০৫. ভৃত্য জীবনকে সঙ্গে নিয়ে
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভৃত্য জীবনকে সঙ্গে নিয়ে সুখময় ঘরে এসে ঢুকলেন।
লোকটার বয়স হয়েছে। চামড়ার কুঞ্চন,ও চুলে পাক ধরেছে। বেঁটে-খাটো নাদুস-নুদুস চেহারা, ভারী একজোড়া গোঁফ। পরনে একটা ফসা ধুতি ও গায়ে অনুরূপ ফতুয়া।
কিরীটী লোকটার মুখের দিকে তাকাল।
বড় ড্যাবডেবে চোখ। চোখের দৃষ্টিতে কেমন যেন একটা ভীতি।
এর নামই জীবন, মিঃ রায়। সুখময় পরিচয় করিয়ে দিলেন।
তুমি বাবুর কাছে কত দিন আছ জীবন? কিরীটী প্রশ্ন করে।
আজ্ঞে তা প্রায় বছর চোদ্দ তো হবেই।
তোমার চাইতে তাহলে বোধ হয় পুরনো আর কেউ এ বাড়িতে নেই?
না।
বাবুর কাজকর্ম কে বেশী দেখাশোনা করত?
আজ্ঞে বরাবর আমিই করতাম।
তুমিই?
আজ্ঞে। এবং ঘরে আমি ছাড়া আর কোন চাকরবাকরকে তো তিনি ঢুকতেই দিতেন না।
হুঁ। আচ্ছা জীবন, দেখ তো এই ঘরের মধ্যে ভাল করে চেয়ে, কোন কিছু খোয়া গিয়েছে বা নতুন কিছু তোমার নজরে পড়ছে কিনা।
কিরীটীর নির্দেশে জীবন অনেকক্ষণ ধরে ঘরের চারিদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ মৃতের সামনে ত্রিপয়ের উপরে রক্ষিত টেবিল-ল্যাম্পটার দিকে তাকিয়ে বলে, আজ্ঞে ঐ টেবিল-ল্যাম্পটা–
কি?
ওটা তো ছিল না মনে হচ্ছে।
ঐ টেবিল-ল্যাম্পটা ছিল না?
আজ্ঞে না। ভাল করে দেখে বল।
জীবন আরও এগিয়ে গিয়ে ল্যাম্পটা দেখে বলে, না বাবু, এটা ছিল না। তবে অনেকটা এই রকমই দেখতে টেবিল-ল্যাম্প ছিল এখানে। এটা নতুন বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া সেটার ঢাকনাটা ছিল নীল রংয়ের রেশমী কাপড় ঝালর দেওয়া। আর এটা তো দেখছি সবুজ প্লাস্টিকের। না, এ সে ল্যাম্প নয়।
ঠিক বলছ?
আজ্ঞে।
এটা এর আগে দেখেছ?
না।
আচ্ছা জীবন, তোমার বাবু কি প্রত্যহ মদ খেতেন?
হ্যাঁ। শোবার আগে ঐখানে বসে প্রত্যহ খেতেন। এবং খেতে খেতেই রাত্রে সংবাদপত্র পড়তেন।
কিন্তু কোন কাগজ তো দেখছি না। কাল রাত্রে কি কাগজ পড়েননি?
কাল রাত্রে তো আমি কাগজ দিয়েছিলাম। তিনি নিজে চেয়ে নিয়েছিলেন কাগজটা।
কি কাগজ পড়তেন তিনি?
আজ্ঞে স্টেটসম্যান কাগজ।
কাল রাত্রে নিশ্চয়ই তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
আজ্ঞে।
কখন কাল রাত্রে তুমি তোমার বাবুকে শেষ জীবিত দেখ?
রাত সাড়ে নটায় সাধনবাবু ঘর থেকে চলে যাবার পরই বাবু আমাকে আবার নীচে থেকে ডাকেন।
কলিং বেল আছে নাকি এ ঘরে?
আছে। দুটো কলিং বেল, এই যে দেখুন না-সোফার গায়ে একটা, আর একটা খাটের সঙ্গে।
হুঁ। তারপর?
আমি ঘরে এলে বাবু আমাকে সোডা বোতল ও গ্লাস সব দিতে বললেন। আমি সব দেবার পর তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন।
ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন কাল রাত্রে?
হ্যাঁ।
ঘরের দরজা বন্ধ করেই কি তিনি রোজ শুতেন?
হ্যাঁ। দরজা বন্ধ করেই বরাবর শুতেন।
আচ্ছা, ঐ যে বন্ধ দরজাটা দেখা যাচ্ছে—পাশের ঘরেরই তো?
হ্যাঁ।
পাশের ঘরটায় কেউ থাকে?
আজ্ঞে না। ওটা বাবুর প্রাইভেট চেম্বার। তবে বাড়িতে যখন কাজ করতেন ঐ ঘরে বসেই। করতেন।
ঐ দরজার তালার চাবিটা কোথায়?
চাবি কোথায় তা জানি না। তবে দরজাটা এ ঘর থেকে খোলা ও বন্ধ করা দুই গেলেও ও-ঘর থেকে চাবি ছাড়া খোলা যায় না।
কিরীটী অতঃপর দরজার চাবির নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকল।
ঘরটি মাঝারি আকারের। দুদিকের দেওয়ালে স্টীলের আলমারি ও কিছু স্টীলের র্যাক। র্যাকে ফাইল-পত্র সব সাজানো। মাঝখানে একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি সুদৃশ্য দামী সেক্রেটারিয়েট টেবিল। একটি দামী গদী-মোড়া রিভলভিং চেয়ার ছাড়াও গোটাচারেক চেয়ার অন্যদিকে টেবিলে রয়েছে, টেবিলের উপরে একটি টেবিল-ল্যাম্প ও ফোন।
ঘরটি এয়ার-কণ্ডিশন করা। ঘরের জানলা দরজা সব বন্ধ এবং ভারী লাল রঙের দামী পর্দা ঝোলানো জানলায় দরজায়। মেঝেতে দামী কার্পেট বিস্তৃত। এ ঘরে ও দুটি দরজা। ঐ মধ্যবতী দরজাটা ছাড়াও অন্য একটি দরজা।
সেই দরজাটিও বন্ধ ছিল এবং কিরীটী পরীক্ষা করে দেখল—ঐ দরজাতেও ইয়েল লক সিস্টেম।
আগের পর্ব :
০১. পাইপটা নিভে গিয়েছিল
০২. সাহার গৃহে রেবেকা
০৩. পুলিসের রিপোর্ট
০৪. সুখময় মল্লিক যখন নীচের পারলারে
পরের পর্ব :
০৬. অফিস-রুমটা পরীক্ষার পর
০৭. জবানবন্দি নেওয়া শুরু
০৮. কিছুক্ষণ অতঃপর সকলেই চুপ
০৯. পাটনা থেকে ফিরে এল সাধন মিত্র
১০. কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না
১১. পরের দিন ময়না তদন্তের রিপোর্ট
১২. পান্থশালা
১৩. পান্থশালা থেকে যখন বের হয়ে
১৪. কিরীটী প্রশান্তর মুখের দিকে
১৫. কথা বলে এবারে কিরীটী
১৬. সবাই রুদ্ধ নিশ্বাসে
১৭. ব্রজদুলাল সাহার পৈশাচিক হত্যার পশ্চাতে