১৪. কিরীটী প্রশান্তর মুখের দিকে
আপনিই প্রশান্ত সাহা? কিরীটী প্রশান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না?
জবাব দিল এবারে তালুকদার পাশ থেকে, ওঁকে না চিনলেও নাম নিশ্চয়ই ওঁর শুনেছেন, উনি সত্যসন্ধানী শ্রীযুক্ত কিরীটী রায়।
কিরীটী রায়! কথাটা যেন কিছুটা আত্মগত ভাবেই উচ্চারণ করে প্রশান্ত।
প্রশান্তবাবু, আপনি তো য়ালেন ইলেকট্রিক্যালস কোম্পানীতে চাকরি করেন, তাই না? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ।
সেখানে কি কাজ করেন?
সেখানে আমি ওদের ওয়ার্কশপে ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক।
কিছু মনে করবেন না, কত মাইনে পান?
তিনশো টাকা।
বিয়ে করেননি তো এখনও?
না।
কেন বলুন তো এখনও বিয়ে করেননি?
কেন আবার কি, তিনশো টাকা আবার একটা টাকা নাকি! একজন মানুষেরই ভদ্রভাবে জীবন ওই টাকাতে কাটে না তায় আবার পরিবার! ক্ষমা করবেন মশাই, এতবড় নিরেট গদত আমি নই।
তা তো সত্যিই, আজকালকার দিনে তিনশো টাকা আবার কি! কিন্তু এবারে বোধ হয় বিয়ে করবেন—কি বলেন, কাকার সম্পত্তি যখন পাচ্ছেন?
কি বললেন? কাকার সম্পত্তি? তাহলেই হয়েছে! ব্রজদুলাল সাহাটি যে কি একখানা চিজ ছিল আপনারা তো আর জানতেন না। মশাই, ও আশা আমি করি না। যাক গে, লোকটার নামও আমার সহ্য হয় না। জীবনে এ বাড়িতে কখনও এর আগে আমি পা দিইনি। দিতামও না, আজ যদি আপনারা আমাকে এখানে ডেকে না আননে। কেন ডেকেছেন এবারে বলুন?
কেন ডেকেছি? তার কারণ আছে—
কি কারণ?
এক্ষুনি জানতে পারবেন, একটু অপেক্ষা করুন।
না মশাই, ক্ষমা করুন আমাকে। আমার কাজ আছে, এখুনি আমাকে যেতে হবে।
প্রশান্ত সাহার কথাটা শেষ হল না, দরজার বাইরে ভারী গলায় শোনা গেল, ভিতরে আসতে পারি মিঃ মল্লিক?
কে? সুখময় মল্লিক শুধান।
আমি রূপচাঁদ চ্যাটার্জী।
আসুন, আসুন—ভেতরে আসুন।
ব্রজদুলাল সাহার সলিসিটার মিঃ রূপচাঁদ চ্যাটার্জী এসে ঘরে ঢুকলেন।
ভদ্রলোকের বয়েস হয়েছে, অন্ততঃ পঞ্চাশের নীচে নয়। বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা।
পরিধানে দামী সুট। হাতে একটা চামড়ার ফোলিও।
রূপচাঁদ চ্যাটার্জী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে পরপর সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষে তাকালেন প্রশান্ত সাহার মুখের দিকে, প্রশান্তবাবু, আপনিও আছেন দেখছি! কিন্তু মিঃ মল্লিক কে?
সুখময় মল্লিক তখন বললেন, আমারই নাম সুখময় মল্লিক। উনি ডি.সি, মিঃ তালুকদার আর উনি–
ওঁর আর পরিচয় দিতে হবে না মিঃ মল্লিক, কিরীটী রায়কে আমি চিনি। যদিও আমাদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয়ের সৌভাগ্য আজও হয়নি।
একটু থেমে রূপচাঁদ চ্যাটাজী আবার বলেন, আপনি যখন আমার অফিসে ফোন করেন তখন আমি অফিসে ছিলাম না। বাইরে বারলো সাহেবের চেম্বারে একটা কনসালটেশনে গিয়েছিলাম। ফিরে আসতেই আমার জুনিয়ার বললে, আমাকে নাকি আপনি চেম্বারে ফোন করে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই এখানে চলে আসতে বলেছেন। কিন্তু কি ব্যাপার বলুন তো?
আগের পর্ব :
০১. পাইপটা নিভে গিয়েছিল
০২. সাহার গৃহে রেবেকা
০৩. পুলিসের রিপোর্ট
০৪. সুখময় মল্লিক যখন নীচের পারলারে
০৫. ভৃত্য জীবনকে সঙ্গে নিয়ে
০৬. অফিস-রুমটা পরীক্ষার পর
০৭. জবানবন্দি নেওয়া শুরু
০৮. কিছুক্ষণ অতঃপর সকলেই চুপ
০৯. পাটনা থেকে ফিরে এল সাধন মিত্র
১০. কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না
১১. পরের দিন ময়না তদন্তের রিপোর্ট
১২. পান্থশালা
১৩. পান্থশালা থেকে যখন বের হয়ে
পরের পর্ব :
১৫. কথা বলে এবারে কিরীটী
১৬. সবাই রুদ্ধ নিশ্বাসে
১৭. ব্রজদুলাল সাহার পৈশাচিক হত্যার পশ্চাতে