ভাইজান আমারে কাজে নেবেন?” ক্রাশ দরজা হালকা ফাঁকা করে মিনমিন করে বললো, তুমি লাবণ্য না? এখানে কেন এসেছো?
– শুনেছি আপনার বাসায় বুয়া নাই। আমি সব কাজ পারি।
:তুমি সব কাজ পারো!? কি কাজ পারো?
-চা বানাতে পারি, নুডুলস রান্না করতে পারি, পাউরুটির ওপর সালাদ দিয়ে বার্গারও বানিয়ে ফেলি। আর বাকি থাকলো দুপুরের রান্না,ঐটা ইউটিউব দেখে দেখে শিখে নেবো।
ক্রাশ দরজা খুললো, বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে। আমার কথা বিশ্বাসও করতে পারছে না আবার তাড়িয়েও দিতে পারছেনা। কারণ তার বুয়া দরকার। পরশুই তার বুয়া চলে গেছে। আমি এই ঘটনা জানি কারণ সে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছে। ঢাকা শহরে বুয়া সংকট বিষয়ে লম্বা একটা প্রবন্ধ লেখার শেষে বানী আকারে উক্তি দিয়েছে, “ব্যাচেলর লাইফের মতো কষ্ট আর কিছুতে নাই।” এটা দেখেই আমি নাচতে নাচতে চলে এসেছি। ক্রাশ আবার কথা বললো, তুমি কাজ করবা কেন? তোমার কিসের অভাব? আমি শোনা যায় না এত আস্তে মিনমিন করে বললাম, ভালোবাসার অভাব। ক্রাশ সেটা শুনতে পেল না, ভুরু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, আচ্ছা আসো। তোমার পার্সোনাল প্রবলেম জেনে আমার কি হবে? চলো রান্নাঘর দেখিয়ে দিই।
সব দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ক্রাশকে এককাপ চা বানিয়ে দিয়ে আমি ইউটিউব দেখে দেখে দুপুরের রান্না বসিয়ে ফেললাম। লেমন রাইস,মুরগীর শাহী ফ্রাই আর আলুর জাপানী ফ্রাই। সেগুলো সার্ভ করতে করতে তাকে জানালাম পরদিন রান্না করবো, মসুর ডালের চাইনিজ ঝোল আর ইলিশ মাছের পেটের ভেতর রসুন ঢুকিয়ে কেকা ফেরদৌসী স্পেশাল রেসিপি।
আমার রান্না খেয়ে ক্রাশ সন্তুষ্ট হয়েছে,আমার বেতন একলাফে এক হাজার বাড়িয়ে দিল। দুই মাস কেটে গেছে। আমার কাজে কর্মে ক্রাশ সন্তুষ্ট। আমি সকালে এসে নাশতা বানাই,পরোটা ফ্রাই অথবা চাপাতি রুটি। তারপর ক্রাশ ভাইজানের জামাকাপড় কেঁচে ধুয়ে ছাদে নেড়ে দিয়ে এসে ঘর ঝাঁট দিই আর প্রায়ই ঝাঁট দেয়া ময়লার সাথে ওনার গফের দেয়া একেকটা শোপিসের সেট ফেলে দিয়ে আসি। এরপর দুপুরের রান্না বসিয়ে ঘরদোর মুছে থালাবাসন মেজে বিদায় নিই। পরদিন আবার আসি। আগে তাকে ভাইয়া ডাকতাম এখন ডাকি ভাইজান। এ ছাড়া আর কোন সমস্যা আপাতত নেই।
আজ শুক্রবার। উনি বাসায় আছেন। গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়েছে। ক্রাশ সোফায় নিচের দিকে মাথা দিয়ে উপর দিকে পা তুলে দিয়ে গফের সাথে গল্প করছে। এই মুহুর্তে সে গফকে সালমান খানের দাবাং ৩ সিনেমার একটা হিন্দি গান শোনাচ্ছে। আমি গিয়ে ওনার মাথার উল্টাপাশে ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়ালাম। উল্টা অবস্থায় আমার রাগী মুর্তি দেখে ক্রাশ ভাইজান তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিয়ে সোজা হয়ে বসেছেন।
-কি চাও তুমি?
আমি এই কয়মাসেই অতিদ্রুত কাজের মহিলাদের গ্রাম্য ভাষা রপ্ত করেছি। সেই স্টাইলে দুঃখী দুঃখী গলায় বললাম, ভাইজান! আমি কাজ করতাম না বিদায় দেন। ভাইজান আকাশ থেকে পড়লো। হতভম্ব গলায় বললো, কাজ করবা না কেন? কি সমস্যা?
:মন টিকে না।
– ইয়ে মানে, বেতন বাড়াতে হবে? ওকে! বাড়িয়ে দেবো!
আমি মুখটা আরো দুঃখী দুঃখী করে ফেলে চিত্রনায়ক রিয়াজের স্টাইলে বললাম, বেতনের কথা না ভাইজান! টাকা পয়সা আমার কাছে কোন বিষয় না। টাকা পয়সা আমার কাছে তেজপাতা!
-তাহলে?
: যে বাড়িতে মানুষ পিরিত করে সেই বাড়িতে আমি থাকি না। বিবাহপূর্ব প্রেম! এইসব হচ্ছে কেয়ামতের আলামত। কেয়ামত যখন নজদিক হবে তখন ছেলেমেয়ে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াবে,মাটির নিচ থেকে বিকটদর্শন এক জন্তু বের হবে তারপরেই শিংহায় ফুঁক। ক্রাশ ভাইজান অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “আমি প্রেম করলে তুমি চলে যাবা?”
-অবশ্যই চলে যাবো। আমার কথা পাকা কথা। নড়চড় নাই। আমি ইন্টার পাশ। অনার্স পড়তেছি। আমার চাকরীর অভাব হবেনা। ক্রাশ খানিকক্ষণ ভাবলো। তারপর মিনমিন করে বললো, সাদিয়াকে আমি কিভাবে……
-আমি যাই ভাইজান! দরজা শক্ত কইরা বান্দেন চোর ছ্যাচড় আসবো।
: না না! এক মিনিট! এক মিনিট! তুমি রান্না করো,আমি দেখছি। আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম। সেখান থেকেই শুনলাম ক্রাশ আকুল স্বরে গফের সাথে কথা বলে গফকে বোঝাচ্ছে,
:প্লিজ!তোমার বাসা থেকে কোথায় বিয়ে দিচ্ছিল বিয়ে করে নাও। তুমি তো জানোই ঢাকা শহরে বুয়া পাওয়া সোনার খনি পাবার সমান। বুয়া চলে গেলে আমি না খেয়ে মরবো তুমি কি তাই চাও?