১২. পান্থশালা
পান্থশালা।
ঐ পাড়ারই একটা আধুনিক রেস্তোরাঁ।
রেস্তোরাঁটি খুব বেশী দিনের নয়। কিন্তু বেশী দিনের না হলেও মালিক প্রচুর অর্থব্যয় করে আধুনিক সাজসরঞ্জাম ও আরামের ব্যবস্থায় রেস্তোরাঁটি সত্যিকারের যাকে বলে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।
সামান্য কয়েক মাসেই পান্থশালা রেস্তোরাঁ-প্রিয় লোকদের কাছে ঐ অঞ্চলের আকর্ষণের অন্যতম বিলাস ও আরামকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
রেস্তোরাঁটির মধ্যে একটি ব্যবস্থা বিশেষ ছিল। তরুণ ও তরুণী খরিদ্দারদের জন্য ছোট ছোট নির্জন কিউবিক্যালস। কাজেই অল্পবয়সের কলেজের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ-তরুণী খরিদ্দারদের ভিড়ই ছিল সর্বাপেক্ষা বেশী পান্থশালায়।
কিরীটী ও তালুকদার যখন পান্থশালায় এসে ঢুকলো রাত তখন সোয়া আটটা। বিরাট হলঘরের এক কোণে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে দুকাপ কফির অর্ডার দিল কিরীটী দুজনের জন্য।
কিরীটী লক্ষ্য করেনি।
তার ঠিক হাত দশেক দূরেই দেওয়াল ঘেঁষে আলো-আধাঁরির মধ্যে অন্য একটা টেবিলে মুখোমুখি বসেছিল দুকাপ চকোলেট ড্রিংক ও কিছু স্যান্ডুউইচ নিয়ে দুটি যুবক-যুবতী।
মিস রেবেকা মন্ডল ও সাধন মিত্র।
তাদের পরস্পরের মধ্যে নিম্নলিখিত কথাবার্তা চলছিল।
রেবেকা বলছিল, কিন্তু ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর উপায়টা কি বল সাধন—যার চাকরি করছিলাম, যে দয়া করে তার গৃহে স্থান দিয়েছিল সে-ই যখন চলে গেল তখন আর দাবী কোথায় আমার ওখানে থাকবার আর থাকতেই বা দেবে কে আমাকে?
মৃদুকণ্ঠে সাধন বলে, নতুন করে দাবীরও তো সৃষ্টি হতে পারে আবার!
নতুন দাবী? মন্দ বলনি কথাটা সাধন। প্রশান্ত, সুশান্ত ও শ্রীমতী সাহাও এসে ঐ বাড়িতে আর যার যে ব্যবস্থাই করুক আমার ব্যবস্থাটা যে বাড়ির বাইরে হবে, সে কি আর আমি জানি না!
কিন্তু তারাই যে বাড়ির একমাত্র মালিক হচ্ছে তা তুমি জানলে কি করে? ব্যাপারটা তো এখনও পর্যন্ত কেউই জানে না।
ওর আবার জানাজানির কি আছে সাধন! মিঃ সাহা নিজে বিপত্নীক ছিলেন, কোন সন্তানাদিও তাঁর নেই—সেক্ষেত্রে ওরা ছাড়া আর তাঁর টাকাকড়ি বিষয়সম্পত্তি পাবে কে!
তুমি তো জান, তাদের প্রতি মিঃ সাহা কোনদিন এতটুকু সন্তুষ্ট ছিলেন না।
সে তুমি যাই বল সাধন, হাজার হোক নিজের ভাইপো-ভাইঝি তো তাদের বঞ্চিত করে অপর কাউকে কিছু তিনি দিয়ে যাবেন, এটা আমার কোন মতেই বিশ্বাস হয় না। তাছাড়া আরও একটা কথা, নতুন ম্যানেজমেন্টে যদি আমার চাকরিই না থাকে তখন তো আমাকে চলে যেতেই হবে ঐ বাড়ি থেকে। সেক্ষেত্রে মানে মানে সময় থাকতে আগেভাগেই সরে পড়াই কি ভাল নয়?
তুমি দেখছি বড় অল্পেতেই হতাশ হয়ে পড় রেবেকা—সাধন বলে।
মানে?
তা নয় তো কি। সমস্ত ব্যাপারটাই এখনও পর্যন্ত অন্ধকারে রয়েছে।
অন্ধকারে কেন হবে? আমার মনে হয় সুশান্তবাবু উইলের সম্পর্কে কিছু কিছু জানেন।
চমকে ওঠে যেন সাধন মিত্র। বলে, কে বললে?
কেন, জান না? আজ দুপুরে যে ঐ বাড়িতে এসে জীবনকে হম্বিতম্বি করছিল সুশান্তবাবু।
হম্বিতম্বি করছিল?
হ্যাঁ। বলছিল পুরনো আগাছা নাকি সব কেটে সাফ করে দেবে বাড়ি থেকে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
আগের পর্ব :
০১. পাইপটা নিভে গিয়েছিল
০২. সাহার গৃহে রেবেকা
০৩. পুলিসের রিপোর্ট
০৪. সুখময় মল্লিক যখন নীচের পারলারে
০৫. ভৃত্য জীবনকে সঙ্গে নিয়ে
০৬. অফিস-রুমটা পরীক্ষার পর
০৭. জবানবন্দি নেওয়া শুরু
০৮. কিছুক্ষণ অতঃপর সকলেই চুপ
০৯. পাটনা থেকে ফিরে এল সাধন মিত্র
১০. কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না
১১. পরের দিন ময়না তদন্তের রিপোর্ট
পরের পর্ব :
১৩. পান্থশালা থেকে যখন বের হয়ে
১৪. কিরীটী প্রশান্তর মুখের দিকে
১৫. কথা বলে এবারে কিরীটী
১৬. সবাই রুদ্ধ নিশ্বাসে
১৭. ব্রজদুলাল সাহার পৈশাচিক হত্যার পশ্চাতে