“দোস্ত তোর ভিডিও তো ভাইরাল হয়েছে”
“কিহ!” বন্ধুর কথায় আমার চোখের ঘুম হারাম হয়েছে। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসি,
“দোস্ত কি হইছে একটু খুলে বলতো”
“আরে দোস্ত তোর তো ভিডিও ভাইরাল হইছে, পুরা এইসডি কোয়ালিটি মামা, তোকে হেব্বি জোস লাগছে”
“মানে কি দোস্ত আমার ভিডিও আবার ভাইরাল করবে কে.?”
“আমি কি জানি.? তুই নিজেই দেখ। তোকে লিংক দিচ্ছি” ওর ফোন কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি নেট অন করে ফেসবুকে লগইন করি। একশো প্লাস মেসেজ এর মধ্যে আমার ইনবক্সে জমা হয়েছে, চোখ আসমানে উঠেছে আমার। নিজের হাতে নিজে চিমটি কেটেও পরীক্ষা করে নিলাম এটা কোনো স্বপ্ন কি না.? না এটা বাস্তব।
দোস্ত লিংক দিয়েছে। লিংকে ক্লিক করেই দেখলাম মাহি’র আইডি থেকে ভিডিওটা ফাঁশ করা হয়েছে দুই ঘণ্টা আগে, কিছুক্ষণ আগে নেওয়া নুডস আর একটা ভিডিও। তেইশ হাজার শেয়ার দেখে আরও অবাক। মানুষ কিছু একটা ভাইরাল করায় এতটা চালু কীভাবে হয়.? আমিও অবাক হচ্ছি মাহি এগুলো কেনো করছে.? ওকে মেসেজ দেই তার আগে ভিডিওটা ওপেন করি, চোখ বড়বড় করে দেখি, শুধু আমার চেহারাই দেখা যাচ্ছে মেয়েটার ছবি ব্লুয়ার করে দেওয়া। তাতে কি.? কাজটা আমি করেছি আমার তো মনে আছে, দেড় বছর আগে নিশাতের ভিডিও এটা। মাহি পেলো কোথায়.? তারমানে নিশাত আর মাহির মধ্যে কিছু আছে কি.? কিন্তু নিশাত তো সুইসাইড করেছে দুমাস পরেই, তাহলে কে এই মাহি.? আমিতো ওর সাথে প্রেম করেছি শুধু ওর খোঁজ নেওয়াটা অতটা জরুরি মনে হয়নি। এখন দেখছি এটাই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিডিওটা দেখা শেষ হওয়ার আগেই আব্বু ফোন দেয়। ছুটিতে গ্রামে গেছে আব্বু আম্মু। তারমানে আব্বুও দেখে ফেলছে ভিডিওটা। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশথেকে আব্বুর গালি শুনতে হয়েছে, নিজের মানসম্মানের সাথে সাথে তাদের মানসম্মান ও মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছি। আমিই তো পাপি ভুল করেছি তার আবার ভিডিও ও বানিয়েছি, বরবাদির চাবি নিজেই তৈরি করে রেখেছি। রুমের এক কোণে এসে নিজের মাথা গুজে বসে আছি, চারপাশে শুধু শুনছি “রাফসান ছিঃ তুই এ কাজ করতে পারলি.? কত ভালো জানতাম তোকে” মাথা ফেটে যাচ্ছে এসব চিন্তায়। তখনি মাহির ফোন আসে, রিসিভ করি তবে চুপ করে থাকি.
: হ্যালো জানু..
: (নিশ্চুপ)
: কি হলো.? কথা বলছো না যে.?
: আমাকে বরবাদ করে কি মিললো তোমার.? আর এমন কেনোই করলে.?
: উমম চলো মিট করি.?
: মিট করে কি হবে.?
: তোমাকে তোমার ভ্রান্তি দূর করাব।
: কোথায় মিট করতে হবে.? তবে সন্ধ্যার পরে,
: ওহ্ ভুলে গেছিলাম তুমিতো বাহিরে মুখ দেখানোর পর্যায়ে নাই। তারচেয়ে বরং তোমার বাসায় এসে মিট করি.? কেমন হয় তাহলে.?
: হুম তা ভালো, আম্মু আব্বুও বাসায় নেই।
: জানি বলছিলে।
: ওহ্।
: বাই। বাসায় এসেই কথা হবে।
: বাই।
বলেই ফোন রেখে দেয় মাহি, রাফসানের ইগো চূর্ণ হয়েছে। ও কি মাহিকে এমনি এমনি যেতে দিবে.? কখনোই না। এর বদলা রাফসান নিবে। বসা থেকে উঠে দাড়ায়। নিজের ক্যামেরা হাতে নিয়ে টেবিলের উপড়ে ভিডিও অন করে রাখে। মাহি আসবে আর রাফসানের শিকার হবে। এটাই ভাবছে ও। সময় যেন দ্রুত অতিক্রম করছে, কলিং বেল বাজছে, গোঙড়া মুখী থেকে পৈশাচিক হাসি হাসছে রাফসান। দরজা খুলে দেখে মাহি, “এসে গেছো মৃত্যুর দুয়ারে” বলেই রাফসান মাহির চুলগুলো ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে আসে। “শুধু তুই ই কি ভিডিও ভাইরাল করতে পারিস.? আমিও পারি। কাল ভাইরাল হবে তোর ভিডিও” বলেই ঝাপিয়ে পড়ে মাহির উপর, কিন্তু রাফসান ক্রোধের বসে ভুলে গেছে মাহি আত্মরক্ষার কলাকৌশল সবকিছুতেই পারদর্শী। রাফসানের অণ্ডকোষে এক কিক। যতটা জোস ছিল সব বেরিয়ে গেছে ওর। বিছানায় পড়ে আছে রাফসান, মাহি নিজেকে ঠিক করে, রাফসানের হাত’পা. বেঁধে ফেলে।
রাফসানের দিকে তাকিয়ে মাহি’র চোখে জ্বল জমা হচ্ছে, গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদছে ও. চিৎকার দিয়ে বলছে মাহি.
“তুইতো এক ক্ষুধার্থ শেয়াল, যার নজরে যাকে ভালোলাগে তাকেই নিজের ভোগ করার ইচ্ছে জাগে। বলছিলি না আমি কে.? কেনোই বা তোর এমন ক্ষতি করলাম.? শুনবিনা.? শোন তাহলে. নিশাত আমার জমজ বোন। নিশাতকে মনে আছে.? প্রেমের পরীক্ষা দিতে গিয়ে তোর শারীরিক চাহিদার শিকার হতে হয়েছে। সুইসাইড করে মুক্ত হয়েছিল ও। আসলে সেদিন ও সুইসাইড করেনি, খুন করা হয়েছিল ওকে। আর সেটা তুই করেছিস। সবাই ভাবছে ওটা সুইসাইড ছিল কিন্তু আমি জানি ওটা খুন ছিল তুই করেছিস। আজ তোর খুন হবে সবাই ভাববে সুইসাইড।
বলেই মাহি টেবিলের উপর রাখা ছুড়িটা দিয়ে ওর হাতের রক কেটে দেয়, রক্তগঙ্গা বইছে ওর রুমে, মাহি হাসছে ওর কষ্ট দেখে। রাফসান দেখছে ওর মৃত্যু, নিজের চোখের সামনে ভাসছে তার করা অপরাধগুলো। ছটফট করছে ও, নিজের মৃত্যু নিজেই কামনা করছে, যত তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে ততোটাই কম যন্ত্রণা পাবে সেই আশায়। কিন্তু এত সহজে ওর মৃত্যু হবে তা মাহি হতে দিতে পারেনা। নীল হয়ে আসছে রাফসানের শরীর, মাহি ফ্যানের সাথে একটা রশি বেঁদে ঝুলিয়ে দেয় ওকে। মৃত্যু রাফসানের দরজায় দাড়িয়ে। মাহি যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে হাতে ক্যামেরাটা, আর বুক ফুলিয়ে ভাবছে, “আজ এই দুনিয়া থেকে একটা ভালো মানুষরূপী জানোয়ারের মৃত্যু নিজ হাতে করতে পেরেছি ।