নেশা করার চরম শাস্তি

নেশা করার চরম শাস্তি

ত্রুাশকে বিরহ দেখানোর জন্য ফ্রেন্ড সার্কেলে সিগারেটে তিনটা টান দিয়েছিলাম! যদিও সিগারেটকে আমি ঘৃণা করি!! ইচ্ছে না থাকা সত্যেও সিগারেট খাচ্ছিলাম। আর বন্ধু মুন্নাকে বলেছিলাম ছবি তোলার জন্য! ওর ফোনের ক্যামারাটা সেই ক্লিয়ার ছিল! তাই বললাম, ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে তিনটা চারটা ছবি তুলতে। ও ছবি তোলা শুরু করলো! এইদিকে ছবি তোলানোর সময় আমার শরীরে একটা জুশ অনুভব করলাম! তাই বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলা শুরু করলাম। মনে হচ্ছিলো, আমি গাঞ্জাখোর বাবাখোর তাদের চাইতে বড় নেশাখোর! ছবিগুলা দেখে তাই মনে হলো!!

যাইহোক ছবিগুলা শেয়ারিং দিয়ে নিয়ে, ফিরলাম বাসায়!! বাসায় এসে ত্রুাশকে মেসেঞ্জারে ছবিগুলা সেন্ট করলাম!সাথে বললাম, তুমি যদি আমার প্রপোজালে রাজি না হও, আমি এখন থেকে নেশা করবো!মদ খাবো, গাঞ্জা খাবো, সাথে বাবা খাবো বাবা! আর হ্যা, নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে দিব!তুমি থেকো অনেক ভালো!!অন্য কাউকে নিয়ে!! ভেবেছিলাম আমার কষ্ট দেখে ত্রুাশ আমার প্রেমে পরে যাবে! কিন্তু না, এর উল্টো টা ঘটলো! ওপাশ থেকে মনে হলো সাইক্লোন শুরু হয়ে গেছে! প্রেমে পরবে তো দূরে থাক, বাংলাদেশ পাকিস্তানি উগান্ডার যত স্পেশাল গালি আছে সব শিলাবৃষ্টির মত ঝাড়াচ্ছে!!আর আঙ্কেল জোকারবাগের যত রাগি ইমুজি ও স্টিকার আছে সবগুলা বুলেটের গতিতে ছাড়ছে! প্রায় দশ মিনিট গালিগালাজ করার পর, আমার আইডিতে বল্ক! বল্ক দেখে মনে হলো কলিজায় গুল্লি মারছে! আহা জীবনটা বেদনার, ক্রাশ বুঝলো না!

মনে পরে গেলো, পুরোনো কথাগুলো, ক্রাশ কে মোট পঁয়তাল্লিশ বার প্রপোজ করেছিলাম সে সবগুলা প্রপোজই রিজেক্ট করছিল! সাথে প্রতিটা প্রপোজে দুইটা করে মোট নব্বইটা ছোফার(থাপ্পড়) মেরেছিল! সেই দুঃখে দুঃখীত হয়ে বন্ধুদের সাথে বিড়ি টানছিলাম! আর শয়তানি মাথায় এই বুদ্ধিটা কাজ করেছিল!! যার ঠেলা কিছুক্ষণ পূর্বে অনুভব করলাম! ভালো কথা, দুঃখে দুঃখীত হয়ে একটু কান্নার ট্রাই করলাম। এমন সময় আব্বু লাঠি নিয়ে আমার রুমে উপস্থিত! গলার পানি সব শুখিয়ে শুটকি হয়ে গেলো! আমতা আমতা করে আব্বুকে বললাম,

– কি ব্যাপার আব্বু? লাঠি নিয়ে আসছো যে?

বিড়াল খুঁজো নাকি?? আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, অগ্নিগিরিতে এসে আমি উপস্থিত হয়েছি! আর কিছুক্ষণ থাকলেই জ্বলেপোড়ে ছারখার হয়ে যাব! আমি সাতপাঁচ না ভেবেই পালানোর জন্য যখন দৌড় দিলাম, ধাক্কা খেলাম বড় ভাইয়ের সাথে, সাথেসাথে উপুত হয়ে পরে গেলাম মাটিতে! বড় ভাইয়ের মুখে ভিলেনের ডায়লগ —

-কিরে পালাচ্ছিলি নাকি?? আজকে তোমাকে ইচ্ছেমত বানামু কই যাও বেবি?

দেখলাম বড় ভাইয়ের হাতে রশিঁ! বুঝতে আর বাকি রইলো না, আজকে আমার ঠাডা পরবে ঠাডা!!পিছনে আব্বু সামনে ভাই! কিন্তু এখনো বুঝতে পাড়লাম না! সবাই এমন করছে কেনো? আমি কি করলাম এমন??যার কারণে এত আয়োজন!! আচমকা ভাইয়া বলল–

-ভাইজান তুমি নেশা কর আজকে কতদিন ধরে বলো তো?

-তওবা তওবা ভাইয়া এটা কি বল??

-এটা কি বলি তাই না?

এই দেখ ভাইয়ার হাতের মোবাইলে দেখালো, আমার হারামি বন্ধু মুন্না আমার সব ছবিগুলা ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে, সাথে ভাইয়াকে ত্যাগ করেছে! ক্যাপশন দিয়েছে, এসব পোলাপান গো জন্য আজ সমাজের সব পোলাপান মাদকাসক্ত!!

এমন ক্যাপশন দেখে আমার চোখ দ্বিতীয় আসমানে ঘুরপাক করছে! শুধু তাই না, ভাইয়া আরো দেখাচ্ছে, আমার নিজের আইডিতে লেখা নেশাযুক্ত ছবিগুলা দিয়ে, লেখা- এসো সবাই মিলে নেশাকরি, নারী থেকে দূরে থাকি!! আমার বন্ধু অসিমকে আমার পাসওয়ার্ড দিয়েছিলাম! হালায় যে এতবড় বেইমানি করবে কে জানে! শুধু তাই না এইছবিগুলা রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে!! অসিম বেইমানি করছে এজন্য,কারণ ওর আইডিতে গিয়ে ওর গার্লফ্রেন্ড কে আমি উল্টাপাল্টা কথা বলে দুজনের মধ্যে ব্রেকআপ করিয়ে ছিলাম! কিন্তু আমার পাসওয়ার্ড যে ওর কাছে ছিল সেটা আমার খেয়ালি ছিল না!

তাছাড়া মুন্নার বেইমানির কারণ, ওর আব্বুর কাছে একদিন ওর নামে নালিশ করে ছিলাম। ও সারাদিন মাইয়াগো পিছন পিছন ঘুরঘুর করে। আর রাত হলে নেশা করে!! সেটা শুনে আঙ্কেল মুন্নাকে শুলে ছড়িয়ে ছিল! আজকে যে আমার উপর কেয়ামত শুরু হবে সেটা আর বুঝতে বাকি রইলো না!! আব্বু আমার পায়ে রশিঁ বাঁধছে, আর ভাইয়া হাতে বুঝতে পারছি না কোন এঙ্গেলে আমাকে পিটাবে!! আমাকে ধরে রুমের বাইরের উঠানে নিয়ে গেলো। সেখানে একটা গাছের সাথে বাধলো! তারপর ভাইয়া ভিডিও ক্যামারা সেট করলো! শুরু হলো উরাধুরা পিটা! মাইরে কি টেস্ট!!

যে একবার খাবে সে দ্বিতীয়বার নেশার ধারেকাছে ও যাবে না!!চিল্লাচিল্লির কথা বাদি দিলাম! প্রায় ত্রিশমিনিট পিটানোর পর আমাকে রুমে একটা বিছানায় শায়িত করা হলো!! তারপর আম্মু ব্যথানিবারণ করতে বিদেশি মলম লাগানো শুরু করলো! আহ কি চিৎকার, মাগো আম্মাগো বাবাগো! খাটাশনি ক্রাশ গো!! আমি চিৎকার করেই চলেছি আর আম্মু সেটা দেখে মুখ ভেটকি মেরে চলে গেলো!! বুঝে গেলাম বিপদের সময় কেউই সাথি হয় না! কুত্তা জীবন আমার! মা ও অবহেলা করে আজকে!! এই ব্যথা নিয়েই দিলাম ঘুম!ঘুমিয়েও শান্তি নাই, পিটানোর শব্দগুলা কানে বাজছে!

কয়েকঘন্টা ঘুমানোর পর ভাবলাম একটু ফেসবুকে যাওয়া যাক! ফেসবুকে ঢুকতেই আমি যেনো আসমান থেকে পড়লাম! ভাইয়া ভিডিও রেকর্ড টা ফেসবুকে ছেড়ে দিছে! সাথে ক্যাপশন দিছে, আমার ভাই সাগর নেশা করেছিল, তাই আজকে আব্বু আর আমি তাকে অনেক আদর করেছি! দেখলাম হাহা রিয়াক্টেরে একটা পাহাড় হয়ে গেছে!! সাথে কত কিউট কিউট কমেন্ট! দেখে মন চাইলো ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করে আত্মহত্যা করি!!! কেউ দুই বালতি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে যাহ ভাই!! মরে শান্তি হই!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত