ইচ্ছাপূরণ

ইচ্ছাপূরণ

ভাবি, কালকে শুভাকে দেখলাম পাশের বাসার সৈকত এর কাছ থেকে কি একটা কাগজ নিচ্ছে। আমি ছাদ থেকে দরজার সামনে আসতে ই এই কথা শুনলাম। আমাকে দেখার সাথে সাথে ই ঐ পাশের বাসার আন্টি কেমন চুপ হয়ে গেলেন। আমিও এসব পাত্তা না দিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর,, আমার মুচকি মুচকি হাসিমাখা মুখ দেখে আম্মু ঠিক বার ফুট দূরে থেকে স্টার জলসা আর জি-বাংলা সিরিয়ালের মায়ের মত কিছু একটা বুঝতে চেষ্টা করছিলেন কপাল ভাঁজ করে। দেখার সাথে আমি স্মাইলি ফেইস থেকে নরমাল মুডে চলে এলাম। নাস্তা করে রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হব ঠিক তখন ই আম্মু পিছনে ডেকে আমার চশমা টা এগিয়ে দিলেন। বললেন,

— কি রে, আজকাল দেখি সব ভুলাভুলি তে চলছে। একি চোখে কাজল দিয়েছিস নাকি..? তোর না চোখে এলার্জি..!

আমি সাথে সাথে চোখ নিচে নামিয়ে বললাম, কই না তো। কাল রাতে হঠাৎ মনে হয়েছিল তাই দিলাম। আর কিছু না। চশমা টা হাত থেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলাম। সৈকত ভাইয়ার সাথে দেখা করতে হবে। তাড়াতারি সব করতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই। মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিতে যাব। ঠিক তখনি দেখলাম মোবাইলে নাম্বার টা খোঁজে পেলাম না। আশ্চর্য আমি তো ডিলেট দেই নি। কে এমন করল। কি করে যোগাযোগ করব এখন।

চোখে চশমা টা লাগিয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। ঠিক ক্লাস শেষ কলেজ গেট সামনে এসে দেখি সৈকত ভাইয়া। দেখে খুশিতে মন ভরে গেল। আজকের কাজ টা আজকে করতে হবে। না হলে জমা হয়ে যাবে। কোন ফাঁকে কি রয়ে যাবে আমি কোনো অসম্পূর্ণ কাজ চাই না। এ ব্যাপারে তো একদম না। যদি নিজের একটা ছোট ভাই বা বোন থাকত তাহলে লুকিয়ে সামান্য কাজ ওকে দিয়ে করাতাম। কিন্তু কি আর করা আল্লাহ আমাকে একা ই পাঠিয়েছেন। হঠাৎ সৈকত ভাইয়ার কথায় খেয়াল হল।

— চল, তোমাকে বাসায় পৌছে দেই। সাথে কিছু কথা আছে সেগুলোও বলা হয়ে যাবে।

— কোনো কিছু না বলে রিকসায় উঠলাম। সৈকত কে বললাম নাম্বার গায়েব হওয়ার কথা। সাথে পাশের বাসার আন্টি টার কথা বলতে যাব অমনি সামনে তাকিয়ে দেখি ঠিক আমাদের মুখমুখি একটা রিকসায় আন্টি বসে আমাদের দিকে শকুনি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি দেখার সাথে সাথে হা একদম। কিছু না বলে রিকসা থামিয়ে নেমে পড়লাম। এভাবে পরিচিত এলাকায় এক রিকসায় বসা ঠিক হয় নি। নাম্বার নিয়ে হেটে বাসায় পৌছলাম।

রাতে মা খাবারের জন্য ডাকছে। ২বার বললাম আসছি। একটা কাজে বিজি। হঠাৎ সৈকত ভাইয়ার কল। ফোন ধরে কথা বলছি, একটা বিষয় নিয়ে। হঠাৎ শাড়ির কথা উঠল। আমি বললাম, শাড়ি টা কিন্তু একদম কলাপাতা রঙ এর হবে। না হলে আর কিছু বলতে যাওয়ার আগে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি আম্মু কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছু না বলে কেটে দিলাম। আস্তে আস্তে খাবার টেবিলে চলে গেলাম। আর মাত্র একদিন ! ভাবতে ই ভালো লাগছে। অনেক দিনের ইচ্ছা টা পূরণ হবে। যে যা ভাবছে আর করছে সে নিজে ই জানে কি হচ্ছে।

সকালে সৈকত ভাইয়ার মোবাইলে একটা মেসেজ দিতে গিয়ে আম্মুর মোবাইলে মেসেজ টা সেন্ড করে ফেলি ভুল করে। মেসেজ টা ছিল,, বাসার নিচের রুম টা ঠিক হয়েছে তো? এই মেসেজ আম্মু দেখলে কি অবস্থা হবে আমার তা ভাবতে ই আমার ভয় লাগছে। একে তো রিকসার ঘটনা যদি কানে আসে আসবে তো নিশ্চই। মনে মনে বললাম, শুভা তোকে ভয় পেলে চলবে এসব ছোটখাট বিষয় নিয়ে। কিছু করতে গেলে তো এরকম হবে ই।
বাসায় ঢুকতে ই আম্মু,

— আজ তোর বাবা আসুক বাসায়। একটা বিহিত হবে। আমি আর পারব না বিয়ে দিয়ে বিদায় করুক এবার। আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে দিও। আব্বু বলেছে, আজ বিকেলে এই শাড়ি পরে রেডি হয়ে থাকতে। আমাকে বলল।

— হুম, তবে মনে কর না তোমার পছন্দের কারো সাথে।

আব্বুকেও অফিসে পার্সেল পাঠিয়ে মেসেজ সেন্ড করে দিলাম। আম্মু শাড়িটা খুলে দেখার সাথে সাথে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিকেলে সব কিছু শেষ করে সন্ধার দিকে আম্মুকে রেডি করে নিচে নিয়ে আসলাম। ঠিক সেই সময়ে সৈকত ভাইয়ার সাথে আব্বু এসে ঢুকলেন। আব্বু আম্মু সামনাসামনি। তোমাকে কলাপাতা রঙের শাড়িতে তো দারুণ লাগছে। হঠাৎ, চারদিকের আলো জলে উঠল। বাসার নিচের হল টা সুন্দর করে সাজিয়েছি। আজ আম্মু আব্বুর ২২ তম বিবাহ বার্ষিকী।

আর তার জন্য ই এত কিছু করা। অনেক দিনের ইচ্ছা আমার। শুভ বিবাহবার্ষিকী বলে সবাই একসাথে উইস করল।
একা একা এত কিছু করব তাই সৈকত ভাইয়ার হেল্প নেওয়া। আম্মু আব্বু খুশি তে কেঁদে ফেলল। আব্বু বলল, দেখেছ আমাদের মেয়ে কত বড় হয়েছে। একা একা কত কি করেছে। আব্বু আম্মুর এই হাসি মুখটা দেখার জন্য এত কিছু করা আমার। আম্মু তখন ই বললেন, তুই এসব করছি আমি ভাবলাম কি না কি চলছে।। সে সুযোগ আছে নাকি  যে আন্টি তোমাকে এসব বলে, সেই আন্টির মেয়ে টুম্পা আপুর সাথে ই তো উনার প্রেম চলছে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত