৩১-৩৫. নীলকুঠির আশেপাশে
নীলকুঠির আশেপাশে একমাত্র বাঁদিকে লাগোয়া একটা দোতলা বাড়ি ভিন্ন আর কোন বাড়ি নেই প্রশান্ত বসাক সেটা পূর্বেই লক্ষ্য করেছিলেন।
জায়গাটার গত কয়েক বৎসরে অনেক কিছু ডেভালপমেন্ট হলেও ঐ অঞ্চলটির বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়নি।
ভোরের আলো আকাশে ফুটে ওঠবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশান্ত বসাক নীলকুঠি থেকে বের হয়ে পড়লেন।
কুঠির আশপাশটা একবার ভাল করে পরীক্ষা করে দেখাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
বাঁদিককার দোতলা বাড়িটায় একজন প্রফেসার থাকেন, সংসারে তাঁর এক বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী। পূর্বেই সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল গত মাসখানেক ধরে প্রফেসার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে পুরীতে চেঞ্জে গেছেন। বর্তমানে বাড়ি দেখাশোনা করে একটি ভৃত্য।
ঘুরতে ঘুরতে প্রশান্ত বসাক নীলকুঠির ডান দিকে এবারে এলেন। সংকীর্ণ একটি গলিপথ। গলিপথটি বড় একটা ব্যবহৃত হয় বলে মনে হয় না। এবং পথটি বরাবর গঙ্গার ধার পর্যন্ত চলে গিয়েছে।
এগিয়ে গেলেন সেই গলিপথ ধরে প্রশান্ত বসাক। গঙ্গার একেবারে ধারে গিয়ে যেখানে পথটা শেষ হয়েছে, বিরাট শাখাপ্রশাখাবহুল একটি পুরাতন অশ্বত্থ বৃক্ষ সেখানে।
ঢালু পাড় বরাবর অশ্বথ গাছের তলা থেকে গঙ্গার মধ্যে নেমে গেছে।
অশ্বত্থতলা থেকে নীলকুঠির লাগোয়া পশ্চাতের বাগানটার সবটাই চোখে পড়ে। এবং বাড়ির পশ্চাতের অশটাও সবটাই দেখা যায়। নীলকুঠির দিকে তাকাতেই দোতলার ঐ দিককার একটি ভোলা জানলা প্রশান্ত বসাকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। খোলা জানলার সামনে যেন স্থির একটি চিত্র। চিনতে কষ্ট হয় না কার চিত্র সেটা।
সুজাতা।
দৃষ্টি তাঁর সম্মুখের দিকে বোধ হয় গঙ্গাবক্ষেই প্রসারিত ও স্থির। হাওয়ায় মাথার চুর্ণ কুন্তলগুলি উড়ছে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন প্রশান্ত বসাক সেদিকে। চোখ যেন আর ফিরতে চায় না।
ধীরে ধীরে এক সময় চোখ নামিয়ে পূর্বের পথে আবার ফিরে চললেন প্রশান্ত বসাক।
গলির অন্যদিকে যে সীমানাপ্রাচীর বহু স্থানে তা ভেঙে ভেঙে গিয়েছে। সেই রকম ভাঙাই একটা জায়গা দিয়ে প্রাচীরের অন্যদিকে গেলেন প্রশান্ত বসাক। প্রায় দু-তিন কাঠা জায়গা প্রাচীরবেষ্টিত। জীর্ণ একটি একতলা পাকা বাড়ি। গোটা তিনেক দরজা দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি দরজার কড়ার সঙ্গে তালা লাগান।
এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন প্রশান্ত বসাক সেই দরজার সামনে। পাকা ভিতের বহু জায়গায় ফাটল ধরেছে—সিমেন্ট উঠে গিয়ে তলাকার ইটের গাঁথুনি বিশ্রী ক্ষতচিহ্নের মত দেখাচ্ছে।
হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ল সেই তালা দেওয়া দরজাটার সামনেই জীর্ণ বারান্দার মেঝেতে অনেকগুলো অস্পষ্ট শ্বেত পদচিহ্ন।
এবারে দিনের স্পষ্ট আলোয় পরীক্ষা করে দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না, সেইশ্বেত পদচিহ্নগুলো পড়েছে পায়ে চুন লেগে থাকার দরুন। এবং এও মনে হয় গত রাত্রে যে পদচিহ্ন অস্পষ্ট জলসিক্ত তিনি বাথরুমে দেখেছেন এগুলো ঠিক তারই অনুরূপ।
ঘরের দরজাটা বন্ধ, তালাটা ধরে টানলেন, কিন্তু ভাল জামান তালা, সহজে সে তালা ভাঙবার উপায় নেই।
এমন সময় হঠাৎ তাঁর কানে এল তুলসীদাসের দোঁহা মৃদু কণ্ঠে কে যেন গাইছে।
সামনের দিকে চোখ তুলে তাকালেন, একজন মধ্যবয়সী হিন্দুস্থানী গঙ্গা থেকে সদ্য স্নান করে বোধ হয় হাতে একটা লোটা ঝুলিয়ে তুলসীদাসের দোঁহা গাইতে গাইতে ঐ গৃহের দিকেই আসছে।
হিন্দুস্থানী ব্যক্তিটি দণ্ডায়মান প্রশান্ত বসাকের কাছ বরাবর এসে মুখ তুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে, কিকো মাঙতে হে বাবুজী?
এ কোঠিমে আপই রহেতে হে?
হ্যাঁ। লেকেন আপ্ কিকো মাঙতে হে?
আপকো নাম কেয়া জী?
হরিরাম মিশির।
ব্রাহ্মণ?
হ্যাঁ, কনৌজকা ব্রাহ্মণ।
ও। এমনি বেড়াতে বেড়াতে চলে এসেছিলাম মিশিরজী। ভেবেছিলাম পোড়ো বাড়ি।
হঠাৎ এমন সময় পাশের একটি বন্ধ দরজা খুলে গেল এবং একটি হিন্দুস্থানী তরুণী আবক্ষ ঘোমটা টেনে বের হয়ে এল।
মিশিরজী তরুণীকে প্রশ্ন করে, কিধার যাতা হায় বেটি? গঙ্গামে?
তরুণী কোন কথা না বলে কেবল মাথা হেলিয়ে গঙ্গার দিকে চলে গেল।
প্রশান্ত বসাক চেয়ে থাকেন সেই দিকে, বিশেষ করে সেই তরুণীর চলার ভঙ্গিটা যেন প্রশান্ত বসাকের চোখের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে।
চোখ যেন ফেরাতে পারেন না।
বাবুজী!
মিশিরজীর ডাকে আবার ফিরে তাকালেন প্রশান্ত বসাক।
বাবুজী কি এই উত্তর পাড়াতেই থাকেন?
অ্যাঁ। না—মানে—
এখানে ঢুকলেন কি করে? গেটে আমার তালা দেওয়া।
না না–গেট দিয়ে আমি ঢুকিনি; ঐ যে ভাঙা প্রাচীর—তারই ফাঁক দিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম পোড়ো বাড়ি।
হ্যাঁ, বাবুজী, এতদিন পোড়ো বাড়িই ছিল, মাসখানেকের কিছু কেঁশী হবে মাত্র আমরা এখানে এসে উঠেছি। তা বাবুজী দাঁড়িয়েই রইলেন, ঘর থেকে একটা চৌকি এনে দিই, বসুন—
না না, মিশিরজী, ব্যস্ত হতে হবে না। আমি এমনিই বেড়াতে চলে এসেছি। এবারে যাই।
প্রশান্ত বসাক তাড়াতাড়ি নেমে যাবার জন্য পা বাড়ালেন।
মিশিরজীও এগিয়ে এল, চলুন বাবুজী, আপনাকে গেট খুলে রাস্তায় দিয়ে আসি।
গেট থেকে বের হয়ে প্রশান্ত বসাক কিন্তু নীলকুঠির দিকে গেলেন না, উলটো পথ ধরে হাঁটতে লাগলেন।
এগিয়ে যেতে যেতে একবার ইচ্ছা হল, পিছন ফিরে তাকান, কিন্তু তাকালেন না। তবে পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পেতেন তখনও খোলা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মিশিরজী একদৃষ্টে প্রশান্ত বসারে গমনপথের দিকেই তাকিয়ে আছে।
তার দু চোখের তারায় ঝকঝকে শাণিত দৃষ্টি, বহুপূর্বেই তার সহজ সরল বোকা বোকা চোখের দৃষ্টি শাণিত ছোরার ফলার মত প্রদীপ্ত হয়ে উঠেছিল।
.
৩২.
অনেকটা পথ ঘুরে প্রশান্ত বসাক যখন নীলকুঠিতে ফিরে এলেন বেলা তখন প্রায় পৌনে আটটা।
দোতলায় চায়ের টেবিলে প্রভাতী চায়ের আসর তখন প্রায় ভাঙার মুখে।
টেবিলের দু পাশে রজত, পুরন্দর চৌধুরী ও সুজাতা বসে এবং শুধু তারাই নয়, গত সন্ধ্যার পরিচিত সেই কালো কাঁচের চশমা চোখে সুটপরিহিত যুবক সুন্দরলালও উপস্থিত।
প্রশান্ত বসাককে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে সকলেই একসঙ্গে তাঁর মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল। এবং কথা বললে পুরন্দর চৌধুরী, এই যে মিঃ বসাক! সক্কাল বেলাতেই উঠে কোথায় গিয়েছিলেন?
এই একটু মর্ণিংওয়াক করতে গিয়েছিলাম। তারপর মিঃ সুন্দরলাল, আপনি কতক্ষণ?
এই আসছি।
সুজাতা ততক্ষণে উঠে চায়ের কেতলিটার গায়ে হাত দিয়ে তার তাপ অনুভব করে বললে, কেতলির চা-টা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, আপনি চা খাননি, রেবতীকে বলে আসি কিছু গরম চা দিতে প্রশান্তবাবু।
কথাগুলো বলে এগিয়ে যেতে উদ্যত হতেই সুজাতাকে বাধা দিলেন মিঃ বসাক, না না—আপনি ব্যস্ত হবেন না মিস রয়। বসুন আপনি।
সুজাতা স্মিতকঠে বললে, ব্যস্ত নয়, আমিও আর একটু চা খাব।
গতরাত্রের মত আজও ঘরে প্রবেশ করার মুখে প্রশান্ত বসাক লক্ষ্য করেছিলেন, মিঃ সুন্দরলাল ও পুরন্দর চৌধুরী পাশাপাশি একটু যেন ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেই নিম্নকণ্ঠে পরস্পরের সঙ্গে পরস্পর কথা বলছিলেন, এবং প্রশান্ত বসাকের কক্ষমধ্যে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা যেন অকস্মাৎ চুপ করে গেলেন।
সুজাতা ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় দু-মিনিটে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ কি একটা কথা মনে পড়ায় এখুনি আসছি বলে প্রশান্ত বসাকও বের হয়ে এলেন ঘর থেকে। এবং সোজা নিচে চলে গেলেন।
নিচের তলায় প্রহরারত কনস্টেবল মহেশকে নিয় অথচ দ্রুতকণ্ঠে কি কতকগুলো নির্দেশ দিয়ে বললেন, যাও এখুনি, বাইরে গেটের পাশে হরিসাধন আছে সাধারণ পোশাকে, যা যা বললাম তাকে বলবে। যেমন যেমন প্রয়োজন বুঝবে সে যেন করে।
ঠিক আছে, আমি এখুনি গিয়ে বলে আসছি।
মহেশ বাইরে চলে গেল।
মহেশকে নির্দেশ দিয়ে প্রশান্ত বসাক যেমন ঘুরে সিঁড়ির দিকে দোতলায় ওঠবার জন্য পা বাড়াতে যাবেন, আচমকা তাঁর নজরে পড়ল নীচের একখানি ঘরের ভেজানো দুই বাটের সামান্যতম মধ্যবর্তী ফাঁকের মধ্য দিয়ে একজোড়া শিকারীর চোখের মত জ্বলজ্বলে চোখের দৃষ্টি যেন চকিতে বাটের অন্তরালে দেখা দিয়েই আত্মগোপন করল।
থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রশান্ত বসাক।
মুহূর্তকাল ভ্রূকুঞ্চিত করে কি যেন ভাবলেন, তারপর সোজা এগিয়ে গেলেন সেই ঈন্মুক্ত দ্বারপথের দিকে।
হাত দিয়ে ঠেলে কবাট দুটো খুলে ফেললেন, খালি ঘর, ঘরে কেউ নেই।
চিনতে পারলেন করালীর ঘর ওটা। পাশেই পাচক লছমনের ঘর। দু-ঘরের মধ্যবর্তী দরজাটার দিকে এবারে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু দরজার কবাট ঠেলতে গিয়ে বুঝলেন ওপাশ থেকে দরজা বন্ধ। বের হয়ে এলেন করাঙ্গীর ঘর থেকে প্রশান্ত বসাক। বারান্দা দিয়ে গিয়ে লছমনের ঘরের সামনের দরজা ঠেলতেই ঘরের দরজাটা খুলে গেল। ভিতরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু দেখলেন পাচক লছমনের ঘরও খালি। সে ঘরেও কেউ নেই। আরো দেখলেন করালী ও লছমনের ঘরের মধ্যবর্তী দরজার গায়ে সেই ঘর থেকেই খিল তোেলা। ঐ ঘরের ঐ মধ্যবর্তী দরজাটি বাদেও আরও দুটি দরজা ছিল। এবং দুই ঘরের মধ্যবর্তী দরজাটি বাদেও অন্য দুটি দরজাই খোলা ছিল।
যার চোখের ক্ষণিক দৃষ্টি ক্ষণপূর্বে মাত্র তিনি পাশের ঘরের উন্মুক্ত দরজা-পথে দেখেছিলেন, সে অনায়াসেই তাহলে এ দ্বিতীয় দরজাটি দিয়ে চলে যেতে পারে।
হঠাৎ ঐ সময় বারান্দার দিকে দ্বিতীয় যে দ্বারটি সেটি খুলে গেল এবং চায়ের কাপ হাতে গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে করালী এসে ঘরে প্রবেশ করেই ঘরের মধ্যে দণ্ডায়মান ইন্সপেক্টারকে দেখে যেন থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল, ইন্সপেক্টার সাহেব।
হ্যাঁ, তোমার ঘরটা আমি দেখছিলাম করালী।
করালী চা-ভর্তি কাপটা একটা টুলের উপর নামিয়ে রেখে সসম্ভমে সরে দাঁড়াল।
কোথায় ছিলে করালী?
রান্নাঘরে চায়ের জন্য গিয়েছিলাম সাহেব।
রান্নাঘরে আর কে কে আছেন?
লছমন আর নতুন দিদিমণি আছেন।
প্রশান্ত বসাক করালীর সঙ্গে দ্বিতীয় আর কোন কথাবার্তা না বলে রাগী যে পথে ঘরে প্রবেশ করেছিল ক্ষণপূর্বে, সেই খোলা দ্বার দিয়েই বের হয়ে গেলেন। এবং সোজা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলেন।
ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখলেন সুন্দরলাল তখন ঘরে নেই। রজত আর পুরন্দর চৌধুরী বসে বসে গল্প করছেন, আর কেউ ঘরে নেই।
একটু পরেই সুজাতা এসে ঘরে প্রবেশ করল এবং তার পিছনে পিছনেই চায়ের কেতলী নিয়ে এসে ঘরে ঢুকল রেবতী।
.
চা পান করতে করতেই সামনাসামনি উপবিষ্ট সুজাতার দিকে তাকিয়ে প্রশান্ত বসাক বলেন, তাহলে আজই আপনি কলকাতায় চলে যাচ্ছেন মিস রয়?
সুজাতা প্রশান্ত বসাকের প্রশ্নে একবার মাত্র তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখটা নামিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললে, তাই ভেবেছিলাম যাব, কিন্তু রজতদা বলছে, দু-চারদিনের মধ্যে ও ফিরে যাবে, সেই সঙ্গেই যাবার জন্যে।
হ্যাঁ মিঃ বসাক, আমি তাই বলছিলাম সুজাতাকে। যেতে ওকেও হবে, আমাকেও হবে। এদিককার ব্যবস্থাপত্র যাহোক একটা কিছু করে যেতে হবে তো। এবং সেজন্য ওর ও আমার দুজনেরই থাকা প্রয়োজন। আপনি কি বলেন মিঃ বসাক? রজত কথাগুলো বললে।
হ্যাঁ, আপনারাই যখন বিনয়েন্দ্রবাবুর সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিশান তখন ইন্সপেক্টারকে বাধা দিল সুজাতা, না, ছোট্রকার সম্পত্তির এক কপর্দকও আমি স্পর্শ করব, তা আমি রজতদাকে বলেই দিয়েছি।
হ্যাঁ, সুজাতা তাই বলছিল বটে। কিন্তু মিঃ বসাক, আপনিই বলুন তো তাই কখনও কি হয়। সম্পত্তি ওকেও আমার সঙ্গে সমান ভাগে নিতে হবে বৈকি, কি বলেন?
না রজতদা, ও আমি স্পর্শও করব না। তুমিই সব নাও।
কিন্তু আমিই বা তোর ন্যায্য সম্পত্তি নিতে যাব কেন? বেশ তো, তোর ভাগ তুই না নিস—যে ভাবে খুশী দান করে যা বা যে কোন একটা ব্যবস্থা করে যা।
বেশ, তাই করে যাব।
এমন সময় প্রতুলবাবু এসে ঘরে ঢুকলেন।
এই যে প্রতুলবাবু, আসুন। রজত আহ্বান জানালেন প্রতুলবাবুকে।
প্রতুলবাবু এগিয়ে এসে একটা খালি চেয়ারে উপবেশন করলেন।
অ্যাটর্নী চট্টরাজকে আজ একবার আসবার জন্য আপনাকে খবর দিতে হবে প্রতুলবাবু। রজত বলে।
প্রতুলবাবু ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে রজতের মুখের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালেন। প্রতুলবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রজত কথাটার আবার পুনরাবৃত্তি করে, ছোট্রকার অ্যাটর্নী চট্টরাজকে কাল কোন এক সময় আসবার জন্য একটা সংবাদ দেবেন। তাছাড়া, আমিও আর এখানে অনির্দিষ্ট কাল বসে থাকতে পারব না। লাহোরে আমাকে ফিরে যেতে হবে।
প্রতুলবাবু যেন এতক্ষণে ব্যাপারটি কিছু যাহোক বুঝতে পারেন। বললেন, এ বাড়িতে তাহলে আপনারা কেউ থাকবেন না রজতবাবু?
কে থাকবে এই চক্রবর্তীদের ভূতুড়ে নীলকুঠিতে বলুন। শেষকালে কি চক্রবর্তীদের প্রেতাত্মার হাতে বেঘোরে প্রাণটা দেব!
তাহলে এ বাড়িটার কী ব্যবস্থা হবে?
আপনি রইলেন, বেচে দেবার চেষ্টা করবেন।
কিন্তু আমি তো আর চাকরি করবনা রজতবাবু। মৃদু শান্ত কণ্ঠে প্রত্যুত্তর দিলেন প্রতুলবাবু।
তার মানে, চাকরি ছেড়ে দেবেন?
হ্যাঁ। তাছাড়া, এসব বাড়িঘর-দোর সব যখন আপনারা বেচেই দেবেন তখন আর আমার প্রয়োজনই বা কি! চক্রবর্তী মশাইয়ের মৃত্যুর পর থেকেই এক প্রকার আমার কোন কাজকর্ম ছিল না। তবু চক্রবর্তী মশাই মরবার আগে বিশেষ করে অনুরোধ করে গিয়েছিলেন, বিনয়েন্দ্রবাবুকে যেন একলা ফেলে আমি না চলে যাই। তাই ছিলাম। তা এখন সে প্রয়োজনও ফুরিয়েছে।
হঠাৎ এমন সময় সুজাতা কথা বলে, এক কাজ করলে হয় না রজতদা?
কী?
ছোট্কার ঐ ল্যাবরেটারীটা প্রাণের চাইতেও প্রিয় ছিল। সমস্ত নীলকুঠিটাকেই একটা গবেষণাগারে পরিণত করে দুঃস্থ বৈজ্ঞানিকদের এখানে গবেষণার একটা ব্যবস্থা করে দিলে হয় না?
কিন্তু আমার তো মনে হয়—
রজতকে বাধা দিয়ে সুজাতা বলে, অবিশ্যি আমি আমার অংশের ব্যবস্থাটা সেই ভাবেই করতে পারি! তবে তুমি–
না না–কথাটা তুই নেহাত মন্দ বলিসনি সুজাতা। দেখি ভেবে। হ্যাঁ প্রতুলবাবু, আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন, কোথায় কার কি দেনা-পাওনা আছে, চাকরবাকরদের মাইনে পত্র কে কি পাবে না পাবে সব একটা হিসাবপত্র করে ফেলুন। যত তাড়াতাড়ি পারি এদিককার সব মিটিয়ে দিয়ে আমাকে একবার লাহোরে যেতে হবে।
যে আজ্ঞে। তাই হবে। এখন তাহলে আমি উঠলাম।
প্রতুলবাবু বিদায় নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।
.
৩৩.
ল্যাবরেটারী ঘরে এক্সপেরিমেন্ট করবার লম্বা টেবিলের সেফেই ফোন ছিল। প্রশান্ত বসাকের সেটা পূর্বেই নজরে পড়েছিল।
ল্যাবরেটারী ঘরে ঢুকে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে প্রশান্ত বসাকফোনের রিসিভারটা তুলে নিলেন এবং কিরীটীর ফোন-নম্বরটা চাইনে এক্সচেঞ্জে।
একটু পরেই কনেকশন পাওয়া গেল।
হ্যালো! কিরীটী রায় কথা বলছি।
নমস্কার মিঃ রায়। আমি প্রশান্ত বসাক। উত্তরপাড়ার নীলকুঠি থেকে কথা বলছি।
নমস্কার। নীলকুঠিতে ফোন আছে নাকি?
হ্যাঁ।
বেশ। তারপর কি সংবাদ বলুন, any further development?
বসাক তখন ফোনে সংক্ষেপে অথচ কিছু বাদ না দিয়ে, গত রাত্রে এ বাড়িতে ফিরে আসবার পর যা ঘটেছে সব একটু একটু করে বলে গেলেন। তারপর বললেন, কোন সঠিক সিদ্ধান্তেই তো এখনও পৌঁছতে পারছি না মিঃ রায়। অথচ এদেরও আর কেমন করে আটকে রাখি বলুন?
ওপাশ থেকে কিরীটীর মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল। সে বললে, নীলকুঠি-রহস্য শেষ ধাপে পৌঁছতে আমার মনে হয় বেশী দেরি নেই প্রশান্তবাবু।
কি বলছেন আপনি?
হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। হয়তো বা আজ রাত্রেও আবার সেই ছায়ামূর্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। আর একান্তই যদি আজ বা কাল না ঘটে, জানবেন দু-চারদিনের মধ্যেই আবির্ভাব তার ঘটবে। কিন্তু তার আগে একটা কথা বলছিলাম–
কী?
সুজাতাদেবী নীলকুঠি থেকে চলে গেলেই ভাল করতেন।
কিরীটীর কথায় প্রশান্ত বসাক যেন অতিমাত্রায় চমকে ওঠেন এবং তাঁর সেই চমকানো গলার স্বরে ফুটে ওঠে। বলেন কি মিঃ রায়! তবে কি
হ্যাঁ প্রশান্তবাবু। দিনেরাত্রে সর্বদা সুজাতাদেবীর উপরে তীক্ষ্ণ নজর রাখবেন।
আপনি—আপনি কি তাহলে সত্যি সত্যিই হত্যাকারী কে ধরতে পেরেছেন মিঃ রায়? কিরীটীকে কথাটা আর না জিজ্ঞাসা করে থাকতে পারেন না প্রশান্ত বসাক।
অনুমান করেছি প্রশান্তবাবু।
অনুমান?
হ্যাঁ।
কে? কে তাহলে হত্যাকারী?
মৃদু হাসির একটা শব্দ আবার ভেসে এল এবং সেই সঙ্গে ভেসে এল প্রশ্নোত্তরে দুটি কথা: আপনিই বলুন না?
আমি?
হ্যাঁ, আপনি।
কিন্তু আমি তো—
ঠিক এখনও অনুমান করতে পারছেন না। তাই না?
হ্যাঁ, মানে–
শুনুন প্রশান্তবাবু। আপনি ভোলেননি নিশ্চয়ই, বৈজ্ঞানিক বিনয়েন্দ্রর হত্যা ব্যাপারটা গতকালই আপনাকে বলেছিলাম pre-arranged, pre-meditative and well planned। এবং আমার অনুমান, সেই প্ল্যানের মধ্যে একটি নারী আছে।
নারী?
হ্যাঁ।
You mean তাহলে সেই লতা!
লতা কি পাতা জানি না, তবে একটি নারী এ ব্যাপারের মধ্যে আছে। তাকে খুঁজে বের করুন, তাহলেই হত্যাকারীকেও সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন। আর এও জানবেন, সেই নারী বৈজ্ঞানিক বিনয়েন্দ্রবাবুকে বেশ জোরেই আকর্ষণ করেছিল। জানেন তো আকর্ষণ মানেই দুর্বলতা। আর দুর্বলতা মানেই—আত্মসমর্পণ। এবং তার পশ্চাতে এসেছে বিষ। আর এ সব কিছুর মূলে বিনয়েন্দ্রবাবুর বিপুল সম্পত্তিও নিশ্চয়ই আছে জানবেন।
কিন্তু সেই নারী।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুন। বেশি দূরে নয়, সামনেই হয়তো তিনি আছেন।
সামনেই আছে?
হ্যাঁ। জানেন, আমাদের বাংলাদেশে এক শ্রেণীর সাপ আছে, যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় লাউডগা সাপ। লাউপাতার সবুজ পত্রের মতই তার গায়ের বর্ণ। এবং সেই কারণেই সাপ যখন লাউ গাছে জড়িয়ে থাকে হঠাৎ বড় একটা চোখে পড়ে না। অথচ সাবধান না হলে দংশন করে।
কিরীটীর শেষের কথায় চকিতে একটা সম্ভাবনা যেন বিদ্যুৎস্ফুরণের মতই প্রশান্ত বসাকের মনের মধ্যে ঝিলমিল করে ওঠে। তবে কি সঙ্গে সঙ্গেই তারপর প্রায় প্রশান্ত বসাক বলে ওঠেন, বুঝেছি। বুঝেছি আপনার ইঙ্গিত মিঃ রায়। ধন্যবাদ ধন্যবাদ। আচ্ছা নমস্কার। রিসিভারটা নামিয়ে রেখে প্রশান্ত বসাক কয়েকটা মুহূর্ত মনে মনে কি যেন ভাবলেন। তারপর আবার রিসিভারটা তুলে নিয়ে হেড কোয়ার্টারে কনেশন চাইলেন।
প্রশান্ত বসাক জিজ্ঞাসা করলেন, যে সংবাদগুলো জানবার জন্য ওয়্যার করতে বলেছিলাম তার জবাব এসেছে কি?
না, এখনও আসেনি, জবাব এলে—
এলেই আমাকে জানাবেন, এ বাড়ির ফোন-নম্বরটা টুকে নিন।
প্রশান্ত বসাক নীলকুঠির ফোন-নম্বরটা দিয়ে দিলেন।
ঐদিন সমস্ত দ্বিপ্রহরটা মিঃ বসাক তন্ন তন্ন করে ল্যাবরেটারী ঘরের যাবতীয় সব কিছু নেড়ে-চেড়ে উল্টে-পাল্টে দেখতে লাগলেন। যদি আর কোন নতুন সূত্র পাওয়া যায়।
ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ড্রয়ারে আলমারির মধ্যে একটা হাতীর দাঁতের সুদৃশ্য কৌটো পেলেন। এবং পেলেন একটা নোট-বই। কৌটোটার মধ্যে আট-দশটা মুক্তো পাওয়া গেল। বুঝলেন ঐগুলিইসেই সিঙ্গাপুরীমুক্তা। আর কালো মরোক্কো চামড়ায় বাঁধা ডিমাইসাইজেরনোট-বুকটা। নোট-বুকটার প্রায় দুইয়ের তিন অংশ ব্যবহৃত হয়েছে।
নানা ধরনের অঙ্ক, রসায়ন শাস্ত্রের অনধিগম্য অবোধ্য সব ফরমূলা লেখা পাতায় পাতায়।
অন্যমনস্কভাবে নোট-বইয়ের পাতাগুলো উল্টাতে লাগলেন প্রশান্ত বসাক।
হঠাৎ শেষের দিকে একটি পাতায় দেখলেন দুবাধ্য সব অঙ্কের নীচেই স্পষ্ট বাংলা অক্ষরে লেখা—লতা।
সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ যেন তিনি অত্যন্ত সচেতন হয়ে উঠলেন। অকস্মাৎ তাঁর মনের মধ্যে একটা সরীসৃপ যেন শিরশিরিয়ে উঠেছে। এবং শুধু লতা শব্দটিই নয়, তার চারপাশে নানাপ্রকারের বিচিত্র সব কালির আঁকিবুকি কাটা।
আবার পাতা উল্টে চললেন। এবং অন্য আর এক পাতায় দেখলেন লেখা-লতা চলে গেল।
তার নীচে আবার অঙ্ক কষা আছে। আবার পাতা উল্টে চললেন। হঠাৎ আবার শেষের একটা পৃষ্ঠায় নজর আটকে গেল সেখানে লেখা : লতা কি আর ফিরে কোনদিনই আসবে না! তবে সে কেন এল!
একদৃষ্টে লেখাটার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বারে বার লেখাটা পড়তে পড়তে হঠাৎ সম্পূর্ণ অন্য আর একটি কথা মনে পড়ে যায় প্রশান্ত বসাকের।
ভ্রূ দুটো কুঁচকে যায় তাঁর।
যে সম্ভাবনাটা এইমাত্র তাঁর মনে উদয় হয়েছে তার মীমাংসার জন্য তাড়াতাড়ি নোট-বুকটা বন্ধ করে পকেটে পুরে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন প্রশান্ত বসাক।
বাইরে বেলা অনেকখানি গড়িয়ে এসেছে। সূর্যের আলো স্তিমিত হয়ে এসেছে।
নিজের নির্দিষ্ট ঘরটার মধ্যে এসে প্রবেশ করলেন প্রশান্ত বসাক; এবং ঘরে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।
.
৩৪.
ঐদিনই সন্ধ্যার দিকে ডাইনিং হলে সান্ধ্য চা-পানের পর এক সময় প্রশান্ত বসাক তাঁর পকেট থেকে চারখানা কাগজ বের করলেন। চারখানা কাগজেই কি যেন সব লেখা রয়েছে। লেখা কাগজ চারখানি হাতে করে ঘরের মধ্যে উপস্থিত সুজাতা, রজত, পুরন্দর চৌধুরী ও প্রতুলবাবুকে সম্বোধন করে বললেন, আপনারা প্রত্যেকেই এই কাগজগুলো পড়ে দেখুন। কাগজে আমি বাংলায় আপনাদের প্রত্যেকের জবানবন্দি সংক্ষেপে আলাদা আলাদা করে লিখেছি। পড়ে দেখুন, আপনারা যে যেমন জবানবন্দি দিয়েছেন আমার লেখার সঙ্গে তা মিলছে কিনা।
প্রত্যেকেই যেন একটু বিস্মিত হয়ে যে যার হাতের কাগজখানা চোখের সামনে মেলে ধরে পড়তে শুরু করে।
প্রশান্ত বসাক নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকেন।
খুব সংক্ষিপ্ত জবানবন্দি, পড়তে কারোরই বেশি সময় লাগে না!
পড়লেন? কারও জবানবন্দিতে কোন ভুল নেই তো? প্রত্যেকের দিকেই তাকিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে প্রশ্নটা করলেন প্রশান্ত বসাক।
না। প্রত্যেকেই জবাব দেয়।
বেশ। এবারে আপনারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাগজের তলায় বাংলায় বেশ পরিষ্কার স্পষ্টাক্ষরে লিখুন। উপরিউক্ত জবানবন্দির মধ্যে কোন ভুল নেই এবং পরে তার নীচে আপনারা যে যার নাম দস্তখত করুন।
প্রথমটায় কয়েকটা মুহূর্ত প্রশান্ত বসাকের প্রস্তাবে কেউ কোন জবাব দেয় না। কেবল পরস্পর পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
আমার বক্তব্যটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন?
জবাব দিল এবারে প্রথমে রজতই, বললে, হ্যাঁ। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না মিঃ বসাক, এর কি প্রয়োজন ছিল?
সঙ্গে সঙ্গে প্রতুলবাবু জবাব দেন, তাই মিঃ বসাক। আমিও তাই বলতে চাইছিলাম। তাছাড়া আমি তো এখানে আদৌ উপস্থিতই ছিলাম না।
কিন্তু আমার প্রস্তাবে আপনাদের আপত্তি কি থাকতে পারে তাও তো বুঝতে পারছি না প্রতুলবাবু।
আমার ও আমাদের যার যা বলবার ছিল সবই খোলাখুলিভাবে আপনাদের কাছে বলেছি ইন্সপেক্টার। কথাটা বললে রজত।
অস্বীকার করছি না রজতবাবু সে কথা আমি। এবং পড়েই তো দেখলেন, আপনারা যে যেমন জবানবন্দি আমাদের কাছে দিয়েছেন সেইটুকুই কেবল ঐ কাগজে লিখেছি আমি। তবে আপনাদের আপত্তিটাই বা হচ্ছে কেন? অবিশ্যি you are at libertyযদি কিছু অন্যরকম লিখে থাকি সে জায়গাটা বরং কেটে ঠিক করে আপনারাই লিখে দিন।
প্রশান্তবাবু তো ঠিকই বলছেন রজতদা। দিন কলম, আমি লিখে সই করে দিচ্ছি। এতক্ষণে সর্বপ্রথম কথা বললে সুজাতা।
প্রশান্ত বসাক সুজাতার দিকে কলমটা এগিয়ে দিলেন।
সুজাতা কোনরূপ দ্বিধামাত্রও না করে জবানবন্দির নীচে নিজের নামটা সই করে কাগজটা এগিয়ে দিল প্রশান্ত বসাকের দিকে, এই নিন।
পুরন্দর চৌধুরী এবার কথা বললেন, আমি যদি ইংরাজিতে লিখি আপত্তি আছে আপনার মিঃ বসাক?
কেন বলুন তো?
দীর্ঘদিনের অনভ্যাসের ফলে বাংলা আমি বড় একটা আজকাল লিখতে পারি না। তাছাড়া আমার বাংলা হস্তাক্ষরও অত্যন্ত বিশ্রী।
প্রশান্ত বসাক মৃদু হেসে বললেন, তা হোক। বাংলাতেই লিখুন।
অগত্যা পুরন্দর চৌধুরী যেন বেশ একটু অনিচ্ছার সঙ্গেই প্রশান্ত বসাকের নির্দেশ মত কাগজটায় লিখে দিলেন।
এবং রজত ও প্রতুলবাবুও নাম সই করে দিলেন।
প্রত্যেকের লেখা ও সই করা কাগজগুলো অতঃপর আর না দেখেই আঁজ করে প্রশান্ত বসাক নিজের জামার বুকপকেটে রেখে দিলেন।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বে এ ঘরে চা-পানে বসবার সময় যে আবহাওয়াটা ছিল, প্রশান্ত বসাক প্রদত্ত কাগজে নাম সই করবার পর যেন হঠাৎ সেই আবহাওয়াটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। অচিন্ত্যনীয় একটা পরিস্থিতি যেন হঠাৎ একটা ভারী পাথরের মতই সকলের মনের মধ্যে চেপে বসে। কেউ কোন কথা মুখ ফুটে স্পষ্টাস্পষ্টি বলতে পারছে না, অথচ মনের গুমোট ভাবটাও যেন আর গোপন থাকছে না কারো।
বেশ কিছুক্ষণ ঘরের আবহাওয়াটা যেন একটা বিশ্রী অস্বস্তিতে থমথম করতে থাকে।
সকলেই চুপচাপ। কারো মুখে কোন কথা নেই।
ঘরের অস্বস্তিকর আবহাওয়া যেন প্রত্যেকেরই কেমন শ্বাস রোধ করে আনে। হঠাৎ সেই স্তব্ধতার মধ্যে কথা বলে ওঠেন পুরন্দর চৌধুরী, আপনার যদি আপত্তি না থাকে তো আমি কালই চলে যেতে চাই মিঃ বসাক।
বেশ। যাবেন। তবে কলকাতায় যেখানেই থাকুন ঠিকানাটা দিয়ে যাবেন যাবার আগে।
কিন্তু কলকাতায় তো আমি থাকব না মিঃ বসাক। প্লেন পেলে কালই আমি সিঙ্গাপুরে চলে যাব।
সিঙ্গাপুরে আপনি হেড কোয়ার্টারের পারমিশন ছাড়া যেতে পারবেন না মিঃ চৌধুরী।
কিন্তু সে পারমিশনের জন্য সব কাজকর্ম ফেলে এখনো যদি অনির্দিষ্ট কালের জন্য আমাকে কলকাতায় বসে থাকতে হয়—
পুরন্দর চৌধুরীর কথাটা শেষ হল না। প্রশান্ত বসাক বললেন, না, আর বড়জোর চার-পাঁচদিনের বেশী আপনাকে আটকে রাখা হবে না মিঃ চৌধুরী।
চার-পাঁচদিনের মধ্যেই তাহলে আপনাদের তদন্তের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলতে চান মিঃ বসাক? পুরন্দর চৌধুরী প্রশ্ন করলেন।
সেই রকমই তো আশা করা যাচ্ছে। আর শেষ না হলেও আপনাদের কাউকেই আটকে রাখা হবে না।
ভাল।
কথাটা বলে সহসা পুরন্দর চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘর হতে বের হয়ে গেলেন।
রজত প্রতুলবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, প্রতুলবাবু, আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, আপনি একবার নীচে আসবেন কি?
চলুন।
প্রতুলবাবু ও রজতবাবু ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
ঘরের মধ্যে কেবল রইলেন প্রশান্ত বসাক ও সুজাতা। টেবিলের দুধারে দুজনে পরস্পরের মুখখামুখি বসে।
হঠাৎ প্রশান্ত বসাকের কণ্ঠস্বরে যেন চমকে মুখ তুলে তাকাল সুজাতা তাঁর দিকে।
একটা কথা বলছিলাম সুজাতাদেবী।
আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ।
বলুন।
যদি কিছু মনে না করেন তো কথাটা বলি। প্রশান্ত বসাক যেন ইতস্তত করেন।
বলুন না।
আপনি আজই কলকাতাতেই চলে যান বরং—
কেন বলুন তো? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল সুজাতা প্রশ্নটা করে প্রশান্ত বসাকের মুখের দিকে।
তাছাড়া প্রথমে আপনি তো যেতেও চাইছিলেন।
কিন্তু তখন তো আপনিই যেতে দিতে চাননি।
না চাইনি। কিন্তু এখন নিজে থেকেই আপনাকে চলে যাবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি মিস রয়।
মৃদু স্মিতকণ্ঠে সুজাতা বলে, কেন বলুন তো?
নাই বা শুনলেন এখন কারণটা।
বেশ। তবে আজ নয়, কাল সকালেই চলে যাব।
কাল?
হ্যাঁ।
কি ভেবে প্রশান্ত বসাক বললেন, বেশ, তাই যাবেন।
তারপর আরো কিছুক্ষণ বসে দুজনে কথা বলেন।
.
৩৫.
ঐদিন রাত্রে।
কিরীটী ফোনে যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিল, চব্বিশ ঘণ্টাও উত্তীর্ণ হল না, তা সত্যি হয়ে গেল।
সে রাত্রে সকলের খাওয়াদাওয়া করতে প্রায় এগারোটা হয়ে গেল। এবং খাওয়াদাওয়ার পর রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ যে যার নির্দিষ্ট ঘরে শুতে গেল।
প্রশান্ত বসাক তাঁর নির্দিষ্ট ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে ঘরের দরজার ভিতর থেকে খিল তুলে দিয়ে বাগানের দিককার খোলা জানলাটার সামনে দাঁড়িয়ে নিশব্দে ধূমপান করছিলেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে।
কিন্তু দুটি শ্রবণেন্দ্রিয়ই তাঁর সজাগ হয়ে ছিল একটি সাঙ্কেতিক শব্দের প্রত্যাশায়।
ঠিক আধঘণ্টা পরে তাঁর ঘর ও পাশের ঘরের মধ্যবর্তী দরজার গায়ে টুক টুক করে দুটি মৃদু টোকা পড়ল।
মুহূর্তে এগিয়ে গিয়ে দুই ঘরের মধ্যবর্তী দরজাটা খুলে দিতেই অন্ধকারে ছায়ামূর্তির মত একজন নিঃশব্দে এসে ঘরে প্রবেশ করল।
এসেছেন। মৃদু কণ্ঠে শুধালেন প্রশান্ত বসাক।
হ্যাঁ।
আপনার ঘর থেকে যখন বের হন কেউ আপনাকে দেখেনি তো? দেখেনি তো কেউ আপনাকে ল্যাবরেটারী ঘরে ঢুকতে?
না।
তাহলে এবারে আপনি নিশ্চিন্তে গিয়ে ঐ বিছানাটার ওপরে শুয়ে পড়ুন।
শুয়ে পড়ব?
হ্যাঁ। শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোন।
প্রশ্নোত্তর পাওয়া যায় না।
কি হল?
কিন্তু—
কিন্তু কি?
আপনি—
আমি! আজ রাত্রে আমার ঘুমের আশা আর কোথায়!
কেন?
একজন সম্ভবত আসবেন, তাঁকে রিসিভ করতে হবে।
এত রাত্রে আবার কে আসবেন।
কে আসবেন তা জানি না, তবে আশা করছি একজনকে। অবিশ্যি ভাবছি হয়তো নাও আসতে পারেন আজ।
তবে মিথ্যে মিথ্যে জেগে থাকবেন কেন? আসবার যখন তাঁর কোন স্থিরতা নেই।
তাই তো জেগে থাকতে হবে। মহৎ ব্যক্তিবিশেষ আসছেন, অভ্যর্থনার জন্য না জেগে বসে থাকলে চলবেই বা কেন!
তা রেবতী বা দারোয়ানকে বলে রাখলেই তো পারতেন, তিনি এলে তখন আপনাকে খবর দিত।
মৃদু হাসির সঙ্গে প্রশান্ত বসাক বলেন, সোজা রাস্তা দিয়ে জনান্তিকে তিনি আসবেন না বলেই তো এত হাঙ্গামা।
কি আপনি বলছেন!
ঠিক তাই সুজাতাদেবী। তাইতো আপনাকে পূর্বাহ্নেই এ ঘরে এসেশোবার জন্য বলেছিলাম।
কিন্তু আমার সঙ্গে তাঁর আসবার কি সম্পর্ক?
সেইজন্যই তো এত সাবধানতা, এত সব আয়োজন। বিশেষ করে আপনি জানেন না, কিন্তু তিনি আপনারই জন্য আসবেন আমার ধারণা।
এ সব কি আপনি বলছেন বলুন তো প্রশান্তবাবু?
ভাবছেন হয়তো এই মাঝরাতে আপনাকে এ ঘরে ডেকে এনে আরব্য উপন্যাস শোনাতে শুরু করলাম, তাই না সুজাতাদেবী? বলতে বলতে আচমকা যেন কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললেন, কিন্তু আর না, এবারে আপনি শুয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করুন, আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে—
বাইরে এত রাত্রে।
হ্যাঁ, বেশী দূরে নয়, আপনার আজ রাত্রের পরিত্যক্ত শূন্য ঘরে। নিন, আপনি শুয়ে পড়ুন তো।
আমি আপনার সঙ্গে যাব।
কোথায়?
কেন, আমার ঘরে। এখন বুঝতে পারছি, আমার ঘরে আজ রাত্রে কিছু ঘটবে। আপনি জানেন, আর সেইজন্যই আমার বিছানার ওপরে পাশবালিশটা চাদর দিয়ে ঢেকে রেখে আমাকে এ ঘরে চলে আসতে বলেছিলেন।
হ্যাঁ, তাই সুজাতাদেবী। কিন্তু আপনি—আপনি জানেন না বা বুঝতে পারছেন না হয়তো সেখানে যাওয়া আপনার এখন খুব বিপজ্জনক, risky!
তা হোক, তবু আপনার সঙ্গে আমি যাব।
কিন্তু সুজাতাদেবী—
বললাম তো। যাব। সুজাতার কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা।
কিন্তু আপনি! আপনি আমার সঙ্গে না গেলেই হয়তো ভাল করতেন সুজাতাদেবী।
ভাল-মন্দ বুঝি না। আমি যাব।
কয়েক মুহূর্ত প্রশান্ত বসাক কি যেন ভাবলেন, তারপর মৃদু নিস্পৃহ কণ্ঠে বললেন, বেশ, তবে চলুন।
প্রথমে প্রশান্ত বসাক দরজা খুলে বাইরের অন্ধকার বারান্দায় একবার উঁকি দিয়ে দেখে নিলেন বারান্দার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত, শূন্য খাঁ খাঁ করছে।
পা টিপে টিপে প্রথমে প্রশান্ত বসাক তারপর বের হলেন ঘর থেকে এবং তাঁর পশ্চাতে অনুসরণ করল তাঁকে সুজাতা। এদিকে ওদিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে দুজনে সুজাতার ঘরের দিকে এগিয়ে চললেন।
ঘরের দরজাটা সুজাতা খুলেই রেখে এসেছিলেন। কেবলমাত্র দরজার কবাট দুটো ভেজানো ছিল প্রশান্ত বসাকের পূর্ব-নির্দেশ মত।
ভেজানো দরজার গায়ে কান পেতে কি যেন শোনবার চেষ্টা করলেন মিঃ বসাক; তারপর ধীরে ধীরে নিঃশব্দে ভেজানো কবাট দুটি ফাঁক করে প্রথমে ঘরের মধ্যে নিজে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর পশ্চাতে প্রবেশ করে সুজাতা। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।
প্রথমটায় অন্ধকারে কিছুই বোঝা যায় না। ক্রমে একটু একটু করে ঘরের অন্ধকারটা যেন উভয়ের চোখেই সয়ে আসে।
বাগানের দিককার খোলা জানলা বরাবর খাটের উপরে বিস্তৃত শয্যায় অস্পষ্ট মনে হয় কে যেন চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
গায়ে হাত দিয়ে স্পর্শের ইঙ্গিতে মিঃ বসাক সুজাতাকে নিয়ে গিয়ে ঘরের সংলগ্ন যে বাথরুম তার মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করলেন।
চাপা সতর্ক কণ্ঠে সুজাতা প্রশ্ন করে, বাথরুমের মধ্যে এলেন কেন?
চুপ। এখানেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
বাথরুমের মধ্যে প্রবেশ করে বাথরুমের ঈষদুন্মুক্ত দরজাপথে তীক্ষ্ণ সতর্ক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকেন ঘরের ভিতরে প্রশান্ত বসাক।
সময় যেন আর কাটতে চায় না। ভারী পাথরের মত যেন সমস্ত অনুভূতির উপরে চেপে বসেছে সময়ের মুহূর্তগুলো। যেন অত্যন্ত শ্লথ ও প্রলম্বিত মুহূর্তগুলি মনে হয়।
তবু এক সময় মিনিটে মিনিটে প্রায় তিন কোয়াটার সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
সুজাতার পা দুটো যেন টনটন করছে।
রেডিয়াম ডায়েলযুক্ত দামী হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে প্রশান্ত বসাক দেখলেন, রাত প্রায় পৌনে একটা। নাঃ! আজ রাতে বোধ হয় এল না।
কিন্তু মিঃ বসাকের চাপা কণ্ঠে উচ্চারিত কথাটা শেষ হল না। ইতিমধ্যে আকাশে বোধ হয় চাঁদ দেখা দিয়েছিল, সামান্য চাঁদের আলো বাগানের দিককার ভোলা জানলাপথে ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করেছিল।
খুট করে একটা যেন অস্পষ্ট শব্দ শোনা গেল। এবং তারপরই প্রশান্ত বসাক দেখলেন কে একজন জানলাপথে মাথা তুলে ঘরের ভিতর উঁকি দিচ্ছে।
এসেছে। অনুমান তাহলে তাঁর মিথ্যা হয়নি।
অস্বাভাবিক একটা উত্তেজনার ঢেউ যেন মুহূর্তে মিঃ বসাকের সমস্ত ইন্দ্রিয় ও অনুভূতির উপর দিয়ে বিদ্যুৎ-তরঙ্গের মতই প্রবাহিত হয়ে যায়।
জানলাপথে ওদিকে ততক্ষণে মাথার সঙ্গে সঙ্গে দেহের ঊর্ধ্বাংশও স্পষ্ট হয়ে ওঠে মিঃ বসাকের চোখের সামনে। জানলাপথেই ছায়ামূর্তি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল।
ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে শয্যার দিকে। শয্যার একেবারে কাছটিতে দাঁড়াল।
হঠাৎ চমকে উঠলেন মিঃ বসাক।
খোলা জানলায় আর একখানি মুখ দেখা গেল। এবং বিড়ালের মতই নিঃশব্দে দ্বিতীয় ছায়ামূর্তিও ঘরে প্রবেশ করল প্রায় প্রথম ছায়ামূর্তির পিছনে পিছনেই।
কিন্তু যত নিঃশব্দেই দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি ঘরে প্রবেশ করুক না কেন, প্রথম ছায়ামূর্তি বোধ। হয় সেই ক্ষীণতম শব্দটুকুও শুনতে পেয়েছিল।
চকিতে প্রথম ছায়ামূর্তিও ঘুরে দাঁড়াল।
প্রথম ছায়ামূৰ্তি ঘুরে দাঁড়াবার আগেই দ্বিতীয় ছায়মূর্তি হাত বাড়িয়ে দেওয়ালের গায়ে আলোর সুইচটা টিপে দিয়েছিল। খুট করে একটা শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটা জ্বলে ওঠে।
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে সমস্ত কক্ষটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
ঠিক সেই মুহূর্তে বাথরুমের দরজাটা খুলে ঘরের মধ্যে পা দিয়েই বজ্রকঠিন কণ্ঠে মিঃ বসাক বলে উঠলেন, মিঃ চৌধুরী!
ঘরের মধ্যে যেন অকস্মাৎ বজ্রপাত হল।
বিদ্যুৎ-চমকের মতই যুগপৎ দুই ছায়ামূর্তিই ঘুরে দাঁড়ায়।
কৌতূহলী সুজাতাও ইতিমধ্যে প্রায় মিঃ বসাকের সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। সে দেখল মিঃ বসাকের উদ্যত পিস্তলের সামনে সামান্য দূরের ব্যবধানে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে পুরন্দর চৌধুরী ও সুন্দরলাল। উভয়ের চোখেই হতভম্ব বোবা দৃষ্টি।
উদ্যত পিস্তল হাতে ওঁদের প্রতি দৃষ্টি রেখেই সুজাতাকে সম্বোধন করে মিঃ বসাক বললেন, সুজাতাদেবী, নীচে রামানন্দবাবু অপেক্ষা করছেন, তাঁকে ডেকে আনুন।
আগের পর্ব :
০১-০৫. রজত আর সুজাতা
০৬-১০. রামচরণ মাত্র আঠারো বছর বয়সে
১১-১৫. সমস্ত ঘটনাটা সংক্ষেপে বর্ণনা
১৬-২০. পুরন্দর চৌধুরী আবার বলতে লাগলেন
২১-২৫. গত রাত্রে নীচের তলায়
২৬-৩০. ঘরের মধ্যে ঢুকতেই চোখাচোখি
পরের পর্ব :
৩৬-৪২. থানা-ইনচার্জ রামানন্দ সেন