লাজুক বউ

লাজুক বউ

মোবাইলের ভিব্রেশনে সকালের সুন্দর ঘুমটা ভাঙ্গল। ঘুম না ভাঙলে এতক্ষণে নিশ্চয় স্বপ্নের রাজ্যে চলে যেতাম এ আর নতুন কি? রোজ যা হয় স্বপ্নে কোনদিন রাজা, কোন দিন বড় অফিসার নয়তো আরো বড় কিছু হতাম আমি। বাস্তবে যদিও আমি এম,এ পাস বেকার কিন্তু আমার স্বপ্নের রাজ্যে আমি মহারাজা। কতবার স্বপ্নে বড় অফিসার থাকা কালীন কতজনকেই না চাকরি দিলাম আধো আধো চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে এলার্ম কেটে দিতেই মনে পড়ল আজ তো আমার চাকরীর ইন্টারভিউ আছে নাভানা গ্রুপে।

৮ টা বেজে গেছে, ৯ টায় ইন্টারভিউ শুরু হবে। হাতে বাকি মাত্র ১ ঘন্টা এর মধ্যে ফ্রেশ হতে হবে, ড্রেস পরে রেডি হতে হবে, আবার কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে অফিস পর্যন্ত যেতে হবে। রাস্তায় জ্যাম পড়লে হেটে যেতে হবে। সবটা ভাবতে গেলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আমার। এর আগে ৪ টা ইন্টারভিউ মিস করেছি শুধুমাত্র সময়ের অভাবেই। আজকেরটা মিস করলে প্রতিপক্ষ আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না। আমার বাড়িতে আমার প্রতিপক্ষ বাবা আর ছোট বোন লিভা । প্রতিপক্ষ বলছি কেননা আমার সাথে ওর আর ওর সাথে আমার কোন না কোন বিষয় নিয়ে লেগেই থাকে অনবরত।

একমাত্র মা ই বোঝেন এই বাড়িতে তার এই ছেলেটার সমস্ত কথা। আমার বোন টা চাকরী নিয়ে রোজ রোজ এতো কথা বলে ইচ্ছে হয় ওর মাথায় এক গ্লাস পানি ঢেলে দেই। যেন মাথা ঠান্ডা হলে আর কিছু না বলে। মাঝে মাঝে তো লিভা বলে আমার আগে নাকি ও জব পেয়ে দেখাবে। তাই যদি হয় তাহলে মান সম্মান তো আর থাকবে না। লিভা তো আরো বলে আমাকে দিয়ে নাকি চাকরী তো দুরের কথা গরুর খামারও হবে না।
কী যে করি–

মাঝে-মাঝে ইচ্ছে করে কয়েক টা গরু কিনে, পুষে ওকে দেখাই খামার হবে কি না। কিন্তু ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট বাসায় গরুর খামার করি কী করে? বোন টা ছোট হলে হবে কী অনেক চালাক আছে। ও যদি বলতো আমায় দিয়ে মুরগীর খামারও হবে না তাহলে ওর উপর রাগ করে এতোদিন চাকরির ইন্টারভিই না দিয়ে ঠিক বাসার ছাদে কিছু মুরগী কিনে পুষতে শুরু করতাম। দেখিয়ে দিতাম খামার কাকে দিয়ে হয়।

যাইহোক দ্রুত ব্রাশে পেষ্ট ভরিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম। শাওয়ারটা ছেড়ে গোসল করব। শরীরে কেবল একটু পানি পড়ে গা ভিজেছে অমনি শাওয়ারটা অফ হয়ে গেলো। কী ব্যাপার আসলেও এই সাত সকালে পানি চলে গেলো নাকি ইন্টারভিউ এ ফেল করাবে বলে এটা আমার প্রতিপক্ষের কোনো চালাকী? নাহ পানি আর আসছে না। কোনমতে তাওয়ালটা হাতে পায়ে মুছে বেরিয়ে এলাম বাথরুম থেকে। গায়ে শার্ট প্যান্ট টা দ্রুত পেঁচিয়ে ইন করে সু পরছি ওমনই ফোন টা বাজল।

-কে ফোন করল”

Disterb বলে সেভ করা নাম্বার তার মানে ছোট বোনটা। একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকি এরপরেও আমায় ও রাতদিন কল করে শুধুমাত্র জ্বালানোর জন্য। ফোনটা কেটে দিয়ে জোর গোলায় চেঁচিয়ে বললাম,

-“ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি আম্মু, কারো সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে নাই। কেউ যদি গায়ে পরে ঝগড়া করবে বলে ফোন করে থাকে তো তাকে বল রাত্রে ফেরার পর টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচ হবে একটা কিন্তু এখন না” বোনটা আমার পাশের ঘরেই থাকে। এভাবে জোরে বললে ও শুনতে পাবে তাই ফোনটা কেটে দিয়ে জোর গোলায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললাম।

-“আমি জানি কেউ আজ ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে তাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না তাই তো সকালে বেলা ঘুমন্ত বিছানায় এক মগ ঠান্ডা পানি ফেলে কারো ঘুমের সর্বনাশ করি নি অন্যদিনের মত। তাকে বলে দাও আম্মু ইন্টারভিউ যেন ভালোভাবে দেয়। তার প্রতিপক্ষ তাকে অল দ্যা বেস্ট জানিয়েছে। পাশের রুম থেকে লিভা চেচিয়ে কথাগুলো শোনাচ্ছিল প্রতিপক্ষের অল দ্যা বেস্ট পেয়ে মুচকি মুচকি হাসছি আর চুল গুলতে একটু জেল দিয়ে স্পাইক করে নিলাম। এতক্ষনে ইন্টারভিউ এর জন্য পুরো রেডি হলাম। হাতে ফাইলটা নিয়ে আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। প্রতিপক্ষ বোনকে রাত্রে রেডি থাকতে বলে বের হলাম।

লিফট টা সবে নামছে নিচে প্রেস করে ঢুকে পরলাম গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে সবে একটু হাটা ধরছি অনেকটা দৌড়ের মত করে তখনি হঠাৎ বর্ষনে এক পশলা পানির ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিল আমার অর্ধ শরীর।
ওপর দিকে তাকালাম পানিটা ৭ তলার ছাদ থেকে একটা মেয়ে ফেলেছে হাতে বালতি আর অপরাধীর মত মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি। অপরাধীর মত কানে হাত আর ভ্রু কুচকে ইশারায় সরি বলায় এক মুহুর্তে আমিও মুচকি হেসে দিলাম। কে এই মেয়েটা আগেতো দেখি নাই কোন ফ্লাটে থাকে সে ? দেখতে কিন্তু ভারী সুন্দর। ইন্টারভিউ দেরি হয়ে যাবে আর বেশি দাড়ালে গেইট থেকে একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম এই ভেজা শরীরেই। রিক্সায় যেতে যেতে শরীর মোটামুটি শুকিয়ে গেছে।

কিভাবে যেন আজ আমার চাকরিটাও হয়ে গেল এই কোম্পানিতে সামনে যে কোন দিন জয়েন করতে পারব বলে এপয়েনমেন্ট লেটার দিয়ে দিল। হাল্কা খুসিতে মনটা নেচে উঠলো। বাসায় আজ থেকে আমাকে ছোট বোন বেকার বলতে পারবেনা। রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম, প্রায় সন্ধা তখন। টিভি রুমে আব্বু-আম্মু আর লিভা সবাই এক সাথে আড্ডা দিচ্ছে। রুমে প্রবেশ করেই খুসির খবর সবাই কে দিয়ে দিলাম। আমার কথা শেষ হতে না হতেই ছোট বোন লিভা উঠে চলে গেল। ওকি আমার চাকরি পাওয়ায় খুসি নয় ? ব্যপারটা বুঝে ওঠার আগেই হাতে একটা গিফট প্যাক নিয়ে লিভা হাজির। আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল ভাইয়া এইটা ধর ,

-তোর জন্য কিনছি আমি ভেবেছিলাম তুই যেদিন জব পাবি সেদিন তোকে দেব।

-কিন্তু কি আছেরে এর মধ্যে?

-তোর পছন্দের রং এর একটা নীল শার্ট। অফিসে যেদিন প্রথম যাবি এটা পরিস কেমন।

বোনটা আমায় কত ভালবাসে। সারাদিন ঝগড়া করুক আর জালাতন করুক আমাদের ভাই বোনের ভালবাসার কিন্তু কোন কমতি নেই ব্যপারটা নিশ্চয় বোঝা গেছে এতক্ষণে । ছোট বোনটা একটা নীল শার্ট উপহার দিয়ছে আমায়। এই হলো ভাই এর প্রতি বোনের ভালবাসা। রাতের খাওয়া শেষ আম্মু বলল চাকরি তো হয়ে গেছে এবার তোর বিয়ের পালা। এক সপ্তাহের মধ্যেই তর বাবার বন্ধুর মেয়ে মিথীলার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই। মা বাবার বাধ্য সন্তান আমি বরাবরই, তাই আর না করতে পারলাম না। অতঃপর কন্যাকে দেখেই আমার বিবাহ কার্য সম্পন্ন হলো। বাসর ঘরে ঢুকব দরজায় দাড়িয়ে কাশি দিলাম। বৌ সেই কাশির শব্দ শুনে নড়ে চড়ে বসল। যাই হোক সালাম দিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম।

বিছানাতে বসলাম এরপর বিসমিল্লাহ বলে বৌ এর ঘোমটা সরিয়ে আমিতো অবাক! এতো সেই মেয়েটা চাকরি ইন্টারভিউ এর দিন আমার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিল ছাদ থেকে যে। আরে বাহ মনে মনে একেই চেয়েছিলাম আমি কিন্তু মায়ের মুখের ওপর তা বলতে পারিনি। সে জন্যই বলে আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যেই করে। এতক্ষণ আমার অবাক হওয়া দেখে বৌ আমার আসল ঘটনা মনে করতে পেরে জিব্বাতে কামড় দিয়ে লজ্জা পাচ্ছে। ইস লজ্জায় লাল এই রুপটার প্রেমেই তো পড়েছিলাম সেদিন। আমি বসে বৌ এর হাতটা ধরে বললাম, “সেদিনতো পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলা, আজও কি দেবে নাকি ভিজিয়ে” লাজুক লতা বৌ এর লজ্জিত মুখে এক চিলতে হাসি দেখে নতুন করে প্রেমে পড়লাম আবারো আমি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত