পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

শাবনম ফারিয়া,সিয়াম আহমেদ, এবং সাবিলা নূর কে দেখে চাকরি পাওয়ার পর এবারের শীতে আমি ও বিয়ে নামক শুভ কাজ টা সেরে ফেললাম। কনে পছন্দের পর বিয়ের আগে ছেলে-মেয়েদের কে আলাদা কক্ষে দশ মিনিট কথা বলার জন্য দেওয়া হয়।সেই দশ মিনিটেই ছেলেটি বা মেয়েটি একে অপরের সম্পর্কে যা অল্প একটু জানতে পারে।এবং এই অল্প জ্ঞান দিয়েই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করে।

“অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর” এই প্রবাদের বাস্তব প্রমাণ আমি বিয়ে নামক মিষ্টি ফল খেয়ে বউ নামক ভালোবাসার জিনিস ঘরে আনার পর দিন ই টের পেলাম। বিয়ের পর দিন সকালে জ্যাকেটের উপর চাদর পরে নাস্তা খেতে বসেছি।শীতের সকাল,আম্মা গরম গরম খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে এসে বললেন, “এই গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে নেয়,বুশরা কোথায়?” “সে রুমে আসতেছে” আমি কোনো ভাবে খাবার থেকে নিজেকে দূরে রেখে বুশরার আসার অপেক্ষা করতে থাকলাম।বুশরা চেয়ারে বসা মাত্রই তাকে খেতে বলে চামচ দিয়ে খিচুড়ি মুখে নিতে না নিতেই বুশরা আমার হাতটা ধরে থামিয়ে দিলো।

এমন ঘটনায় খুবই অবাক হয়ে বুশরার দিকে তাকানোর পর সে বললো, “চামচ দিয়ে না খেয়ে হাত দিয়ে খাও,দেখো বাবা ও হাত দিয়ে খাচ্ছেন,হাত দিয়ে খেলে বেশি মজা পাবে।যাও হাত ধুয়ে আসো” তখনই আমি বুশরার ভেতর লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর রুপ দেখতে পেলাম। আমি একবার মায়ের দিকে আর একবার বাবার দিকে তাকালাম। ছোট বোন ফারিহাকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে সামনের নয়টা দাঁত বের করে হাসছে। বাধ্য ছেলের মতো উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে যখনই খাবার হাতে নিতে যাবো। “এই তুমি হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোও নি,যাও হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে আবার ভালো ভাবে হাত ধুয়ে এসো” আমি কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে আবারো হাত ধুতে গেলাম। এবার হাত ধোয়ার পর আমার কাছে মনে হলো ঠান্ডায় আমার হাত জমে বরফ হয়ে গেছে।

এভাবে আরো কয়েকদিন কাটার পর জানতে পারলাম আমার বউ বুশরা পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদির অনেক বড় ভক্ত।এবং সে নাকি শাহিদ আফ্রিদিকে টিভিতে দেখেছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একটি এড দিতে।তার পর থেকেই নাকি সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেক সচেতন। এসব জানার পর ও আমি তখন ও আমার দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কিছুই টের পাচ্ছিলাম না। তবে মনে মনে আফসোস করছিলাম কেনো যে এই বিষয়ে বউ আমাকে সেই দশ মিনিট কথা বলার সময় বলে নি। যদি বলতো তাহলে অন্তত পক্ষে এখন প্রতিদিন তিন বার খাবারের পূর্বে পুরো এক মিনিট যাবৎ লাইফবয় হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হতো না।

এভাবেই হাত ধুয়ে ধুয়ে আমার সংসার আরো কিছুদিন কাটলো।কিন্ত জানুয়ারি মাসে শীত বাড়ার পরই আমি বিশাল বিপদের মুখে পড়ে গেলাম। শীতকালে মানুষ এমনি ই কম গোসল করে।কেউ কেউ পুরো শীত কাল ই বডি স্প্রে বা আতর লাগিয়ে পার করে দেয়।তবে আমি সপ্তাহে একবার গোসল করতাম।আর এখানেই বাধলো বিপত্তিটা। আগেই বলেছি আমার বউ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেক সচেতন, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাছে সে এই শীতকে একদম পাত্তা ই দেয় না। সেদিন রাতের বেলা অফিস থেকে ফিরে যখন কোর্ট খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম তখনই ধাক্কা দিয়ে বুশরা আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিলো।

কোনো ভাবে উঠে যখন বিছানায় আবার গা এলালাম তখন আবারো বুশরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।প্রথমবার আমি ভেবেছিলাম এমনি পড়ে গেছি কিন্ত এবার নিশ্চিত হলাম বুশরা ফেলে দিয়েছে। আমি উঠে বুশরার দিকে তাকিয়ে বললাম, “এভাবে কেউ স্বামী কে ফেলে বিছানা থেকে ফেলে দেয়।পাগলি কোথাকার,কেনো ফেললে আমাকে?” “ফেলবো না তো কি করবো,অফিস থেকে এসে মোজা না খুলেই বিছানায় শুয়ে পড়লে। ইশশ,মোজার কি বাজে গন্ধ।” “মোজার গন্ধ বলে এভাবে ফেলে দিবে?” “হ্যাঁ, দিবো। একশোবার দিবো।আর ক’দিন ধরে গোসল করো নি,তোমার শরীর থেকে ও তো উটকো গন্ধ আসছে!”

“ওমা,গত শুক্রবারে ই তো করলাম” “ছিহহ, তুমি আজকে ভাত পাবা না।যাও গোসল করো” “আমার ঘরে আমাকে ভাত দিবা না,শুক্রবারে করবো” “না দিবো না,বলেছি না যাও” “আচ্ছা যাও আমি না খেয়ে ই থাকবো” “না খেয়ে থাকবা।তাহলে ঠিকাছে করো না গোসল,গোসল না করা অব্দি এ রুমে ও তুমি জায়গা পাবা না” মাথার উপরের ছাদ হারাতে না চেয়ে জেদি বুশরার কাছে হেরে আমি বাধ্য ছেলের মতো গোসলে ঢুকলাম।কল ছেড়ে হাত দিতেই “উরিইইইইম্মম্মমায়া” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। বাহির থেকে বুশরা বলে উঠলো, “এই আমি গরম পানি বসিয়েছি, এনো দেবো?” “আমার শরীরে তোমার থেকে কম শক্তি নাকি।আমি নিজেই গিয়ে আনছি” এই বলে নিজের বীরত্ব দেখিয়ে গরম পানি বালতিতে ঢালার সময় হাত ফসকে কিছু পানি হাতের উপর পড়ে গেলো। বুশরা দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবই দেখছিলো।পানি ঢালা শেষে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, “আমি শক্তির জন্য বলিনি,শুধু শক্তি থাকলেই হয় না কৌশল ও জানতে হয়”

গরম পানি দিয়ে চার মিনিটের মধ্যে গোসল সেরে বেরিয়ে আসার পর ও আমার মনে হচ্ছে আমার শরীর বোধহয় সর্দি,কাশি,জ্বর কে আসার জন্য দাওয়াত দিচ্ছে। আমি কোনো ভাবেই চোয়াল এবং দাঁতের ঠকঠক কম্পন থামাতে পারছিলাম না।বুশরা তখন বিছানায় বসে আমাকে দেখছিলো। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, “বুউউউশসসসসসরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া আয়ারেকটা টাওয়াল দেএএএও” বুশরা আরেকটা টাওয়াল হাত নিয়ে এসে আমার দিকে ছুড়ে মারলো। “আমার নাম এভাবে ব্যাঙ্গো করে নিলে কেনো!” আমি টাওয়ালে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়িয়ে নিতে নিতে বললাম, “সরি, শরীর কাঁপছিলো তো তাই!”

বুশরা ভ্রু কুচকে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকালো।তারপর কপালে হাত দিয়ে উদ্বীগ্ন স্বরে বললো, “তোমার দেখি হাব ভাব ভালো না,বিছানায় বসো গরম কিছু নিয়ে আসছি” আমি সুবোধ বালকের মতো বিছানায় বসলাম আর মনে মনে বললাম, “হাব ভাব ভালো থাকবেই বা কিভাবে, লোকে যে বলে কেনো যে বিয়ে করলাম ব্যাচেলর ই ভালো ছিলাম সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তোমার চক্করে পড়ে” বুশরা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বললো, “ফিস ফিস করে কিছু বললে!” আমি মুখে হাসি এনে সামনের দাঁত গুলো বের করে, “আমাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং তোমাকে ভালোবাসি”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত