গ্যাড়াকল

গ্যাড়াকল

সকাল থেকে তিন বার বমি আর দুইবার হোচট খেয়ে পরে যাওয়াই নাকি প্রমান করে আমি প্রেগন্যান্ট। সবাই কে বোঝাতেই পারছি না গতকাল রাতে ফ্রিজ থেকে চুরি করে বিরিয়ানি খেয়েছি গরম না করেই । খাওয়ার সময়ই কেমন লাগছিল । পেটে ক্ষিধে থাকায় এত কিছু পাত্তা না দিয়েই গপাগপ খেয়ে নিয়েছি । আর সকাল হতেই বমি হচ্ছে । আর সেই বমি করার জন্য বেসিনে দৌড়ানোর সময় দু’বার হোচট খেয়ে পরেছি । এত কাহিনীর কিছুই ঘটত না যদি আমার বমি করা আর হোচট খাওয়া পাশের বাড়ির আন্টির পুচকি ছেলেটা দেখে না ফেলত ।

পুচকিটা বাড়ি এসেই আমার এই অবস্থা দেখে পুরো বাড়ির সবাইকে বলেছে তোমাদের মেয়ের পেটে বাবু আছে । অবশ্য এমন মিথ্যে কথা বলবে নাই বা কেনো? সে সবে ক্লাস ওয়ানে উঠে প্রেম কি সেটা বুঝে গেছে । এই পর্যন্ত থাকলে ঠিক ছিল । সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সব সীমা অতিক্রম করে গেছে । তার প্রেম রিজেক্ট করেছিলাম তাও আবার সবার সামনে কান মলে দিয়ে । আজ সে আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পুরোবাঁশের স্ট্যাম্প হাতে একাই ইনিংস জিতছে । আমার কথা কেউ শুনছেই না । আর শুনবেই বা কেমন করে ওই পুচকির সাথে ওই কুচক্রি আন্টিও সুর মিলাচ্ছে যে । পুচকিটা সবার সামনে বলেই ফেলল, তোমাদের মেয়ের পেটে বাবু । আমার আম্মুর যখন বাবু পেটে ছিল তখন আমার আম্মুও বমি করত আর হোচট খেয়ে পরে যেত। সবাই ওর কথা শুনে তাজ্জব ! বলাই বাহুল্য আন্টি সবে সবে একটা ডাউনলোড করেছে ।

বাসায় মিটিং বসল । আমাকে মধ্যমনি করে চারপাশে সবাই । এক একজন এক একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। সবশেষ প্রশ্নটা করল আমার ছোট কাকু । যে আমার শুধু কাকু না । আমার বন্ধু । বয়সের গ্যাপ থাকলেও কাকু কম বন্ধু বেশি। কিন্তু এই কাকুই যে আমাকে এভাবে বাঁশ খাওয়াবে কে জানত ! কাকু বলেই বসল , এই বাচ্চার বাবা কে? ও মোর কপাল । বিয়ে হলো না , বর পেলাম না আর বাচ্চার বাবা কে এটা শুনতে হচ্ছে?? কাকুর কথা মুখে থাকতেই পুচকিটা চেঁচিয়ে বলে উঠল , আমি জানি। সবাই আকাশ থেকে পরার মত অবস্থা ।আব্বে আমার বাচ্চার বাপ কে এটা আমিই জানি না আর এই বেটা কি বলে !

তোমাদের মেয়ের বাবুর বাবা হলো রায়ান ভাইয়া । আমি ধপাস করে মেঝেতে পরে গেলাম ওর কথা শুনে । ওর ভাষ্যমতে আমি আর রায়ান এই বাচ্চার বাবা মা ! রায়ান আমার একটা মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড । কিন্তু আমি বন্ধু ভাবলেও রায়ান আমাকে তার মায়ের বৌমা ভাবতে শুরু করেছে ইদানিং । যেটা আমি কখনো চাই না। রোজ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে । কিন্তু আমি কখনো এই হাদা কে বিয়ে করব না । রায়ান কে বিয়ে করলে সারাজীবনেও আমার ফুসকা খাওয়া হবে না । সে একজন ফুসকাবিরোধী মানব । রায়ান কখনো আমাকে এমন টাচ্ করেনি যার জন্য একটা আস্ত বাচ্চার আবির্ভাব হবে । এই পিচ্চি আমাকে আর রায়ান কে একসাথে রাস্তায় দেখেছে । একই পাড়ায় বাড়ি হওয়াই এতসাথে কলেজ থেকে প্রায়ই বাড়ি আসি দুজন ।

আমার এসব কথা শুনে আবার বমি পাচ্ছে । দৌড়ে বেসিনে গেলাম । হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখি আমার ফোন কাকুর কাছে । ভাবছি গ্যালারি দেখছে। দেখলে দেখুক । আমার আর রায়ানের একসাথে ছবি নেই একটাও । সেল্ফি উঠিনা বললেই চলে । এসব ভাবতে ভাবতে কাকু চিল্লায়ে বলল, এই ছিল তোর মনে । ছিঃ ছিঃ ! এভাবে আমাদের মান ডুবিয়ে দিলি । এই পাপ এখন কিভাবে মোচন হবে । বাড়ির সবাই কাকুর কথা শুনে পারলে আমাকে গুলি করে । আমাকে বলার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না । আমি আছি ধমকের উপর ।

এত চিল্লানোর কারণ যখন জানলাম তখন মনে হলো রায়ানকে তেতুলের টকের সাথে মিশিয়ে ফুসকার মধ্যে পুরে গিলে ফেলি । বান্দর মেসেঞ্জারে কোন কালের একটা সেল্ফি দিয়েছে । যেখানে মজা করে দুজনই ঠোঁট দুটো কিস দেয়ার ভঙ্গিতে পোজ দিয়ে পিক উঠেছিলাম । এই পিক দেখার পর কাকু আমার হাত ধরে সোজা রায়ানদের বাড়ি নিয়ে গেল । রায়ান ওর মায়ের সাথে থাকে । বাবা ছোট বেলায় মারা গেছেন । তাই যা বলার রায়ানের মাকেই বলার জন্য আমাকে এক ঘরে রেখেই অন্য ঘরে চলে গেল।

কথা শেষ করে বাইরে আসতেই আমার আবার গা গুলিয়ে উঠল । সকাল থেকে এত নাটকের পর শরীর আরো খারাপ হচ্ছে । বমি করে আসতেই শুনলাম , রায়ানের মা বলছে ,আর দেড়ি করা ঠিক হবে না । মেয়ের বাবাকে বলে কাজ টা সেরে ফেলা ভাল । মান সম্মানেরও তো ব্যাপার আছে । কাকু আমাকে রায়ানের মায়ের কাছে রেখে চলে গেল । আমি এই কান্ড আর নিতে পারছিলাম না । আন্টির সাথে কথা না বলে রায়ানের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পরলাম । কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি । ঘুম ভাঙল ওই হাদার চিল্লানিতে ।

ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলার পর আমার চক্ষু চরাগ গাছে । এতক্ষনে বুঝলাম আমি কোথায় আছি । আমার সামনে আমার বাড়ির সবাই দাড়িয়ে । সবার মুখ বাংলার পাঁচের মত । ভাবলাম এইবার সবাইকে সত্যটা বলি । যেই বলতে যাব ওমনি রায়ান সবার সামনে বলে উঠল , কেউ এভাবে দরজা আটকিয়ে রাখে? জানো কত চিন্তা হচ্ছিল আমার । আমি ওর কথা শুনে হতবাক । তুমি ! কেস গন্ডগল লাগছে ! আমার কাউকে আর কিছু বলা হলো না । যা ভাবছিলাম না তাই হলো । সোজা আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে রায়ানের সাথে কবুলটা পরিয়ে দিলো । বলতেও পারলাম না । আমার চুরি করে খাওয়া বিরিয়ানির ফসল আমার পেটে উৎপাত করছে ।

বিয়ে হলো । রায়ান তো মহাখুশি । বাড়ির সবাইও খুশিই মনে হলো । সবাই আমাকে রেখেই স্বার্থপরের মত বাড়ি চলে গেল । বলল আগামীকাল নিয়ে যাবে তার পর অনুষ্ঠান করা হবে । সব উল্টা নিয়ম হলো । যাকে বিয়ে করব না ভেবেছিলাম সে এখন আমার একমাত্র বিয়ে করা বর । রায়ানের খুশি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিল । ওর ওই হাসির শাস্তিস্বরুপ বিয়ের রাতেই ঘরের বাইরে রেখে দিলাম । দেখ কেমন লাগে । আমার সাথে বিটলামি ! রায়ানকে ঘরের বাইরে রেখে আমি দিব্বি ঘুমিয়ে গেলাম । বেয়াদপ বমি ! বিয়ের পরে আর একবারো হয়নি ভাবা যায়!

এই অবধী সব হজম করা যেতেই পারে । তবে পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর যেটা শুনলাম সেইটা শোনার পর মনে হলো আমি বোবা হয়ে গেছি । আমার বন্ধুর মত ছোট কাকু রায়ানের ফুফুকে পালিয়ে বিয়ে করে সোজা বাড়িতে উঠেছে । দাদার বেটা কাকা এই ছিল তোর মনে? আমাকে নৌকা বানিয়ে সমুদ্র পার হয়ে গেলি ! আর আমার অবস্থা ফান্দে পরিয়া বগা কান্দেরে বানিয়ে !!! এখন বিরিয়ানিকে গালি দেওয়া ছাড়া আমার মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হচ্ছে না !!!!!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত