আংকেল এক প্যাকেট কনডম দেন তো। কথা শুনে দোকানি, পিচ্চি ছেলেটার দিতে তাকিয়ে আছে। পিচ্চির যা বয়স তাতে ওর কনডম প্রয়োজন হওয়ার কথা না আর এমন না যে সে কনডম ফুলিয়ে খেলা করবে, করণ এখন আর কনডম ফুলিয়ে খেলার দিন নাই।
– এই তুই কনডম দিয়া কী করবিরে ?
– আমি কী জানি, ঐ আপায় নিতে কইল, আর কইল বাদবাকি টেকা দিয়া লজেন কিইনা খাইতে। কনডম দেন আর বাদবাকি টাকা ফেরত দেন।
দোকানি বাইরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে বাইরে কে আছে ? ঐ তো রাস্তার ওপাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে তো ভদ্র ঘরের সন্তানই মনে হচ্ছে তবে চরিত্রের এত অধঃপতন হলো কী করে ? বাড়িটা এক নজর দেখে নেয় অর্পিতা, বিলাসবহুলই বলা যায়। তিন তলা বাড়ি। রাজকীয় স্টাইলের সদর দরজা । দোতলায় বর্ধিত বারান্দা, যা বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে বেষ্টিত। দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে একজন দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
– আমি অর্পিতা, আপনার স্যার আমাকে আসতে বলেছিল।
– জ্বি, জ্বি আপনি আসুন স্যার আমাকে বলে রেখেছে।
অর্পিতা বিনা সংকোচে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেছে আর দারোয়ান সুলতান, মিটমিট করে হাসছে । অর্পিতা চলে যাওয়ার পর সুলতান গুন গুন করে গান গাইছে, আজ পাশা খেলবোরে,, সাম, ও সামরে তোমার সনে, ও সাম,,রে তোমার সনে,, । দূর আমি না, স্যারে খলবো। স্যার আমারে পাঁচশো টাকা দিছে, আর কইছে টাকাটা রাখ, একটা মেয়ে আসব তারে ঢুকতে দিবি, ব্যাপারটা কেউ যেন না জানে । কথা ফাঁস করলে তোর চাকরি শেষ। আমি আর কমুই’বা কারে, আমি আর সাহেব ছাড়া বাড়িতে কেউ নাই। মেমসাহেব তার ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চট্টগ্রাম বেড়াতে গেছে। কাজের মহিলা যা একজন ছিল তাকেও ছুটিতে পাঠাইছে স্যারে, হয়তো আকাম উকাম করবো বইলাই।
– ও তুমি এসে পরেছ, তোমার নাম তো অর্পিতা তাই না ?
– জ্বি আমার নাম অর্পিতা, নামটাও মনে রেখেছেন দেখা যায়।
– তুমি কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর। রাতে তেমনটা বুঝতে পারিনি।
– আমার থেকে আপনার স্ত্রী আরো সুন্দর। দেয়ালে টাঙানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় অর্পিতা।
গলাটা ঝেরে কাঁশে যুবায়ের, কিছুটা অপ্রস্তুত । সেও দেয়ালে টাঙানো ছবিটার দিকে তাকায়, যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে রুপা। সেই তাকিয়ে থাকার ভেতর লুকিয়ে আছে হাজার কৈফিয়ৎ, হাজার অনুরাগ, হাজার জিজ্ঞাসা। তারপর যুবায়ের ধীর পায়ে টাঙানো ছবেটার দিকে এগিয়ে যায়, এবং উল্টো করে ছবিটা দেয়ালে মুখ করে ঝুলেয়ে রাখে।
– কী প্রয়োজন আছে স্যার ছবিটা ঢেকে দেওয়ায়, সে তো আর আমাদের দেখছেনা, আর চাইলেই কী সব কিছু ঢেকে দেওয়া যায় ? সব কিছু গোপন করা যায় ?
নাহ্ যুবায়ের নীতিবাক্য ভালো লাগে না, তার শরীরে এখন কামুকতা বিষ বাষ্প, জিহ্বায় জলাতঙ্ক কুকুরের মতো লালা। আহা কতদিন অন্য নারীর স্বাদ নেওয়া হয়না। এবার ধীর পায়ে অর্পিতার দিকে এগিয়ে আসে যুবায়ের। সেই এগিয়ে আসা দেখেই অর্পিতা বুঝতে পারে তার দিকে এখন এগিয়ে আসছে মুখোশধারী এক শয়তান, যে কিনা এখন তাকে চিঁড়ে চিঁড়ে খাবে। নাহ্ দেরি করে লাভ কী শরীরটাকে উন্মুক্ত করা যাক।
ভোর হওয়ার সাথে সাথেই অর্পিতা চলে গেছে । শরীরটা খুব ফ্রেস লাগছে যুবায়েরের। মেয়েটা দেখতে যেমন, বিছানাতেও তেমন। এক কথায় দারুন পারদর্শী। রুপা আসার আগে মেয়েটাকে নিয়ে আরেক রাত কাটাতে হবে। বউয়ের কাছে সব পাওয়া গেলেও অনেক কিছুই আবদার করা যায় না। মোবাইলটা দেখছিল আর বাজে চিন্তায় মশগুল ছিল যুবায়ের। হঠাৎ করে একটা ভিডিও মেসেজ আসাতে সেখানে চোখ আটকে গেল তার । একি! এতো গতরাতে মেয়েটির সাথে করা সেক্সের ভিডিও। কিন্তু ভিডিও করল কে? পরক্ষণেই আরেকটা মেসেজ, তাতে লেখা।
ভয় নেই মিস্টার যোবায়ের, এখনো ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছাড়া হয়নি আর পৌঁছানো হয়নি আপনার স্ত্রীর কাছেও। মাত্র বিশ লাখ টাকাই পারে আপনার সংসার এবং মান সম্মান বাঁচাতে। নিচে বিকাশ, রকেট, আর নগদের তিনটি নাম্বার দেওয়া হলো। ভেঙে ভেঙে টাকা গুলো পাঠিয়ে দিবেন আজ দিনের ভেতরেই । ও আরেকটি কথা কোন রকম চালাকি কিংবা পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করলে আপনার স্ত্রী সহ সারা বাংলাদেশেে ভিডিওটি ছড়াতে বেশিক্ষণ সময় লাগববে না। আর আপনি বোধ হয় নিজের অপকর্মের কথা পুলিশকে জানাতেও যাবেন না, কারণ নিজের ইজ্জতের ব্যাপার আছে না? ভয় নেই টাকা পেলে ভিডিওটি নষ্ট করে দেওয়া হবে, আমরা ব্লাকমেইল করলেও মীর জাফর নই।
যুবারের অনেকটাই দিশেহারা, তন্নতন্ন করে পুরো ঘর সার্চ করেছে কিন্তু কোথাও গোপন ক্যামেরা নেই। আর যেখান থেকে ভিডিও করা হয়েছে সেটা জানালার কাছ থেকে ভিডিও করা এবং স্থির। আর বাহিরের লোক তো এখানে আসার কথা নয়, তবে কে ভিডিওটি করলো ? তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
দারোয়ান সুলতান কে বলেছিল, একটি মেয়ে আসবে, মেয়েটি আসার পরে কেউ যেন বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে তবে কিভাবে আসলো বাহিরের লোক। নাকি এটা সুলতানের কাজ ? দারোয়ান সুলতান, যুবায়েরের সামনে মথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে মুখে ভয় আর আতংক। কে যেন স্যারের বেড রুমের ভিডিও করেছে আর সেই দোষ এসে পরেছে তার উপর, অথচ সে কিছুই জানেনা আর কাউকে ও বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেও দেখেনি।
– সুলতান এখনও সময় আছে সত্যি করে বল। কাজটা কে করেছে? নাকি তুই লোক দিয়ে করিয়েছিস?
– স্যার সত্যি কইতাছি এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আর বাড়ির ভেতরেও কেউ ঢুকে নাই। সারা জীবন আপনার নিমক খাইছি, আমি ক্যান আপনার সাথে বেইমানি করুম। আপনে তো আগেও মেইয়া মানুষ দাওয়াত দিছেন, আমি কী তখন কাউরে কিছু কইছি?
দূর, কিছুই মাথায় ঢুকছেনা যুবায়েরের। সত্যি বলতে সুলতান তার খুব বিশ্বস্ত আর এই কাজ কারার সাহস পাবেনা কোন মতোই। তবে কী এটা অর্পিতার কাজ ? কিন্তু সে ভিডিও করবে কিভাবে সেতো তার সাথেই শুয়ে ছিল। তবুও একবার অর্পিতাকে ফোন দিয়ে ফাঁপর নেওয়া যাক।
– হ্যালো অর্পিতা ?
– জ্বি স্যার বলুন
– কাজটা কিন্তু তুমি মোটেও ভাল করোনি।
– বুজলামনা স্যার কি বলতে চাচ্ছেন ?
– তুমি আমাকে কেন ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছ ?
– কী বলছেন আবোল তাবোল এসব! আমি আপনাকে ব্লাকমেইল করতে যাব কেন?
– কারণ তোমার অনেক টাকার প্রয়োজন তাই। তুমি আমাদের সেক্স ভিডিও করোনি ?
– আপনার মাথা ঠিক আছে স্যার ? আমি একটা মেয়ে হয়ে নিজের নোংরামির ভিডিও নিজেই প্রকাশ করব ? আপনার মান সম্মান না থাকতে পারে আমার ঠিকই আছে। আপনি ভালো করেই জানেন আমি সবার ডাকে সারা দেই না। সেদিন নাইট ক্লাবে অবশ্যই সেটার প্রমান পেয়েছেন। আমি শিক্ষিত এবং উঁচু ফ্যামিলির মেয়ে। টাকার জন্য অবশ্যই আমি এসব করিনা, আপনাকে ভাল লেগেছিল তাই আপনার বিছানায় এসেছিলাম। আর এই ব্যাপার নিয়ে কখনোই আমাকে ফোন দিবেন না। যদি আবার বিরক্ত করার চেষ্টা করেন তবে আমি পুলিশ Complain করতে বাধ্য হবো। কথা শেষ করেই ফোনটা রেখে দিয়েছে অর্পিতা।
আরিব্বা, এদেখি উল্টো ফাঁপর। বিশ লাখ টাকা তার জন্য ব্যাপার না কিন্তু কাজটা কে করলো সেটাতো জানার প্রয়োজন। মোবাইল টা আবার হাতে তুলে নেয় যুবায়ের। যে আই ডি থেকে মেসেজটা এসেছে সেটা একটু দেখা প্রয়োজন, একি! আই ডি তো এখন ডি এক্টিভ করা, আর তিনটা নাম্বারেও কল যাচ্ছে না। তবে এটা বুঝা যাচ্ছে যারা এ কাজটা করেছে তারা খুবই প্রফেশনাল। কোন উপায় না দেখে, নিজের সংসার এবং মান সম্মান রক্ষার্থে বিশ লাখ টাকা তাকে সেন্ড করতেই হলো কিন্তু কাজটা কে করেছে তাকে চেনাই গেল না। তবে ভয়টা তার মনে রয়েই গেছে। যদি কখনও ভিডিওটা প্রকাশ করে দেয় ?
নিস্তব্ধ চারিদিক, শুধু শহরের মদের বার আর নাইট ক্লাব গুলো জেগে আছে। ভেতরে রঙিন আলোর রশ্মি গুলো ছুটোছুটি করছে। শব্দের মূর্ছণা ছড়িয়ে যাচ্ছে উপর তলার প্রতিটি নর নারীর রক্ত কণিকায়। নেশা ধরে যাচ্ছে তাদের শরীরে। অর্পিতার ছোট পোশাকের ভাঁজে কোন কোটিপতি খুঁজে পাচ্ছে মাদকতা। আর কানে কানে বলছে, সুন্দরী রাতের সঙ্গী হবে ? অর্পিতা মিস্টি করে হাসে। এই তো পাওয়া গেছে কোন মুখোশধারীকে, যে কিনা ঘরে সুন্দরী বউকে রেখে নাইট ক্লাবে অন্য নারীর শরীরে কামুকতা খুঁজে বেড়ায় আর তৃপ্ত হতে চায় হোটেলের গোপন কক্ষে, কিংবা শূন্য বাড়ির শূন্য বিছানায় । নাহ্ তাকে তো ছাড়া যায় না।
– আমি আসলে সবার সাথে যাইনা, আমার রুচিতে বাঁধে, তবে আপনার ব্যাপারটা ভিন্ন। আপনি বয়স্ক হলেও দেখতে সুন্দর এবং হ্যান্ডসাম। আপনাকে না করি কিভাবে বলেন? আচ্ছা আপনি একটু দাঁড়ান কাউন্টার থেকে আমি আমার সাইট ব্যাগটা নিয়ে আসি।
টোকেন জমা দিয়ে সাইট ব্যাগটা বুঝে নেয় অর্পিতা। ভেতরের সব কিছু ঠিক আছে কিনা চেক করে নেয়, আর চেক করে নেয় ব্যাগের ভেতর বোতামের জায়গায় বসানো গোপন ক্যামারাটি। যা কিনা কারো বুঝার সাধ্য নেই, সাইট ব্যাগের ভেতর, একটি গোপন ক্যামেরা সুরক্ষিত ।