বিবেকবোধ

বিবেকবোধ

আমার স্ত্রী নীলা বায়না ধরেছে শীতকালের ছুটিতে কক্সবাজার যাবে।ছুটি যেহেতু আছে বেশ কয়েকদিনের, আমারও ইচ্ছে সবাইকে নিয়ে ছুটির দিনগুলো আনন্দে কাটাবো। তাই এখন থেকে নীলা নিজেই সব প্ল্যান করতে শুরু করে দিলো। কে কে যাবে আমাদের সাথে। এক পর্যায়ে বললো

~হিমু আমার ফ্যামিলির সবাই কিন্তু যাবে।তুমি কিন্তু না করতে পারবে না।
–আচ্ছা ঠিক আছে যাবে।কিন্তু গাড়ি একটা এই হিসেব করে প্ল্যানিং করো। ঢাকা থেকে দুই গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আমার যে নেই, সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।

~আমি এতোকিছু বুঝি না।শুধু এইটুকু জানি আমার ফ্যামিলির সবাই যাবে। জানুয়ারী ২৩তারিখ যাওয়ার প্ল্যান হলো।২২ তারিখ নীলার ফ্যামিলির সবাই আমার বাসায় এসে হাজির।

–সকাল হতেই নীলার ফ্যামিলির সবাইকে রেডি হতে বললো। আমার মা,আর ছোট বোন শিমু সবার জন্য নাস্তা রেডি করলো।খাওয়া শেষ করে নীলার ফ্যামিলির সবাই গাড়িতে উঠলো । নীলাও উঠে বসলো।গাড়িতে সিট আছে মাত্র দুটি। যেখনে আমরা বাকি তিনজন।নীলা বলছে-

~হিমু তোমার বোন ছোট মানুষ তার আনন্দ করার ইচ্ছে আছে।মায়ের তো বয়স হয়েছে। মা বরং বাসায় থেকে যান।আর তাছাড়া বাসাটাও তো একেবারে খালি হয়ে যাবে।একজন থাকা দরকার। আচ্ছা একজন থাকা দরকার। তাই না।তাহলে এক কাজ করি আমিই থেকে যাই।আমার মা যাবেন। উনার যেমন বয়স হয়েছে। তোমার মায়ের ও বয়স হয়েছে। তোমার মায়ের মনে আনন্দ থাকলে আমার মায়ের ও আছে।মা যাবে আমি বাসায় থেকে যাই কেমন।

~এই হিমু কি বলছো এইসব। তুমি না গেলে আমি এতোকিছু সামলাবো কি করে, তাছাড়া টাকা পয়সার ও তো ব্যাপার আছে।গাড়িতে ওঠো। মা যাবেন তুমিও যাবে।রাইসা আর নাবিলা (নীলার ছোট বোন) ওরা না হয় এক সিটে দুজন বসবে।

–আমি মা-কে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসলাম। আর মুচকি হাসলাম।

ঈদে বেস কিছু টাকা বোনাস পেয়েছি।ভেবেছি কিছু টাকা অসহায় মানুষকে দান করবো।আর বাকি টাকা দিয়ে ফ্যামিলির সবার জন্য কেনাকাটা করবো।তাই নীলা কে বলি লিস্ট করার জন্য কার কি লাগবে।তবে ১৫০০০ টাকার মধ্যে করো।নীলা এক ঘন্টা সময় নিয়ে লিস্ট করে ধরিয়ে দেয়। ,লিস্ট টা ছিলো এইরকম –

রাইসার জন্যঃ- একটি ড্রেস ১৫০০ টাকা
(নীলার ছোট বোন)
নাবিলার জন্য ঃ- একটি ড্রেস ১৫০০ টাকা
নীলার জন্য শাড়ী ঃ- ৬০০০ টাকা
নীলার মায়ের জন্য শাড়ী ঃ- ২৫০০ টাকা
নীলার বাবার জন্য পাঞ্জাবি ঃ- ১০০০ টাকা
হিমুর জন্য পাঞ্জাবী ঃ- ১০০০ টাকা
হিমুর বোনের জন্য ড্রেস ঃ-,১৫০০

লিস্ট টা দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম নাহ।আমার গর্ভধারিনী মায়ের নামটি নেই।তখন নীলা বলতে লাগলো –

~ও হিমুতোমার মায়ের তো আগের অনেকগুলো শাড়ী আছে।তাই মায়ের জন্য শাড়ী না হলেও চলবে।

–নীলা তোমার মায়ের ও তো অনেকগুলো শাড়ী আছে।উনার জন্য না হলেও তো চলবে তাই না।শুনো প্রত্যেকটা সন্তান যেমন তার মায়ের কাছে প্রিয়। তেমনি প্রত্যেক মা তার সন্তানের জন্য প্রিয়। একদিন তুমিও সন্তানের মা হবে তখন বুঝবে।

~আমার ভুল হয়ে গিয়েছে হিমু।আমার এতো দামী শাড়ী লাগবে না।আর আমার মায়ের জন্য এবং তোমার মায়ের জন্য একই শাড়ী কিনবে।

–একদিন অফিস থেকে এসে শুনি নীলা বকাঝকা করতেছে এই বাসায় কি আর কোনো নারী নেই।সব কি আমাকেই করতে হবে।রান্না থেকে শুরু করে ঘর গুছানো সব আমি করি।আমাকে কি কাজের মেয়ে পেয়েছে এই বাড়িতে।

–আমি এসে নীলাকে একটা থাপ্পড় দেই গালে।অভিমানে দড়জা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলো। ঠিক কিছুক্ষণ পর….
–আমি বেলকনিতে বসে রাতের নিস্তব্ধতা উপভোগ করছিলাম। ঠিক এই মূহুর্তে কারো স্পর্শ পেলাম। আর বললো…

~রাতে খেয়েছো?
–নাহ।তুমি?
~নাহ খাই নি।চলো খাবে।সারাদিন অফিস করে এসেছো।খুব ক্লান্ত তুমি।খেয়ে ঘুমাতে যাবে।
–নীলা আমি কিছু বলতে চাই।
~হুম বলো।
–নীলা তোমার মা কি বাসায় রান্নাবান্না করেন?
~নাহ উনার তো বয়স হয়েছে। উনি এইসব করবেন কেনো।আমার ভাবী আমাদের বাসার সব রান্নাবান্না করেন।
–তোমার মা কি তোমার ভাই ভাবীর কাপড়চোপড় ধুয়ে দেন?
~নাহ।ভাবী আছেন তো।
–তাহলে তুমি আমার মা’কে উদ্দেশ্য করে যেগুলো বলেছো, সেগুলো যদি তোমার মা’কে তোমার ভাবী বলে তোমার ভাইয়ার কেমন লাগবে বলো? একটু নিজের বিবেকের সম্মুখীন হও।

~খুব খারাপ লাগবে। আমি বুঝতে পেরেছি হিমু। আমার ভুল হয়েছে। আর কখনো এমন হবে না।আসলে সারাদিন বাসার কাজকর্ম করতে করতে হাঁপিয়ে যাই।তাই মেজাজ ঠিক থাকে না।

–মানুষ মাত্রই ভুল।আমারও কিছু ভুল রয়েছে।এই যে আজকে থাপ্পড়টা দিলাম এটাও ভুল।সারাদিন বাসায় থাকো। সপ্তাহে অন্তত একটা দিন তোমাকে উপহার হিসেবে দিতে পারি।এখন থেকে প্রতিটা ছুটির দিনে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।আর এই দিনটাতে আমরা অনেক মজা করবো। এখন থেকে প্রতিটা ছুটির দিনে সকল রান্নাবান্না, আমার।নতুন নতুন রেসিপি রান্না করে খাওয়াবো।

~আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু হিমু সাহেব ঝাল ঠিকঠাক মতো দিয়েন কিন্তু।
–কিহ !আমি কি ঝাল খুব বেশি দেই? নাহ একেবারেই দেন না।

–তুমি তো জানো আমি ঝাল কম খাই।
~আচ্ছা এখন এসো।দুজনেই খাবো।
–এখন খাওয়ার ইচ্ছে টুকু নেই যে আর।
–এই মুহুর্তে হয়ে যেতে চাই নীল পরী নীলাঞ্জনার। এইদিকে বলা মাত্রই নীলা দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে।হিমুটা কি আর বসে থাকবে নীলা যেদিকে যাচ্ছে হিমুটা সেদিকেই ছুটছে গভীর ভালোবাসায় হারাতে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত