তোর নাক ফুল কই?” চাচাতো বোন সুপ্তির বাড়ি বেড়াতে গেছি সেবার । মা বাবা, চাচা চাচী, জ্যাঠাইমা, জ্যাঠাতো বোন তনয়া, আমি আর তপন। তো সু্প্তি আপুর নাকে নাক ফুল নেই দেখে জ্যাঠাইমা জিজ্ঞেস করলো। “সেদিন পুকুরে গোসল দিতে গিয়ে হারাইছে।” আপু জবাব দিলো।
“ওমা সে কি! সেজন্য নাক খালি রাখবি ! এতে জামাইয়ের যে অমঙ্গল হবে, আয়ু কমে যাবে !” জ্যাঠাইমা এমন ভাবে বললেন যেন, সুপ্তি আপুর স্বামীর মোট আয়ু সত্তুর বছর, তার হতে নাক ফুল নাকে না থাকায় তার আয়ু কমে চল্লিশে নেমেছে!
প্রায়ই শুনি, অনেক বিবাহিতা মহিলাকেই শুনতে হয় যে হাতে চুড়ি না পরলে বা নাকে নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যায় বা স্বামীর অমঙ্গল হয়। ব্যাচারা স্বামী ! স্ত্রীর নাকফুল বা তাদের হাতের চুরি’র সাথে তার আয়ুর সম্পর্ক কি? বিবাহিতা নারীরা তাদের স্বামীর আয়ু ঠিক রাখতে নাকে নাকফুল দেয় মানলাম, কিন্তু অবিবাহিতা নারীরা নাকে নাক ফুল দেয় কার আয়ু রক্ষায়?
আমরা আপুর বাড়ি হতে ফেরার দু দিন পর আপুর স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলো। ব্যাপারটা কাকতালীয়ভাবে মিলে গেল কেমন যেন। জ্যাঠাইমা সুপ্তি আপুকেই দোষারোপ করলো সম্পূর্ন! ওর নাকে নাকফুল না থাকার কারনেই না কি মৃর্ত্যু হয়েছে ওর স্বামীর! স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই হলো না ওর। ফিরে এলো আমাদের কাছে। নিত্যদিন কথার জ্বালা – জ্যাঠাইমাসহ পাড়ার বেশ কজন মহিলা উঠতে বসতে ওকে বলে, নিজ দোষে জামাইকে মারলো!
প্রায়ই দেখি ওকে কাঁদতে। বড় বোন, কান্না সহ্য করতে পারি না, কেমন যেন আমারো কান্না আসে! একদিন বললাম, আপু এত জ্বালা সহ্য করার চেয়ে ঢাকা গিয়ে চাকরি কর। বাপের বাড়িতে পরের ঘাড়ে বসে থাকার চেয়ে নিজ পায়ে দাড়া। সুপ্তি আপু চলে গেল ঢাকা। ওর চলে যাবার দু মাস পরেই বিয়ে হলো তনয়ার।
তনয়ার বিয়ের ছ’মাস না পেরুতেই একদিন খবর এলো ওর স্বামী হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। তনয়া তখন আমাদের বাড়িতে। সুপ্তি আপুও ঢাকা হতে বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসেছে। যখন খবরটা শুনলাম, তখন আমরা সবাই এক সাথে বসে গল্প করছিলাম। খবরটা শুনেই কেন যেন আমার চোখ দুটো স্থির হলো তনয়ার নাকে। বিয়েতে ওর স্বামীর দেয়া স্বর্নের নাকফুলটা নাকে শোভা দিচ্ছিলো তখন। তা দেখে সুপ্তি আপুর দিকে তাকালাম। দেখলাম সেও তাকিয়ে আছে তনয়ার নাকের দেখে। হয়তো ভাবছে সে, ” ওর তো নাকে নাকফুল আছে, তাহলে ওর স্বামী মরলো কেন?”
তনয়া, সে চিৎকার করে কাঁদছে তখন সদ্য বিধবা হবার শোকে। চাচী কে দেখলাম, তিনিও মেয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চোখের জল ফেলছেন ! আমার কেন যেন খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তখন জ্যাঠাইমাকে জিজ্ঞেস করি , ” জ্যাঠাইমা, তনয়ার নাকে নাকফুল তো ছিলই, তাহলে ওর স্বামী মারা গেল কেন?”