মাথা লাগবে না, শুধু বডি হলেই চলবে। শোন! দুটো বডি নিয়ে আসিস,দুটো না হলে চলবে না। ফোনে কথা বলছিলাম, কথা শেষ করেই হাঁটা দিলাম। আজকে আমার সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির পরীক্ষা আছে। আমি বাবার অপদার্থ পুত্র বলেই পরিচিত আমার পরিবার মহলে৷ মাস্টার্স পাশ করে বাবার হোটেলে ব্যাপক গিলছি। এই নিয়ে বাবা রোজ সকালে আমার চৌদ্দগুষ্ঠী, প্রকৃতপক্ষে বাবার চৌদ্দগোষ্ঠীই উদ্ধার করে। পরীক্ষা দেয়ার কোন ইচ্ছাই নেই, বাবার জোড়াজুড়ি আর হুমকির মুখে পড়ে পরীক্ষা দিতে আসা। নইলে দু দিন খানাপিনা বন্ধ করে রাখবে। আমি আবার না খেয়ে একদম থাকতে পারিনা।
ওদিকে প্রেমিকাও চাকরির জন্য দন্তচাপ দিতে দিতে চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলেছে৷ দুই দাঁতের পাটি একত্র করে বিচ্ছিরি শব্দের সৃষ্টি করতে করতে বিকৃত কন্ঠে বলে উঠে, চাকরি না পেলে নাকি অন্য কোথাও বিয়ে করে নেবে। আমি এটুকু বুঝিনা,ছেলেদের কেন চাকরি করা বাধ্যতামূলক? কই আমিতো কোনদিন আমার প্রেমিকাকে বলি না, তোমার চাকরি না হলে অন্য কোথাও বিয়ে করে নিব৷ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় যে পরিমাণ প্রতিযোগিতা আর ঘুষের খেলা হয়,সেখানে আমি পাশ করব না এই নিশ্চয়তা নিয়েই বের হয়েছি বাসা থেকে। আজকে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই প্রেমিকাকে দন্তচাপ দিব। ছেলে-মেয়ে সমঅধিকার নীতিই আমার এই দন্তচাপের ভিত্তি।
এলোপাতাড়ি এম.সি.কিউ এর গোল্লা ভরাট করছি, মাইনাস মার্কিং এ আল্টিমেটলি গোল্লাই পাব। অর্ধেক পরীক্ষা দিতেই দেখি কলমের পশ্চাৎদেশ দিয়ে কালি বিষ্ফোরিত হচ্ছে। শান্তিতে গোল্লা ভরাটও করতে পারছি না। অবশেষে পাশের জনের কাছ থেকে কলম ধার নিয়ে, ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায় যে টেকনিক অবলম্বন করে বাংলা পরীক্ষার নৈর্ব্যক্তিক অংশে ৫০ এ ৪৮ পেয়েছিলাম সেটার চেষ্টা চালাচ্ছি৷ “ক” আর “গ” অপশনটা ভরাট করছি, ছোটবেলায় শুনেছিলাম সঠিক উত্তর নাকি এই দুই অপশনে বেশি থাকে। আমিও ভরাট করে ৪৮ পেয়েছিলাম। যদিও সে টেকনিক পরবর্তীতে অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়ে, পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছিলাম৷ অনেকদিন পর এই কথাটাতে বহু কষ্টে বিশ্বাস আনার চেষ্টা করলাম৷ এ ছাড়া উপায় নেই। পাশ না করার নিশ্চয়তা নিয়ে যেভাবে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সেই একই ভাবে পরীক্ষার হলও ত্যাগ করলাম। তবুও মনোবল একটাই ক্লাস এইটে পাওয়া সেই ৪৮ নম্বর। প্রেমিকার ফোন বেজে উঠলো,
– পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
– সব “ক” আর “গ” অপশন ভরাট করেছি, দেখি আন্দাজে ছোঁড়া ঢিলে কতটুকু কাজ হয়।
-তোর আর চাকরি করা লাগবেনা, দাঁত মেজে আমার বিয়ে খেতে আসিস। উফফ আবার দন্তচাপ। কোথায় আজ আমার দন্তচাপ দেয়ার কথা ছিল। নাহ! আজ চাপ দিয়েই ছাড়বো।
– এই শোন! তুমিও তো অনার্স পাশ করেছ,তুমি চাকরি করতে পারোনা? তা না হলে আমিও অন্য কোথাও বিয়ে করে নিব।
– তোকে কোন কাজের বুয়াও বিয়ে করবে না।
সজোরে ধপাস করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলে যে অনুভূতি হয়,প্রেমিকার ফোন কেটে দেওয়া মূহুর্তটা একই অনুভূতির সৃষ্টি করলো। হঠাৎ মুখের ভেতর নোনতা স্বাদ অনুভব করলাম, আর ছোট হাড়ের কণার মতো জিহবায় কিছু একটা আটকালো। এক দলা থুতু ফেলে দেখি রক্ত আর দাঁতের ভাঙা অংশ। সমঅধিকারের ভিত্তিতে দন্তচাপ দিতে গিয়ে আজ আমার এই বেহাল দশা। একটু পর ফুফু ফোন করে বললো,
– আসার সময় নার্সারি থেকে একটা আপেল চারা নিয়ে আসিস। একটা আপেল গাছের বড় শখ,১০ বছর আগে যেটা লাগিয়েছি ৪ ফুট লম্বা অস্তিত্ব নিয়ে বেটে গাছের তালিকায় নাম লিখিয়েছে তার উপর কোন ফলই তো দিল না।
– তোমার ওই আপেল গাছকে একবার যে সেহেরি খাইয়ে দিয়েছো তারপর থেকে ১০ বছর যাবত রোযাই রাখছে।
– কি বলিস এসব?
-ঠিকই তো বলি, আম আর জলপাই গাছের নিচে নিয়ে লাগিয়েছো। কোন আলো পায় সে? যে সালোকসংশ্লেষন করে নিজের পর্যাপ্ত খাদ্য তৈরি করবে৷ বেঁচে যে আছে এটাই অনেক।
– তুই গাছ নিয়ে আসিস।
– আচ্ছা।
এমনিতেই দাঁতের ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি তার উপর তিনি আবার আপেল গাছের দায়িত্ব ঘাড়ে চাপালেন। অনেক নার্সারি খুঁজে খুঁজে অবশেষে একটা আপেল গাছের দেখা পেলাম। সারাদিন পর বাসায় ঢুকেই দেখি সারা ঘর ভর্তি লোকজন। হঠাৎ এত লোক কেন? কি হয়েছে? কেউ মারা গেছে? বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। ভেতরে ঢুকতেই দেখি চারজন পুলিশ অফিসার বসে আছে সোফায়। কি ব্যাপার? পুলিশ কেন বাসায়? বাবা তাদের সামনে অসহায় গলায় বলছে, আমার ছেলে বেকার,অপদার্থ হতে পারে কিন্তু খুন করতে পারেনা। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
-খুন! আমি?
– হ্যাঁ আপনিই খুন করেছেন। মাথা আলাদা করে বডিগুলো একত্রিত করেছেন। তা আবার একটা নয়, দুই দুইটা খুন!
এবার বলুন লাশ কোথায় গুম করে রেখে এসেছেন?
– আমি আবার খুন করলাম কখন? কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে? আমি তো গেলাম চাকরির পরীক্ষা দিতে।
– তখনই আপনাকে ফোনে বলতে শোনা গেছে, মাথা লাগবে না, বডি নিয়ে আসিস। দুটো হলেই চলবে৷
ভাগ্যিস কল রেকর্ড সফটওয়্যারটা আমার মোবাইলে ইন্সটল দেওয়া ছিল, তা না হলে আজকে সশ্রম ফাঁসির দড়িতে ঝুলতাম। আমার জন্য নতুন আইন হতো “সশ্রম ফাঁসি”। ফাঁসিতে ঝুলানোর পূর্বে কারাগার কর্তৃপক্ষের সমস্ত কাজ করিয়ে নেয়া।
অথচ পরীক্ষা দেওয়ার অনিচ্ছা নিয়ে মাঝপথে গিয়ে দেখি পকেটে কলম নেই। তারপর এক বন্ধুকে কল দিয়ে বলি বাসা থেকে যেনো দুটো কলম নিয়ে আমার হলের সামনে দাঁড়ায়। সে বলল কলমের মাথা নেই মানে ক্যাপ নেই। তাই আমি বলেছিলাম- মাথা লাগবে না, বডি হলেই চলবে।