মাইশা আপু আমার দিকে কাজলমাখা মায়াবী চোখে তাকায়।তারপর আবার বলতে শুরু করে,”দেখো ফাহিম,আমি কিন্তু তোমার চেয়ে মাত্র তিনবছরের বড়।আমাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক হতেই পারে।” মেয়েটার শাড়িতে ফুটে ওঠা ভারি স্তনযুগলের অবয়ব এই প্রথমবারের মত আমাকে লজ্জা দেয়।আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকাই।খানিক আগেও ভার্সিটির তিনব্যাচ সিনিয়র হিসেবে যাকে আপু বলতাম তাকে হঠাৎ করে অন্যকিছু ভাবতে বেগ পেতে হয় আমার।
“তুমি আজ,এখন থেকে আমাকে নাম ধরে ডাকতে পারো।”কথাটা বলে মাইশা একটা মিস্টি হাসি দেয়। সে হঠাৎ একটু রেগে বলে,”কি হলো?সেই কখন থেকে ভ্যাবলার মত বসে আছো,কথা বলছো না।” আমি থতমত খেয়ে বলি,”না,মানে,আমি সবে ফার্স্ট ইয়ার।আর,আর তুমি থার্ড ইয়ার।ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না।” মাইশা চোখ মটকে মুচকে হেসে বলে,”তোমরা বাঙ্গালিরা সেই প্রাচীন ধ্যান ধারনা নিয়েই পড়ে থাকবে।দুনিয়া কত্ত বদলে গেছে খবর নেই তোমার।হালের প্রিয়াংকা বয়সে দশ বছরের ছোটো কিউট একটা ছেলেকে ভালোবেসেছে,বিয়ে করেছে।এদেশেও এখন এসব আকছার হচ্ছে।” আমি বলি,”কথা সত্যি।কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে আমি সিঙ্গেল?” “আরে,এ আর এমন কি,ফার্স্ট ইয়ারের একটা আঁতেল মার্কা দেখতে ছেলের গার্লফ্রেন্ড না থাকাটাই স্বাভাবিক।এর জন্য শার্লক হোমস হওয়া লাগে না।”
ক্যান্টিনের ছোকুকে ডেকে মাইশা কফি আর স্যান্ডউইচ দিতে বলে।ছোকু মেয়েদের অর্ডার আবার দ্রুত দেয়ার ব্যবস্থা করে।আমি একা হলে আজ পঁচিশ মিনিট লাগতো খাবার আসতে।অথচ মাইশার কল্যাণে পাঁচ মিনিটের মাথায় অর্ডার এসে যায়। তারপর সে আমার দিকে ফিরে বলে, “জানো,তোমার এই ইনোসেন্ট লুকটাই আমাকে সবচে বেশি ভাবিয়েছে,ভালো লাগিয়েছে।আজকাল বেশিরভাগ ছেলেদের মধ্যে ওভার স্মার্টনেস,মেয়েদের মনজয় করার জন্য হ্যাংলাভাব দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত।এই পর্যন্ত যে দুচারটা প্রেম করেছি,সবই মনেহয়, ভালোবাসার অভিনয় ছিল।সুন্দরী মেয়েরা সহজে কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারে না।এটা একটা টপ সিক্রেট কথা,বুঝেছ!” আমি বোঝার ভান করি।মাইশা বোধহয় খানিক বাচাল প্রকৃতির।
সে বলছে,”আমি এখনকার সমবয়সী বা বয়সে বড়ছেলেগুলোকে মোটেও পছন্দ করি না।ছেলে হোক বা ছেলের বাবা,সবার যেন একটাই লক্ষ থাকে কি করে একটা স্বল্প পরিচিত মেয়েকে বিছানায় নেওয়ার প্রস্তাব দেয়া যায়।আই জাস্ট হেট দেম।কিন্তু তুমি ব্যতিক্রম ফাহিম।হাঁটার সময় চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটো,মেয়েদের উল্টাপাল্টা জায়গায় তাকাও না।” আমি আজ কেন যেন প্রচুর ঘামছি।হঠাৎ মাইশা কফির কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে আমাকে জিগ্যেস করে,”আমি দেখতে কেমন?খুব কুৎসিত না?” আমার সামনে বসে থাকা মেয়েটার শত্রুও তাকে কখনো কুৎসিত বলতে পারবো না।বরং মাইশা টকটকে ফর্সা,আকর্ষনীও দেহবল্লরীর অধিকারিণী।কিন্তু আমার তাতে কী লাভ?আমি ঘামতে ঘামতে বলি,”না,না।তুমি অনেক সুন্দর।”
মাইশা হঠাৎ আমার কপালের ফোঁটা ফোঁটা ঘাম লক্ষ করে।সে ছোট্ট টেবিলটার অপর পাশটা থেকে উঠে এসে আমার গা ঘেঁষে বসে।তারপর নতুন শাড়িটার আঁচল দিয়ে সুন্দর করে কপাল,মুখের আর ঘাড়ের কাছের ঘাম মুছে দেয় আমার।সে অবাক হয়ে বলে,”এই বোকাছেলে,ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে তবুও ঘামাচ্ছো কেন?” আমি চোখে চোখ রাখতে পারি না।অন্যদিকে তাকিয়ে বলি,”না,মানে আমি মেয়েদের সাথে ক-কথা বলতে আনিজি ফিল করি।আর তখন আমার ঘাম আসে খুব।” মাইশা আমার ডানবাহু দুহাত দিয়ে আকড়ে হাসতে থাকে।বলে,”সাহেব দেখছি বেশিই ইনোসেন্ট।যাক,আমার জন্য ভালো।সহজে ছ্যাঁকা দিতে পারবে না,পোষা পাখির মত তোমাকে পালা যাবে।” আমার হঠাৎ মনেপড়ে মাইশার কথা শুনতে শুনতেই,ডিকে স্যারের ক্লাস শেষের পথে।আমি ভয় খাওয়া গলায় বলি,”আ-আজকে তবে আমি উঠি।ক্লাস ধরতে হবে।দেরী হয়ে গেছে।”
মাইশা আমাকে চিমটি দিয়ে বলে,”একদিন ক্লাস না করলে কী হবে?কিছুই হবে না।আজকে আমাদের ভালোবাসার প্রথমদিন।সুতরাং সারাদিন খুব ঘোরাঘুরি করবো তোমায় নিয়ে!” যাই হোক,সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা অবধি মাইশা আমাকে নিয়ে ঢাকার শহরে রইরই করে বেরায়।যমুনাতে মুভি দেখা(হরর মুভিটা ছিল বিরক্তিকর,কিন্তু মাইশা বিরক্ত হয়নি কারন সুযোগ পেলেই আমাকে চিমটি কাটতো আর যেসব দৃশ্যে ভয় পাওয়ার কথা না সেসব দৃশ্যেও ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতো)একপ্লেটে ভাগাভাগি করে দইফুচকা খাওয়া,শাহবাগ থেকে দশ বারোটা টাটকা গোলাপ নিয়ে আমাকে অফিশিয়ালি প্রোপোজ করা এবং যথারীতি আমার অদ্ভূত ঘামানো,সব মিলিয়ে যেকোনো প্রেমিকপুরুষের জন্য এ একটা স্বরণীয় দিন। এবং দিনশেষে আমি বুঝি,মেয়েটি একটু উড়নচন্ডী হলেও বড্ড ভালো!
আমাদের ভালোবাসার সাতদিন কেটে যাবার পর অষ্টমতম দিনে হুডতোলা রিকশায় আমি আর মাইশা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছি।এই কয়দিনের শুরুর দিকে আমি মাইশার সাথে প্রেমের অভিনয় করলেও কখন যে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি,তা নিজেও জানি না। সন্ধ্যার সময় হলেও বর্ষার ঘোলাটে আকাশের কারণে জমাট অন্ধকার নেমেছে।মাইশা আমাকে বলে,”তুমি এখনও বাচ্চাছেলেটিই রয়ে গেলে।তোমাকে পুরুষ করতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে দেখছি।
এতোদিন হয়ে গেলো এখনো নিজ থেকে একটা কিস পর্যন্ত করলে না!দেখি মুখটা এদিকে ফেরাও মাইশা আমাকে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে আকন্ঠ চুমো খেতে থাকে।মিস্টি একটা অনুভূতি সারাদেহে ছড়িয়ে যাবার আগেই আমি মুখটা ছাড়িয়ে নিই।একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিই।আমি মাইশার ডান হাতে নিজের হাতে নিয়ে বলি,”আমাকে মাফ করে দাও সামা।আমার পক্ষে এই রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়।” মাইশা চেঁচিয়ে ওঠে,”হোয়াট?!” “আমার অলরেডী একটা গার্লফ্রেন্ড আছে।সেই পনেরো বছর বয়স থেকে ওর সাথে আমার সম্পর্ক আসলে,তোমাকে দেখে আমি লোভ সামলাতে পারিনি।তাই সত্যটা গোপন করেছিলাম।” মাইশা বিমূঢ়,নির্বাক হয়ে বসে থাকে।আমি রিকশা থামিয়ে নেমে যাই।
বাসায় এসে একাএকা অনেকক্ষন কাঁদতে থাকি বাথরুমে খিল দিয়ে।আমি মাইশাকে মিথ্যে বলেছি।মাইশাই আমার জীবনের প্রথম নারী এবং সম্ভবত শেষ।মাইশা আমাকে বিয়ে করে কখনো সুখী হতে পারবে না।পারবে না কোনো নিষ্পাপ শিশুর মা ডাক শুনতে।কোনো নারীকে শারীরিক সুখ দেবার মতন সামর্থ্য আমি জন্মগতভাবেই নিয়ে আসিনি।শুধুমাত্র মানসিক ভালোবাসা দিয়ে এই পৃথিবীর কোনো রমনীকে কি সুখী করা সম্ভব?আমি এক নপুংসক।কিন্তু কাপুরুষ হয়ে কোনো যুবতীজীবন বিষিয়ে তুলতে চাই না..