সব ছেলেই এক

সব ছেলেই এক

মেয়েটির নাম, ‘চায়না,। এই নাম নিয়ে সকলকে বুঝাতে চেষ্টা করে, ‘চায়না’ কোন সাধারণ নাম নয়, এই নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে হাজারো ইতিকথা। চায়না, নামের মেয়েটি তার বান্ধবীদের প্রায়ই বলে থাকে, আসমান থেকে পাতাল পর্যন্ত এই নামটি পাওয়া যায়, বলেই বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে বলে, এ্যাই দেখ- মেডেন ইন চায়না। কয়েকদিন পর তাদের এক বান্ধবী পলীর জন্মদিন অনুষ্ঠান। সব বান্ধবীর সাথে, চায়নাও সেই অনুষ্ঠানে গেল। পলী তার বান্ধবীদের সাথে সকলকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। সকলকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে, চায়না’র নাম চলে আসল।

পলী ‘চায়না’ নামটি বলার সাথে সাথেই, পাশ থেকে দুটা ছেলে বলে উঠল, কি চায়না সে? বলেই হো হো করে হেসে উঠল। চায়না নাম নিয়ে এমন রসিকতা করায়, চায়নার মেজাজ গরম হয়ে গেল। চায়না সেখান থেকে রেগে বেড় হয়ে গেল। এই প্রথম কেউ তার নাম নিয়ে এমন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। এটা মোটেই সয্য করার নয়। চায়নার রাগটা কোন ভাবেই কমছে না। সে বাড়িতে এসে তার বাবার রুমে গিয়ে বাবাকে বলল, ‘বাবা তুমরা আমার নাম ‘চায়না’ কেন রাখলে?

বাবা বলল, “তুই তো জানিস, তোর মা আর আমি একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম। বাড়িতে বলার পর কেউই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি, তাই আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করি। তিনমাস পর সবাই মেনে নিল, তখন তোর মায়ের বয়স ছিল কম, আমিও কোন চাকরি-বাকরি করতাম না। দুই ফ্যামেলি থেকে বলা হল, তোর মায়ের যতদিন ১৮ বছর পূর্ণ নাহবে ততদিন সে তার বাবা-মায়ের সাথে থাকবে, আর ততদিনে আমিও চাকরি পেয়ে যাব। কিন্তু হঠাৎ করে তোর মায়ের শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে টেস্ট করার পর দেখাযায়, তোর মা প্রেগন্যান্ট, তুই তার পেটে। সকলেই চাচ্ছিল, এই বেবী যেন না নেই। সবাই না করার পরও আমি আর তোর মা বলি, না -এ বেবী নিব। কেউ চায়না তুই পৃথিবীর আলো দেখিস, সকল বাঁধা অতিক্রম করে তোর জন্ম হলো, আর তোর মা বলল, আমাদের মেয়ের নাম রাখো “চায়না”।

বাবার কাছ থেকে এমন কথা শুনার পর চায়নার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। সে তার রুমে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো, আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, যেখানে তার মুল্যায়ন নেই সে এই দেশেই থাকবে না, প্রয়োজনে সে চীন দেশে চলে যাবে। কিছুদিন পর চায়না, চীন দেশে চলে গেল। চীন দেশে ভালই সময় কাটছিল তার, এরই মধ্যে কিছু চাইনিজ ভাষা, চিং চং চা শিখে ফেলে। একদিন চায়না, পার্কে ঘুরে ঘুরে দেখছিল, হঠাৎ একটা চায়না ছেলে এসে চায়নাকে প্রোপজ করে। চায়নারও ছেলেটিকে পছন্দ হয়ে যায়। তারা দুজনে বিয়ে করে ফেলে এবং ঘর সংসার শুরু করে।

দুজনের সংসার ভালই চলছি। একদিন রাতে চায়না তার স্বামীর জন্য রান্না-বান্না করে অপেক্ষা করছিল, কিন্তু রাত ১০টা পেরিয়ে, ১২টা পেরিয়ে গেল আসছে না, ফোন অফ। পরদিন সকাল হলো। ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন কেটে গেল, চায়নার স্বামী ফিরে এলো না, ফোনও অফ। চায়না কোন উপায় না পেয়ে, পুলিশের কাছে গেল। পুলিশ সব শুনে বলল, তাঁকে তো আমার চিনি না। তাকে খোঁজার জন্য তার একটা ফটো দিন। তারা যখন বিয়ের করে, তখন তারা স্বামী-স্ত্রী একসাথে যুগল ফটো তুলে। সেই ফটো পুলিশকে দিয়ে দিল।

বিকালে মন খারাপ করে চায়না বসে বসে কান্না করছিল, এরই মধ্যে তার ফোন বেজে উঠল রিসিভ করেই দেখল, পুলিশ ফোন করেছে, এবং তার স্বামীকে খুজে পেয়েছে, থানায় গিয়ে তার স্বামীকে নিয়ে আসতে বলল। চায়না দ্রুত থানায় চলে গেল। থানায় যাওয়া মাত্রই পুলিশ বলল, “দেখুন ম্যাডাম, আমরা সন্দেহ করে ২০ জনকে ধরে এনেছি, এর মধ্যে থেকে আপনার স্বামীকে চিনে নিন।” চায়না, ২০ জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার স্বামীকে চিনতে পারছে না। চায়না সব ছেলের চেহারাই এক।

চায়না এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। চীন দেশের প্রতি ঘৃণা নিয়ে সে তার দেশে ফিরে এলো। দেশে আসামাত্রই চায়নার বান্ধবীরা জানতে চাইল, চীন দেশের কথা চায়না তার বন্ধবীদের চীন দেশের পুরো ঘটনা খুলে বলল, আর ধিক্কার দিয়ে বলল “সব ছেলেই এক” চায়না থেকে তার বান্ধবী-তার থেকে তার বান্ধবী- তার থেকে তার বন্ধবী, এভাবে ছড়িয়ে পড়ে, “সব ছেলেই এক”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত