ঈদে শাকিব খানের সিনেমা আসতেছে, ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না।’ এদিকে আমার বন্ধু মিজান হাট থেকে খালি হাতে ফিরে এসে দুঃখ দুঃখ গলায় বলতেছে, ‘মনের মত গরু পাইলাম না।’
মিজান কাল আবার হাটে যাবে। আশা করা যায় সে তার মনের মত গরুটা খুজে পাবে। কিন্তু পরের হাটেও মিজান গরু খুজে পায়নাই। তার মনে বড়ই দুক্ষ। এদিকে তার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। মনের মত পাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো। সেদিকে অবশ্য মিজানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। আসলে এই ঈদে মনের মত মানুষ কেউ চায় না। সবাই মনের মত গরু আর ছাগল চায়। অবশ্য গরু ছাগলরা মনের মত মানুষ চাইতে পারে। যারা তাকে কুরবানির আগেরদিন পর্যন্ত একটু ভালোভাবে দেখাশুনা করবে। যত্নে রাখবে। মালিক একবারের বেশি তিন চারবার পাছায় থাবড়া দিলে গরুটা তখন মন খারাপ করে বলে, ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না।’
তো হাটে ঘুরে গরু দেখতে দেখতে মিজানের এতোটাই স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে যে, সেদিন ওরে বলতেছি, ‘দোস্ত, পাইওনিয়ার কলেজের একটা মেয়েরে ভীষণ পছন্দ হইছে।’ মিজান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কয় দাত?’ এমনকি সে এখন রাস্তায় লোকজন দেখেও বলে দিচ্ছে মানুষটার গায়ে হাড়, চর্বি ছাড়া ঠিক কত কেজি পিওর মাংস হবে। এলাকার এক বড় ভাই গত শুক্রবার বিয়ে করেছে। বউ একটু মোটাতাজা। বিয়ের দিন মিজান স্টেজে উঠছে বউ দেখতে। পাশ থেকে কে যেন জিজ্ঞেস করছে, ‘কিরে, ভাবী কেমন? মিজান উত্তর দিছে, ‘চর্বি একটু বেশি। তবে ফেলে দিলেও আড়াই মনের একপিস মাংস কম হবেনা। বাজি ধরে দেখতে পারেন। ভাই জিতছে মাশাল্লাহ।’ মিজান আপাতত আত্মগোপনে আছে আমার বাসার চিলেকোঠায়। বড়ভাই মিজানরে খুজতেছে মারার জন্য। আমি দুপুরের খাবার দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ক্যামনে বুঝলি আড়াই মন মাংস হবে?’
– আন্দাজ করছি। তবে পাছায় যদি একটা থাবড়া দিতে পারতাম তো আরেকটু শিওরলি বলতে পারতাম। রান ল্যুজ না টাইট এর উপর নির্ভর করে মাংস সলিড কিনা। চর্বি কতটুকু আছে। তবে কি আর করা, ভাবী তো স্টেজে বসে ছিলো।
– ভাগ্যিস বসে ছিলো। আল্লাহ বাঁচাইছে!
তবে বড়ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে পারলেও, মিজানের কপালে মাইর লেখাই ছিলো।কথা ছিলো ঈদের পরপর মিজানের বিয়ে হবে। কিন্তু হবেনা সম্ভবত। সে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি আছে। অবশ্য মেয়ে দেখতে গিয়ে মেয়ের মুখের মধ্যে হাত ঢুকায়ে কয় দাত চেক করতে গেলে মাইর তো নিশ্চিত খেতেই হবে৷ এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে! জাস্ট কল্পনা করেন, দুই ফ্যামিলির সবাই বসে আছে। চা নাস্তা চলতেছে। সবার অনুরোধে মেয়ে লাজুক মুখে মিজানকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনি বই পড়েন? আপনার প্রিয় লেখক কে?’ মিজান ঠিকঠাক উত্তর দিছে। আমরা তখনো কল্পনাতেও ভাবীনাই ওর মাথার মধ্যে কি চলতেছে।
আরো কয়েকটা প্রশ্ন করার পর মেয়ের বাবা মুচকি হেসে বলেছে, ‘এবার ছেলের যদি কিছু জানার থাকে!’ ‘জানার কি আছে, আমিই দেখতেছি। এটা বলে মিজান উঠে গিয়ে মেয়ের গালের মধ্যে তিন আঙুল ঢুকায় দিয়ে মেয়ের মায়ের দিকে তাকায়া জিজ্ঞেস করছে, সত্যি করে বলেন কয় দাত। একদম মিথ্যা বলবেন না।’ তাও ভালো বয়স জানার জন্য মাড়িতে হাত দিয়ে দাত দেখতে চাইছে। পাছায় থাবড়া দিয়ে মাংস সলিড কিনা দেখতে যায় নাই। এদিকে মিজানের বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে আগেই। তার আব্বা সৌদি থাকে বলে বিয়ে দেয়া হয়নি এতোদিন। এই ঈদে ছুটি নিয়ে আসছে শুধুমাত্র ছেলের বিয়ে দেয়ার জন্য। ঈদের পরপরই চলে যেতে হবে আবার৷ এর মধ্যে বিয়ে না দিতে পারলে সর্বনাশ।
কি করা যায়? সবাই মিলে বুদ্ধি দিলো মিজান আগে হাট থেকে গরুটা কিনে আনুক। একবার গরু কিনলেই আশা করা যায় সে আর উল্টাপাল্টা কথা বলবে না। মিজানকে হাটে পাঠানো হলো৷ সে মোটামুটি মাড়ি চেক করে, উপর্যুপরি চড় থাপ্পড় দিয়ে কুষ্টিয়ার একটা কালো গরু কিনে ফেললো। বিক্রেতা এক লাখ চাইলেও সে মূলামুলি করে আশি হাজারে কিনেছে। বাসায় আসার পথে মনের আনন্দে লোকজনকে গরুর দাম বলতে বলতে আসলো। বাসায় আসার পর দেখা গেলো তার আচরণ স্বাভাবিক। একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি দেখায়া জিজ্ঞেস করলাম, ‘কয় দাত হবে দেখ তো?’ সে লাজুক হেসে বললো, ‘ধুর গাধা, মেয়ে কি গরু নাকি? মেয়ের পরিচয় দাতে না, তার চোখে। কি অসম্ভব মায়াময় চোখ দুটো, দেখেছিস?’ বুঝলাম, যাক। ঝামেলা গেছে। তারপরও রিস্ক না নেয়ার জন্য এবার আর ফ্যামিলির সাথে না, মেয়ে ছেলে আলাদা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পাঠানো হলো। দুইজন কথাবার্তা বললো ঘন্টাখানেক ধরে। খাওয়াদাওয়াও করলো। সব শেষে মেয়ে আবদার করলো তাকে যেন মিজান বাসা অব্দি আগায় দিয়ে আসে।
পাশাপাশি রিক্সায় দুজন। রোমান্টিক পরিবেশ। বিকাল শেষ হতে চলেছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে৷ হঠ্যাৎই রাস্তায় মিজানের সাথে এলাকার এক ছোটভাইয়ের দেখা হলো। ছোটভাই মিজান আর মিজানের পাশের সুন্দরীকে দেখে যা বুঝার বুঝে নিলো। মাথা নেড়ে সহাস্যে বললো, ‘ভাই, সুন্দর মানাইছে।’মিজান একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো, ‘একলাখ চাইছিলো মূলামুলি করে আশিতে আনছি। অরিজিনাল কুষ্টিয়ার জিনিস। একফোটা চর্বি নাই গায়ে।’ উল্লেখ্য মেয়ের গ্রামের বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়া। সেদিন অবশ্য মিজানের মাথা ফাটেনাই। মিজান নিজেই ব্যাখা দিয়েছে, ‘বার্মিজের স্যান্ডেলের বাড়িতে জোর নাই। মাথা ফাটা সম্ভব না।’
পরিশিষ্টঃ মিজানের বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে আরেক ঘটনা। এবার মিজানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো মুখে ব্যান্ডেজ বেধে। বলা হয়েছিলো এক্সিডেন্ট করে গাল কেটে গেছে। কথা বলতে সমস্যা৷ যাতে সে উল্টাপাল্টা কিছু বলতে না পারে।
ছেলেমেয়ে দুইজন দুইজনকে দেখার পর মিজানকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কিরে? পছন্দ হয়?’মিজান ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। এবার মেয়ের এক চাচা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি ব্যাপার মা, ছেলে কেমন দেখলে?’ মেয়ে আরেকবার মিজানকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলেছে, ‘বয়স একটু বেশি হলেও মাংস নরম হবে। প্রেশার কুকারের তিন সিটিতেই গলে যাবে আশা করা যায়।’আলহামদুলিল্লাহ। ঈদের দুইদিন পর মিজানের বিয়ে। সবাই আসবেন। শাকিব খান না পাইলেও মিজান মনের মত মানুষ আর গরু দুইটাই পাইছে!