সবেমাত্র বৌ বাজার হতে বাজার খানা সেরে রুমে প্রবেশ করলাম। বৌ বাজার খানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনের পাশেই অবস্থিত। মাঝে মাঝে অদম এই আমি বৌ বাজারে বৌ খুঁজি। কারণ নামটাই হলো বৌ বাজার। কিন্তু দুঃখের কথা হলো আজৌ অব্দি কোনো বৌয়ের সন্ধান পেলাম না এই বৌ বাজারে। বৌ পাব দূরের কথা কোনো জামাইয়েরও সন্ধান পাইলাম না।
আসলে নামে বৌ বাজার হলেও কাজে হলো এখানে সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত বাজার জমে। স্টেশনের আশে পাশের এলাকার মানুষসহ আমার মতো অসংখ্য মেসে বসবাসরত ব্যাচেলাররা বাজার করে। দুই হাত ব্যগ ভর্তি বাজার নিয়ে চার তলার সিড়ি বেয়ে ব্যাচেলার বাসভবনে প্রবেশ করলাম। এখানে আমরা সবাই ব্যাচেলার। তাই দরজার সামনে সাদা কাগজে বড় বড় করে ‘ব্যাচেলার বাসভবন’ লিখে আঠা দিয়ে সংযুক্ত করে রাখছি। রুমে ঢুকেই তৃষ্ণার্ত গলায় জুড়ে জুড়ে চিল্লি দিয়ে ডাকতেছি, ‘বুয়া অ বুয়া’ ‘ভাইজান আমি এ্যাহানে, চুলায় ভাত দিছি বাজারটা এ্যানে লইয়ান’ রান্না ঘর হতে মিনমিনিয়ে আমার তথা আমাদের বুয়া মর্জিনা বলল।
বুয়ার নাম মর্জিনা। নামটা বেশ পছন্দনীয় আমার কাছে। নামটা যেদিন আমি প্রথম শুনি সেই দিনই আমি বুয়ার প্রেমে পড়ি। কিন্তু যেদিন বুয়াকে সামনা সামনি দেখলাম সেদিন বুয়ার জন্য আমার বুকের ভিতরে জমাতিত সকল আশা-ভরসা নিমিষেই কোন সু দূরে যেন হারিয়ে গেছে। আমি সেদিন রুমের দরজা বন্ধ করে টানা ২ প্যাকেট বাংলাদেশের অন্যতম ব্যান্ড আকিজ বিড়ি খাইছি। এরপরে সাত সাগর তের নদী কেঁদে কেঁদে ভাসাইছি। তারপরে এক আকাশ কষ্ট শেষ হয়ছে।
বাজারের ব্যগ গুলো মর্জিনার পাশে রাখতেই একটা বিস্ময়কর শব্দ শুনলাম। যেটা শুনে আমার কপাল চোখে থুক্কু আমার চোখ কপালে ওঠে গেল। মর্জিনা আমাকে বাবু বলছে। সেই সুখে আমি তো দু’চোখ বন্ধ করে স্বপ্নে মর্জিনাকে নিয়ে গান গাইতে শুরু করলাম ‘অ আমার মর্জিনা, কত ভালোবাসি তোমায়। তুমি তো জানো না, অবহেলা করেছো আমায়।’ কিন্তু পরক্ষনেই মর্জিনার ডাকে আমার হুশ আসে। মর্জিনা বলল, ‘ভাইজান এ্যানে কি করেন? যান এনতে।
চোখ গুলো দুই হাতের তালু দিয়ে কচলিয়ে নিলাম। এমনি সাথে সাথে দেখি মর্জিনার কানে মোবাইল। মর্জিনা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছে। তখন তার বয়ফ্রেন্ড কে বাবু বলে ডাকছে। আর আমি মনে করছি আমাকে বাবু বলে ডাকছে। দুঃখে, কষ্টে বুক চিরে যাচ্ছে। মর্জিনার কাছ থেকে হাটি হাটি পা পা করে বিদায় নিচ্ছি। আর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বাপ্পারাজের একটা ছবির গান গাইতেছি, ‘তুমি মর্জিনা আমার চির সুখে থাকো, আমি একা সুখে দুঃখে হেসে যাব।’ রুমে প্রবেশ করে বালিশের পেটে মাথা রেখে পকেট থেকে মোবালটা বের করলাম। নীল-সাদার ফেসবুক নামক দুনিয়াতে প্রবেশ করে একটা স্ট্যাটাস দিলাম। ‘মেসের বুয়া মর্জিনাও প্রেম করে, হ্লার আমিই আজ অব্দি প্রেম করতে পারলাম না’ স্ট্যাটাসটা দিয়ে ঘুমের ঘরে তলিয়ে গেলাম। আহা কত স্বপ্ন দেখতেছি। কত কত।
এক সময় কারো হাতের স্পর্শ আর ডাকে আমার ঘুমখানা ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়। মনে মনে কয়েকশত গালি দিয়ে চোখ গুলো খুলে তাকিয়ে দেখি এ যে মর্জিনা। বলল, ‘ভাইজান, সেই কতকান থিক্যা ডাকতাছি হুনেন না? মইরা গেছলাইন নাকি? রান্না-বান্না শেষ আমি যাইগা’ আমি কিছুই বলতে পারি নাই। মর্জিনা হনহন করে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল। আমি ফেসবুকে ঢুকেই দেখি আমার স্ট্যাটাসে শত শত হাহা আর কান্নার ইমুজি। আর কলিজার বন্ধু গুলোর চমৎকার চমৎকার কমেন্ট তো সাথে আছেই। অনেক গুলো কমেন্টের মধ্যে কয়েকটা হলো, ‘ভাই তুই শেষ পর্যন্ত বুয়ার প্রেমে পড়লি’ ‘হ্লা মরগা, তর মেসের বুয়া প্রেম করে আর তুই?’ ‘যাক শেষ পর্যন্ত তুইও প্রেম করার চিন্তা করতেছত’ আমার ক্রাশ কুলসুম কমেন্ট করছে। ‘আপনার আবার প্রেম’ মেসের বুয়া মর্জিনা কমেন্ট করছে, ‘ভাইজান কামডা কি করলাইন?’ কে শুনে কার কথা। আমি কারোরই কমেন্টের রিপ্লাই না দিয়ে দুপুরের খাবারটা সেড়ে নিলাম।
পরদিন মর্জিনা এসেই আমাকে তালাস করতে লাগলো। আমি ভয়ে বিড়াল হয়ে নাকে মুখে কম্বল দিয়ে ঢেকে ঘুমের ভান ধরে আছি। মর্জিনা তার ওড়না খানা কোমড়ে গুছিয়ে লেডি গুন্ডার মতো আমার রুমে প্রবেশ করে একটানে আমার কম্বল সরিয়ে বলল, ‘ভাইজান কামডা কি করলাইন?’ আমি ভয়ে ভয়ে চোখ দু’টো খুলে মর্জিনার পানে তাকিয়ে বললাম, ‘কি কাজ করলাম?’ ‘আমনে আমারে লইয়া অই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন কেরে?’ ‘দুঃখে, কষ্টে’ ‘আমনে জানুইন কামডা কি করছুইন?’ আমি করুণ সুরে বললাম, ‘কি?’
‘আমার দুই দুইডা পুলার লগে পিরিত আছে। এ্যাহন যদি অই পুলা গুলো দেহে তাইলে আমার কাম সারছে’ ‘এখন উপায় কি?’ ‘আমনে এ্যাহনে স্ট্যাটাসটা কাইট্টা লাইন’ এই বলে মর্জিনা চলে গেলো। এটা আমি কি শুনলাম। মর্জিনা একটা না দুইটা প্রেম করে। আর আমি? না না এভাবে আর থাকা যাবে না। এর একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। মেসের নিচে ছোট একটা টং দোকান আছে। সেখান থেকে ৫ টাকার আকিজ বিড়ি কিনে আনলাম। রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে বিড়ি টানছি আর পাশে মোবাইলে গান বাজতেছে, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ ঘর আমার বুক চিরিয়া….