জুঁই

জুঁই

পাত্রীর নাম জুঁই। একটু মোটাসোটা। একটু বলতে বেশ একটুই মোটা। অবিবাহিত মেয়েদের মধ্যে এমন মোটা খুব একটা দেখা যায় না। জুঁই আমাদের সামনে বসে আছে। আমি বুঝতে পারি, জুঁই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে করে তাকে দেখতে কম মোটা লাগে। জুঁইয়ের কপালে ঘাম। বিন্দু বিন্দু ঘাম দানা বেঁধে কপাল গড়িয়ে পড়ছে। জুঁই বসে আছে একটা টুলে। সুন্দর কারুকাজ করা টুল। সে বেশ জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আমি আর মেজ মামা বসে আছি বেতের চেয়ারে। অনেক দিনের পুরনো বেতের চেয়ার। এই রুমে শুধু এই দুইটা চেয়ারই আছে।

জুঁইকে দেখে মেজ মামা খুব হতাশ হলেন। এতক্ষণ তিনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। আমি জানি জুঁইকে দেখে তার সেই মেজাজ এখন আর নেই। এখন তিনি আমাকে আকারে ইঙ্গিতে অনেককিছু বুঝাতে চেষ্টা করছেন। হাতল দেওয়া বেতের চেয়ারে আমি দুহাত হাতলে রেখে বসে আছি। মামা আমার হাতের উপর হাত রেখে দুই দুইবার চিমটি দিয়ে কি যেন ইঙ্গিত দিতে চায়লেন। আমি এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো। জুঁইয়ের থুতনিতে বড় একটা তিল আছে। বেশ বড়। তিলটা অনেক দুর থেকে দেখা যায়। আমিও দুর থেকে দেখেছি। জুঁই যখন এই রুমে ঢুকছে তখন প্রথমেই আমার এই তিলটা চোখে পড়ে।

তিলটা বড় হলেও দেখতে খারাপ লাগছে না। এই তিলের জন্য জুঁইয়ের চেহারাটা মায়া মায়া লাগছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জুঁইকে আমি বিয়ে করবো। আমি জানি বয়সের তুলনায় মেয়েটা বেশ মোটা। সবাই হয়তো এই নিয়ে নানা কথাবার্তা বলবে। কিন্তু আমি মনে মনে বিয়ের সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করে নিয়েছি। জুঁইয়ের চোখটাও বেশ সুন্দর। বেশ সময় নিয়ে কাজল লাগিয়েছে। মোটা করে কাজল লাগানো। কাজল লাগানোতে তার চোখটার সৌন্দর্য একটু কমেছে। কাজল ছাড়া এই চোখ অনেক সুন্দর। আমি বার বার জুঁইয়ের তিল আর চোখটা দেখছি। আমাকে দেখে মামা বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। তিনি এবার উঠতে চায়ছেন। জুঁইয়ের বড় ভাই খুব ব্যস্ত হয়ে আমাদের আতিথিয়তা করছেন। এটা সেটা জোর করে খেতে বলছেন। পাকা আম দেওয়া হয়েছে। তিনি আমের প্লেট মামার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এই আম বেশ মিষ্টি। আমার দাদার হাতে লাগানো গাছের আম। একবার খেয়ে দেখেন কত স্বাদের আম।

কেনজানি মামা আম খেলেন না। জুঁইয়ের বড় ভাইয়ের তুলে দেওয়া আমের প্লেট আবার টেবিলে রেখে দিয়ে বললেন, অনেক খেয়েছি। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। আমরা এবার উঠি। বাড়ি গিয়ে বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।
মামার কথা শুনে আমি বললাম, মামা আমি পাত্রীর সাথে একটু কথা বলতে চাই। মামা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। আমি বুঝলাম তিনি বিষয়টাতে খুব রাগ করছেন। আমি সেই রাগের পাত্তা দিলাম না। এখন এসব নিয়ে ভাবলে হবে না। আমার জুঁইয়ের সাথে কথা বলা বেশ জরুরী। জরুরী বিষয় রেখে অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। আমাদের আলাদা করে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুঁই এখনো বেশ জড়োসড়ো হয়ে আছে। মেয়েটা মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে কিসব বলছে। মনে হয় দোয়া পড়ছে। আমার ছোট ফুপুকে যখন পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো তখন দাদী ফুপুকে বলে দিয়েছিলেন মনে মনে দোয়া পড়তে। ফুপু বললেন কোন দোয়া?

দাদী বললেন, তোর যা ইচ্ছা পড়বি। খবরদার ভুলেও দোয়া পড়া বন্ধ করবি না। দাদীর কথা মনে হতেই আমার খুব হাসি পেল। আমি জুঁইকে বললাম, তুমি বুঝি দোয়া পড়ছো? আমার কথা শুনে এই প্রথম জুঁই আমার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় করে তাকালো। সে খুব অবাক হয়েছে। এত অবাক হয়েছে যে ভয়ে দোয়া পড়া বন্ধ করে দিল। এখন তার চোখটা দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। আমি মুচকি হাসছি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে আছি জুঁইয়ের দিকে। জুঁই আমার দিক থেকে চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে? জুঁই কোন দ্বিধা ছাড়া মাথা নেড়ে খুব সহজে হ্যাঁ বলল।

এই হ্যাঁ টা শুনে আমার মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেল। কেন জানিনা। তবে আমার খুব ভালো লাগছে। প্রতিটা মানুষই অন্যের কাছে প্রিয় বা পছন্দ হওয়া শুনতে ভালোবাসে। আমিও হয়তো তাই। আমি জানি জুঁইয়েরও খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাকে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা। জুঁইকে আমার বলতে খুব ইচ্ছে করছে তাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু জুঁইতো আমার কাছে জানতে চায়ছে না। আমার একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। আমি জানি জুঁইয়ের ভেতর ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। জানার তৃষ্ণা। আমার তাকে পছন্দ হয়েছে কিনা তা জানার। মেয়েটা ভয়ে কেমন জড়োসড়ো হয়ে আছে। আমি বুঝতে পারি। হয়তো পাত্রী হিসেবে বার বার প্রত্যাখান হওয়ার ভয়টা তার মধ্যে জড়িয়ে আছে। তাকে এমন করে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছে না। এই অল্প সময়ে মেয়েটার প্রতি আমার কেমন একটা মায়া তৈরী হয়ে গেল। আমি ইচ্ছে করেই তাকে বললাম, তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

জুঁই বোধহয় একটু কেঁপে উঠলো এবং দ্বিতীয়বার আমার দিকে তাকালো। এবার আর চোখ নামিয়ে নিল না। অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার তাকানো দেখে এবার আমার সত্যি সত্যি ভীষণ লজ্জা লাগছে। আমি এই বিষয়টা এড়াতে জুঁইকে বললাম, তুমি কিছু বলবে? জুঁই এই প্রথম মুখ দিয়ে কথা বললো। বললো, না। জুঁইয়ের চোখ দুইটি পানিতে টলমল করছে। আমি জানি তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। প্রতিটা মানুষের কিছু সময় থাকে যখন খুব ইচ্ছে হয় কাঁদতে। তখন কাঁদতে পারার চেয়ে বড় কোন স্বপ্ন তার সামনে থাকে না। এই কান্নাটা নিজের ভেতর জমিয়ে রাখা অজস্র দুঃখ, কষ্ট আর অভিমান ভাসিয়ে দেয়ার কান্না। এই কান্নাটা আটকে রাখা ভীষণ কঠিন। দম বন্ধ হতে চায়। আমি চাই জুঁই একটু কাঁদুক। কাঁদার পর মেয়েটা আমার সাথে খুব সহজে মিশতে পারবে। আমি বললাম, তোমার কি কান্না পাচ্ছে?

ওমা মেয়েটা অমনি ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। জুঁই কাঁদছে। তার কান্না দেখতে আমার বেশ ভালো লাগছে। সব মানুষ কাঁদতে পারেনা। নিজের ভেতর সরলতা আর ভালোবাসা লালন করা মানুষগুলো অল্পতেই কাঁদে। জুঁই এমন একটি মেয়ে এটা আমি নিশ্চিত। আমার খুব খুশি লাগছে যে জুঁইকে পছন্দ করে আমি ভুল করিনি। আমি এটাও জানি জুঁইয়ের মোটা বিষয়টা নিয়ে আমাকে বেশ যুদ্ধ করতে হবে পরিবারের সাথে। এই যুদ্ধ করার সাহসটুকু আমার আছে। একজন ভালো মানুষ খুঁজে পেতে এমন যুদ্ধ খুব নগন্য। অনেকক্ষণ হলো জুঁই কান্না থামিয়েছে। আমি চেষ্টা করছি জুঁইকে সহজ করতে। আমি বললাম, আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি। এবার তুমি আমাকে তোমার খুব প্রিয় একটা জিনিস দেখাও। জুঁই দৌড়ে গিয়ে পাশের রুম থেকে একটা ফটো এ্যালবাম নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললো, এটা আমার খুব প্রিয় জিনিস। আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন আমি এই ছবিগুলো দেখি।

আমি এ্যালবাম খুলে ছবি দেখছি। বেশির ভাগ ছবিই মনে হচ্ছে জুঁইয়ের। স্কুলে পড়াকালীন ছবিও আছে। জুঁইয়ের স্কাউট ড্রেস পরা পিটি করার ছবি। তখন বেশ শুকনা ছিলো মেয়েটা। তার পরের একটা ছবি আছে জুঁই একজনকে গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আমি বললাম, উনি বুঝি তোমার বাবা? জুঁই হ্যাঁ বলে মাথা নাড়লো। পুরো এ্যালবাম জুড়ে জুঁইয়ের ছবি। তবে কোথাও জুঁইয়ের মোটা হওয়ার পরের ছবি নেই। আমি বুঝতে পারি কেন জুঁইয়ের এই জিনিসটা এত প্রিয়। মানুষ সব সময় সুখের সময়টা ভেবে আপ্লুত হয়। খারাপ কিছু নিয়ে কেউ ঠিকে থাকতে পারেনা। খারাপ কিছু নিয়ে ঠিকে থাকা কঠিন।

জুঁই আমাকে অবাক হয়ে দেখছে। সে হয়তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না আসলে বিয়েটা হচ্ছে। আমি আমার মত চেষ্টা করেছি জুঁইকে বুঝাতে। আমি চাইনি জুঁই আর এক মুর্হূত দ্ধিধায় থাকুক। জুঁইকে দেখে আসার পর বাসায় এই নিয়ে নানা ঝামেলা শুরু হলো। মেজ মামা আম্মাকে কি সব বুঝিয়েছেন জানিনা। তবে আম্মা প্রথম দিকে বাধা দিলেও আমার জোরাজুরিতে রাজি হলেন। বাড়ির সবার এককথা, বিদেশে পড়ালেখা করে এসে আমি এই কি করছি। শেষে এত মোটা একটা মেয়েকে বিয়ে করছি কোন দুঃখে। নানা সব কথাবার্তা। বড় আপা ফোন দিয়ে কাঁদছে। বললো, আমাদের কত শখ তোর জন্য সুন্দর দেখে একটা বউ নিয়ে আসবো। আমি বললাম, আপা জুঁই মেয়েটা বেশ সুন্দর।

-রাখ তোর সুন্দর। দেখতে নাকি ইয়া মোটা তার আবার সুন্দর।
-আপা তুমিওতো বিয়ের আগে বেশ সুন্দর আর পাতলা ছিলে।

বিয়ের তিন বছরের মধ্যে তুমি কি কম মোটা হয়েছো? বিয়ের তিন বছর পর জুঁই যেটুকু মোটা হবে সেই মোটাটুকু না হয় একটু আগেই হয়ে গেল। আমার কথা শুনে আপা চুপ করে গেলেন। আমি জানি আপা কষ্ট পেয়েছে। আপাকে এমন করে কষ্ট দিতে আমি চাইনি। আমি আপাকে বললাম, আপা আসলেই মেয়েটা খুব ভালো এবং সুন্দর। আপা আর কথা বাড়ালেন না।

পরের শুক্রবার আমার সাথে জুঁইয়ের বিয়ে হলো। বিয়ে খুব ধুমধাম করে হলেও সবার মধ্যে কেমনজানি একটা মনমরা ভাব। এটা দেখতে আমার ভালো লাগেনি। আমি আমার মত করে মজা করতে চেষ্টা করলাম। তবে জুঁই বেশ খুশি। পুরো অনুষ্ঠানে জুঁইকে দেখে আমার মনটা ভরে গেল। পৃথিবীতে সুখ পাওয়ার জন্য সবাইকে সুখী দেখতে হয় না। সত্যিকারের একজন সুখি মানুষ দেখলেই সুখ পাওয়া যায়। জুঁইকে দেখে আমার তেমনটা মনে হলো। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমি আর জুঁই বসে আছি বাসর ঘরে। আজ জুঁই অনেক কথা বলছে। প্রথমবার জুঁইকে দেখে মনেই হয়নি মেয়েটা এত কথা বলতে পারে। আসলে মানুষের কিছু কিছু সময় থাকে যখন সাহসটা ফুরিয়ে যায়। এই সময় নিজের ভেতর অসহায়ত্বটা বিশাল মনে হয়। তখন চায়লেও মানুষ নিজেকে বড় করে প্রকাশ করতে পারে না। চুপসে থাকে। এই চুপসে থাকাটা সে নিজের প্রয়োজন মনে করে।

জুঁই খুব চঞ্চল হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির মধ্যে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে জুঁইয়ের গায়ে পড়ছে। আমি দেখছি জুঁইয়ের গায়ে থাকা বিয়ের শাড়িটা বৃষ্টির পানিতে ভিজছে। জুঁইও দেখছে কিন্তু তারপরও দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। আমি জুঁইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। জুঁই কাঁদছে। আমি জুঁইয়ের একটা হাত ষ্পর্ষ করতেই জুঁই আমার দিকে না তাকিয়ে বলা শুরু করলো, আমি ছিলাম বাবার খুব আদরের। দাদি মারা যাওয়ার পর বাবা আমাকে কখনো নাম ধরে ডাকেনি। সব সময় মা বলে ডাকতেন। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে আমি একটু পেটুক ছিলাম। খাবার দাবার দেখলে লোভ সামলাতে পারতাম না।

বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় রোজ রোজ আমার জন্য এটা সেটা নিয়ে আসতেন। সত্যি বলতে কি তখন আমি এতটা মোটা ছিলামও না। আমার মোটা হওয়া শুরু হয় যখন কলেজে ভর্তি হলাম। কলেজে পড়াকালীন বাবা মারা গেলেন। হুট করেই মারা গেলেন। আমার সব নিয়ম কানুন ওলট পালট হলো। কেনজানি তখন থেকে আমার ওজনটা বেড়েই চললো। আর কমলো না। জুঁই একটু থেমে নিয়ে আবার বলা শুরু করলো, বিশ্বাস করেন আমাকে নিয়ে সবাই নানা রকম কথাবার্তা বলা শুরু করলো। এসব শুনে আমি দিন দিন ভেঙ্গে পড়লাম। কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনা। নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলি। খাওয়া দাওয়াতো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি। দিন রাত চেষ্টা করি ডায়েট করতে, শরীর কমাতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। এরই মধ্যে নানা পাত্রপক্ষ আমাকে দেখছে কিন্তু সবাই ফিরে যায়।

সবাই কেমন করুণ আর ব্যঙ্গভাবে আমাকে দেখতে আসে। বিশ্বাস করেন আমার খুব প্রিয় খাবার হলো ভাত। আব্বা মুসর ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে আমাকে খাওয়াতেন। সেই স্বাদ আমি এখনো ভুলিনি। অথচ আমার সেই প্রিয় ভাত আমি অনেকদিন খাই না। সবাই বলে ভাত খেলে নাকি আরো মোটা হয়ে যাবো। সেই মোটা হওয়ার ভয় আমাকে প্রিয় সব খাওয়া থেকে দুরে সরিয়ে দিলো। আমি পেট ভরে কিছু খাই না অনেকদিন। তারপরও সবাই আমাকে নিয়ে হতাশ। যখন তখন এটা সেটা নিয়ে কথা শোনায়। আমি নাকি খেয়ে খেয়ে এমন হচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় গুষ্টি কিলায় বিয়ে শাদীর। পেট পুরে, মন ভরে রাতদিন খেয়ে ইয়া মোটা হয়ে মরে যাবো। এতেই জীবন ধন্য। ভালো লাগেনা এসব আর।

কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ হেসে উঠে শেষের কথাগুলো ঠিক বাচ্চাদের মত করে বললো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি জুঁইয়ের দিকে। কত সহজ সরল করে তার নিজের কথাগুলো বলে যাচ্ছে মেয়েটা। এই সরলতাটা যে আমার ভীষণ প্রয়োজন। একটা মানুষকে নির্দ্ধিধায় ভালোবাসার জন্য এই একটুখানি সততা আর সরলতায় যথেষ্ট। আমি জানি এটা আমার সংসারকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে। আমি যে এমন ভালোবাসা মোড়ানো একটা সংসার চাই। মনে মনে ভাবলাম, কাল সকালেই দুজন মিলে প্লেট ভর্তি করে ডাল দিয়ে ভাত খাবো।

জুঁই এখনও কাঁদছে। তার দুচোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। মাঝে মাঝে কি মনে করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেও। এটা দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। আমি চাই জুঁই নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা কষ্টের কথাগুলো বলুক। বিশাল একটা যুদ্ধ করে জুঁই জয়ী হয়েছে। এই জয়ের খুশি তার কান্না হয়ে বেরুচ্ছে। জুঁই নিজের ভেতর সাহস ফিরে পেয়েছে। আমি চাই এই সাহসটা তার ভেতর জেগে থাকুক। একটা মানুষ সত্যিকারের সুখ উপলব্ধির জন্য সাহসটা খুব জরুরী। আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছে, ‘অঙ্গ আছে জোড়ায় জোড়ায় রুপটাও ভীষণ ভারি তবুও কেন সুখের আশায় কপাল ঘষে মরি’ দিনশেষে একটা মানুষের প্রাপ্তিটা সুখ দিয়েই বিচার হয়। আমি সেই সুখটাই চাই। আমি সেই সুখের প্রহর গুনি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত