বউ

বউ

আজ এক বছর দুই মাস হলো রুপা এবাড়ির বউ হয়ে এসেছে। ভালবেসে রাহুলের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। রাহুলরা দুই ভাইবোন। রাহুল বড়। ওর বোন মৌমিতা ছোট।মৌমিতারও আজ ২ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। রুপা সংসার কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছে। সব সময় শাশুড়ি মায়ের মন মত চলার চেষ্টা করে সে।। মা একটা কথা বলব? হুম বলো।

মা আমি বাড়িতে একটা গানের স্কুল খুলব?? না মানে সারাদিনই তো ফ্রি থাকি অনেক সময়। রুপা অনেক সুন্দর গান পারে।ওর গানের গলাটা খুবই ভালো। বলাবাহুল্য রাহুল ওর গানের গলা শুনেই ওকে ভালবেসে ফেলে।
না না দরকার নেই ওই সবের। টাকা কড়ি যা আছে ভালই আছে। মন দিয়ে সংসার করো। মৌমি নাচ পারত কই ও তো কোনদিন বাড়িতে নাচ শেখানোর কথা বলিনি। বৌমা,,,,, জ্বি মা শোনো এই কাপড়গুলো একটু ভালো করে কাচবে কেমন একটা ময়লা ময়লা লাগছে। আমার মৌমি কাপড় কাঁচলে সাদা ধবধবে পরিষ্কার হতো। আচ্ছা মা।

বৌমা ডাউলে একটু লবন কম হয়ছে। আমার মৌমি খুব ভালো ডাল রান্না করতে পারে। আচ্ছা মা ঠিক আছে।
ওর শাশুড়ি মা সবসময় নিজের মেয়ের সাথে তুলনা দেন। তা দিক হয়ত ওর ভালর জন্যই দেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর খারাপ লাগে কিছুটা। এই শোনো,,,,,,হুম বলো। মা না সবসময় ছোট আপার সাথে আমাকে তুলনা দেন। আমার কেমন একটা লাগে। হাহা ধুর পাগলী। মা মৌমি কে অনেক ভালবাস তো তাই ওর কথা বলে। এতে মন খারাপ করলে হয়। তুমি মন খারাপ করো না। আচ্ছা ঠিক আছে।

আজ রাহুল অফিসের কাজে বাইরে গেছে। বিয়ের পর এ বাড়ি রাহুল কে ছাড়া আজ প্রথম একা থাকতে হবে রুপার। একা ঘরে কেমন ভয় ভয় করছে। হ্যালো,,,, হ্যা বলো। কি করছো?? এই তো খেয়ে বসলাম। এই শোনানা আমার না একা ঘরে ঘুমাতে খুব ভয় করবে। আচ্ছা শোনো তুমি মায়ের ঘরে গিয়ে মায়ের সাথে ঘুমাও কেমন। ঠিক আছে। ফোন রাখলাম একটু কাজ আছে।ভালো থেকো। খোদা হাফেজ। আচ্ছা খোদা হাফেজ। রুপা মনে মনে ভাবছে শাশুড়ি মায়ের ঘরে গেলে আবার হাসাহাসি করবে না তো। বা বলবে,,, মৌমি তো কত ছোট বয়স থেকে একা একা থাকত। কই ওর তো ভয় করত না। তবুও রুপা শাশুড়ি মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। রুপা ঘরের বাইরে থেকে শাশুড়ি মায়ের সাথে ওর ননদের ফোনের কথার কিছু অংশ শুনতে পেলো।

আর বলিস না যা পুইশাক দিয়ে চিংড়ি চচ্চড়ি রান্না করেছিলো না আমি বাবার জন্মে কখনও ওমন খাবার খাইনি। মনে হচ্ছে রান্নায় উপর পিএইচডি করে এসেছে। রোজ রোজ এত করে শিখাচ্ছি তাও কোন না কোন ভুল হবেই। লবনে পুরো বিষ করে রাখছে। আবার নাকি গানের স্কুল খুলবে যখনি বলেছিলো গানের স্কুল খুলবে তখনি বুঝেছি এ মেয়ে একটা উড়নচণ্ডী। এ আমাদের পরিবারের সাথে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পারবে না। সংসারে কোন মন নেই। তোর ভাই কি দেখে এ মেয়েকে বিয়ে করেছিলো আল্লাহই জানে। রুপা আর সেখানে দাড়াতে পারলো না। নিজের ঘরে চলে এলো। ওর চোখদিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে মনে মনে ভেবেছিলো শাশুড়ি মা হয়ত ওকে নিজের মেয়ের মতনই ভালোবাসে।কিন্তু আজ কিছুটা বুঝতে পেলো। মাঝ রাতে হঠাৎ বিকট চিৎকারে ওর ঘুম ভেঙে গেল। শুনতে পেল চিৎকারটা ওর শাশুড়ি মায়ের ঘর থেকে আসছে। রুপা তাড়াতারি ওর শাশুড়ি মায়ের ঘরে গিয়ে লাইট জ্বেলে দেখল ওর শাশুড়ি মা বসে হাপাচ্ছে। কি হয়েছে মা আপনি এমন করছেন কেন। এই নিন পানি খান।

একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি বৌমা। কি খারাপ স্বপ্ন মা। দেখি আমার মৌমি ভাল নেই।ওর উপর ওর শাশুড়ি অনেক অত্যচার করছে। ওর কাছে একটু ফোন দে তো মা। মা এখন তো অনেক রাত। আপা মনে হয় ঘুমাচ্ছে। আমি মেসেজ করে দিচ্ছি কাল সকালে ফোন দিয়েনেন। আচ্ছা ঠিক আছে মা। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে।আচ্ছা থাক তুমি শুয়ে পড়ো যাও আমি একটু বাথরুম থেকে ঘুরে এসেই শুচ্ছি। মাএকটা কথা বলি।আজকে বরং এখন এখানে আপনার কাছে আমি শুয়ে পড়ি।আমার ওই ঘরে ঘুম আসছে না।

রুপার শাশুড়ি মা ঠিকই বুঝতে পারলেন রাতে যদি উনি ভয় পান তাই ওনার পুএবধু ওনার কাছে ঘুমাতে চাচ্ছেন। আচ্ছা মোমিতা থাকলেও তো এমনই করতে চাইত। ভোর বেলা ওনার ঘুম ভাঙে মনে হল কাল রাতে স্বপ্নে শাশুড়ির হাতে বঞ্চিত হয়ে নিজের মেয়েকে কাঁদতে দেখে মনের অবস্থা কি রকম হয়েছিলো। মৌমি ছোট থেকেই ওনার প্রান। ওর চোখের পানি তিনি কখনই সহ্য করতে পারেন নি। কিন্তু মেয়েকে ভালবাসতে গিয়ে কোথাও পুত্র বধুকে অবহেলা করে ফেলছেন না তো? পাশে ঘুমন্ত রুপা কে দেখে ওনার খুব মায়া হলো। রুপা যেমন ওনার প্রান তেমনও এই মেয়েটাও তো ওর মায়ের প্রান।

রুপার মা চাকরি করে তাই হয়ত ঘরকন্না তেমন একটা ওকে শিখাতে পারিনি। আর সবার দ্বারা তো তাড়াতাড়ি সব কাজ সম্ভব নয়। না হয় মৌমির চেয়ে রুপা একটু কম ভালো রান্না করল, কম ভালো গৃহিণী হলো। রুপা তো আর মৌমি নয়। রুপা রুপাই থাকবে।ওকে মৌমির মত হওয়ার চেষ্টাটা বন্ধ করতে হবে। আচ্ছা বাড়িতে একটা গানের স্কুল থাকলে কিইবা এমন ক্ষতি হবে। না আজকেই একটা গানের স্কুল খুলতে বলব। সকাল সকাল শাশুড়ি মাকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখে রুপা অবাক হয়ে গেল। একি মা আপনি এখানে দেখি আমিই নাস্তা তৈরি করছি আপনি বসুন তো। তুমি বসো আজকে না হয় আমিই রান্না করি সকলের জন্য।

পরিশেষে: সকল শাশুড়ি মা যদি বুঝতেন নিজের মেয়েকে পরের ঘরে দিয়ে পরের মেয়েকে নিয়ের বাড়িতে এনে তাদের মন মত গড়ে নিতে হয়। কেউই বিয়ের আগে সংসারের পার্ফেক্ট গৃহিণী হয়ে আসে না। বিয়ের পর নিজ হাতে গড়ে নিতে হয়। নিজেদের কলিজাটা যেমন অন্যের ঘরে দেন।তেমনি অন্যের কলিজাটাও নিজের ঘরে বউ করে আনেন। কোন দাসী করে নয়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত