আনন্দের অশ্রু

আনন্দের অশ্রু

আজ আমার বিয়ে, কিন্তু এমন একটি মেয়ে কে বিয়ে করতে যাচ্ছি সেটা জীবনে কল্পনা করি নি। অনেক ইচ্ছে ছিলো একটা গ্রামের সহজ, সরল, পরহেজগার মেয়ে বিয়ে করবো কিন্তু বাবা, মার ইচ্ছে উনাদের বান্ধবির মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন। শহুরে মেয়ে, কেমন হয় সেটা আমার পরিকল্পনার বাইরে। বাবা, মার ইচ্ছে তে নিজের সব স্বার্থ বিসর্জন দিলাম, তাদের ইচ্ছেতেই বিয়ে টা করা হচ্ছে ।

আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম, শহুরে মেয়েরা নাকি খুব জেঞ্জারাস হয় কিন্তু কখনো না দেখায় বুঝতে পারি নি। অবশেষে বিয়ে শেষ হলো । বাসর রাতে আমি আমার মতো বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে গেলাম । মধ্যরাতে হঠাৎ করেই জেগে দেখি, মেয়েটা ঘোমটা মেরে বসে আছে , ঢিম বাতির আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলুম,পড়নে নীলশাড়ি, আর হাতে নীল কাঁচের চুড়ি, পায়ে গাঢ় আলতা দেয়া, যেনো এক অপ্সরী আকাশ থেকে নেমে ঘন ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । ক্রাশিতো না হয়ে পারলাম না! কিন্তু একটা অপরিচিতো মেয়ের সাথে কথা বলার কোনো মুড পাচ্ছিলাম না তাই নিজে থেকেই চুপ ছিলাম, আর ওর সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাও ছিলো না, আর বিয়েটাই তো আমার সম্মতি ছিলো না।

এইযে শোনেন, মেয়েটি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো! আচ্ছা আপনি ঘুমাবেন না? অনেক রাত্রী হয়েছে তো। চার পাঁচ বার বলার পরেও একই অবস্তা। ধুর এমন হয় নাকি! বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের নামাজের সময় নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে কারো কুরআন শরীফে পড়ার মিষ্টি সুমধুর গুনগুন আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। দেখি মেয়েটা তার অসাধারণ কন্ঠে তিলাওয়াত করছে । আমার ঘুম ভাঙা দেখে তিলাওয়াত রেখে দিচ্ছিলো। এইযে শোনেন আপনি আরেকটু তিলাওয়াত করেন না! অনেক ভালো লাগছে। একটু পরেই আম্মুর ডাক, এই আদনান বউমা কে নিয়ে নাস্তা খেতে আয়, আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলাম ।

কি রে বউমা কই( আম্মু) হঠাৎ করেই পিছনে তাকাতেই দেখি,ও দাড়িয়ে আছে । মা, আমার পাশের চেয়ার টায় বসিয়ে দিলো। খুব লাজুক মেয়েটা আমার পাশে বসে খেতে খুব লজ্জা পাচ্ছিলো । আমি তারাতাড়ি আমার নাস্তা শেষ করে চলে আসলাম। ভাবতেছি আমি শহুরে মেয়েদের সম্পর্কে যা ধারণা করতাম, এই মেয়েটা তো সম্পূর্ন ভিন্ন, চলন চালন খুবই ভালো মনে হচ্ছে আমার যেমন চাওয়া ছিলো আমি কি তেমন একটা মেয়ে পেয়ে গেছি! একটু পরে ও আমার রুমে উঁকি দিলো, আসেন । ও মাথা নিচু করে দিয়ে আমার সামনে দাড়ালো যেনো খুব লজ্জা পাচ্ছে । আচ্ছা, আপনার নাম টাই তো জানা হলো না। জ্বী , সুহাসিনী । আচ্ছা , এখানে বসেন, বাড়িতে কেউ নেই তো আব্বু, আম্মু, ছাড়া । এইযে আমার টেবিলে অনেক বই আছে পড়বেন, সময় কেটে যাবে, আর এইগুলা পড়া শেষ হলে বলবেন! আরো বই এনে দিবো। আচ্ছা একটা কথা বলবো, রাগ করবেন? না রাগ করবো কেনো বলেন?

আমাকে তুমি করে বলবেন, আর এখানে তো সব গল্পের বই ইসলামী হাদিসের কোনো বই নেই? কথা গুলা একদম নিচুস্বরে বলছিলো, আমি সুহাসিনীর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, আর ভেতরে ভেতরে অনেক আনন্দ লাগছিলো, আমি হয়তো যেমন খুজছিলাম আল্লাহ তেমন একটা বউ পাইয়ে দিয়েছে। বিকালে অনেক গুলা বই এনে দিয়েছিলাম। ওর চোঁখে মুখে স্পষ্ট দেখতে পেলাম আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে । রাত্রে ঘুমানোর সময় ও নিচু স্বরে বললো আচ্ছা আমাকে কি আপনার ভালো লাগেনি? না , ভালো লাগবে না কেনো! তা হলে আমার সাথে কথা কম বলেন কেনো? আমার না অনেক স্বপ্ন ছিলো, আমার স্বামী আমার সাথে সারাক্ষন বক বক করবে কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ উল্টো একটু কথাই বলেন না!

আচ্ছা কালকে থেকে বেশি করে কথা বলবো এখন ঘুমাও । মাঝরাতে সজাক হয়ে দেখি ও আমার বুকে মাথা রেখে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে। প্রথম কোনো মেয়ে স্পর্শে আমি একটু অস্বস্তি ফিল করতেছিলাম কিন্তু ওর ঘুমে সমস্যা হবে বলে কিছুই বলার সাহস পেলাম না। পরদিন রাতে আমার খুব জ্বর হয়েছিলো, বেচারী সারা রাত আমার মাথায় জল পট্টি দিয়েছিলো, শেষ রাতে দেখি বেচারী আমার বুকে মাথা রেখে বসেই ঘুমিয়ে গেছে, ঢিম লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার ঘরে পূর্ণিমার চাঁদ যেনো নেমে এসেছে। আমার বউটা এত্ত সুন্দরী কখনো খেয়াল ই করি নি। ফজরের সময় ওর ডাকে ঘুম ভাঙলো ।

দুপুরে বাসায় এসে দেখি ও বই পড়ছে, আমি আসতেই ও পাশে এসে আমার শার্টের বোতাম গুলা খুলে দিচ্ছিলো, আমি তো লজ্জায় মাথা নিচু করে দিলাম। ও বলতেই লাগলো কি ভেবেছেন হ্যাঁ আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে থাকবেন, আমায় একটু ছুতেও দিবেন না? আমি আমার হক আদায় করে ছাড়বো, বলেই আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আর আমার চোখে আনন্দে অশ্রু জড়ছে ।.
আল্লাহ আমাকে আমার মনের মতো একটা জীবন সঙ্গী দিয়েছেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত