নামহীন

নামহীন

বিয়ে বাড়িতে যাওয়া এটা আমার মোটেও পছন্দ না,কিন্তু পরিবারের লোকজন কোরবানির গরুর মতো টেনে হিছড়ে আমায় এখানে নিয়ে এসেছে।প্রায় ঘন্টা খানেক বসে আটা ময়দা মাখা মামুনিদের আমি গভীর ভাবে দেখে যাচ্ছি তাদের নায়িকা র্মাকা ঢক নমুনা।আর কিছু কিছু ছেলে নায়ক বেশে তাদের সাথে সখ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।এভার চোখ পড়লো হলুদ শাড়ি পড়া এক মেয়ের উপর,সিম্পল সাজে তাকে বেশ সুন্দরী লাগছিল।এভার আমি খতিয়ে খতিয়ে মেয়েটাকে দেখে যাচ্ছি।মেযেটা তা বুজতে পেরে আমার দিকে তেড়ে আসলো

-এই মিঃ আমার দিকে এমন হ্যা করে তাকিয়ে আছেন কেন ? আমি পকেট থেকে একটা ২ টাকার নোট বের করে বললাম

-এই নিন..
-আমি ২ টাকা দিয়ে কি করবো ?
-তাকিয়ে ছিলাম তাই টেক্স দিচ্ছি ।আজকাল আবার সৌর্ন্দযের উপর ভেট বসছে..
-আচ্ছা অসভ্য তো আপনি।
-সভ্য সমাজে কিছু অসভ্য থাকতে হয় ।
-মসকরা করছেন আমার সাথে ?
-আপনি আমার বেয়াইন হোন বুজি ?
-আপনি কি ম্যানার জানেন না ?
-ইন্টারের ইংলিশ বইয়ে এটা নিয়ে একটা চাপ্টার ছিল ।
-অদ্ভদ লোক তো আপনি।দাড়ান আমি আমার মামা কে ডাকছি।

বলে মেযেটা তার মামাকে ডাকতে গেল।আমি ফের আবার বসে রইলাম কিছুক্ষন ।এভার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা রনি কে ডেকে নিয়ে আসলো।তারমানে রনি তার মামা।

-মামা এটাই সেই ছেলে।কি বেয়াদব ছেলেটা ।
-কিরে ইমু তুই ?তোকে কতক্ষন ধরে খুজছি আমি ।আর এটা আমার ভাগনী হয় ।
-কেমন ভাগনী ?তোর তো কোন বোন নেই ।
-আরে ব্যাটা এত পেচাস কেন ? এভার মেয়েটা বলে উঠলো মামা তুমি একে চিনো নাকি ?
-হ্যা,আমার বন্ধু এ ।

মেয়েটি মুখ বাকিয়ে চলে গেল আমাদের সামনে থেকে।আমি মেয়েটার মুখ বাকানোর উপর ছোট খাট একটা ক্রাস খেয়ে গেলাম।অদ্ভুদ সুন্দর ছিল ব্যাপার টা ।

-আচ্ছা রনি তোর ভাগনীর নাম কিরে ?
-কেন ,তোর কি প্রয়োজন ?দেখ ইমু এটা আমার দুর সর্ম্পকের ভাগনী হয়।
-শালা তোর গফ রে ফোন দিয়া এখন এমন বুজ দিমু যে তুই সেই প্যাড়ায় প্যাগনেন্ট হয়ে যাবি।
-আরে বন্ধু চেতস কেন ?
-নাম বল
-আফসানা অথৈ।এভার ইন্টারে পড়ে ।
-আচ্ছা,এভার নাম্বার টা দে ।
-নাম্বার আমার কাছে নাই ।
-তোর গফের নাম্বার কিন্তু আমার কাছে আছে ।
-শালা ব্লেকমেইলার।

রনির কাছ থেকে নাম্বার টা নিয়ে নিলাম।তারপর আবার বিয়ে বাড়ির গোলযুগে তাল মিলিয়ে হারিয়ে গেলাম।আজ হলুদের প্রোগাম,ছেলে পক্ষরা এসে গেছে।সবাই ব্যস্ত হয়ে আছে নিজেদের মতো।আমি চিপায় দাড়িয়ে সিগারেট ফুকতে লাগলাম।অনেক ক্ষন হলো সিগারেটের তেষ্ণা পেয়েছে।হঠাৎ দেখি পাশ দিয়ে আফসানা যাচ্ছে।তাই বলে উঠলাম

-আফসানা বানা আখ্যে ভুলেনা জানা……
-এই ছেলে এই,আপনি আমার নাম কি করে জানলেন ?
-ওহ,তুমার নাম আফসানা?বাহ্ খুবি সুন্দর নাম ।
-আপনি জেনে বুজেই এমন টা করেছেন ।
-আমি তো শুধু হাসমি ভাই এর গান টা গাইলাম।
-বেয়াদব একটা ।
-পুড়নো হয়ে গেছে,নতুন কিছু থাকলে বলতে পারো ।
-আপনি একটা খাটাস…
-ধন্যবাদ,নতুন নাম করনের জন্য ।
-আপনার কি একটু ও লজ্জা নেই ?
-প্যান্ট তো পড়ে এসেছি আমি ।
-ওফ,,আপনি একটা পেইন।
-নাপা চলবে কি ?

মেয়েটা আবারো সাপের মতো ফুসতে ফুসতে চলে গেল ।আমি ও তার পিছু করে চলতে লাগলাম।বিয়ে বাড়িতে অপর পক্ষের একটা ছেলে দেখলাম তার সাথে বেশ ভাব জমাতে চাচ্ছে।কিন্তু আফসানা বিরক্ত হচ্ছে তা বুজতে পারছি।সে বার বার এবোয়েট্য করলেও ছেলেটা তাকে ছাড়ছে না।এভার আমি ছেলেটার সামনে গিয়ে দাড়ালাম,আফসানা ও পাশেই দাড়ানো ছিল।

-এই ছেলে এদিকে আসো।ওকে বিরক্ত করছো কেন (আফসানাকে দেখিয়ে )
-আপনি কে ?
-জামাই সাহেব তুমার কি হয়।মানে আশিক কি হয় ?
-চাচাতো ভাই হয় ।
-ওরে ফোন দিয়ে জিঞ্জাস করো ইমু আহমেদ কে ?
-সরি ভা্ই ,বুজতে পারিনি ।
-হুম,২য় বার যেন এ মেয়ের সাথে তুমায় না দেখি।অন্য অনেক আছে তাদের সাথে গিয়ে আড্ডা দাও।

ছেলেটা চলে যেতে লাগলো।আসলে আমার নামের আগে পাগল শব্দটা খুব যায়।আর আশিক সে আমার অনেক সিনিয়র হলেও আড্ডা আর পাগলামিতে প্রায়স থাকতা।আর সেখান থেকেই ভালো একটা সর্ম্পক আমাদের।

-ধন্যবাদ মিঃ পাগল
-তা কেন ?
-এই যে ছেলেটার হাত থেকে রেহায় করার জন্য ।আসলে কিছু বলতে ও পারছিলাম না ছেলেটাকে।
-আরে আমার প্রোর্পাটি আমি দেখে রাখবো না ?
-আপনি কি সবসময় ই এমন করে কথা বলেন ?
-কেন,প্রেমে পড়েছো কি ?
-নাহ জনাব এখনো পড়িনি ।
-পড়লে আবার ব্যাথা পেও না কেমন ?

এভার মেয়েটা হেসে দিল।আমি এই ফাকে দেখে নিলাম তার হাসিটা মনকারা এবং আমার জন্য পাগলরূপ ।তারপর বেশ কিছুক্ষন আমরা একসাথে আড্ডা দিলাম।অনেক কথা হলো,দুজন দুজন কে জানলাম।ফোন নাম্বার আগেই তো ছিল তবুও ফরমালিটির জন্য আবারো আদান প্রধান হলো।

পরের দিন বিয়েতে আবারো দেখা।অনেক কথা,আড্ডা হলো।এর মাঝে সে আমার পাগলামি কে আপন করে নিয়েছে খুব সহজে।বিয়ের অনুষ্টান শেষ হলো।এরপর থেকে আমরা রোজ কোথাও না কোথাও নতুন বাহানা খুজে দেখা করতাম। আমি এর ভেতর বুজতে পেড়েছি যে আমি আফসানার প্রেমে পড়ে গেছি মারাত্বক ভাবে।বলতে গিয়েও যেন বলতে পারছি না তাকে আমার হাজারো মনে জমে থাকা কথা গুলো।আজকাল জীবন টা অনেক বেশি রঙিন মনে হয়,এখন কোথাও বের হলে ১০ বার আয়নায় নিজের চেহারা টা দেখে বের হই।আস্তে আস্তে আয়না দেখতে দেখতে নিজের প্রতিও নিজে প্রেমে পড়ে গেছি।আবহাওয়া কেমন তা জানতে আজকাল আর টিভিতে চোখ রাখতে হয় না,আফসানার দিকে তাকালেই আমি বুজে যাই আজ শরৎ না হেমন্ত,সাগরে উচ্চচাপ নাকি নিম্নচাপ।আসলে প্রতিটা ছেলে প্রেমে পড়লে এমন ই হয়।ফের কফিশপে আফসানার সাথে দেখা করতে আসলাম।

-ইমু,তোমায় কিছু বলার ছিল আমার ।
-আমার ও..
-আচ্ছা তুমি বলো
-না তুমি বলো ।
-আসলে আমি তুমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ইমু,তুমার পাগলামি,স্টাইল মেরে সিগারেট ধরানো,তুমার এই কথার প্যাচের জালে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ইমু।আমি তোমাকে চাই খুব করে চাই।তুমার কনিষ্টা,অনামিকা,মাধ্যমা,তজর্নি,বৃদ্ধা আঙ্গুলের ফাকে আমি আমার আঙ্গুলদ্বয় পিষ্ট করতে চাই।তুমি কি দিবে সেই সুজুকটা ? (আমি র্দীঘ ৫ মিনিটের মতো নোকিয়া মোবাইলের মতো হ্যাঙ্গ খেয়ে বসে ছিলাম কি করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না )

-কি হলো কিছু বলছো না কেন ?আমাকে তুমার পছন্দ না ?
-আরে পাগলি আমি আজ এটা বলার জন্যই তো এসেছিলাম।ভাগ্যিস তুমি বলে দিলে নয়তো অন্য কারো সাথে ট্রাই মারতাম পাক্কা।

-ইস,একদম ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব ।নাও এখন আমায় প্রোপস করো ।
-বহুদুর যাবার ইচ্ছা আমার।হাটতে হাটতে এ দিগন্ত ছেড়ে নতুন এক স্বপ্নের শহর খুজে বের করতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বো তখন পকেট থেকে আমার ঠোটে সিগারেট গুজে দিয়ে তা লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী চাই।তুমি কি সেই সঙ্গি টা হবে ?

-এরকম করেও কেহ প্রেম নিবেদন করে তার প্রেমিকাকে ?
-হ্যা,আমি করি……
-পাগল একটা..

এখান থেকেই আমাদের র্জানি টা শুরু হয়েছিল।কত রাত্র যে আমরা কথা বলে পাড় করেছি তা আমাদের হিসাব নেই।কতবার যে মোবাইলটা চিক্কুর মেরে বলে উঠেছে”ছাইড়া দে বাপ একটু র্চাজ খাইয়া বাচি” তার ও হিসাব নেই।কতবার যে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে ফেক্সি করেছি সেই কথা না ই বললাম। আস্তে আস্তে আমাদের সর্ম্পক টা ৩ বছর ছুয়ে গেল।এর ভেতর অনেকবার জগড়া ,মারামারি হলেও ঠিক ই দিন

শেষে দুজন দুজনার হয়ে ফিরে এসেছি।হঠাৎ করেই তার পরিবার আমাদের কথা টা জেনে গেল।আর তাই আফসানার কাছ থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিল।তারা আমাদের সর্ম্পক টা মেনে নিল না।হুট করেই আফসানার বিয়ে অন্য এক ছেলের সাথে ঠিক হয়ে গেল।ভালো ইনকাম ছেলেটার,একটা বাইক ও আছে।এর ভেতর আমি আফসানার সাথে অনেক বার যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু সে আমার ফোন নাম্বার টা ব্লাকে ফেলে দিয়েছে।সে ছেলেটার সাথে নিয়মিত কথা বলে কিন্তু আমার সাথে না।আমি যখন লুকিয়ে তার বাসায় দেখা করতে গিয়েছি তখন তার একটাই কথা আমি পরিবারের বাহিরে যেতে পারবো না ।

আমি তাকে বলেছি যে তার পরিবার কে বুজাবো কিন্তু সে বলতো, নাহ তার প্রয়োজন নেই।আমার পরিবার কখনো তুমায় মেনে নিবে না।কিন্তু যখন বলতাম কেন,আমার তো ইনকাম র্সোস আছে।আর এটা পরে আরো ভালো একটা কিছূ হবে।তবুও সে কেন যানি আমায় মানা করতো।আমি প্রায় পাগল হয়ে গেছি তার জন্য।তার সাথে অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি বার বার আমি র্ব্যাথ।

আমি এভার সর্ম্পুণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি।আমি বুজতে পারছি না আদো কি সে পরিবারের চাপে এমন টা করছে নাকি অন্যকিছূ।কেউ এতটা ভালোবেসে কিভাবে এমন করে হারিয়ে যেতে পারে ?আমি প্রায় একটা কথা বলতাম
”অল্প বয়সে পাকলে বাল কাটতে গেলে ছিড়ে ছাল” আজ সেটাই আমার নিজের সাথে ঘটে গেল।এর ভেতর আমি আফসানার ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছি,তার মোবাইল ক্যাক করেছি।বেশ প্রেম আলাপ সেই ছেলেটার সাথে সেটাও দেখে নিয়েছি।সে যখন বুজতে পেড়েছে তখন বেশ জগড়া করেছে আমার সাথে।তবুও আমি বার বার এটাই বলছি

-প্লিজ আমার লাইফে ফিরে আসো।তুমায় রাণী করে রাখবো।
-আমি আমার পরিবারের বাহিরে যেতে পারবো না ইমু । দেখতে দেখতে আফসানার বিয়ের দিন এসে পড়েছে।কোন এক বিয়েতেই আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল আর আজ সে অন্যর হতে চলছে।লাল বেনারসি শাড়িতে তাকে অসাধারণ লাগছিল।ভাবতে পারিনি এই লাল শাড়ি পড়ে সে অন্যের হবে।আমি আস্তে করে আফসানার রুমে ঢুকে পড়লাম

-তুমি এখানে কেন ইমু ?কেহ দেখতে সমস্যা হয়ে যাবে ।
-প্লিজ আফসানা আমার সাথে চলো।আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি ।
-এটা সম্ভব না ইমু।প্লিজ চলে যাও
-প্লিজ আফসানা….
-নো,ইমু চলে যাও এখান থেকে ।
-তোমার লিপস্টিক কি ওয়াটার প্রুভ ?
-হ্যা,কেন ?

আমি পিছু পা হয়ে আসার সময় আবার আফসানার দিকে তাকালাম।হঠাৎ বিদ্যুৎ গতিতে তার ঠোটের সাথে আমার ঠোট একে দিলাম ।খুব লম্বা একটা কিস করলাম আফসানার ঠোটে।এর ভেতর আমি তার চোখ থেকে আমার চোখ টা একটু ও সরাই নি ।সে ঝামটা মেরে সরে গেল আমার কাছ থেকে।আর গাড়ে একটা হাত চেপে ধরলো হয়তো ব্যাথ পেয়েছে।

বর এসে পড়েছে।আমি বিয়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম।রাস্তার পাশে বসে পকেট থেকে সিগারেট টা জ্বালালাম।বিয়ের বাড়ি থেকে পচন্ড শব্দ হচ্ছে।আসলে শব্দ টা কোন রঙিন ঘর বুনার শব্দ না,এটা কে চিৎকার বলা চলে।বিয়ে বাড়ি থেকে পচন্ড কান্নার আওয়াজ ভেসে আমার কানে।কেননা আমি আফসানাকে যখন কিস করেছিলাম তখন তার ঘাড়ে BOTULINUM TOXIN ইংজেক্ট করে দিয়ে ছিলাম।যা একটা মানুষকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যুর কোলে পৌছে দেয়।আফসানা বার বার একটা কথাই বলতো

-ইমু আই কেন্ট লিভ ইউদ্যাউট ইয়ূ।সে আমাকে ছাড়া বাচতে পারবে না। তো আমি ই যেহেতু এই গল্পে নেই তো বাচবে কি করে তাই মেরে ফেললাম।কেননা ইমু আহমেদ হিসাবে পাক্কা।তাকিয়ে দেখি আমার আঙ্গুলের ফাকে আফসানার একটা চুল রয়ে গেছে।যা দেখে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর একটা কবিতা মনে পড়ে গেল ”আমি চিরতরে দুরে চলে যাব তবু আমারে দিবোনা ভুলিতে, আমিবাতাস হইয়া ,জড়াইবো কেশ বেনী যাবে যবে খুলিতে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত