সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

আজ প্রায় ১৫ দিন পর বাসায় আসলাম, আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম বগুরা। অনেক ভাল একটা সময় কাটল সেখানে। বাসার সামনে এসে কলিং বেল চাপ দিলাম। কিন্তু কোন খবর নাই। তার পর একনাগারে কয়েকবার দেবার পর একটা মেয়ে বেড়িয়ে আসল। আমি দেখেতো পরাই থ। এটা কার বাসায় আসলাম, স্যরি আমি মনে হয় ভুল বাসায় চলে এসেছি। কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে নাকের উপর দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে ফেলল। চিন্তা করতে থাকলাম আমাদের বাসার নাম্বাতো ২১। আর এটাতো ২১ ই দেখছি তা হলে এই মেয়ে কে? নাকি আমি বাসার নাম্বার ভুলে গেলাম। কি করা যায়, হুম আম্মুকে ফোন করি। হ্যালো আম্মু, হ্যালো তুই আসবি কখন? আমিতো এসেই পড়েছি। আমাদের বাসার নাম্বারটা ২১ না? হুম। তাহলে দরজা খোলেছিল কে?

হ্যালো, হ্যালো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে গেছে, তা হলে শেষের কথাগুলো আজাইরা ই বলছি। আবার এই দিকে চার্জ নেই বলে মোবাইল আর খোলছে না। দ্যাত, কি মুশকিলে পড়লাম। সাহস করে আবার কলিং বেল চাপ দিলাম। আবার ঐ মেয়েটা খোলল। আবার আপনি এসেছেন কেন? না, মানে এটা অর্কদের বাসা না? কোন অর্ক? না, মানে আমিই অর্ক। অই মিয়া ফাইজলামু করেন? তখন ভেতর থেকে একটা মেয়ে বলল, কেরে?(অর্চির কন্ঠের মতোই মনে হলো) কি জানি? কি অর্ক অর্ক করছে? এই যে মিস্টার, আবার যদি ফাইযলামু করতে আসেন খবর বানাইয়া দিমু কিন্তু। যান এখন, এটা বলে দরজা আবারও নাকের উপর দিয়া লাগিয়ে দিল।

আমি ও কি আর করব? সিড়ি দিয়ে নিচে নামার জন্য প্রস্তুস্তি নিচ্ছি, উদ্দেশ্য কেয়ারটেকার চাচা, তার কাছ থেকেই বাসার সঠিক নাম্বারটা জানা যাবে। তিনটা সিড়ি নামার পর পেছনথেকে ডাক দিলো, ভাইয়া! পেছনে তাকিয়ে দেখি অর্চি। তাড়াতাড়ি করে গেলাম, এটা আমাদের বাসা না? হুম। অই বেয়াদব মেয়েটা কে রে? এত ক্ষন আমাকে।বাইরে দাড় করিয়ে রাখছে? আর তুইও কি ঘোড়ার  ঘাস কাটছিলি নাকি? আমি কি জানি নাকি তুমি আসছো? এবার ভেতরে আসো সব বলছি। ভেতরে ঢুকে দেখি মেয়েটা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। আমাকে দেখে একবার ‘চোরের মত এদিকে তাকিয়ে, সঙ্গে সঙ্গে আবার টিভির দিকে মনোযোগ দিলো।

এটা দেখে আরো রাগ ওঠে গেলো আমার। কিছু না বলে আমার রুমের দিকে যাচ্ছিলাম তখনই শুনতে পেলাম অর্চি আর ঐ ফাজিল মাইয়াটা হাসতেছে। মনে চাইতেছে কইশ্শা দুইটারে চড় মারি।। আম্মুকে তার কথা জিঙ্গাসা করাতে আম্মু বলল যে, সে অর্চির বান্ধাবী, আমি চলে যাবার ২ দিন পরই আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটাতে ওঠেছে। যাই হোক ২ দিন চলে গেল, আজ আমার জন্য একটা বিশেষ দিন, আর তা হল আজকে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের খেলা। এই দিনটায় আমার যতই কাজ থাকুক না কেন, আমি বাইরে বের হই না। যাই হোক বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মন মেজাজ খারাপ।

এখন খেলার মধ্যবিরতি চলছে, তাই এই সুযোগে নিচে গিয়ে দোকান থেকে চাপা চালানোর জন্য কিছু আনতে গেলাম। প্রায় ২০ মিনিট পর আসলাম, কারন ওয়ান্ডে এর বেলায় বিরতিটা একটু বেশি ই থাকে। আসার পরতো আমার মাথায় আগুন ধরে গেল। টিভিতে অর্চি আর ঐ মেয়েটা অর্থাৎ অন্বেষা সিরিয়াল দেখছে। আমাকে দেখে অর্চি ওখান থেকে চলে যাচ্ছিল। আমি তাকে ডাক দিলাম, এই অর্চি এদিকে আয়, কি বল। ঐ তুই জানস না, খেলার সময় তদের টিভি দেখা নিষেধ? আজ থেকে সিরিয়ালের সময়ও খেলা দেখা নিষেধ। খেলা দেখতে চাইলে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখতে হবে। (অন্বেষা) কথাটা শুনার পর এতটা রাগ ওঠলো যা বলার মত না, আবার ঐ দিকে খেলাও শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।

তাই দোকান থেকে যা যা আনলাম তা আছার দিয়ে সোফায় রেখে বের হয়ে গেলাম। বাইরে বের হয়ে চিন্তা করলাম রাগতো করলাম ওদের সাথে তো যা আনলাম তা রেখে আসব কেন? তাই আবার বাসায় ঢুকে এগুলো নিয়ে কেয়ারটেকার চাচার সাথে গিয়ে খেলা দেখলাম। পরের দিন রাতের বেলা, একটু এফ বি তে ঢুকলাম, একটু পর অর্চি আসলো। এসে আমার পাশে বসল, ভাইয়া। হুম বল। শুনো না ভাইয়া একটু। আরে বাবা, শুনতেছিতো, তারপর ম্যানিব্যাগ থেকে একটা নোট তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম। প্রবলেম সলভ? (ওর যখনই টাকার প্রয়োজন হবে তখনই এই রকম আদর করে ভাইয়া ঢাকবে, একটাই আদরের বোন তাই না করতে পারি না।

যদিও অনেক রাগ দেখিয়ে কথা বলি, তবুও বোনটা যা চায় ওটা যদি এনে দিতে না পারি তা হলে আমার ঘুম আসে না) তোমার কাছে কি আমি টাকা চেয়েছি? তা হলে কি লাগবে? আমার ভাবী লাগবে। ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বললাম, তো গিয়ে আনবি এনে, আমাকে বলা লাগবে? তার মানে তুমি রাজি? আমি রাজি হবো কেন? বারে, আমার কি আর ভাই আছে? কেন আরো লাগতো নাকি? কি যে বল না, তুমার মত একটা কিউট ভাইয়া থাকতে আর কি লাগে? অইছে এই আজাইরা আলাপ ছাইরা ভালো কোন কথা থাকলে বল? আচ্ছা ভাইয়া তোমার অন্বেষাকে কেমন লাগে? কোন অন্বেষা? কেন আমার বান্ধুবী? তোর কি মাথা খারাপ? এই ফাজিল মাইয়ারে আমি বিয়ে করব? কি বল? ওতো অনেক ভাল? অই তুই যা এখান থেকে? এখন যাচ্ছি তবে আবার আসব।

একটু পর সাবিহা ফোন দিল, (সাবিহার সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয়, তবে সে কখনো তার ছবি দেয় নি) হ্যালো, কি করো? কিছু না বসে আছি, তুমি কি করো? তোমার মতই কিছু করি না। ওয়াও কি মিল তাই না, হুম তাইতো। আচ্ছআমরা কি কখনো দেখা করব না? করব, তবে সেটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ হবে। তারপর অনেক কথা হল। পরের দিন সকালে বাইরে বের হচ্ছিলাম তখন দেখি আব্বু আর আম্মু ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আমাকে দেখে আম্মু ডাক দিলো। কি বলবা তাড়াতাড়ি বল। এত জলদি করলে হবে না, এখানে বস। (আম্মু) এইভাবে আর কত দিন চলবে, কিছু করতে হবে না? (আব্বু) মাত্রতো লেখাপড়া শেষ করলাম। কিছুদিন যাক না।

তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। (আব্বু) কিসের মেয়ে? বুড়ো হয়ে বিয়ে করবে নাকি, মেয়ে আমাদের সবার পছন্দ। এখন তুমি বললে, ডেট ফিক্স করে ফেলবো। (আব্বু) আমাকে না জানিয়ে মেয়ে দেখলে কেন? আমি এখন বিয়ে করতে পারব না। তুই আমাদের কথা শুনবি না, আমাদের কি ইচ্ছে করে না ছেলের বউ দেখতে?(আম্মু) ইচ্ছে আর কয়দিন পরে পূরন কর, এখনই বিয়ে করতে হবে। এটা কোন কথা হল নাকি? তাহলে আমরা কি না করে দিব নাকি? আর মনে রেখো যদি না করে দেই তা হলে পরে যে আমার বাড়িতে বউ হয়ে আসবে তাকে আমি কোন দিনও মেনে নিব না। এটা বলে আব্বু চলে গেল।

বিকেলবেলা, সাবিহাকে ফোন দিলাম। হ্যালো, বলো কি খবর? খবর খারাপ, বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে, এখন কি করব? ওয়াও, কংগ্রেজ। বিয়ে কবে দাওয়াত দিবে না আমায়। তুমি এটা শুনার পর খুশি হলে নাকি? অবশ্যই, এটাতো খুশির খবরই। মেজাজটা এত খারাপ হলো কথাটা শুনার পর, তাই রেগে গিয়ে বললাম, বিয়ের দাওয়াত পেয়ে যাবা। এটা বলে ফোন রেখে দিলাম। তারপর সাড়াদিন গেলো, সাবিহা একবারো ফোন করে নি। তাই ভাবলাম আব্বু আম্মুকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না আর সাবিহা ও যেহেতু আমাকে চায় না, তা হলে আমি কেন তার জন্য দেবদাস হতে যাব। অবশেষে একটা চূরান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম।

রাতের বেলা, আম্মু আব্বুর রুমে গেলাম কিরে কিছু বলবি? (আম্মু) তোমরা বিয়ের জন্য আয়োজন করো, এটা বলে চলে আসলাম। তবে একবার আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝতে পারলাম তারা খুশি হয়েছে। তারপর অনেক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়েটা হলো তবে মজার ব্যাপার হলো যে, আমি এখনও জানি না কার সাথে বিয়ে হলো। বিয়ের কার্যাদি শেষ, আমি এখন সুফায় বসে আছি। একটু পর অর্চি আসলো, ভাইয়া তুমি এখানে বসে আছো কেন ভাবীকে রেখে? তর এত দরদ লাগলে তুই যা, আমি আজকে এখানেই ঘুমাবো। কি? আম্মুকে বলব গিয়ে? আমি বলছি বলে কি এখানেই ঘুমাবো, এটা বলে আমার রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি নতুন বউ বসে আছে বিছানায়। আমি কি আপনাকে একটু দেখতে পারি? অবশ্যই দেখতে পারেন এটা বলে সে ঘোমটা খুলে ফেলল।

অকে দেখেতো আমি পুরাই লুল। এইটা দেখি ঐ ফাজিল মাইয়াটা, এই সব শয়তান অর্চির কাজ। ঐ আপনি এখানে কি করেন? আমার বরের ঘরে আমি থাকবো না তো কে থাকবে? হঠাৎ মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো সাবিহার নাম্বার থেকে, কংগ্রেজ তোমাকে, আর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে এফ বি চেক কর। সঙ্গে সঙ্গে লগ ইন করে নোটিফিকেশন চেক করে দেখি একটা নোটিফিকেশনে দেওয়া onnesha got married with you আইডিটা চেক করে দেখি আইডিটার নাম Onnesha Habib. (আমার আইডির নাম ছিল Habib Arko) আর একটু চেক করে দেখি এই আইডির আগের নাম ছিল নিশ্চুপ বালিকা, যা সাবিহার আইডি ছিল।

এই রকম কান্ড কাহিনীতে আমি সত্যিই অবাক। হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো অই আইডি থেকে একটা ছবি পাঠিয়েছে, এটাতো অন্বেষার ছবি। সাথে সাথে আরেকটাম্যাসজ আসলো, কেমন লাগছে আমায়একটু বলনা প্লিজ। আমি হাটতে হাটতে বেলকনিতে চলে এসেছিলাম। তার ম্যাসেজের রিপ্লায় দিলাম, একদম আমার বউ এর মত। তারপর পা বাড়ালাম রুমের দিকে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত