পুরুষ পতিতা

পুরুষ পতিতা

আমি জার্মানিতে রেগুলার Gym এ যাই । অনেকদিনের অভ্যাস । বিশ্বাস করি, ” Sound mind in a sound body”। সেখানেই আমার পরিচয় হাইন্স এর সাথে । আমার ট্রেইনার । ওর উদরের পরিধি দেখে প্রথমদিন খুব হেসেছিলাম । ওর বপুর কাছে আমার দেহ তনু মনে হয় । যাহোক হাইন্স খুব করিৎকর্মা । আমি ওকে মোটিভেশন শেখাই, বিনিময়ে ও আমাকে বক্সিং শেখায় । হাইন্স সারাক্ষণ হাসে আর মজার মজার জোক করে । এতো সুন্দর করে কথা বলে যে মেয়েরা খুব সহজেই পটে যায়। হঠাৎ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো :

-ফিলিপাইনে কখনো গিয়েছো ? mআমি বললাম :

-না । ও বললো :

-আমি কালকে ওখানে যাচ্ছি বিয়ে করতে । ফিলিপিনি মেয়ে , ফেইসবুকে ভালোবেসে ফেলেছি । আমি সবসময় এই ভার্চুয়াল প্রেমের বিরোধী । তবুও বললাম, “All the best”. হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । সাতদিন পরে আবার দেখা । মলিন মুখ । জিজ্ঞেস করলাম :

-কি খবর হাইন্স ?

– আর বলো না , একদম বাজে মেয়ে । টাকার লোভে জার্মানিতে আসতে চেয়েছিলো, আমার জন্যে নয় ।

আমার মনটি একটু খারাপ হয়ে গেলো । আমি জানি না কার দোষ ! বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে । হঠাৎ হাইন্সের খুব উৎফুল্ল মুখ । বললো :

-জানো, আমি তোমাকে এতদিন বলিনি , আমি আবারো ভালোবেসে ফেলেছি ফেইসবুকে । পরশু যাচ্ছি । আমি বললাম :

-আবারো ফিলিপাইনে ?

-হুম , তবে এই মেয়েটি খুব ইয়ং । বয়স মাত্র কুড়ি ।

তাহলে তো চমৎকার । তোমার বয়স পঞ্চাশ । মাত্র ত্রিশ বছরের পার্থক্য ! হাইন্স মুচকি হেসে চলে গেলো । পাঁচ দিন পর আবার দেখা । এবার অত্যন্ত ক্রুদ্ধ বদন । আমাকে বললো :

-এই এশিয়ান মেয়েরা মেয়ে তো নয় , সবাই দেহ ব্যবসায়ী ।

আমি এক মিনিট রাগ চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, “আবার কি হলো “? ও উত্তর দিলো, “প্রথম দুদিন একসাথে ঘুরলাম , সবরকমেই এনজয় করলাম । তৃতীয় দিন মদ খেয়ে যখন বেডে নিতে চাইলাম , কি তার আপত্তি । একটু জোর খাটাতেই বলে কিনা আমি ইডিয়ট । আমি বললাম :

-তোমাকে ইডিয়ট বলেছে, সেজন্যে সম্পর্ক কাট করেছো ?

-হ্যাঁ , ফিলিপাইনের কোথাকার এক মেয়ে আমাকে ইডিয়ট বলবে ?

( জার্মানদের এই উন্নাসিকতা আমি চিনি । এরা নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাত মনে করে । “ইডিয়ট” বলে গালি দিলে ১৫০০ ইউরো জরিমানা দেয়ারও ইতিহাস আছে ।) আমি রেগে না গিয়ে বললাম : তুমি তো একজন পুরুষ পতিতা । তোমাদের জার্মানদের দেখি , সত্তর বছরের কদাকার জার্মান থাইল্যান্ড আর ফিলিপাইনে গিয়ে মেয়েদের টাকা দিয়ে কিনতে চাও । ট্রাভেল এজেন্সীর “সেক্স ট্যুরিজম ” এ সাড়া দিয়ে গরিব দেশগুলিতে গিয়ে নিজেদের বিকৃত যৌন কামনা চরিতার্থ করো ।

বৃদ্ধ আরব শেখদের পর্যন্ত হার মানিয়ে দাও যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে অর্থের বিনিময়ে নাবালিকা মেয়েদের উপভোগ করার জন্যে বিয়ে করে । তোমাকে ইডিয়ট বলাতে মাইন্ড করেছো , “Playboy” বললে নিশ্চয় ঠিক হতো তাই না ? !! হাইন্সের চোখ ছানাবড়া । আস্তে আস্তে চলে গেলো । আমিও কেন জানি ওকে এড়িয়ে চলতাম । যদিও ধর্মে আছে ,”পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয় ” । এর পর দু বছর কেটে গেছে । ফিটনেস সেন্টারে ট্রেনিং শেষে গাড়ির দিকে যাচ্ছি । হঠাৎ দেখলাম একটি সুন্দরী এশিয়ান মেয়ে কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । পাশে একটি সুটকেস । ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা কি ফিটনেস সেন্টার “?

– হ্যাঁ , আমি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি ?

আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম । শ্রাবণের সব মেঘ জড়ো হয়ে চোখের তারায় ঠাঁই নিয়েছে । কবিগুরু একে দেখেই বলেছিলেন : জীবনশেষের শেষজাগরণসম ঝলসিছে মহাবেদনা নিমেষে দহিয়া যাহা -কিছু আছে মম তীব্র ভীষণ চেতনা I কানে বাজলো :

– আমার ছেলে ওর বাবাকে দেখতে চায় । ওর বাবার নাম হাইন্স । সে নাকি এখানে ট্রেইনার ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত