একটু মোটা

একটু মোটা

গালফ্রেন্ডকে মাঝ রাতে ফেসবুকে এক্টিব দেখে ম্যাসেজ করলাম।

– ‘কি করো। তখন তার উপরটা ছিলো এইরকম।
– ‘ভাত খাচ্ছি।

বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিলাম না মাঝ রাতে ক্ষুধা লাগাতেই পারে।আমিও তো প্রায় মাঝে মাঝে অর্ধেক রাতে উঠে এটা সেটা খাই। সকাল ৬টায় আবার নক করলাম ম্যাসেজে ‘কি করো?’

-ভাত খাচ্ছি। ১ ঘন্টা পর আবার ম্যাসেজ করলাম ‘কি করো’। এখন শুনতে শুনতে বিরক্ত ধরে গেছে।কানের ভেতরের পোঁকা গুলোও আত্মহত্যা করবে।

– ভাত খাচ্ছি।তুমি কি করো? মেয়েটা খাওয়া নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে আমাকে কখনও প্রশ্নই করলো না ‘তুমি খাইবা না বাবু!, সময় মতো খেয়ে নিও’
প্রচন্ড রাগ হলো এবার।

– আচ্ছা তুমি কি সব সময় খাওয়ার ভেতরেই থাকো।যখনি বলি তখনি বলো খাচ্ছি’।
– সব সময় কই রাতে ৪ বার, ঘুম থেকে উঠার পর ৩বার, দুপুর ৫ বার ব্যাচ্ এইটুকু।

এবার আমার সন্দেহ হতে শুরু হলো।গালফ্রেন্ড মোটা নয়তো? আমাদের প্রেমটা তো অনলাইনে।এখনো ছবিটা পর্যন্ত দেখা হয়নি।

– আচ্ছা তুমি মোটা মেয়ে নাকি?
– ছিঃ বাবু তোমার চিন্তা ভাবনা এতো নিচ।আমি শুধু একটু মোটা বেশি না যাকে বলে মিডিয়াম বডি।
– ওহহ!

এরপর একদিন ফেসবুকে ছবি ছাড়লো ৩টা মোটা মেয়ে আর একটা চিকন মেয়ে।প্রথমে সন্দেহ হলো বেশি মোটা মেয়েটাই আমার জিএফ। পজেটিব চিন্তা ভাবনা করে মনকে শান্তনা দিলাম। চিকন মেয়েটাও তো জিএফ হতে পারে।

বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্ট গেলাম। সবাই বিরিয়ানি অর্ডার দিলেও আমার জন্য নুডুলস্ কারণ এটাই আমার প্রিয়।বিরিয়ানি সহ্য হয়না। নুডুলস্ সামনে রাখতেই চেয়ার থেকে বিভস্য চিৎকার দিয়ে উঠলাম ‘নাহ’।চোখের সামনে থেকে সরা এগুলো। কেন জানি খাবার দেখলেই ভয়ে আত্মা কেপে উঠে।বুকটা এখনও ধুকপুক করছে। কি বিভস্য দেখতে নুডুলস্ গুলো। লম্বা-লম্বা দড়ির মতো পেটের নারি ভুরিতে প্যাচ লেগে গেলেই ঝামেলা।গলা বেয়ে একটা ঢোক গিললাম। হঠাৎ করে গালফ্রেন্ডের পেট খারাপ পেটে অনেক ব্যাথা।ভালোবাসার মানুষটার পেট খারাপ শুনলে মনটাই হতাশ হয়ে যায়।

– বাবু ঔষধ নিও সময় মতো।অন্ততপক্ষে একটা।
– ওজন বেশি হলে একটাতে কাজ হয়না বাবু।
– মানে?
– মানে ওসব তুমি বুঝবা না।
– সকালে খাইছো বাবু?
– না একটুও খেতে পারছিনা মুখের স্বাদ চলে গেলে ১৫টা আলুর পরটা সাথে ৬টা ডিম ভাজি, ৩ প্লেট বিরিয়ানি, ছাগলের মাংস ৪-৫ প্লেট শিওর না আর কয়েক কেজি আপেল মাত্র।  বয়ফ্রেন্ড হিসাবে কর্তব্য গালফ্রেন্ডের পেট খারাপের সময় তার পাশে থেকে খাওয়ার উৎসাহ দেওয়া।

– ১ ঘন্টা পর আবার কিছু খাবা নয়তো হাত কাটবো কিন্তু।
– না বাবু প্লিজ হাত কাটবানা।বিরিয়ানির কসম।তাহলে আমি পান্তা ভাতে লবণ না দিয়েই খাবো।তুমি কি চাও লবণ ছাড়া পান্তাভাত খাই?
– জীবনেও না।

ম্যাসেজ থেকে বের হয়ে হতাশার একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। আজ আমাদের ফাস্ট ডেটিং।বেশ গুছ-গাছালো হয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।ম্যাসেজ দিলাম ‘বাবু তুমি কই?’

– প্রথম টেবিলের বাম পাশে।সাথে কিছু আমার বান্ধবীও আছে কিছু মনে করো না।
– আরে ব্যাপার না। সম্ভবতো বলতে ভুল করেছে ৮ জনকে কিছু বলা যায় না।ছোট-খাটো ৮জন হাতির বাচ্চা গুটিসুটি হয়ে বসে আছে।
– কই এতো লেট করছো কেন?
– তোমরা অর্ডার দাও আমি বাথরুম থেকে আসতেছি।প্রচন্ড চাপ পেয়েছে। ওয়েটার হাতে বিলের কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বলে ‘ভাই আপনার বিল’ বিল দেখে বড়-সড় একটা শক খেলাম ১৫ হাজার টাকার খেয়েছে।

– মানে?
– আপনার গালফ্রেন্ড খেয়েছে।
– আমি দেখতে হ্যান্ডসাম হলেও পিওর সিঙ্গেল।একবার ভেবে দেখুন তো মেয়েটার সাথে আমাকে মানায় কিনা?
– অবস্যই না।স্যরি স্যার বিরক্ত করার জন্য। চলে যাচ্ছিলাম এমন সময় পিছন থেকে ডাকলো কেউ ‘বাবু কই যাও?’
– ইয়ে..মানে? একটু বাথরুমে।
– কিছুক্ষণ আগেই তো বাথরুমে গেলা আবার কেন যাবা।

এটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না বুকের ভেতর জোরিয়ে ধরে।আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে।একটা পিঁপড়াকে হাতি জোরিয়ে ধরলে যেমন লাগে।

– তুমি এতো মোটা কেন?
– মাত্র একটুই তো মোটা! এখন ভাবছি বিলটা দেবো কিভাবে? আচ্ছা এক মাস ফ্রিতে রেস্টুরেন্টের থালা-বাসন ধুয়ে দিলে কেমন হয়?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত