প্রতিটা মেয়ে মানুষের একটা করে গোয়েন্দা গিরি করার লোক থাকে। যে খুব সহজে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। তেমনি আমার স্ত্রী শ্রাবণীর জীবনেও একজন আছে।সে হলো আমাদের বাসার নতুন কাজের মেয়ে শিউলি। শিউলি আসার আগ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু ও আসার পর থেকে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।
শিউলি আগে কাদের কাদের বাসায় কাজ করতো। সেই সব বাসাতে কি কি হতো।সেই সব বাসার স্বামীরা স্ত্রী বাদে কাদের কাদের সাথে পরকীয়া করতো সব শ্রাবণীকে বলতো আর শ্রাবণী হা করে সেই সব কথাগুলো শুনতো।
শিউলির এইসব কথাশুনে আজকাল শ্রাবণী আমাকে সন্দেহ শুধু করেছে। কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি আমি অফিস থেকে আসলে শ্রাবণী আমার কাপড় চোপড় আড়ালে নিয়ে গিয়ে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে পরীক্ষা করে আমার কাপড়ে কোন লেডিস পারফিউমের গন্ধ পাওয়া যায় কি না। শ্রাবণীর মত এমন বোকাসোকা মেয়ের মাথায় এমন চিকন বুদ্ধি কখনোই আসবে না। এটা নিশ্চয়ই শিউলির কাজ। আজ যখন শ্রাবণী কাপড় শুকছিলো তখন আমি রেগে গিয়ে বললাম,
— তোমার সমস্যা কি? কুত্তার(কুকুর) মত কাপড় শুকছো কেন? এই কথা শুনার পর শ্রাবণী কেঁদে দিয়ে বললো,
– কি!! তুমি আমায় কুকুর বললে? কয়েকদিন আগেও আমাকে ময়না পাখি টিয়া পাখি বলে ডাকতে আর আজ আমি তোমার চোখে কুকুর হয়ে গেলাম কথাটা বলে ফেলার পর বুঝতে পারলাম আমি রাগে অনেক বড় কথা বলে ফেলেছি। যখন শ্রাবণীকে সরি বলতে যাবো তখনি কাজের মেয়েটা শ্রাবণীকে বলতে লাগলো,
~ছিঃ ছিঃ ছিঃ কেউ নিজের বউকে কুত্তা বলে? আমি আগে যে বাসায় কাজ করতাম সেই বাসার মালিক একবার শুধু তার বউকে ইঁদুর বলছিলো তাতেই মালিকের বউ মালিকের একটা দাঁত ভেঙে ফেলছিলো আর আপনাকে কি না স্যার কুত্তা বললো শিউলির কথা শুনে রাগে শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমি ওর দাঁত না ওর মাথা ফাটিয়ে ফেলবো। শ্রাবণী রান্না করার খুন্তি নিয়ে যখন আমার কাছে আসলো আমি তখন দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। বাহির থেকে শ্রাবণী বললো,
-পিয়াস দরজা খুলো বলছি আর আমি ভিতর থেকে চিৎকার করে বললাম,
— না আমি খুলবো না।দরজা খুললে তুমি আমায় মারবে…
আমাকে এখন শ্রাবণীর কথামত প্রতিদিন অফিসে যেতে হয় সাদা শার্ট পড়ে। সাদা শার্ট পড়লে সহজে কালো চুল আছে কি না বুঝা যায় । ভুল বসত যদি সাদা শার্টে একটু দাগ কিংবা কুচকে যায় তাহলে আমার হাজারটা কথা শুনতে হয় । অফিস থেকে বের হয়ে দেখি বাহিরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু একটা রিকশা পাচ্ছি না। এমন সময় দেখি পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। আমায় দেখে উনি বললো,
~ভাই বাসায় যাবেন? আসেন এক সাথে যায়..
আমিও এতকিছু না ভেবে রিকশাতে উঠে যায়। ঢাকা শহরে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ঘাটে হাটু পানি জমে যায়। বাসার কাছাকাছি আসতেই রিকশার চাকা গর্তে পড়ে রিকসা উল্টে যায়। সৌভাগ্য বসত আমার কিছু না হলেও ভবীর পা মচকে যায়। তাছাড়া ২ জনের শরীর একদম ভিজে যায়। ভাবী যেহেতু মাটিতে পা ফেলতে পারছিলো না তাই আমি কোলে করে ভাবীকে উপরের ফ্ল্যাট পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম। বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই শ্রাবণী দরজা খুললো আর ওর পাশে দাঁড়িয়ে শিউলি কানে কানে কি যেন বললো। আমি হাসি হাসি মুখে শ্রাবণীকে বললাম,
— আমার ময়না পাখিটা কি করে? শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
– আমায় কোলে করে ছাদে নিয়ে যাও তো বুঝতে পারছিলাম আমার কপালে আজ খারাপ আছে। তাই বাধ্য হয়ে কোলে করে শ্রাবণীকে উপরে নিয়ে গেলাম আবার নিচে নামালাম। এইভাবে ৩ বার উপর নিচ করতে করতে যখন আমার অবস্থা খারাপ তখন শ্রাবণী বললো,
-আমি বাদে যদি কখনো কাউকে কোলে নিয়েছো তাহলে এইভাবে ১০ বার উপর নিচ করাবো বলে দিলাম রাতে বসে বসে ফোন টিপছি এমন সময় শ্রাবণী এসে বললো।
– তোমার ফোনটা একটু দাও তো। আমার ফোনে টাকা নাই। একটা বান্ধবীর সাথে খুব দরকারী কথা আছে।
আমি ফোনটা দিলে শ্রাবণী ফোনটা নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়।বেশি রাত হয়ে যাওয়ার কারণে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি পর দিন সকালে আফিসে যেতেই মেডাম আমায় দেখে বললো,
~ছিঃ ছিঃ ছিঃ পিয়াস সাহেব আপনার থেকে আমি এমনটা আশা করি নি একটু পর আমার কলিগ লায়লা মুখটা গোমড়া করে বললো,
~ আপনাকে আমি বড় ভাইয়ের মত সম্মান করতাম আর আপনি কি না আমার বন্ধু রাকিব আমায় ফোন দিয়ে বললো,
~ আমি মানছি আমার একটু শারিরীক সমস্যা ছিলো তাই বলে বন্ধু হয়ে বন্ধুর বউকে এমন একটা প্রস্তাব দিবি…
সবার মুখ থেকে এমন কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কি এমন করলাম যে কেউ আমায় কোন কিছু খুলে বলছে না। শুধু ছিঃ ছিঃ করছে মাথাটাকে ঠান্ডা করার জন্য একটু ফেইসবুকে ঢুকলাম। কিন্তু ফেইসবুকে ঢুকে মাথাটা আরো গরম হয়ে গেলো। আমার id তে যত মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো তাদের সবাইকে একটা এসএমএস করা, “বেবী চলো না কাল লিটনের ফ্ল্যাটে যায় “। তারমানে কাল রাতে শ্রাবণী আমার ফোন নিয়ে সবাইকে এমন এসএমএস করেছে বাসায় এসে শ্রাবণীকে জিজ্ঞেস করলাম, এইসব কেন করেছো? শ্রাবণী মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
– তুমি কারো সাথে লিটনের ফ্ল্যাটে যাও কি না সেটা পরীক্ষা করার জন্য এমন করেছি। সবাই নেগেটিভ রিপ্লাই দিয়েছি। যদি কেউ পজিটিভ রিপ্লাই দিতো তাহলে তোমায় খুন করে ফেলতাম…
শ্রাবণীর কথা শুনে আমি বসে বসে চিন্তা করতে লাগলাম, আমার ফোন ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যস্ত পেলেও যে মেয়েটা আমাকে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ করতো না। আমি যদি তামা দেখিয়ে ওকে বলতাম এটা সোনা ও চোখ বন্ধ করে সেটাই বিশ্বাস করতো আজ কি না এই কাজের মেয়ের জন্য শ্রাবণী আমায় সন্দেহ করে রাতে আমি আর শ্রাবণী একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি আর শিউলি রান্না ঘরে কাজ করছে। আমি তখন লবণ আনার অজুহাতে রান্না ঘরে গেলাম। শিউলিকে মিষ্টি হেসে বললাম,
— নে, তোর জন্য দামী এই লিপস্টিকটা এনেছি। পড়ে দেখ তকে সুন্দর লাগবে। শিউলি হেসে লিপস্টিকটা ঠোঁটে লাগালো। আর আমিও এই ফাঁকে নিজের ঠোঁটের আশেপাশে হালকা লিপস্টিকটা লাগিয়ে দিলাম খাবার টেবিলে আসতেই শ্রাবণী বললো,
– লবণ আনতে এত দেরি লাগে? এমন সময় শিউলি খাবার টেবিলের সামনে আসতেই আমি মুচকি হেসে শিউলিকে বললাম,
— তোর দেওয়া মিষ্টিটা খুব মজা ছিলো রে। এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে।
এই কথা শুনে শ্রাবণী একবার শিউলির ঠোঁটের দিকে তাকালো আরেকবার আমার ঠোঁটের দিকে। দেখে দুই জনের ঠোঁটেই লিপস্টিকের দাগ এটা দেখে শ্রাবণী শিউলির চুলে ধরে মারতে মারতে বলতে লাগলো, শেষ পর্যন্ত তুই আমার জামাইয়ের সাথে ফস্টি নস্টি করিস। আর আমাকে দুনিয়ায় অন্য সব মেয়েদের দেখাস। তকে আজ আমি খুন করে ফেলবো। শিউলি কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু তার আগেই শ্রাবণীর একটার পর একটা থাপ্পড় মারতে লাগলো। যখন দেখলাম শ্রাবণী খুব বেশি শিউলিকে মারছে তখন শ্রাবণীর গালে খুব কষে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,
— তুমি ওকে মারছো কেন? শ্রাবণী গালে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-পিয়াস, তুমি কি না একটা কাজের মেয়ের সাথে এইসব করো?
— আমি যে এইসব করেছি তুমি দেখেছো?
– ওর ঠোঁটের লিপস্টিক তোমার ঠোঁটে লেগে আছে।
— তাই বলে তুমি কিছু না বুঝে না জেনে শুধু সন্দেহ করে একটা মেয়েকে এইভাবে মারবে? আর তোমার নিজের স্বামীর প্রতি বিশ্বাস নাই, যে তোমার স্বামী এমন জঘন্য কাজ কখনোই করতে পারে না? শ্রাবণী কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো। আমি ওর হাতটা ধরে বললাম,
— ভালোবাসা তখনি খুব অসহায় হয়ে যায় যখন তার ভিতর সন্দেহ ঢুকে যায়। ভালোবাসার পূর্ব শর্ত হলো বিশ্বাস করা। তুমি নিজের চোখে না দেখে না বুঝে শুধু অন্য জনের কথার ভিত্তিতে একজনকে সন্দেহ করবে সেটা ঠিক না। আজ তোমার ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্যই এমনটা করেছি শিউলি ফ্লোরে বসে আছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
— কিছু মনে করিস না বোন। তোর এই শিক্ষাটা দরকার ছিলো। তা না হলে তুই আবারও কোন পরিবারে কারো না কারো মনে সন্দেহের বীজ বপন করতি পরদিন যখন অফিসে যাবো তখন দেখি পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী খুব কষ্ট করে নিচে নামছে। আমি যখন ভাবীর পাশ কেটে চলে যাবো তখন শ্রাবণী বলছে,
– আচ্ছা খারাপ মানুষ তো তুমি। একটা অসুস্থ মানুষ নিচে নামতে পারছে না, কোথায় তুমি তাকে কোলে করে নিচে নামাবে তা না করে চলে যাচ্ছো আমি কিছু না বলে শুধু শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম আর মনে মনে ভাবলাম, সন্দেহ না থাকলে ভালোবাসা আসলেই সুন্দর..