প্রজাপতি রঙ: ০৬-১০. অতঃপর সুদর্শন কিছুক্ষণ চুপচাপ

প্রজাপতি রঙ: ০৬-১০. অতঃপর সুদর্শন কিছুক্ষণ চুপচাপ

০৬-১০. অতঃপর সুদর্শন কিছুক্ষণ চুপচাপ

অতঃপর সুদর্শন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। মনে মনে গুছিয়ে নেয় কি ভাবে শুরু করবে।

আচ্ছা অবিনাশবাবু!

বলুন।

ব্যাপারটা ডেলিকেট হলেও বুঝতেই তো পারছেন, আইনের খাতিরেই আমাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ আপনাদের করতে হচ্ছে।

আপনি অত কিন্তু-কিন্তু করছেন কেন? তাছাড়া এমন একটা কিছু যে ঘটবে এ তো আমি জানতামই।

জানতেন?

হ্যাঁ। আপনি হয়তো জানেন না, ইদানীং ওর চালচলন যা হয়ে উঠেছিল—

কি রকম?

নিজের মায়ের পেটের বোন, তবু যা সত্যি তা বলতেই হবে আমাকে। ক্লাবে ক্লাবে অভিনয় করাটাই যে একদিন হবে ওর কাল আমি জানতাম

কেন, আজকাল তো অনেক মেয়েই অভিনয় করে অ্যামেচার ক্লাবে দু-পয়সা উপার্জন করে!

শুধু তো অভিনয়ই নয়, অভিনয় করতে গিয়ে অফিসের বাবুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, সিনেমায় যাওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁতে খাওয়া—কি বলব, নানা জনে নানা কথা বলতে শুরু করেছিল বেশ কিছুদিন ধরেই, আর তারা যে মিথ্যা বলত তাও নয়—

আচ্ছা, শুনেছি ওঁর আয়েই ইদানীং আপনাদের সংসারটা চলত, কথাটা কি সত্যি?

হ্যাঁ।

কিন্তু কেন? আপনারা তো দুই ভাই-ই শুনেছি ভাল রোজগার করেন?

দেখুন, উচ্ছলতাকে আর অনাবশ্যক ব্যয়বাহুল্যকে কোনদিনই আমি প্রশ্রয় দিইনি। তাই বছরখানেক আমার খাওয়া-খরচ ছাড়া আমি কিছুই দিতাম না সংসারে।

আর আপনার ছোট ভাই অমলেন্দুবাবু?

ওর নিজেরই বাবুয়ানী করে আর ড্রিঙ্ক করে, পয়সায় কুলোয় না তো সংসারে দেবে কি?

খুব ড্রিঙ্ক করেন বুঝি?

একটা বেহেড মাতাল। অর্ধেক দিন তো বাড়িতেই ফেরে না রাত্রে।

এবার তো আপনার ঘাড়েই সব পড়ল।

ক্ষেপেছেন? আমি চলে যাব মিলের কোয়ার্টারে। ঝামেলার মধ্যে আমি নেই।

সুদর্শন বুঝতে পারে, লোকটা যেমন স্বার্থপর তেমন হৃদয়হীন।

যাক সে-সব কথা, অবিনাশ বললে, কেন আমায় ডেকেছেন বলুন?

দশ নম্বর পল্লীতে আপনারা কতদিন আছেন?

তা প্রায় বছর বারো তো হবেই।

আপনার বাবা শুনেছি অন্ধ—

হ্যাঁ, গ্লুকোমা হয়ে চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গিয়েছে বছর সাতেক হল।

আপনার বোনের হত্যার ব্যাপারে—আপনার কি মনে হয়, সত্যি-সত্যিই তাহলে কেউ মাধবীকে খুনই করেছে? বাধা দিয়ে অবিনাশ প্রশ্ন করে।

আমার ধারণা তাই। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সঠিক করে কিছু বলতে পারছি না।

তাহলে বলি শুনুন, আমারও সত্যি কথা বলতে কি। তাই ধারণা—অবিনাশ বললে।

হুঁ। আচ্ছা বলছিলাম, আপনার বোনের হত্যার ব্যাপারে কাউকে আপনি সন্দেহ করেন?

অবিনাশ চুপ করে থাকে। কোন জবাব দেয় না সুদর্শনের প্রশ্নের।

বলুন, কথাটা প্রকাশ পাবে না।

আপনি আমাদের দশ নম্বর পল্লীর হীরু সাহাকে চেনেন? কখনও দেখেছেন?

হ্যাঁ দেখেছি। আলাপও হয়েছে।

ও আমাদের মিলে—মানে অন্নপূর্ণা জুট মিলে কাজ করে।

জানি-শুনেছি।

আপনার জানা দরকার, ওই হীরুর মাধবীর ওপর নজর ছিল—

তাই নাকি?

হ্যাঁ। একবার মাধবীকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল।

তারপর?

মাধবী সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্যি তাকে না করে দিয়েছিল—

কি বলেছিলেন মাধবী দেবী?

বলেছিল, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন না দেখাটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়!

তারপর?

হীরু নাকি বলেছিল, বিয়ে তাকে হীরুকেই করতে হবে একদিন নাকি!

মাধবী দেবী কি বলেছিলেন?

বলেছিল, তার আগে সে একছড়া জুতোর মালা তাকে পাঠিয়ে দেবে!

তারপর? আর কোন দিন কিছু হীরু বলেছিল?

ওকে বলেনি, তবে আমাকে বলেছে।

আপনি কি জবাব দিয়েছিলেন?

বলেছিলাম, তেমন যদি কখনও অসম্ভব সম্ভব হয়ই, বোনকে আমিই গলা টিপে মেরে ফেলব।

বলেছিলেন আপনি?

হ্যাঁ। হীরুও বলেছিল, বহুৎ আচ্ছা, দেখা যাক তাহলে অসম্ভবই সম্ভব হয় কিনা! তোমার বোনটিকে আমার ঘরে এনে তুলতে পারি কিনা!

হুঁ। আর কাউকে সন্দেহ হয়?

না।

খগেন পাঠককে?

ওই মোটর-মেকানিকটা? ওটা তো একটা ছুঁচো!

কল্যাণ বসু?

ওটা একটু গোঁয়ার-গোবিন্দ বটে, তবে তার দ্বারা খুন করা সম্ভব নয়।

আর আপনাদের প্রতিবেশী—মানে ঐ—

কে, সুবোধ?

হ্যাঁ। ও অত্যন্ত নিরীহ টাইপের একজন ভদ্রলোক।

ওদের কারও আপনার বোনের প্রতি দুর্বলতা ছিল না?

দুর্বলতার কথা যদি বলেন তো আমাদের পল্লীর সকলেরই মাধবীর প্রতি রীতিমত দুর্বলতা ছিল।

আচ্ছা, যাদের কথা বললাম, ওদের কারও প্রতি আপনার বোনের কোন দুর্বলতা ছিল বলে আপনার মনে হয়?

না, সেরকম মনে হয় না।

কেন?

আমাদের পল্লীর কোন ছেলেকে সে কখনও ধর্তব্যের মধ্যেই আনত না।

কিন্তু আলাপ-পরিচয় তো ছিল!

আলাপ-পরিচয় থাকা আর দুর্বলতা থাকা বা প্রেম করা কি এক জিনিস মশাই?

তা অবিশ্যি নয়। আচ্ছা, আপনার বোনের রোজগারপাতি বেশ ভালই ছিল, তাই না?

ভাল মানে? রীতিমত ভাল ছিল। নচেৎ নিত্য নতুন অত দামী দামী শাড়ি, বিলিতি প্রসাধন সব আসত কোথা থেকে? ট্যাকশি ছাড়া তো সে এক পা কখনও চলতই না।

বলেন কি? তা অফিসে কত মাইনে পেত?

বোধ হয় শ’দুই।

মাত্র?

হ্যাঁ। কিন্তু অভিনয়ে-ইদানীং তো শুনতাম এক এক রাত্রের অভিনয়ে একশ সোয়াশ করে টাকা দিত। সপ্তাহে তিন-চারটে ক্লাবে অভিনয় তো তার বাঁধা ছিল বলতে গেলে।

ব্যাঙ্কে রাখত না কিছু?

তা জানি না। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বড় একটা ছিল না।

বোনকে আপনি ভালবাসতেন না?

বাসব না কেন? তাই বলে অন্যায় আমি সহ্য করি না কখনও।

আচ্ছা অবিনাশবাবু, বাইরের কাউকে—মানে কোন যুবককে কখনও আপনাদের বাড়িতে আসতে দেখেছেন বা আপনার বোন মিশতেন এমন কাউকে জানেন?

তা ঠিক জানি না, তবে একজন ভদ্রলোককে বার দুই দেখেছি ওর কাছে আসতে। মানে ঠিক আসা না, ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেছে।

তার কোন পরিচয় বা নাম জানেন?

না।

বয়স কত হবে?

তা বয়স বছর আটত্রিশ-ঊনচল্লিশ হবে।

দেখতে কেমন?

মোটামুটি। তবে পরনের সুট দেখে মনে হয়েছে ভাল ইনকাম করেন ভদ্রলোক।

.

০৭.

আরও কিছু কথাবার্তার পর সাড়ে দশটা নাগাদ অবিনাশ বিদায় নিল।

সুদর্শন একটা সিগারেট ধরায়।

সিগারেটটা শেষ করে উঠতে যাবে, দরজার বাইরে কার চাপা সতর্ক গলা শোনা গেল, জয় রাধেশ্যাম! আসতে পারি স্যার?

কে? আসুন।

মোটাসোটা ঘোর কৃষ্ণবর্ণ একটি প্রৌঢ় এদিক-ওদিক সতর্ক ভাবে তাকাতে তাকাতে ঘরের মধ্যে ঢুকল।

পরনে ধুতি, গায়ে পাঞ্জাবি। মাথায় পরিপাটি তেড়ি, উগ্র একটা তেলের গন্ধ নাকে আসে। গলায় কণ্ঠির মালা, চোখে রুপোর ফ্রেমের চশমা।

কোথা থেকে আসছেন? সুদর্শন প্রশ্ন করে।

জয় রাধেশ্যাম! আজ্ঞে এই দশ নম্বর পল্লী থেকেই আসছি, আর কোথা থেকে আসব?

কি নাম আপনার?

রাধেশ্যাম! আজ্ঞে নরহরি সরকার।

কি করা হয়?

রাধেশ্যাম! আজ্ঞে ছোটখাটো একটা সোনার দোকান আছে বড় রাস্তার ওপর। চোখে অবিশ্যি পড়ার মত নয়—রাধাকৃষ্ণ জুয়েলারী। চেয়ারটায় বসব স্যার?

হ্যাঁ হ্যাঁ, বসুন।

নরহরি চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল।

উগ্র তেলের গন্ধে সুদর্শনের নাক জ্বালা করে।

আমার কাছে কি কিছু প্রয়োজন ছিল সরকার মশাই?

রাধেশ্যাম! প্রয়োজন তেমন কিছু নয়—বলছিলাম আজ সকালে মাঠের বটগাছতলায় যে যুবতীটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার সম্পর্কে কিছু জানতে পারলেন?

আপনি কিছু জানেন নাকি?

রাধেশ্যাম! আমি–আমি কেমন করে জানব? তবে—

কি তবে?

যুবতীটি এই পল্লীতেই থাকত তো! তাই আর কি—একটা খোঁজ নেওয়া। রাধেশ্যাম!

ওরা কি আপনার কোন আত্মীয়-টাত্মীয়?

রাধেশ্যাম! ওঁরা হলেন ব্রাহ্মণ, আর আমি স্বর্ণবণিক!

কিন্তু আপনার কৌতূহল দেখে মনে হচ্ছে–

রাধেশ্যাম! না না, বিশ্বাস করুন, সেরকম কিছু নয়। তাহলে সত্যি কথাই বলি, আমি এসেছিলাম কয়েকটি সংবাদ আপনাকে দিতে। রাধেশ্যাম! তা আপনি যদি–

বেশ তো, বলুন না কি জানেন আপনি মাধবী দেবী সম্পর্কে?

কি জানেন? রাধেশ্যাম। মেয়েটি বিশেষ সুবিধের ছিল না।

কি রকম?

রাধেশ্যাম! মানে-ওই নষ্ট-দুষ্ট চরিত্রের আর কি!

তাই বুঝি?

রাধেশ্যাম! হ্যাঁ, নৌটঙ্কী মশাই-যাকে বলে নৌটঙ্কী! পল্লীর সব ছোকরাগুলোর সঙ্গে কি ঢলাঢলি, মাতামাতি!

আপনার সঙ্গে পরিচয় ছিল না?

রাধেশ্যাম! ক্ষেপেছেন মশাই? ওসব নষ্ট-দুষ্ট মেয়েছেলে যত এড়িয়ে চলা যায় ততই মঙ্গল। তবে, আসত-মধ্যে মধ্যে আমার দোকানে আসত।

গয়না গড়াতে বোধ হয়?

রাধেশ্যাম! আজ্ঞে না।

তবে আপনার গয়নার দোকানে কেন আসত?

রাধেশ্যাম! কথাটা তাহলে বলেই দিই। গিনি-বুঝলেন, গিনি—

গিনি!

হ্যাঁ, গিনি কিনতে আসত।

গিনি কিনতে?

রাধেশ্যাম! তাহলে আর বলছি কি? আগে আগে দিয়েছি, তবে ইদানীং সোনা কন্ট্রোল হয়ে যাবার পর-রাধেশ্যাম! গিনি আর কোথা পাব বলুন?

তা তো বটেই। তবুও আসত, তাই না?

রাধেশ্যাম! সোনার লোভ বড় লোভ, বুঝলেন না!

আচ্ছা সরকার মশাই?

রাধেশ্যাম! বলুন?

আপনি তো দশ নম্বর পল্লীর দীর্ঘদিনের বাসিন্দা?

রাধেশ্যাম! তা মনে করুন আপনার স্বর্গীয় পিতা,-তস্য স্বর্গীয় পিতার আমল থেকে ওইখানে আমাদের বাস। দশ নম্বর পল্লী বলে তখন তো কিছুই ছিল না, পরে ওই নাম দেওয়া হয়েছে। ছেলেছোকরাদের কাজ, বুঝলেন না? রাধেশ্যাম!

তাহলে তো আপনি সব খবরই রাখেন ওই দশ নম্বর পল্লীর?

রাধেশ্যাম! সব আমার নখদর্পণে!

তা তো হবেই। আচ্ছা, শুনেছি ওই দশ নম্বর পল্লীর মধ্যে একটা বিরাট চোরাকারবারের ঘাঁটি আছে!

রাধেশ্যাম! সে কি বলছেন হুজুর?

আমার পূর্ববর্তী পুলিশ অফিসাররা সেই রকম রিপোর্ট লিখে রেখে গিয়েছেন।

রাধেশ্যাম! না না, তা কখনও হতে পারে?

শুনেছি একজনের হাত দিয়েই মাল বেচা-কেনা হয়ে থাকে!

রাধেশ্যাম! আমি বৈষ্ণব মানুষ ওসব খবর আমি থাকলেও জানি না। ছোটখাটো একটা পৈতৃক আমলের দোকান আছে, তাই নিয়েই আছি। রাধেশ্যাম! আদার ব্যাপারী আমি, জাহাজের খবরের প্রয়োজনটা কি বলুন আজ্ঞে?

তা বটে।

রাধেশ্যাম! এবারে তাহলে হুজুরের আজ্ঞা হোক, আমি উঠি।

আসুন।

রাধেশ্যাম! রাধেশ্যাম! নরহরি সরকার উঠে পড়ল।

.

০৮.

সুদর্শন আবার একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করল। সিগারেট টানতে টানতে চিন্তা করে সুদর্শন।

মাধবী সম্পর্কে আর একটা নতুন সংবাদ পাওয়া গেল। মধ্যে মধ্যে সে নরহরির কাছে টাকা দিয়ে গিনি ক্রয় করতে যেত!

ব্যাঙ্কে সে টাকা রাখত না। অবিনাশের উক্তি থেকে বোঝা যায়, ইদানীং মাধবীর মাসিক আয় ভালই ছিল। একশোটা টাকা নিয়ে সপ্তাহে যদি তিন-চারটে অভিনয় করে, তাহলে কমপক্ষেও তার চাকরি নিয়ে ইনকাম বারো-চোদ্দশ টাকা ছিল মাসে।

আয়ের বেশ কিছুটা অংশ হয়ত সে ওইভাবে গিনি ক্রয় করে জমাত। কিন্তু গিনিগুলো সে কোথায় রাখত?

তাদের বাড়িতেই কি? তাই যদি হয়ে থাকে, বাড়ির আর কেউ না জানলেও মাধবীর বোন সাবিত্রী হয়ত জানলেও জানতে পারে। কেউ ওই অর্থের লোভেই মাধবীকে হত্যা করেনি তো? অসম্ভব একটা কিছু নয়। হয়ত ওই অর্থই তার মৃত্যুর কারণ! প্রেম-ট্রেম ঘটিত কোন ব্যাপার নেই। হয়ত সে ভুল পথেই এগোচ্ছিল!

নিঃসন্দেহে জটিল ব্যাপারটা।

খুব সতর্কভাবে থেকে অনুসন্ধানের ব্যাপারে অগ্রসর হতে হবে। মাধবীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যদি সব কিছু জানা যেত, হয়ত অনুসন্ধানের সুবিধে হত। কিন্তু কেমন করে জানা যায়?

.

পরের দিন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেল।

Death due to strangulation! শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মাধবীকে। শুধু তাই নয়, তার অনুমান ঠিক মৃত্যুর পূর্বে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

বোঝা যাচ্ছে, যে-ই হত্যাকারী হোক মাধবীর-মাধবীর প্রতি তার একটা আক্রোশ জমা ছিল মনে, যে আক্রোশের ফলে হত্যাকারী তাকে ধরে জোর করে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। তারপর মৃতদেহ টেনে নিয়ে গিয়ে মাঠের মধ্যে বটগাছতলায় ফেলে রেখে এসেছে।

ডাক্তারের মতে রাত বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে মাধবীর মৃত্যু হয়েছে কোন এক সময়।

আরও মনে হয়, সাধারণ কোন চোর-চোড়ের কাজ নয় ওটা।

তাহলে তার হাতে বালা ও দামী সোনার রিস্টওয়াচ থাকত না। হত্যাকারীর সেদিকে কোন নজর ছিল না।

বেলা চারটে নাগাদ পরের দিন অবিনাশের হাতে মাধবীর মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সে ওই দশ নম্বর পল্লীরই কয়েকজনের সাহায্যে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়েছে।

কিছুক্ষণ হল সন্ধ্যা হয়েছে। শীতের সন্ধ্যা ধোঁয়ায় শ্বাসরোধকারী।

সুদর্শন অফিসঘরের মধ্যে বসে মাধবীর হত্যার কেসের একটা প্রাথমিক রিপোর্ট লিখছিল, দারোয়ানজী এসে জানাল, একজন জেনানা সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চায়।

যাও, ভিতরে পাঠিয়ে দাও।

মাথায় গুণ্ঠন এক নারী। গায়ে একটা কালো আলোয়ান। কক্ষের মধ্যে এসে প্রবেশ করল।

আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান?

মাথার উপর থেকে অবগুণ্ঠন হাত দিয়ে তুলে দিল নারী। চিনতে পারল সুদর্শন ওকে—নিহত মাধবীর বোন সাবিত্রী।

সাবিত্রী দেবী! বসুন।

আপনি আমায় গতকাল আসতে বলেছিলেন, কিন্তু আসতে পারিনি। মার ঘন ঘন ফিট হচ্ছিল।

শুনেছি! তা আপনার মা এখন কেমন আছেন?

ওই রকমই। সকালে আমার এক বিধবা মাসিমা এসেছেন, তিনিই এখন মার কাছে আছেন।

বসুন, দাঁড়িয়ে কেন?

সাবিত্রী চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল।

সুদর্শন সাবিত্রীকে আসতে বলেছিল বটে, কিন্তু এখন কি ভাবে তার কথা শুরু করবে বুঝতে পারে না। অবশেষে সাবিত্রীই একসময় কথা বললে, আমাকে আপনি আসতে বলেছিলেন কেন?

আপনাকে আসতে বলেছিলাম আপনার দিদির সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করব বলে। কথাগুলো বলে সুদর্শন সাবিত্রীর মুখের দিকে তাকাল।

বিষণ্ণ মুখখানি। চোখের কোল ফোলা। মনে হয় সর্বক্ষণই কাঁদছে। দু-একগাছি চূর্ণকুন্তল কপালের উপরে এসে পড়েছে।

এত কাছাকাছি সুদর্শন ইতিপূর্বে সাবিত্রীকে দেখবার সুযোগ পায়নি। মাধবীর মত সাবিত্রীও দেখতে সত্যিই সুন্দরী। গাত্রবর্ণ রীতিমত উজ্জ্বল গৌর। মুখখানি একটু লম্বা প্যাটার্নের। টানা-টানা দুটি চোখ, উন্নত নাসা। সবচাইতে সুন্দর ছোট কপাল ও পাতলা দুটি ঠোঁট ও চিবুকের গঠনটি। বাঁ গালে একটা তিল আছে।

কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে যেন একটা শান্ত কমনীয় সৌন্দর্য আছে সাবিত্রীর চোখেমুখে—যেটা মাধবীর ছিল না। যৌবন উদ্ধত নয়, বিনম্র শান্ত সমাহিত।

মাধবীর চোখের দৃষ্টিতে ছিল যেন একটা স্পষ্ট যৌন আবেদন। সম্ভবত যেটা সব পুরুষকেই আকৃষ্ট করত-হয়ত তার অভিনয়শক্তিরও মূল উৎসই ছিল যৌনাশ্রিত চোখের চটুল দৃষ্টি।

কিন্তু সাবিত্রীর চোখের দৃষ্টি শান্ত, কোমল, ভীরু।

তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার যা সুদর্শনের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে, ইদানীংকার ওই বয়েসী মেয়েদের মত সাবিত্রীর পোশাকের মধ্যে দিয়ে দেহের যৌবনকে প্রকট করে অন্যের দৃষ্টির সামনে তুলে ধরার যেন বিন্দুমাত্র প্রয়াসও নেই।

সাধারণ ব্লাউজ ও শাড়ি, সাধারণ ঘরোয়া ভাবে পরা।

মাধবীর নামোল্লেখেই বোধ হয় সাবিত্রীর চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে। সে মাথা নিচু করে।

.

০৯.

সুদর্শন ধীরে ধীরে একসময় শুরু করে।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বুঝতেই পেরেছেন, আপনার দিদির মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, তাকে কেউ নিষ্ঠুরভাবে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।

সাবিত্রী কোন জবাব দিল না, সে মুখ তুলে সুদর্শনের দিকে তাকাল। নীরব অশ্রুধারায় তার গণ্ড ও চিবুক প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে তখন।

সুদর্শন বলতে থাকে, আমি জানি, আপনার দিদিকে আপনি খুব ভালবাসতেন। আমার যা কিছু, মৃদুকণ্ঠে বললে সাবিত্রী, দিদিই ছিল।

বুঝতে পারছি। তাই তো আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। কারণ তার সম্পর্কে আপনি আমাকে যতটা সংবাদ দিতে পারবেন, আর কেউ তা হয়ত পারবে না।

আমি এখনও যেন ভাবতেই পারছি না, দারোগাবাবু, দিদি নেই—দিদির মৃত্যু হয়েছে। একটু আমুদে, রহস্যপ্রিয় ও বেপরোয়া ছিল দিদি বরাবরই সত্যি, এভাবে যে তাকে কেউ খুন করতে পারে—আমার চিন্তারও অতীত ছিল।

শুনেছি আপনার দিদি ইদানীং সংসারটা আপনাদের চালাচ্ছিলেন!

হ্যাঁ। যে কাজ ছিল দাদা আর ছোড়দার উচিত-কর্তব্য—সেটা দিদিই করছিল। আর তাই তো আমি ভেবে পাচ্ছি না, এরপর আমাদের সংসারের কি অবস্থা হবে!

ভাবছেন কেন, এখন হয়ত দাদা আর ছোড়দাই দেখবেন। জানেন না আপনি তাদের, তারা, কিন্তু ঝোকের মুখে বলতে গিয়েও কথাটা বলল সাবিত্রী; হঠাৎ ঝোঁকের মাথায় যে কথাটা বলবার জন্য উদ্যত হয়েছিল সেটা আর সে বলল, নিজেকে যেন সংযত করে নিল।

দিদি আপনাকে খুব ভালবাসতেন, তাই না?

আমার থেকে মাত্র তিন বছরের বড়, কিন্তু সে ছিল আমার সব—একাধারে সব কিছু।

এবারে তো আপনার বি. এ. পরীক্ষা দেবার কথা!

পরীক্ষা হয়ত আর দেওয়াই হবে না।

হঠাৎ কি হল সুদর্শনের, সে বলে বসল, কেন হবে না, নিশ্চয়ই হবে—শুনুন সেরকম যদি কিছু হয়ই, আপনি নিঃসঙ্কোচে আমাকে জানাবেন, আমি হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারব। জানাবেন তো?

সাবিত্রী তার জলে-ভরা দুটি চোখ বারেকের জন্য সুদর্শনের প্রতি তুলে আবার নামিয়ে নিল। কোন জবাব দিল না।

তাছাড়া আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, যেমন করেই হোক, আপনার দিদির হত্যাকারীকে আমি খুঁজে বের করবই। তবে আপনার সহযোগিতা-সাহায্য কিন্তু আমার চাই।

আমার সাহায্য। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় সাবিত্রী সুদর্শনের মুখের দিকে।

হ্যাঁ, আপনার সাহায্য।

কিন্তু আমি–

সুদর্শন মৃদু হাসল। বললে, আপনার চাইতে বেশি সাহায্য কেউ আমাকে করতে পারবে না!

কিন্তু কেমন করে আপনাকে আমি সাহায্য করতে পারি?

আপনার দিদির সম্পর্কে আমি যা-যা জানতে চাই, আপনি যদি আমাকে বলেন।

কি জানতে চান বলুন?

আমি জানি এবং খবরও পেয়েছি, আপনার দিদির প্রতি দশ নম্বর পল্লীতে অনেকেরই নজর ছিল!

বিরক্ত দিদিকে অনেকেই করত জানি–

কে কে বলুন তো? আচ্ছা, আমিই বলি। আমার যদি ভুল হয় তো আপনি শুধরে দেবেন, কেমন? একটু থেমে সুদর্শন বলে, হীরু সাহা, খগেন পাঠক, কল্যাণ বসু

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন আপনি।

আর কেউ?

আরও ছিল।

আর কে?

হরগোবিন্দ ঘোষ।

যার ওই লেদ কারখানা আছে?

হ্যাঁ। আগের দু-দুটো বৌ মারা গিয়েছে। দেখা হলেই দিদিকে বিয়ে করবার জন্য প্রায়ই তাকে পথে-ঘাটে বিরক্ত করত।

বলেন কি!

আরও-ওই যে নরহরি সরকার—

সেও? নরহরিও?

হ্যাঁ।

ওরও কি বৌ নেই?

না। বছরচারেক হল বৌ গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। আর এক ভাগ্নে ছিল, তাকে দূর করে দিয়েছে বাড়ি থেকে।

হুঁ। আর কেউ?

আরও একজন দিদিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল জানি, কিন্তু দিদি তাকে প্রত্যাখ্যান করায় আর সে কখনও উচ্চবাচ্চ্য করেনি।

কে সে?

সুবোধদা।

মানে আপনাদের পাশের বাড়ির সুবোধ মিত্র?

হ্যাঁ।

আচ্ছা একটা কথা, আপনার দিদির কারও ওপর দুর্বলতা ছিল, জানেন? মানে কাউকে লাইক করতেন? বুঝতেই পারছেন, আমি কি বলতে চাই! ..

ওদের কারও প্রতি দিদির কোন দুর্বলতা ছিল বলে অন্তত আমি জানি না, তবে–

কি, তবে?

সুবোধদার প্রতি হয়ত তার মনটা—ওদের প্রতি যেমন, তেমন বিরূপ ছিল না। হয়ত সুবোধদার প্রতি দিদির কিছুটা দুর্বলতা বা প্রশ্রয় ছিল।

কীসে বুঝলেন?

বুঝতে পেরেছিলাম।

.

১০.

আচ্ছা আপনাদের পল্লীর বাইরের এমন কেউ কি ছিল যার প্রতি হয়ত তার—আপনার দিদির কোন দুর্বলতা বা ভালোবাসা ছিল। এবারে সুদর্শন জিজ্ঞাসা করে।

মনে হয়নি কখনও সেরকম কিছু।

কি করে বুঝলেন?

হলে অন্তত আমি জানতে বোধ হয় পারতাম।

হুঁ। আচ্ছা আপনার দিদির কাছে কেউ আসত না? আর কারোর সঙ্গে তাঁর আলাপ ছিল না?

না।

কিন্তু আমি শুনেছি কে একজন সুট-পরা ভদ্রলোক নাকি মধ্যে মধ্যে মাধবী দেবীকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যেতেন।

কে—অমরবাবুর কথা বলছেন?

তা জানি না। অমরবাবু কে?

উনি এক অফিসে কাজ করেন। ওঁদের অফিসে থিয়েটার করতে গিয়ে দিদির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।

লোকটির বয়স কত হবে?

ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে বলে মনে হয়।

অমরবাবুর সঙ্গে আপনার দিদির কি রকম ঘনিষ্ঠতা ছিল?

আলাপ-পরিচয় ছিল জানি, তবে সেরকমের কিছু ঘনিষ্ঠতা হলে আমি জানতে পারতাম নিশ্চয়ই।

দিদি বুঝি সব কথাই আপনাকে বলতেন?

সবই বলত। রাত্রে আমরা এক বিছানায় শুতাম তো। শুয়ে শুয়ে গল্প হত।

অমরবাবুর কথা কখনও বলেননি?

না।

আপনার দিদি তাহলে কাউকে ভালবাসতেন বলে আপনার মনে হয় না?

মনে হয়নি কখনও।

আচ্ছা আপনার দিদি তো অনেক টাকা উপায় করতেন, তাই না?

তা বোধ হয় করত।

কেন, উপার্জনের কথা আপনাকে কখনও বলেননি?

না, আমিও জিজ্ঞাসা করিনি কখনও।

সব টাকা তো আর খরচ হত না, নিশ্চয়ই কিছু কিছু জমাতেন?

বোধ হয়।

জানেন না কিছু সে সম্পর্কে?

না, সঠিক কিছু জানি না। আমিও কখনও জিজ্ঞাসা করিনি, সেও বলেনি।

কোথায় টাকা রাখতেন—ব্যাঙ্কে?

হতে পারে। কারণ সব সময়ই দিদি আমাকে বলত, কিছু ভাবিস না সাবি, তুই পড়ে যা-যতদূর পড়তে চাস; তারপর খুব ভাল একটা ছেলে দেখে তোর বিয়ে দেব। আমি বলেছি, তুমি বিয়ে কর না। দিদি হেসেছে।

দিদির জামা-কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র কোথায় থাকত?

আমাদের ঘরে একটা সুটকেসের মধ্যে।

তার চাবিটা কোথায়?

আমি জানি না। চাবিটা সব সময় তার হ্যান্ডব্যাগেই বোধ হয় রাখত দিদি।

আগামী কাল আমি একবার আপনাদের বাসায় যাব ভাবছি।

কেন?

যদি কোন ক্লু তার মধ্যে পাওয়া যায়!

কখন যাবেন?

সকাল দশটার মধ্যেই যাব।

আচ্ছা।

আর একটা কথা, আপনার দিদিকে কেউ কখনও কোন চিঠিপত্র লেখেনি?

ইদানীং আর কোন চিঠি আসেনি, তবে বছর দেড়েক আগে পর্যন্ত মধ্যে মধ্যে আকাশ-নীল রঙের খামে দিদির কাছে চিঠি আসত।

কার চিঠি?

বলতে পারি না।

শোনেননি কিছু কখনও আপনার দিদির মুখে?

না।

আপনি জিজ্ঞাসা করেননি?

না, করিনি।

আপনার জানবার কৌতূহল হয়নি?

কোন জবাব দেয় না সাবিত্রী, চুপ করে থাকে।

হুঁ। কতদিন সেরকম চিঠি এসেছে?

প্রায় বছরখানেক ধরে প্রতি মাসেই একখানা দুখানা। তারপর হঠাৎ একদিন আকাশনীল রঙের খামে চিঠি আসা বন্ধ হয়ে গেল।

আপনার সে চিঠি সম্পর্কে, সত্যি বলবেন, কখনও কোন কৌতূহল হয়নি?

মিথ্যা বলব না-হয়েছে, জিজ্ঞাসাও করেছিলাম একবার, কে তোকে চিঠি লেখে রে দিদি?

তারপর?

দিদি জবাব দিয়েছিল, ও আমার এক বন্ধু। আমি আর কিছু জিজ্ঞাসা করিনি কখনও তারপর।

আপনার দিদি সে-সব চিঠির নিশ্চয়ই জবাব দিতেন, নচেৎ আবার চিঠি আসবে কেন?

জবাব দিত কিনা জানি না, কখনও দিতে কিন্তু আমি দেখিনি।

থানার ঘড়িতে ওই সময় ঢংঢং করে রাত দশটা ঘোষণা করল।

অনেক রাত হল, এবার আমি যাই। সাবিত্রী উঠে দাঁড়ায়।

আর একটা কথা সাবিত্রী দেবী, আপনার দিদির গিনি জমাবার শখ ছিল, তাই না?

গিনি!

হ্যাঁ, গিনি।

তা—তা তো জানি না।

আপনি দেখেননি বা শোনেননি কখনও?

না।

আচ্ছা এবার আপনি যান—না, চলুন একা যাবেন না—রাত অনেক হয়েছে, থানা থেকে অনেকটা পথ। চলুন আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।

সুদর্শন উঠে দাঁড়াল ড্রয়ার থেকে টর্চটা বের করে পকেটে পুরে।

ইতিমধ্যে চারদিক কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। একে শীতের রাত, তায় প্রায় দশটা বেজে গেছে। অন্যান্য রাতের মত তখনও সে-রাত্রে কুয়াশা নামেনি।

রাতের আকাশ বেশ পরিষ্কার। চতুর্দশীর চাঁদের আলোয় চারদিক বেশ স্পষ্ট দেখা যায়। বাইরে বেশ শীত। থানা থেকে বের হয়ে আসতেই সেটা উভয়েই টের পায়।

আগের পর্ব :

০১-০৫. আপনি বিশ্বাস না করলে

পরের পর্ব :

১১-১৫. আপনি আবার কষ্ট করে এলেন
১৬-২০. সুদর্শন একটু থেমে বললে
২০-২৫. মৃতদেহটা দুজন সেপাইয়ের প্রহরায়
২৬-৩০. আমাদের পাড়ার হরগোবিন্দ
৩১-৩৫. সন্তর্পণে কিরীটী এগিয়ে চলে
৩৬-৪০. কিন্তু সুবোধ মিত্রই যে দোষী

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত