বিষকুম্ভ: ২৪. বিস্মিত হতবাক সকলে

বিষকুম্ভ: ২৪. বিস্মিত হতবাক সকলে

২৪. বিস্মিত হতবাক সকলে

বিস্মিত হতবাক সকলে।

কিরীটী বলতে লাগল, হ্যাঁ, উনি! মৃদুলা দেবীরই সাহায্যে আমাদের ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরী তাঁর লাভের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন। হতভাগ্য রূপমুগ্ধ পুরুষদের ওঁরই সাহায্যে ব্ল্যাক-মেইলিং করতেন এবং নার্সিংহোমে ওঁরই হাত দিয়ে সরবরাহ করতেন হ্যাহিসিগারেট নেশাগ্রস্তদের। তারপর মিত্রা সেনকে হাতে পেয়ে বৈকালী সঙ্ঘের ব্যপারটা তাঁরই হাতে তুলে দিয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎ সব ওলটপালট হয়ে গেল মিত্রা দেবী অশোকবাবুকে ভালোবাসায়। ভালোবাসার সুধারসে নতুন করে জেগে উঠলেন মিত্রা দেবী আর সেইটাই হল তাঁর কাল। পাছে তাঁর মুখ থেকে সব অতীতের সত্য কথা প্রকাশ হয়ে পড়ে, সেই ভয়ে ভুজঙ্গ চৌধুরী মৃত্যুবাণ হানলেন মিত্রার বুকে। কৌশলে তাঁকে বৈকালী সঙ্ঘে আনিয়ে মৃদুলা দেবীর সাহায্যে বিষপ্রয়োগ করালেন। পূর্বেই বলেছি, অশোক রায় সে রাত্রে হলঘরে ঢুকে মনীষা দেবীকেই দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু মনীষা দেবী বা মৃদুলা দেবী ছদ্মবেশে থাকায় এবং অশোক রায় ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই মনীষা ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ায় অশোক রায় সেরাত্রে তাঁকে চিনতে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত অবিশ্যি মৃদুলাই স্বীকৃতি দিলেন আদালতে।

সে স্বীকৃতি যেমন করুণ তেমনি মর্মস্পর্শী।

প্রথম যৌবনে একদা মৃদুলা ভালোবেসেছিল ভুজঙ্গ ডাক্তারকে। কিন্তু অর্থপিশাচ ভুজঙ্গর মনে আর যাই থাক, নারীর প্রতি কোন দুর্বলতা কোনোদিনই ছিল না। অথচ সে বুঝতে পেরেছিল অসাধারণ বুদ্ধিমতী মৃদুলাকে হাতের মুঠোর মধ্যে রাখতে পারলে সে ভবিষ্যতে অনেক কাজ কুরতে পারবে, তাই সে কৌশল করে পঙ্গু ভাই ত্রিভঙ্গের সঙ্গে গরিবের মেয়ে মৃদুলার বিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে আসে, তার অর্থাৎ মৃদুলার অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

আর তার পর থেকেই মৃদুলার সেই প্রেমের সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে ভুজঙ্গ ডাক্তার হতভাগিনী মৃদুলাকে।

ভুজঙ্গের প্রতি ভালবাসা ছাড়াও, কিছুটা অবিশ্যি বিকৃত মনোবৃত্তি ছিল মৃদুলারও। তা হলে তাকে দিকে সব কাজ হয়তো ভুজঙ্গ ডাক্তারেরও করা অসাধ্য হত।

এবং শেষ পর্যন্ত মিত্রা সেন অশোক রায়কে ভাল না বাসলেও হয়তো ব্যাপারটার পরিসমাপ্তি ঐভাবে অত দ্রুত ঘটত কিনা সন্দেহ।

ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীই রাত্রে ছদ্মবেশে বৈকালী সঙ্ঘে গিয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসত।

সে কথাও জানা গেল মৃদুলার জবানবন্দি থেকেই।

মৃদুলা পূর্ব হতেই উপস্থিত ছিল সেরাত্রে বৈকালী সঙ্ঘে এবং শশী হাজরা যেটা তার জবানবন্দিতে গোপন করে গিয়েছিল, পরে তাও স্বীকার করে। মৃদুলাই অতর্কিতে তীব্র ক্রিয়ার বিষ মিত্রার দেহে ইনজেক্ট করেছিল ভুজঙ্গের পূর্ব পরামর্শমত।

আগের পর্ব :

০১. তাসের ঘর
০২. ভুজঙ্গ ডাক্তারের সঙ্গে
০৩. বর্তমান কাহিনীর আদিপর্ব
০৪. সে রাত্রের মত আশ্বাস দিয়ে
০৫. দিন দুই পরে কিরীটী
০৬. অসাধারণ প্রসাধন-নৈপুণ্যে
০৭. নীলাম্বর মিত্র ও মনোজ দত্ত
০৮. কিরীটীর টালিগঞ্জের বাড়িতে
০৯. সমীরণ সরকার বিদায়
১০. আমার কণ্ঠের বিস্ময়ের সুর
১১. হীরা সিং কিরীটীর পূর্ব নির্দেশমত
১২. মহারানীর তীক্ষ্ণ প্রতিবাদের পর
১৩. বারের মধ্যে চার-পাঁচজন নরনারী
১৪. হলঘরে আমরা প্রবেশ করবার মুখে
১৫. মহারানীর জবানবন্দির পর
১৬. মীরজুমলা
১৭. ঘরে ঢুকে শুনি রঞ্জন রক্ষিত
১৮. আমি যখন নীচের বাগানে যাই
১৯. কিরীটীর বাসায় যখন ফিরে এলাম
২০. কিরীটী মৃদু হেসে বললে
২১. টেলিফোনে অশোকবাবুকে ডেকে
২২. সোফার উপরে নিঝুম হয়ে
২৩. অশোক রায় বিদায় নিলেন

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত