রিহান আজ কথা বলার মাঝেই ফোনটা কেটে দিলো! নিতুও আর ফোন দেয়নি রিহানকে কারণ রিহান ইদানীং একটু বেশি রাগ দেখাচ্ছে যা নিতুর সহ্য হচ্ছে না। প্রতিদিন রাতেই শুধু রিহান ফোন দেয় আর তারপর অল্পস্বল্প কথা বলেই জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কি পরে শুয়েছো?”
“এই তো জামা পরে! কেনো?”
“ভিতরে কিছু আছে?”
“মানে”
“নাহ কিছুনা”
“হুম”
অবস্থা বেগতিক দেখে রিহান অন্য কথায় হারিয়ে যেতে চায় নিতুকে নিয়ে কিন্তু নিতু ঢেড় বুঝতে পারে রিহান ঠিক কি জিজ্ঞেস করেছে!তারপর কিছুসময় নিজের গুনগান করে রিহান আবার নিতুকে জিজ্ঞেস করে, “বললে না?”
“কি?”
“ওই যে ভিতরে কি পরেছো?”
“সবাই যা পরে আমিও তাই পরেছি”
“আহ বলই না কি পরেছো?”
“অন্তর্বাস”
“আচ্ছা ওইটা কেনো পরো?”
“বাদ দাও তো, তুমি খেয়েছো?”
“আমার কথা গুলোর কোন মূল্যই নেই তোমার কাছে! তুমি তো আমাকে ভালই বাসো নাহ যাও যাও বায়”
“কি হলো! হ্যলো হ্যলো…” টুট টুট টুট রিহান কেটে দিয়েছে ফোনটা!
নিতু ভেবে পায় না যে অন্তর্বাসের কথা না বলায় রিহানের কথা মূল্যহীন হলো কিভাবে! আর কেনোই বা রিহান এগুলো নিয়ে এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে! কিছুদিন পূর্বে উপমা ওর ভালবাসার প্রমাণ দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে আজ একাকিনী পথিক। যাকে ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছে তাকেই আজ সবথেকে অচেনা মনে হচ্ছে উপমা নিতুর ছোট বেলার বান্ধবী যা আজ পর্যন্ত শত বাধার মধ্যেও দুজন টিকিয়ে রেখেছে বন্ধুত্ব। উপমা আজকাল প্রায় সারাক্ষণই থাকে বিষন্নতায় ডুবে, নিতুকেও সহ্য হয়না উপমার! কি করে হবে! বিষন্নতা যে বড় ভয়ংকর রোগ।
রিহানকে উপমার বিষয়ে সব কিছুই বলেছে নিতু কিন্তু তাও কেনো যেনো রিহান এসব কথার কিছুই কর্নপাত করেনি!
রিহানকে দিনের বেলা খুব বেশি অচেনা মনে হয় নিতুর, ফোন দিলেও রিহান ফোন ধরে না আর নিজ থেকে তো ফোন একদমই দেয়না। শুধু রাত হলেই রিহানকে পাওয়া যায়। শুরুর দিকে রিহান নিতুর খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করতো যে খেয়েছে কিনা বা কি দিয়ে খেলো আর না খেলে জোর করে খাওয়ানো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে খবর আর নেয় না রিহান! নিতু সারাদিন কি করলো না করলো সুস্থ আছে নাকি এসবে রিহানের কোন মাথা ব্যাথা নেই। ফোন দিয়ে খোজ নেয়ার মতো মধ্যে শুধু জিজ্ঞেস করবে যে নিতু কি করছে! আর তারপর শুরু হয় নিজের সম্পর্কে গুনগান করা কথা বলা আর ধীরে ধীরে আগাতে থাকে নিতুর শরীর নিয়ে!
কিছুদিন পরে, নিতু আজ খুব খুশি। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগেই আছে ওর। খুশি তো হবেই আজ রিহান ঘুরতে নিয়েছিল যে আর নিতু তো এমনিতেই ঘুরতে ভালবাসে, তা যদি প্রিয় মানুষটার সাথে তবে তো কোন কথাই নেই। রিহান আজ পার্কের বেঞ্চে নিতুকে বসিয়ে ওর পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়েছে। যে কিনা সারাক্ষণ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে নিজের গুনগানে মগ্ন সে মানুষটা আজ নিতুর পায়ে স্পর্শ করেছে, নিতুকে ওর পছন্দের নুপুর পরিয়েছে রাত আনুমানিক বারোটা বেজে পনেরো মিনিট, নিতু ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে রিহানের ফোনের। প্রতিটি মুহূর্ত যেনো একেকটা দিন মনে হচ্ছে নিতুর কাছে। ফোনের স্কিনে তাকাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর কিন্তু রিহান ফোন আসছে না, সে নিষেধ করায় ফোন দিচ্ছে না নিতু।
প্রতিদিন রিহান নিজেই ফোন দেয় বারোটার দিকে কিন্তু আজ এতো সময় হলো তাই আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না নিতু। রিহানের ফোনে ফোন দিতেই শুনলো ফোন ওয়েটিং! তাই ফোনটা কেটে দিলো নিতু। নিজেকে বুঝ দিচ্ছে হয়তো কারো সাথে জরুরি কথা বলছে রিহান কিন্তু বুকের ভিতরটা কেমন চিনচিন করছে অজানা কষ্টে বারোটা চল্লিশে নিতু আবার ফোন দেয় কিন্তু এখনো ওয়েটিং রিহানের ফোন! আবার কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে নিতু আর অশ্রু গড়াতে থাকে চোখ দিয়ে। মাথার নিচের বালিশটা তখন হালকা ভিজে গেছে! রাত তখন একটা বেজে পনেরো, নিতু এখন আর ফোন দিয়ে কেটে দিচ্ছে না! ওই ওয়েটিং থাকা ফোনটায় অনবরত ফোন দিতে দিতেই কখন যেনো ঘুমিয়ে গিয়েছে মেয়েটা। প্রায় দুটো পঁচিশে শিতল হয়ে যাওয়া ফোনটা বেজে ওঠে রিহানের ফোনে নিতুর হাতটাও ফোনের সাথে শীতল হয়ে আছে আর অশ্রু ভেজা বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে নিতু।
হঠাৎ চোখ মেলে দেখলো ফোন বাজছে, এতো কষ্টের পরে রিহানের ফোন পেয়ে মুখে হাসি টানতে ভুল করেনি মেয়েটা! জলদি করে ধরে ফোনটা কিন্তু ওপাশ থেকে ভেসে আসে গালমন্দ! সেদিন রাতে রিহান যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে নিতুর সাথে! নিষেধ করার পরেও কেন এতোবার ফোন দিয়েছে নিতু! এটাই ছিল নিতুর অপরাধ। অনেকবার ক্ষমাও চায় নিতু কিন্তু গলেনি রিহান, কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে রাখে সে। তার কিছুক্ষন পরে আবার ফোন অন করে রিহান আর সাথে সাথেই ফোন আসে নিতুর। অনেকবার ক্ষমা চায় রিহানের কাছে, তারপর একটু একটু করে কথায় হারিয়ে যায় দুজন গভীর ভালবাসায়। সে রাতে নিতু নিজেকে দূর থেকে যতটা সম্ভব সপে দেয় রিহানের হাতে, সে এক তৃপ্তময় পরিবেশে হারিয়ে দুজন অগাধ ভালবাসায়।
রিহান অনুনয় জানায় নিতুকে কোথাও একটা দূরে নির্জনে নিয়ে যাওয়ার! নিতু দুএকবার অসম্মতি জানায় কিন্তু পরক্ষনে রাজি হয়ে যায় ভালবাসার মুখে তাকিয়ে আবেগ অনুভূতির অন্তরায় সকাল ন’টা থেকে রিহান ফোন দিয়ে যাচ্ছে নিতুকে নিয়ে বেরোবে বলে। কিন্তু ফোন ধরছে না নিতু! ধরছে না ভুল হবে। নিতু ওর ফোনটা বাসায় ফেলেই বাবার সাথে বেরিয়েছে মায়ের কবরস্থানে গিয়ে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। সকাল সকাল বাবা নিতুর ঘরে এসে ওরে নিয়ে গেছে আর বেখেয়ালে ফোনটা নেয়া হয়নি নিতুর।দশটা বেজে সতেরো মিনিটের দিকে নিতু বাবার সাথে বাড়ির পথে ফিরতে থাকে কিন্তু ওর চোখ আটকে যায় গোরস্তানের একটু ওই পাশের কাশবনে।
রিহান একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলছে, আবার গালে ঠোঁটে স্পর্শ দিচ্ছে! তখনো রিহান ওর বাম দিকে দেখেনি, মেয়েটা নিতুদের দেখতে পেয়ে সচেতন হওয়ার ইঙ্গিত দেয় রিহানকে আর রিহান তাকিয়ে দেখে নিতু হেঁটে যাচ্ছে বাবার হাত ধরে রিহানের দিকে তাকিয়ে অঝোরে চোখ থেকে অশ্রু গড়ায় নিতুর কিন্তু তার মাঝেও ঠিক রিহানের চোখে তাকিয়ে থুথু ফেলতে ভুল করেনি নিতু! নিতুর চোখে অশ্রু দেখতে পেয়ে বাবা জিজ্ঞেস করেন,”কিরে মা কাঁদছিস কেনো?” বাবাজে জড়িয়ে ধরে, “তোমরা বাবা মা আসলেই যা করো আমাদের ভালোর জন্যই করো বাবা! এটা বুঝেছি বলেই খুশিতে কাঁদছি বাবা, খুশিতে কাঁদছি”