এক মাসের ভেতরেই বিয়ে

এক মাসের ভেতরেই বিয়ে

দুপুরে বাসায় ফিরতেই দেখি মা মেঝেতে মাথায় হাত দিয়ে কান্নার ভঙ্গি করে বসে আছেন।হঠ্যাৎ মায়ের কিছু হয়েছে কি না ভেবে আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে তোলার চেষ্টা করতেই মা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, “হাত লাগাবি না শয়তান, তোর মতো ছেলে জন্ম দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে!ছিঃ ছিঃ ছিঃ কেনো যে এমন একটা ছেলে জন্ম দিলাম,ছোট বেলায় যদি জানতে পারতাম যে তুই বড় হয়ে এরকম হবি তাহলে তোকে রাস্তায় ফেলে আসতাম”

ঘটনার বিষয় বস্তু কিছুই আমি বুঝতে পারলাম না।এতো গুলো ঝাড়ি শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আমি।
রুমের দিকে তাকাতেই দেখলাম বাবা মাথা নিচু করে দীর্ঘ স্বাস ফেলছেন। ব্যাগ রুমে রেখে এসে বাবার পাশে গিয়ে বসলাম।বাবার হাত টি হাতে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, “বাবা কি হয়েছে!” বাবার সাথে আমার ছোট বেলা থেকেই বেশ ভালো বন্ধুত্ব তাই বাবাকে সব কিছু খুঁলে বলি।বাবা ও মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই আমাকে শেয়ার করেন।বিশেষ করে মা যখন আমার উপর চটে যান তখন বাবা আমার পাশে এসে দাঁড়ান।

বাবা কিছু না বলে আমার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলেন।দুপুর হলেও ছাদে এই সময়ে অনেকেই কাপড় শুকাতে দিতে আসে।আর সবার সাথে আমার অনেক ভালো পরিচয় থাকায় সবাই বেশ হাসিখুশি ভাবেই আমার সাথে কথা বলে।কিন্তু আজ ছাদে যাওয়ার পর দেখলাম সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে।এমনকি নিচ তলার বাসার আমার বন্ধু আসিফ ও আমার দিকে ভুত দেখার মতো তাকাচ্ছে।আমাদের দুজনকে ছাদে প্রবেশ করতে দেখে তারা সবাই কাজ ফেলে একে একে বেরিয়ে গেলো।এর পেছনে ও আমি বিশেষ কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। বাবা আমাকে ছাদের এক কোণে নিয়ে গেলেন।আমার দিকে নিরাশ মুখে তাকিয়ে বললেন,

–উনাকে কি তোর খুব পছন্দ হয়েছে? আমি বুঝতে পারলাম না বাবা কার কথা বলছেন।

–কাকে বাবা?ঘরে কি হয়েছে, মা এতো কথা কেনো শুনালো! বাবা একটু কর্কশ স্বরে বললেন,
–আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল।
–তুমি কার কথা বলতেছো বাবা!কাকে পছন্দের কথা বলতেছো!
–দেখ বাবা পছন্দ যে কারো যে কাউকে যে কোনো বয়সে হতেই পারে।আর তোর এখন ভুল করার বয়স। তুই আরো কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাবি ঐ বিধবা মহিলার চিন্তা বাদ দে।

–ছিঃ ছিঃ বাবা তুমি এসব কি বলতেছো।
–দেখ বাবা, শান্ত হ। আমি তোর ভালোর জন্যই বলতেছি।
–আরে বাবা তুমি কোন বিধবা কিসের বিধবার কথা বলতেছো!
— বাবা তুই কিছুদিন সময় নেয়। তোর আশে পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে।ঐ বিধবা মহিলা কিছুদিন পর মরে যাবে তখন তর কি হবে সেটা ভেবে দেখ।

এই বলে বাবা চলে গেলো। আমি ক্যাবলার মতো ছাদে দাঁড়িয়ে থাকলাম।অনেক ক্ষিধে লেগেছে তাও বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না।এমনিতেই চার পাঁচ দিন অনেক প্যারায় গেছে।এখানে নতুন বাসায় উঠেছি আজ সাত দিন হলো।এতো দিন ধরে সব কিছু গুছিয়ে আজ নিশ্বাস ফেলার আগেই একটা ঝামেলা শুরু। ঘন্টাখানেক ছাদে হাটাহাটি করে সময় কাটিয়ে বাসায় ফেরার সময় দেখলাম দুটো বিল্ডিং পেরিয়ে সামনের যে উঁচু বিল্ডিং আছে সেখান থেকে একজন মহিলা আমার দিকে হাত নাড়া দিচ্ছে। আমি একটু থেমে তিনি পরিচিত কিনা চেনার চেষ্টা করলাম।উনাকে অপরিচিত মনে হওয়ায় আমি আবার ফিরে এলাম।

বাসায় গিয়ে দেখলাম বাসার পরিবেশ এখন তুলনামূলক ভাবে শান্ত।মা একটু ঘুমিয়েছে।রান্না ঘরে গিয়ে বড় বোনের কাছে ভাত চাইতেই পায়ের জুতা খুলে আমার গায়ে বসিয়ে দিলো।বেচারা আমি আর কিছু না বলে নিরিহ মানুষের মতো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে ফোনের কাপা কাঁপিতে ঘুম ভাঙলো।উঠে দেখি সকাল সাতটা বাজে। ডাইনিং রুম দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম মা এখনো মুখ ফুলিয়ে আছেন। নাস্তা না করেই রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম।কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠ্যাৎ করে কেউ একজন আমার হাত পেছন থেকে ধরে ফেললো।ফিরে তাকিয়ে দেখি অর্ধবয়স্ক একজন নারী বত্রিশ টা দাঁত বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন,

–এই শাকি, শাকি ঐ দোকানে আছে আমার কিছু টাকা বাকি! আমার নামকে ব্যাঙ্গ করায় রাগ উঠলো খুব।রাগ কে কন্ট্রোল করে বললাম,
–আন্টি আমার নাম শাকিব।শাকি নয়। আন্টি হে হেহে হে করে হেসে দিয়ে মেয়েলি আচরণ এর মাত্রা ছাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
–যাহ্ দুষ্টু, আন্টি বলছো কেনো! আমি আর কিছু না বলে উনার কথা না শোনার ভান করে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে টেবিলে বসতেই মা হাত থেকে জগ ফেলে দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে আব্বুকে বললেন,

–এই ঘরে লম্পট ছেলের ভাত নেই।দেশে মেয়ের ঠেকা পড়েছিলো,সুন্দরী মেয়ে গুলো বুঝি মরে গেছে।

এবার ও আমি কিছু বুঝলাম না।খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলাম। এভাবেই বাহিরে আরো তিন দিন খেলাম।ঘরের কারোর সাথেই আমার কোনো কথা নেই।এদিকে বাহিরে খেতে খেতে হাতের টাকা টাও ফুরিয়ে আসছে। আজ আকাশ টা পরিষ্কার। বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই একটু ছাদে গেলাম দূরবীন নিয়ে।এই বাসার আশে পাশে অনেক গাছ গাছালি তাই নানা পাখির দেখা মিলে। ছাদে গিয়ে দূরবীন দিয়ে পাখি দেখছি তখনি কোথা থেকে আম্মু এসে বেলন দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি বাড়ি দিতে শুরু করলেন আর বলতে থাকলেন,

–হারামজাদা বিধবার সাথে হাঁটে আবার ছাদে এসেছে।লজ্জা করে না।

আমার সহ্যের সীমা ভেঙে গেলো।কেউ তো আমাকে পুরো ঘটনা বলছেই না উলটে নানা ভাবে অত্যাচার করছে।
আমি আম্মুর হাত থেকে বেলন কেড়ে নিয়ে বললাম,

–আম্মু ব্যস অনেক হয়েছে, তোমার ছেলে গরীব হতে পারে কিন্তু লম্পট বা হারামজাদা নয়।আমাকে কেনো এভাবে মারছো!
–তুই দেশে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে বিধবার প্রেমে কেনো পড়লি!
–কোথায় বিধবার প্রেমে পড়লাম, কি সব আবোলতাবোল বলছো!
–আবোলতাবোল কোথায় বলছি,

তোর পাশের বাসার আন্টি দেখেছে ঐ বাসার বিধবা মহিলাকে তুই প্রথম দিন এসেই দূরবীন দিয়ে দেখেছিস।গতকাল নাকি তোদের রাস্তায় ও এক সাথে দেখেছে।দেখ বাবা তুই যদি চাস তোকে এক মাস পরেই বিয়ে দিয়ে দিবো।লক্ষী সুন্দরী একটা মেয়ে এনে দিবো তোর জন্য তাও বাবা তুই ঐ বিধবা মহিলার পিছু ছাড়, সে দুদিন পরে মরে যাবে। এবার আমি আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম । প্রথমদিন আমার পাখি দেখাটাকে নিয়ে পাশের বাসার আন্টি ভুল বুঝে এতো প্যাঁচ লাগিয়েছে।তবে আমি চুপ করে থাকলাম। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আচ্ছা মা ঠিকাছে।এক মাসের ভেতরেই সুন্দরী মেয়ে খুঁজে দিতে হবে।

সিঁড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে নেমে এলাম।ঐ মহিলার সাথে কিছু না থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বলা লাগলো।মিথ্যে থেকে যদি এক মাসের ভেতরেই বিয়ে হয়ে যায় তাহলে মন্দ কী! সবাই পাত্রী খুঁজুন,এক মাসের ভেতরেই বিয়ে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত