কবিতা

কবিতা

আমাকে এক বোবার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটু বড় ধরনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। হুট করেবাবা মা জোর করেই আমার বিয়ে দিয়ে দিলো আমার মতামতের কোন তোয়াক্কা না করে। আমি বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে। আমার বিয়ে নিয়ে তাদের আগ্রহটাও বেশি। গ্রামের কোন একটা মেয়েরসাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। কেমন মেয়ে, কি করে, কতটুকুপড়াশোনা করেছে, ভবিষ্যতে কি করার ইচ্ছা আমি কিছুই জানি না। মায়ের মুখ থেকে এতটুকুই শুনেছি মেয়ে নামাজি, সংসারি, খুব নম্র, ভদ্র, গলার স্বর ছোট।কিভাবে বুঝাই আজকালকার দিনে এইসব কেউ খুঁজতেযায়! আর এগুলা এখনকার কোন মেয়ের মধ্যে আছে?

বিয়ের প্রথম রাত – ‘বউ ঘোমটা দিয়ে আছে দেখেই কেমন জানি গা ঘিনঘিন করে উঠলো। আমি ঘোমটাপরামেয়েটির দিকে না তাকিয়ে জানলার পাশে গিয়েদাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে টেন রাত তিনটা বাজালাম। আর মেয়েটা ওভাবেই বসে আছে।’ যাইহোক আমি আমার মত ঘুমিয়ে গেলাম।সকাল বেলায় ঘুম ভাঙলো সেই ঘোমটাপরা বউ এসে চাদিয়ে গেল। ঘরের এটা-ওটা গোছগাছ করছে।মেয়েটাকেদেখে আমার মনে হলো পুতুলকে ব্যাটারি দিয়েনাড়াচাড়া করানো হচ্ছে। এভাবে বেশ কয়েকদিন কাটলো রাতের বেলায় ঘরেঢুকেই দেখি ঘুমিয়ে আছে আর সকাল হলে আর খুঁজেপাওয়া যায় না। সারাদিন মায়ের সাথেই থাকে আজ পর্যন্ত আমার সাথে দশটা কথাও বললোনা, তাহলে তাকে বোবা বলবো না কি বলবো?

আমি একজন লেখক মানুষ লেখক বলতে আমি কবিতা লিখি কবিতা আমার প্রিয়। আগে খুব করে ভাবতাম এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করবো আমার কবিতার আবেদন বুঝবে, খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারবে তাকে দেখলেই আমার কিছুনা কিছু লিখতে মন চাইবে। কিন্তু আমি কি পেলাম! ভাবতে ভাবতে বিকেল বেলায় ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমার খুব জ্বর। সারারাত ধরে মেয়েটি জলপট্টি দিলো মাথায়। সকালবেলায় যখন ঘুমভাঙে তখন দেখি মেয়েটির মাথা আমার বুকের উপরে। হাতটা আমার মুখের উপর। হঠাৎ আমার খেয়াল হলোমেয়েটির হাতের দুইটা আঙুল খুব করে কাটা। আচমকা উঠে দাঁড়ালো উঠেই জিঙ্গেস করছে আপনার জ্বরকমেছে? বললাম হ্যাঁ।

আমি তখনই প্রশ্ন করলাম তোমার আঙুল কাটলো কিভাবে? অনেক কাজ আছে বলে চলে গেল। সন্ধ্যায় ঔষধ খাওয়াতে এসেছে আমি কিছু একটা লিখছি তখন। ওঁ কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইলো। ওঁরদিকে আমার নজর পড়লো, আমাকে বললো কবিতাটা লেখা শেষ? আমি মেয়েটার কথায় অবাক হলাম কিভাবে জানলো আমি কবিতা লিখছি? বললাম বসো। জিঙ্গেস করলাম কিভাবে জানলে কবিতা লিখছি? একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললো “নাহ এমনি, আসলে আপনি যেভাবে ভাবছেন তাতে মনে হলো কবিতাই লিখছেন”। তো এসে দাঁড়িয়ে রইলে কেন, কিছু বললেনা কেন? ” আসলে ভাবনার জগতের আয়ু সীমিত, যদি মনযোগ নষ্ট হয় তাই” আচ্ছা তোমার নামটা যেন কি?

-রেখা।

ওহ হে শুনেছি। “আচ্ছা আপনি লেখেন আমি যাই” বললাম কেন? ” যাকে ভেবে লিখছেন আমি সামনে থাকলে সে হয়তোবা চলে যেতে পারে।” আমি যে আট লাইন লিখলাম কলম দিয়ে একদম কেটে দিলাম। মেয়েটা বললো “ওমা এটা কি করলেন? আমি কালকে সকালে কি পড়বো?” আমি অবাক হলাম। ওঁ কি বললো এটা?

চোখাটা নিচে নামিয়ে বললো আমি এই ডায়রির কবিতা পড়ি। আমি খুব রেগে গেলাম আমার অনুমতি ছাড়া কেন আমার ডায়েরিতে হাত দিলা? বললো-“সরি, ক্ষমা করবেন আর কোনদিন হবেনা।” এবার জিজ্ঞেস করলাম আবৃত্তি করতে পারবা? কিছু বলছেনা চোখ দিয়ে শুধু নলকূপ ছাড়ছে। আবার ধমক দিয়ে বললাম পারবা? খুব ছোট কর বলছে কলেজের ফাংশনে একবার আবৃত্তি করেছিলাম। আমি খুব করে ধরলাম আমাকে বলনি কেন? সহজ ভাষায় উত্তর দিলো আপনি কি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তাই তো আমি তো ওঁকে কখনোই জিজ্ঞেস করিনি ওঁ কি করে কি পারে। যাইহোক চোখ মুছে দিলাম। কবিতা পড়ার অভ্যাস আছে বলতেই তো পারতা। বললো -“ভয়ে বলি নি।”

আমি এবার বায়না ধরলাম আমার খুব জ্বর আসছে আমি কবিতা শুনবো। এ্যাই নাও ডায়রি প্রথম থেকে শুরু করো। ওঁ আজ রাতটাও আমার বুকেই ঘুমিয়ে ছিলো। সকালবেলায় উঠেই বললো অনেক কাজ পরে আছে। পেছন থেকে ডাক দিলাম.. “কবিতা!” পেছন ঘুরে মুচকি হেসে বললো -“এই কবিতা পালাবেনা আসছে…”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত