পালাবে কোথায়

পালাবে কোথায়

আপনি তো সব জেনে-শুনেই আমাকে বিয়ে করেছিলেন”-কথাটা বলেই আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম গরম পরিবেশটা মুহুর্তেই যেন শান্ত হয়ে গেল..শুধু শোনা যাচ্ছিল,আমার ফুপিয়ে উঠার শব্দ।আর সে একদম চুপ হয়ে গেছে..

ছোট বেলা থেকেই আমি শব্দ করে কান্না করতে পারিনা,ফুপিয়ে উঠি শুধু..এমন সমস্যা টা অনেক কষ্টের,যারা আমার মতন শুধু তারাই বুঝতে পারবে আমার স্বামীর সামনে আজ প্রথম বার কাঁদছি..আমাদের বিয়ে হয়েছে আট মাস..Arranged marriage হয়েছে আমাদের..আমার বিয়েতে একটুও মত ছিলো না কারণ একটা ছেলেকে আমি অনেক ভালোবাসতাম..রিলেশনের এক বছরের মাথায় সে আমাকে ধোঁকা দেয় অনেক সরল মন নিয়ে তাকে ভালোবেসেছিলাম তো,ধোঁকা টা মেনে নিতে পারিনি..

অনেকটা পাগলামি করতাম তারপর.ঠিক মত খেতাম না,বাইরে বের হতাম না,সবসময় মেজাজ খিটখিটে থাকতো আমার,কারো সাথে ভালো করে কথা বলতাম না..প্রায় প্রায় দিনের বেলায়,নিজের রুমে দরজা লক করে ঘর অন্ধকার করে কাঁদতাম..আর প্রায় সারা রাত জেগে থাকতাম,বেঈমান টার স্মৃতি জড়িয়ে আমার এই বিষয় গুলো বাবা-মা হয়ত খেয়াল করেছিল..তাই অনেক টা আমার অনুমতি ছাড়াই খুব তোড়জোড় করছিলো আমার বিয়ের বেশ অল্প সময়ের ভেতর একটা পাত্রও ঠিক হয়ে গেল..বাবার বন্ধুর ছেলে..আমাকে না বলে বাবা আমাকে দেখার দিন ঠিক করে ফেললো..শুধু ছেলে পক্ষরা দেখতে আসার আগের দিন রাতে আমাকে জানালো আমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল,আমি কিছু তেই বিয়ে করবো না..

পাগলামির মাত্রা বেড়ে গেল ঘরে দরজা দিয়ে ভাংচুর শুরু করে দিলাম..অস্থিরতা থেকে এসব করছিলাম,কিন্তু ভেতরটা ভেঙে-চুরে যাচ্ছিলো আমার ঘরে আমি এত কিছু করছি, কিন্তু বাবা-মা আমার খোঁজ নিলো না তার মানে বুঝে নিলাম,বিয়ে টা আমাকে করতেই হবে ভীষণ অভিমান জমছিলো সবার উপর,এমনকি নিজের উপরও ক্লান্ত হয়ে গেলাম একসময়।সব পাগলামীকে থামিয়ে,চুপ করে মেঝেতে শুয়ে পড়লাম চোখের পানি গড়িয়েই যাচ্ছিলো। এভাবেই সারা টা রাত পার হলো পরদিন সকাল থেকেই কাউকে কিচ্ছু বলি নাই..বোবা হয়ে ছিলাম..ভালো মেয়ের মত রেডি হয়ে দেখা দিলাম,ছেলের পরিবারের সামনে শুনলাম,ছেলে আমার সাথে একা কথা বলতে চায় আমার এক ভাবি, ছেলেকে আর আমাকে নিয়ে আমাদের বাসার ছাদে নিয়ে গেল ছেলে এটা-ওটা বলে আর আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেই..হঠাৎ তিনি বললেন–

ছেলেঃআমি কি আপনাকে একটু দেখার অনুমতি পেতে পারি?তখন অনেক মানুষের জন্য আপনার দিকে ঠিক করে তাকাতে পারিনি।। আমি তার দিকে একটু সরে দাঁড়িয়ে মুখ এগিয়ে বললামঃ নেন,দ্যাখেন আমাকে..এত কষ্ট করে আমাকে দেখতে এসছেন ভালো করে দ্যাখেন।।”

ছেলেঃবাহ,আপনি তো দেখছি কথা বলতে পারেন..আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বোবা। (কিছু বললাম না পাক্কা ১ মিনিট পর সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললাম-)

আমিঃদেখা হয়েছে?নাকি আরো দেখবেন??

ছেলেঃ(চাপা হেসে)হুম..বড্ড হয়েছে..

আমিঃতো কেমন দেখলেন?পাত্রী কি পছন্দ হয়েছে নাকি?

ছেলেঃউমম পাত্রী বোধ হয়, সারা রাত ঘুমায়নি চোখ দেখে মনে হলো।

কথা টা শুনে বুকের ভেতর কিসের যেন ধাক্কা দিয়ে উঠলো..আমি শক্ত গলায় বললাম,”আমার একটা প্রেম ছিলো..আপনাকে বিয়ে করলে কিন্তু ভালোবাসতে পারবো না ছেলে টা কেমন জানি হালকা হেসে অনেক সহজ গলায় বললো, “আচ্ছা আমাকে ভালোবাসতে হবে না,শুধু অন্যের হাত ধরে যেন পালিয়ে যেও না আমি খুব অবাক হলাম..উনার দিকে তাকাবো মুখ দেখে বোঝার জন্য,অমনি ভাবীর ডাক পড়লো আমি নিচে নেমে যাচ্চি উনি আস্তে করে বললেন,”পাত্রী কেমন লেগেছে সেটা বিয়ের দিন বলবো ব্যাস.তারপর বিয়েটা এক মাসের মধ্যে হয়ে গেল..আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে লাগলাম..মানুষ টা সে কেমন বলবো না,তবে আমাকে ভালো রাখার অনেক চেষ্টা করে..সবই ঠিক ছিলো,শুধু মাঝে মাঝে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন “আমি তাকে ভালোবাসতে পেরেছি কিনা”..

গত দুইদিন ধরে তার সাথে আমার রাগ-অভিমান পর্ব চলছিলো..আজ ঝগড়ার মাঝে আবারো ওই প্রশ্ন টা করে বসলেন তিনি,কিন্তু গম্ভীর কণ্ঠে..শুনেই কেন জানি আকাশ ছোঁয়া অভিমান জমে উঠলো।হয়তো তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তাই সহ্য করতে পারিনি আর অমনি বাঁকা উত্তর টা দিয়ে কান্না করতে বসে গেছি।

আমার কান্না দেখে হয়ত তারও সহ্য হচ্ছিলো না।আমাকে যেই না ডাক দিলো,আমি ভাংগা গলায় বললাম,”আমি বাপের বাড়ি যাবো আর উনি?আমার কাছে এসে ধপ করে বসে প্রথম দিনের সেই হাসির মত একটা হাসি দিয়ে বললেন-“কেন?পালিয়ে যাবা নাকি?? বলেছিলাম না?ভালো না বাসলে হবে,কিন্তু পালিয়ে যাওয়া যাবে না!” ঐ অবস্থায়ই হেসে ফেললাম আমি আর সে,তার হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে,আমার হাত নিজের হাতে ধরে খুশিয়াল গলায় বলে উঠলো– “এই যে ধরে ফেলেছি তোমাকে এখন পালাবে কোথায়??

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত