আমার বন্ধু ইয়াসির দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খাওয়াতে এক্সপার্ট। সেদিন আমায় হঠাৎ ফোন করে বলল – আকাশ তাড়াতাড়ি চলে আসতো চৌরাস্তার মোড়ে, এক জায়গায় যাব। আমি জিজ্ঞেস করলাম – কই যাবি?
– তাড়াতাড়ি চলে আয় পরে জানতে পারবি। অবশ্যই নতুন জামা-কাপড় পড়ে পরিপাটি হয়ে আসবি। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে ওখানে গেলাম বেশ কৌতুহল নিয়ে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – আচ্ছা এবার বল কোথায যাবি? ইয়াসির বলল – মোজাফরপুর নাম শুনেছিস? আমি বললাম
– শুনেছি, না শোনার কী আছে? আমাদের উপজেলার একদম শেষ প্রান্তে যে গ্রামটি। ইয়াসির বলল- হ্যাঁ ঐ গ্রামে আজকে একটি অনেক বড় বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। ভাবলাম সারা জীবন তো একা একাই খেলাম এবার না হয় তোকে নিয়ে যাই। আর তুই যে লেভেলের ভীতু, তর ভীতুনেস কমানো দরকার। হাজার হলেও তো আমি তোর বন্ধু, ইতিহাস তাড়া দিল এই বলে যে, আমার কিছু একটা করা উচিত তর জন্যে। আর সে কারণে ভাবলাম রোমাঞ্চকর ব্যাপার গুলোর মাধ্যমে আমি তোর ভয় দূর করে দিব এবং তোর ভয় দূর করার এটাই হচ্ছে আমার প্রথম পদক্ষেপ। আমি কিছুটা সততার বিদ্রোহ জুড়ে দিয়ে বললাম – ভাই, আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না আমি যেতে পারব না। আর এটা একটা অপরাধ, দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খাওয়া। ইয়াসির সুন্দর ভাবে আমাকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো – এটা কোন সমস্যাই না। এটা সাধারণত মানুষ করেই থাকে। আর কতকাল আগে থেকে এরকম দাওয়াত ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস মানুষের তৈরি হয়েছে সেসবের পরিপূর্ণ দলিলগুলো আমার কাছে এ মুহূর্তে নেই। থাকলে তোকে বিশ্বাস করানোটা স্বাভাবিক ভাবে সহজ হতো।
এরকম অনেকগুলো মন গলানো কথা হজম করার শেষে আমি রাজি হলাম। নিজেরও যে খাওয়ার প্রতি লোভ ছিলনা, সেরকম শিক্ষনীয় বাক্য পেশ করাটা ন্যায়সঙ্গত মনে হচ্ছে না। একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। আমার ভয় করলেও ইয়াসিরের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সাহস সঞ্চার করছি।
বিরাট বড় গেইট। নানান মানুষ আসছে বিয়েতে। যদিও আমরা বর পক্ষের না কনে পক্ষের সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণা ছিল না। ইয়াসির আমাকে বুঝিয়ে দিল কোনো ভাবেই যেন আমার মাঝে ভয় না থাকে। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ সাথে আছে সমস্যা সমাধানের গুরু খ্যাত অনন্ত জলিলের পুরাতন ভক্তদের একজন ইয়াসির আকন্দ।
ইয়াসির আমায় নিয়ে খেতে বসল। আমার দিকে মানুষের বিদঘুটে তাকানো দেখে কেমন যেন বুকের ভেতরটায় মাঝরাতে খাটের নিচে ইদুর দৌড়ানোর শব্দের মত অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলাম। ইয়াসির দিব্যি বসে আছে। আবার মাঝে মাঝে খাবার পরিবেশক ছেলেদের ধমকও দিচ্ছে। আমি যতটা না বিয়ে খেতে এসে অবাক হচ্ছি তার চেয়ে বেশি ইয়াসিরকে দেখেই অবাক হচ্ছি।
খাওয়া শুরু হতে কিছুক্ষণ বাকি। একজন খাবার পরিবেশক পানি রাখতে গিয়ে কিছুটা পানি ইয়াসিরের প্যান্টে ফেলে দিল। মূহুর্তে ইয়াসির উঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল – এইডা কী করলেন? চোখ নাই? আপনি কোন লেভেলের ফাজিল? এই লোককে দায়িত্ব দিল কে? আরো অনেক গুলো বীরত্বপূর্ণ বাক্য ইয়াসির একটানা পেশ করলো।
খেতে বসা সব মানুষ ইয়াসিরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এসব দেখে আমার ভয় করতে লাগলেও ইয়াসির মনে হয় উল্টো অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। আর তাই পরে বিষয়টাকে শুধু একটা ছোট ভুলের গন্ডিতে না রেখে সে আবার গর্জন করে বলে ফেলল – আপনারা জানেন ই না বরপক্ষকে কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয়। আপনাদের এলাকায় বিয়ে করানোটাই ভুল হচ্ছে। ব্যস কথার লাগাম ফসকে ইয়াসির যেটা বলল তারপর আর খাওয়া তো হলোই না এর পরিবর্তে ৪০ বার কানে ধরে ওঠবস করতে হলো ঐ এলাকার মুরুব্বি আর সুন্দরীদের সামনে।
বিস্তর নিরব গবেষণায় পরে জানতে পেরেছিলাম ওটা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল না। ওটা ছিল ঐ গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আব্দুর রউফ সাহেবের ছোট ছেলের মুসলমানীর অনুষ্ঠান। আর যে সাধারণ লোকটি ভুল করে ইয়াসিরের গায়ে পানি ফেলেদিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন রউফ সাহেবের বড় ছেলে ওরফে ঘাউড়া নয়ন।