখনো তাকে সরাসরি ফোন করে এ কথাটা বলতে পারব না। হঠাৎ দেখলাম নীলা ফেসবুকে এক্টিভ হয়েছে। ২৫০কি.মি এর বেশি দূরত্বে থাকা অবস্থায়ও আমার এমন অবস্থা হচ্ছে যেন সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি তাকে নক করলাম,

আমিঃ-আস সালামু আলাইকুম। কেমন আছিস?

নীলাঃ- অলাইকুমুস্ সালাম। ভালো আছি, তুই?

আমিঃ- আছি কোনো রকম রে! তোকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিল!

নীলাঃ- তোর গুরুত্বপূর্ণ কথা মানেই তো পড়াশোনা। আমার ভালো লাগতাছেনা, তোর ওই সব পেঁচাল শুনতে।

আমিঃ- না শোন, আজ আমি সম্পূর্ণ অন্য রকম কথা বলব। আমি এত দিন বলি নাই, কারণ এটা শোনার পড় হয়ত তোর মনে হবে আমিও আর ৫ টা ছেলের মতই। হয়ত তুই সব বন্ধুত্ব শেষ করে দিবি!

নীলাঃ- ফাজলামো না করে বল কি বলবি।

আমিঃ- তোর কি কোনো বিষয়েই আমাকে সিরিয়াস মনে হয় না!

নীলাঃ- অবশ্যই, পড়াশোনায় তোর থেকে সিরিয়াস আর কে?

আমি মেসেজ সিন করে আর কিছু লিখতে পারছিলাম না। কে যানে এখন যদি বলি ভালোবাসি তাহলে তামাসা করে যদি উরিয়ে দেয়!

নীলাঃ- কিরে মেসেজ দিস না কেন? এখন কি করতাসস? পড়াশোনা নাকি চাকরি পাইয়া গেসস! কিছুই ত বলিস না!

আমিঃ- আমি তোকে অনেক ভালোবাসি নীলা। পরিবারের সম্মতিতে তোকে আমি বিবাহ করতে চাই।

দেখলাম নীলা সিন করেছে কিন্তু অনেকক্ষন যাবত কোনো রিপলাই নাই। আমার মনে এখন তেমন একটা ভয় নেই। কারণ, আমি বাকি ছেলেদের মত দেব-দাস হব না। কিন্তু ও রাজি থাকলে ওর জন্য আমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকেও ত্যাগ করব। হঠাৎ দেখলাম নীলা আমায় ফোন দিয়েছে। আমি ফোন ধরব কি ধরব না তা নিয়েই চিন্তায় পড়ে গেলাম। ইতিমধ্যেই দেখলাম নীলার ৩ টা মিসড্ কল। ৪র্থ বার ধড়লে,

নীলাঃ- তুই কি জানি আমার বিয়ে কথা চলছে?

আমিঃ- কেন এখনো তো তোর লেখা পড়াই শেষ হয়নি। তুই তো অন্যরকম কিছু করতে চেয়েছিলি!

নীলাঃ- তোদের মত ভালো ছাত্র-ছাত্রী নই আমরা। তাই বাবা-মার আমাকে বহন করতে কষ্ট হয়।

আমিঃ- তোর কি মত? আমি যে তোকে বিবাহে প্রস্তাব দিলাম তুই এই বিষয়ে কি বলিস?

নীলাঃ- বাবা যার সাথে বিবাহের কথা বলছেন, সে একটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জয়েন করেছে। মাসে ৬০০০০ টাকা করে বেতন পাচ্ছে।

আমিঃ- তুইও ত যানিস আমি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করে বেড় হলাম। চাকরি করব।

নীলাঃ- বাবা ওই সব বুঝে না। সে….

আমিঃ- তোর বাবা কথা ছাড়, তুই কি বলিস? তুই কি ৬০০০০ টাকার বেতনের ছেলে ছাড়া কি বিয়ে করবি না!

নীলাঃ- আসলে….

আমিঃ- কিসে আসলে? তুই আমাকে সজা করে উত্তর দিবি!

এবার নীলা ফোনে মধ্যে জোরে জোরে কান্না করতে শুরু করে দিল। আমি পৃথিবীতে এমন কিছু দেখিনি যা দেখে মারাত্মক অবাক হয়েছি, কিন্তু নীলার এই কান্না দেখে আমি এত অবাক হলাম যা বলার বাইরে। এই মেয়েটি কে আমি কখনো মুখ গমরা করে ও থাকতে দেখিনি। অবশ্য পরিচয় মাত্র আড়াই বছরের। অনেক সময় কারও কান্নায়ও যে এত স্বস্তি, নীলা কান্না না করলে হয় বা কখনো বুঝতে পারতাম না। আমি মলিন গলায় বললাম। তোর বাবা কে আমার কথা বলিস, এবং এও বলিস আমি নিজেই তোর বাবা-মা- ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই। বুঝলাম এই প্রায় ২৫০ কি.মি দূরত্ব থেকে, সে বেশ নয় অনেক টাই অবাক হয়েছে।।

আজ নীলার বাবা হাজী হারুন সরকারের সাথে দেখা করব। আমি তাদের বাড়ির সোফায় বসে আছি। নীলার বাবা ও ভাই বাসাতেই আছেন। নীলা আমার কথা তাদের কাছে বলেছে। শুনেছি এরপর থেকে তার সাথে কেমন যেন ব্যবহার করছেন। হাফেজ মানুষ, তার ভাই একটা দামী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করে। তাদের শুনেছি দুইটা ফ্লাট আছে। এটাও একটা। আমার অবস্থা তেমন না। তেমন না বলতে অনেক খারাপ। ঢাকায় আব্বু সামান্য চাকরি করে। আগে ছিল সরকারি কর্মকর্তা, তার রিটারমেন্টের টাকা দিয়ে আমার পড়াশোনা শুরু হওয়ার আগে গ্রামে জায়গা ও কিছু সামান্য বাড়ি করেন। কিন্তু এই যুগে তেমন বাসা কেউ ভাড়া নেয় না বলে খালি আছে, ফলে এই বয়সে তাকে চাকরি করতে হচ্ছে মাঝে-মাঝে। আব্বু এই নিয়ে তার মনের তীব্র অনুসুচনা ব্যক্ত করেন। আমি তার একমাত্র ছেলে, তার যদি এমন অর্থ থাকত তাহলে কখনোই দুরে পড়াশোনা করতে পাঠাতেন না।

আজ আমার অনেক নার্ভাস হওয়ার কথা। কিন্তু আমি চুপচাপ বসে আছি। আজকের খবরের কাগজ দেখছিলাম। সেটাই দেখছি। পাশে অবশ্য নীলা বসে আছে। সে একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, যা করছিস ভেবে নিয়েছিস তো! বাবা অনেক রেগে আছে। আমি তার দিকে তাকাইনি, কোনো কথা বলিনি, এক দৃষ্টিতে খবরের কাগজের একটা বিজ্ঞাপন এর দিকে তাকিয়ে আছি। খবরের কাগজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ কেউ তা খোলে নি, আমিই প্রথম! কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেখলাম নীলার আব্বু ও ভাই আসছে। মনে হয় তারা ঘরে বসে কিছু পরামর্শ করেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছুই সহজ ভাবে হবে না। তারা আসায় আমি ও নীলা দাড়ালাম। নীলার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে অনেক ভয় পাচ্ছে। নীলার আব্বু ও ভাই বসলে আমরা ও বসলাম। আমি তাদের সামনেই নীলা কে পানি গ্লাস এগিয়ে দিলাম,

আমিঃ- এই নে পানি খা, তোকে দেখে আমার ঠিক লাগছে না। নীলা, তার বাবা ও ভাই সবাই আমার দিকে কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকালো। তখনও আমার তেমন কিছু মনে হয়নি। বাবা সামনে না থাকলে হয় ত সে এই পানির গ্লাস নিত না, হয়ত সাথে সাথে আামায় বকা দিত। এখন তার মনে হচ্ছে আমার এত সাহস কিভাবে আসলো! যে কিনা কলেজে কারো সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারত না! একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে ভাবতে লাগলাম, “সময় বদলায়, সবাই বলে মানুষ বদলায় কিন্তু কই আমিতো বদলাইনি! হ্যা বদলেছে, সেটা আমার ভীতু মন। অনেক সাহসী হয়েছে সেটা”

আমিঃ- আমি আঙ্কেল ও ভাইয়ার সাথে নিরিবিলিতে কথা বলতে চাই। আমার এমন কথায় সবাই অবাক। বুঝলাম নীলার আব্বু একটু হলেও দমে গেছে। তিনি চোখের ইশারায় নীলা কে যেতে বললেন।

নীলার আব্বুঃ- তোমার কথা শুনেছি ওর কাছে অনেক। কলেজে থাকতে তোমার অনেক ই প্রসংশা করত। তেমন গুরুত্ব দিতামনা, কিন্তু কাল যা বলল, আমি রিতিমত অবাক! ওর সাহস দেখে আমি অবাক!

আমিঃ- ওকে আমিই বলতে বলেছি। এর আগে আমাদের মধ্যে কোনো মেলামেশা বা কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না। কাল রাতে আমি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছি। এটা তো কোনো হাদিস মতে হারাম বা পাপ কাজ হওয়ার কথা না!

নীলার আব্বুঃ- শুনেছি। তোমাদের এই জামানার ছেলে-মেয়েদের বিশ্বাস আছে!

আমিঃ- এটাই স্বাভাবিক আঙ্কেল। আপনি হয়ত শুনেছেন আমার কথা অনেক, না দেখে কি কোনো মানুষ কে বুঝা যায়! আজ ই ত প্রথম দেখলেন। আপনি আমাকে খারাপ ভাবলে আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু মেয়ে তো আপনার। তাকে আপনি আমার থেকে ভালো চিনবেন। আসা করি তাকে বিশ্বাস করেন? দেখলাম তার কথা বলার কোনো মুখ নেই। এবার তার ভাই একটু রেগে গিয়ে বললেন,

নীলার ভাইঃ- এই ছেলে, তোমাকে শিখাতে হবে আমরা কি করব। জানো আমরা যার সাথে ওর বিয়ের কথা বলছি সে ইঞ্জিনিয়ার, একটা কম্পানির বিশাল বড় পদে আছে। ৬০০০০ টাকা বেতন প্রথমেই। তার বাবার এই শহরে অনেক গুলা কম্পানি আছে। অনেক গুলা ফ্লাট আছে। তোমার কথা ও তো তেমন কিছুই বলতে পারলো না! আমি তেমন বিব্রত না হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলাম,

আমিঃ- আমাদের তেমন কিছুই নাই। আসলে নেই বলতে কিছুই নাই। আপনাদের মত এত সম্ভ্রান্ত পরিবার নয় আমার। এবার নীলার আব্বু কিছুটা জোড়েই বললেন,

নীলার আব্বুঃ- তাহলে বিয়ে করার শখ জাগছে কেন? ইঞ্জিনিয়ার হইছ তাতে কি? এখনো তো চাকরি কর না। চাকরি পাইবা, বাপ-মায়ের খেদমত করবা, জায়গা জমি বাড়ি গাড়ি করতে তো তুমি বুড়া হইয়া যাবা! তোমার উচিত তোমার লেভেল এর মেয়ে বিয়া করা, আছে না কতক মানুষ যারা ইঞ্জিনিয়ার নাম শুনেই মেয়ে দিয়া দেয়! তাদের গিয়া তোমার প্রেমে কাহিনী শোনাও। এই বলে তারা বিস্তার হাসা-হাসি করতে লাগল। এখন কিছু টা অপমানিত বোধ করলাম। আসলে আমি নই আমার বাবা-মার অপমান। যারা এত কষ্ট করে আমাকে মানুষ করলো, আমার ভালোবাসা ভাগ হবে বুঝে তারা আর কোনো সন্তান গ্রহন করলেন না! রাগটা তাদের সামনে প্রকাশ করলাম না। শালীন ভাবে তাদের অপমান করার জন্য মুখে হালকা হাসি এহে বললাম,

আমিঃ- আপনারা মনে হয় পত্র পছন্দ করেন নি। করেছে তাদের দৌলত, তাদের টাকা, তাদের পদবী। সমস্যা নাই আপনি আপনার মেয়ের ভালোই চান। কিন্তু, তার মত কি নিয়েছেন? হয়ত আপনার ভয়ে মনে অনিচ্ছায় সে ছেলেটিকে বিবাহ করল, এরপর প্রতিটা সময় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে না কি? ইসলামের বিয়ে ত শুধু ধুমধাম বাজনা আর লোক খাওয়ানো নয়! মনের একটা সুনিশ্চিত বন্ধন! আপনি হাফেজ মানুষ আপনি আসা করি ভালো জানবেন?
নীলার আব্বু ও তার ভাই লজ্জায় একে অপরকে দেখছে। এখন তাদের বলার কিছুই নাই। কিন্তু তাও তারা এই বিয়ে মেনে নিবে না। নীলার আব্বু মৃদুস্বরে বললেন,

নীলার আব্বুঃ- তুমি এখন কিছু করো না। কোন ভরসায় আমি আমার মেয়ে তোমায় দিব? আর আমার একটা স্বপ্ন আমি আমার মেয়ের বিয়ে বিশাল ধুমধাম করে দিব। কোনো কমতি রাখব না। তোমার কি আছে? না আছে টাকা না আছে ভালো বাড়ি, না আছে কোনো যোগ্যতা! ওহ্ আছে, একটা অকেজো ইঞ্জিনিয়ারিং এর সার্টিফিকেট! আমার মুখ মলিন হয়ে গেল, শান্ত গলায় বললাম,

আমিঃ- সত্যি বলেছেন, আমার বর্তমানে টাকা নেই, আমার বাবার ও তেমন কোনো পজিশন নেই। আমাদের কোনো বাড়ি নেই, আপনার স্বপ্ন পূরণ করার মতন ও আমাদের ক্ষমতা নেই।

নীলার আব্বুঃ- তাহলে কোন সাহসে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে আসো? আমি কোনো ফকিরের সাথে ওকে বিয়ে দিব? ও কি সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করবে? ফকির কথাটা অনেক গায়ে লাগল, মনটা বাবা-মার জন্য অনেক খারাপ হয়ে গেল। এই প্রথম মনে হলো যেন একটা সামান্য মেয়ের জন্য বাবা-মা কে অন্যের হাতে বিক্রি করে দিচ্ছি। পত্রিকায় চোখ রেখে বললাম,

আমিঃ- হয়ত আশা করবেন আমি বলব, “নীলা কি আপনার কাঁধের বোঝা!” না, এমন কথা আমি স্বপ্নেও ভাবি না। সব মানুষের একটা স্বপ্ন থাকে, আপনারও আছে। ভালো ছেলের লোভ যে কেউ সামলাতে পারবেনা, আমার কাছে এটা একদম স্বাভাবিক। আমার জন্য কাউকে অপেক্ষা করতে হবে না আঙ্কেল। যদি দুই পরিবারের ৪ সদস্যের কারও অমত থাকে, আমি কথা দিলাম এই বিয়ে কোনো দিন হবে না। আমি চলে যাব, কোনোদিন আপনি আমার ছায়া আপনার পরিবারের সামনে দেখবেন না। নীলার আব্বু দেখলাম মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলো। বাবা-ছেলে নিজেদের মধ্যে চোখা-চোখি করলো। তারপর নীলার আব্বু বলল,

নীলার আব্বুঃ- তাহলে তুমি কি বলতে চাচ্ছ?, তোমার মত একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিব? কি খাওয়াবা তাকে? নাকি বাবার জমি বেঁচে খাওয়াবা? কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম, কিছুক্ষণ নয় প্রায় অনেকক্ষণ। নীলার আব্বু বিরক্তির ভাব এনে বললেন,

নীলার আব্বুঃ- কি হে? কথা বল না কেন? দমে গেলে?

আমি এবার খবরের কাগজের সেই দৃষ্টি কারা হেডলাইনের পেজ বের করলাম। এই পত্রিকার নাম প্রথম আলো। এবার নীলার আব্বুর দিকে পত্রিকা দিয়ে বললাম,

আমিঃ- আঙ্কেল, দয়া করে কী এই খবরটা পড়বেন?

তিনি কৌতুহলে পত্রিকা হাতে নিলেন, পড়তে আরম্ভ করলেন, কিছু ক্ষন পড় তিনি স্তব্ধ দৃষ্টিতে তৌসিফের দিকে তাকালেন। তিনি কোনো কথা বলতে পারলেন না। কিছুক্ষণের জন্য তার সকল বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল। কার সাথে কিভাবে কথা বললেন তিনি! আসলে তিনি এমন বিয়ে মেনে নিতে পারছিলেন না। ভালোবাসার বিয়ে এ বাসায় মেনে নেওয়া হয় না। তিনি ভাবতে লাগলেন এটা কি আসলেই ভালোবাসার বিয়ে! হঠাৎ নীলার ভাই বলে উঠল,

নীলার ভাইঃ- কি হলো আব্বু! কি দেখো! ওর এত কথা শুনার কি আছে? দেখি কি দেখালো!

নীলার ভাই এক প্রকার জোর করেই কাগজ টা নিয়ে নিলো। এবং দেখলো এবছর B.C.S এ মোহাম্মদ তৌসিফ মুত্তাকী প্রথম স্থান অধিকার করেছে। নীলার ভাইয়ের হাত থেকে কাগজ পড়ে গেলো। সবাই অনেক ক্ষন যাবত চুপ করে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর আমি শান্ত গলায় বললাম,

আমিঃ- হয়ত আপনাদের মত বদলে যাবে! হয়ত এখন আপনার মেয়ের জন্য আমাকে যোগ্য বলে মনে হবে। এতক্ষন আমি আপনাদের অনেক অপমান শুনলাম। আমার বাবা-মার অপমান শুনলাম। আপনি অনেক বড়লোক, আল্লাহর অশেষ দয়ায়। কিন্তু তাই বলে এটা নয় আপনার আমার বাবা-মাকে অপমান করার অধিকার আছে। আর আপনারা কি যেন একটা ছেলে ঠিক করেছেন! তার প্রথম বেতন নাকি ৬০০০০ টাকা! এই নিন আমার কিছু চাকরির ইন্টারভিউ রেজাল্ট যেখানে আমাকে শুরু থেকেই এক লাখ টাকার ওফার করা হচ্ছে। আমাকে তারা অনেকবার ফোন করেছিল। এইবলে ৭-৮ টা কাগজ তাদের দিকে দিলাম। তারা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি আবার বলতে শুরু করলাম,

আমিঃ- আমার ছোটো বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল অনেক বড় শিক্ষা অর্জন করব। বিদেশে পড়াশোনা করব। সেই সুযোগ আসলও, কাল আমি স্কলারশিপ পেয়েছি, oxford University তে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু গত চারটা বছর আমি এই কথাই চিন্তা করেছি, আমি নীলা কে ভালবাসি নাকি ভালবাসি না! এখন আমি মনস্থির করেই ফেলেছি আমি তাকে অন্তর থেকেই ভালবাসি।

হয়ত ভাবতে পারেন এত বড় সুযোগ আমি কেন হাত ছাড়া করছি! আসলে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা বলে, “ভালো কিছুর জন্য নিজের সাধারন স্বপ্ন বিসর্জন দিলে হয়ত এর চেয়ে ভালো কিছুই পাব”। কিন্তু আপনাদের সাথে কথা বলে তেমন কিছুই বুঝলামনা। আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম দুই পরিবারের চার সদস্যদের মধ্যে একজনও যদি আপত্তি করে তাহলে আমার ছায়াও আপনার পরিবারের কারো ওপর পরবে না। আমি আমার কথা অবশ্যই রাখব। আমি উঠে দাড়ালাম। তারা এতক্ষন চুপচাপ আমার কথা শুনল। এখনো তেমন কোনো কথা বলছে না। আমি আবার বললাম, ওর জন্য আমি সামান্য ত্যাগ করতে আমি রাজি ছিলাম। এটুকু তে যদি আমাকে আপনার চোখে সামান্য ভালো ছেলে মনে হয়, তাহলে বাবা হিসেবে আমি আপনার কাছে একটা শেষ অনুরোধে করব, দয়া করে রাখার চেষ্টা করবেন। নীলা কে যার সাথেই বিবাহ দিন, তাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে বেশ খানিটা সময় দিয়েন। যদিও ওর পছন্দের কেউ থাকে সময়ের সাথে মিশে যাবে।

মনের বিয়েই আসল বিয়ে, ধুমধাম কোনো বিয়েইনা।। চলে আসার সময় বাম পাশের দরজার আরালে থাকা রূপসী মেয়েটার মনে আজ অনেক মেঘ জমেছে , সামান্য বর্ষন এখন তার চোখেই প্রকাশ পাচ্ছে। সে আমার দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পড়লোনা। দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। আমিও চলে যাচ্ছি, হয়ত সে আমাকে সার্থপর ভাবছে। ভাবছে আমার অর্জনের কথা আগে কেন বললাম না। কেন আমি বিয়ে আটকালাম না। আমিও ভাবছি, গত ৪ টা বছর। ৪ বছর ভাবতে ভাবতে তার প্রতি আমি অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছি। তাকে না বললেও পারতাম। এখন সারাটা জীবন সেও কষ্টে থাকবে আমিও কষ্টে দিন কাটাব। পার্থনা করি তুই অনেক সুখী হবি।।।

আজ আমার বাসর রাত। হ্যাঁ, আমি বিয়ে করেছি। সেই রূপসী কেই। যাকে নিয়ে আমি গত ৪ টা বছর না-নান কল্পনা করেছি। হ্যাঁ, দুই পরিবারের প্রশান্তির সম্মতিতে আমাদের এই বন্ধন করে দেওয়া হয়েছে। আমি যে দিন সেখান থেকে আসি, ওই দিন আমি বাসায় দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। পরের দিন আমি চলে যাব। সকালে আমাদের বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠল। আমার আম্মু দরজা খুলেছিলেন। কিছু ক্ষন পর বাসার ডাইনিংরুমে নীলা, তার বাবা ও ভাইকে নিয়ে এলো আম্মু। তখন আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। নীলার বাবা এগিয়ে এলেন, তার কম্পমান হাত দিয়ে আমার হাত টা ধরলেন আর বললেন,

নীলার আব্বুঃ- যোগ্য ছেলে খুজছিলাম কিনা যানি না বাবা!, কিন্তু সেই সুযোগে একটা যোগ্য সন্তানের দেখা পেলাম। এই যোগ্য সন্তান কে আমার পরিবার হাত ছাড়া করতে পারে না! লাগবে আমার কোনো বাড়ি গাড়ি, কোনো পজিশন। তোমার কোনো স্বপ্নেরও বিসর্জন দিতে হবেনা। তাও তোমার মুখ থেকে বাবা ডাকটা আমি শুনতে চাই! দিবে না সেই অধিকার!

আমিঃ- স্বপ্ন পূরণ করলে বিয়ে কিভাবে করব? আর তাকে নিয়ে চলব কিভাবে? তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
নীলার আব্বুঃ- তাহলে আমার মেয়েকে এত পড়াশোনা কেন করালাম?

জীবন সঙ্গির স্বপ্ন পূরণে যদি সামান্য কষ্ট করতে না পারে তাহলে এত পড়াশোনার দরকার কি ছিল? কিরে নীলা পারবি না! নীলা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তার চোখে পানি। আজও তার চোখে পানি। বাসর ঘরে আমি তার মধুর কন্ঠ এ পর্যন্ত শুনি নি। সেই ঢুকার পড় থেকে সে আমার বুকে মাথা রেখে কান্না করছে। আমি জানি এটা ছিল তার প্রশান্তির কান্না। কাদুক না সমস্যা কি, আজ শারা রাত আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই! কয়দিন পড় তো আমি চলে যাব দেশের বাইরে। হয়ত তার সুখের জীবনটা শুরু হবে চোখের পানি দাড়াই।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত