বুমেরাং

বুমেরাং

‘আপনি মেয়েদের ঠিক কোন অংশের দিকে তাকিয়ে থাকেন?’ ডাক্তারের প্রশ্ন শুনে কিছুটা ভিমড়ি খেলাম। ডাক্তার কতটা অভিজ্ঞ সে প্রশ্নে যাচ্ছিনা কিন্তু এতটা জায়গামত প্রশ্ন আমাকে কেউ কোনদিন মুখের ওপর করেনি। আমার অবস্থা বোধহয় ডাক্তার বুঝতে পারলেন। কথাটা ঘুরিয়ে অন্যভাবে আবার করলেন, ‘ ইয়ে মানে, আই মিন আপনি মেয়েদের দিক যখন তাকান তখন তাদের কোন জিনিসটা আপনাকে বেশি টানে?’ আমি কোন ভণিতা না করেই বললাম, ‘ বুক’ ডাক্তার নীলা একবার আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে নিজের এপ্রন টা বুকের কাছে টেনে নিলেন। আমি একটু মুচকি হাসলাম।

নীলা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ মেয়েদের বুকের দিকে তাকানোটা আপনার কাছে কেমন লাগে? শারীরিক উত্তেজনা হয় নাকি এমনি?’ এই প্রশ্নে আমি নড়েচড়ে বসলাম, বললাম, ‘ না, কোন উত্তেজনা হয়না। আমি এ কথা অনেককে বলেছি ডাক্তার, কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। ম্যাক্সিমাম বলেছে, আমি সেক্সুয়ালি সিক। কিন্তু আমি জানি তেমন কিছুনা।’ নীলা টেবিলে প্যাডের কাগজে কলম দিয়ে কিছু একটা লিখতে গিয়ে বলল, ‘ আপনি কিভাবে সিউর, আপনি সিক না?’

– ‘তা জানিনা, তবে আমি সিউর। আমি যতবার তাকাই না কেন, তেমন কোন পরিবর্তন আসেনা। ‘

ডাক্তার নীলা এবার এক ভয়ংকর কান্ড করে বসলেন। চেয়ার থেকে উঠে দরজা টেনে দিলেন, এপ্রন খুলে ফেললেন, বুকের ওড়না সরিয়ে বললেন, ‘ আমার বুকের দিকে তাকিয়ে থাকুন, আমি বলা না পর্যন্ত চোখ নামাবেন না। ঠিক আছে?’

আমি হা হয়ে রইলাম, নীলা এবার স্টেথোস্কোপ লাগালো আর আমার প্রেসার পাফ লাগালো। কিন্তু আমি কেন জানি তাকাতে পারছিলাম না। আশ্চর্যের ব্যাপার, বুক নয় এমনকি নীলার মুখের দিকেও তাকাচ্ছি না। নীলা সব ঠিক করে বললেন, ‘কী ব্যাপার, আপনি তাকাচ্ছেন না যে! তাকান, তাকান আমার দিকে..’ আমি কোন কথা বললাম না, কী অদ্ভুত এক নেশা কাজ করছে যেন ভেতরে ভেতরে। আমার সামনে যথেষ্ট রূপবতী এক ডাক্তার বসে আছেন, হয়তো তার স্তন ও সুপুষ্ট, কিন্তু তাতে কি আমি মাথা তুলতে পারছি না।

ডাক্তার নীলা সব যন্ত্র খুলে এপ্রন পরে নিলেন। তারপর আমি তার দিকে তাকালাম, খেয়াল করে দেখি তার মুখে মুচকি মুচকি হাসি। পৃথিবীর কোন মেয়ে এমন এক্সপেরিমেন্ট করেছে বলে আমি শুনিনি। আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মি. অরিত্র, আমি আপনাকে তেমন কোন ওষুধ দিচ্ছি না। এগুলো দুমাস খাবেন আর প্লিজ নিজেকে মোটিভেট করবেন। অন্তত এভাবেও ভাবতে পারেন, সব মেয়েই চলাচলে আর দশটা মানুষের মত অপ্রস্তুত থাকে, তাদের গায়ের কাপড় ঠিক নাও থাকতে পারে। তাই বলে, ওভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না।’

আমি মাথা নাড়লাম। কাগজপত্র গুছিয়ে বললাম, ‘আবার কবে আসবো?’ নীলা হেসে বলল, ‘দু মাস পরেই আসেন। আশা করছি, আপনি পারবেন।’ আমি উঠে চলে আসলাম। মনোবিদ ডাক্তার নীলার চেম্বারে আমার আর যাওয়া হয়নি। দু মাস নিজের সাথে অনেক লড়াই করেছি। বদভ্যাস বদলাতে গিয়ে এমন হয়েছি, কোন মেয়ের দিকেই তাকাতে পারিনা। এমনকি তার মুখের দিকেও না।

নীলার সাথে তাই চেম্বারে নয়, দেখা হল ওদের বাসার ড্রইং রুমে। আমি এখনই বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না। মা জোর করে তার বান্ধবীর এক ডাক্তার মেয়ে কে দেখাতে নিয়ে গেল। মেয়েকে আমার সামনে আনা হল, কিন্তু আমি তাকাচ্ছি না। মা আর তার বান্ধবী দুজনেই খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলেন। এমন সময় শুনি, মেয়েলি কন্ঠে বলছে, ‘ আমার মনে হয়, আমরা আলাদা কথা বললে..’আমার মা শুনেই বললেন, ‘হ্যা হ্যা, সেটাই ভাল। আজকালকার ছেলেমেয়ে আলাদা কথা বলে নিলেই ভাল। আর আমার ছেলেটা হয়েছে লাজুক।’

আমি এবার তাকিয়ে দেখি, নীলা বসে আছে। তাকে খুব সুন্দর লাগছে। ডাক্তার মেয়েগুলো এপ্রনের বাইরে এমন, আমি ভাবিনি। তবে কিছুটা অপমানিত হলাম এই ভেবে, সবার ভাব দেখে মনে হয় পাত্রী এসেছে লাজুক পাত্র দেখতে। নীলার ঘরের পাশের বারান্দাটা ভালই। বাতাস আছে, ফুলের গাছ ও আছে। আমি কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই পাশে বসে থাকা নীলাকে বললাম, ‘থ্যাংকস ‘ নীলা বলল, ‘সেটা কেন?’ আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আগের সমস্যাটা আর নেই।’

ও কিছু বলছিল না, আগের মতই মুচকি মুচকি হাসছিলো। আমিই বলতে লাগলাম, ‘আমি এভাবে আপনাকে দেখব, ভাবিনি। আসলে আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা। এমনকি আজীবন করতে পারব কীনা তাও জানিনা।’ নীলা এবার নড়েচড়ে বসলো, ‘কেন এমন মনে হচ্ছে?’

-‘মেয়েদের দিকে তাকালেই মনে হয়, এই বুঝি তাদের বুকের দিকেও চোখ যাবে। বিশ্বাস করবেন না, এটা খুব যন্ত্রণার, আমি কখনো চাইনা। ‘

: ‘আপনার একটা স্টেট ধীরে ধীরে মানসিক ইনসিকিউরিটিতে চলে যাচ্ছে। এটাও কিন্তু একটা রোগ। ‘

আমি অসহায়ভাবে আকাশের দিকে তাকালাম। নীলা হুট করে আমার হাত ধরলো। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় কেমন যেন করতে লাগলাম। বললাম, ‘মিস নীলা, আমার হার্টবিট বাড়ছে। আমার প্রেসার হাই মনে হয়। আপনি প্লিজ হাত ছাড়ুন, প্লিজ।’ নীলা বলল, ‘না, ছাড়বো না।’

– কিন্তু কেন? এই উত্তেজনা তো খারাপ। আমি মনে হয় সিক। উফ, আমি আর পারছি না।

: এটা খারাপ নয়, আপনি ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছেন।এবার আমার দিকে তাকান। শুধু মুখের দিকে তাকান।

আমি তাকালাম। মনে হচ্ছে পৃথিবীর অপরূপ নারী আমার সামনে বসে আছে পাণিপ্রার্থী হয়ে। আমি ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম। নীলা আচল দিয়ে মুছে দিল কপালটা। তারপর বলল, ‘আমাকে সুন্দর লাগছে কীনা বলুন।’ আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম, ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে তাকিয়েই থাকলাম। নিজেকে কেন যেন খুব অচেনা কিন্তু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত