দাদির হাত থেকে বাঁচার জন্য বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার “ব্যাটারি লো” দিয়ে সেভ করে রেখেছি।আগে যখন সে কল দিত দাদি ব্যাটারি লো দেখে ফোনটা চার্জে দিত।কিন্তু এখন দেখি সে ফোনটা নিয়ে ভালো ভাবে কি যেন দেখে।আমি মহা টেনশনে পড়ে গেলাম।যদি বাই চান্স ধরে ফেলে আমার বিয়ে ঘন্টা নিশ্চিত বেজে যাবে। এই সাদিয়া দেখতো ফোনে কি হলো? কেন কি হলো? চার্জতো মনে হচ্ছে ফুল। কিন্তু ব্যাটারি লো দেখাই ক্যান? কি যে বলনা তুমি। কই চার্জ ফুল। আমিতো দেখছি চার্জই নেই।চার্জ ফুল থাকলে কি আর ব্যাটারি লো দেখাই। দ্যাখ আমারে বোকা বানাস না বুঝছিস।ফোন সম্পর্কে আমি তোর থেকে ভালো জানি। হ্যা তা তো আমি জানি।না হলে কি আর ব্যাটারি লো দেখে ফোন চার্জে দাও। হুম।
এইবার না হয় দাদিকে বোঝালাম কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন।নাহ কাল মেহেদির সাথে দেখা করে কিছু একটা করতেই হবে সকাল সকাল রেডি হয়ে কলেজে গিয়ে দেখি মেহেদি আর দাদি বসে গল্প করছে।আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি।এটা কিভাবে সম্ভব।দাদি কিভাবে বুঝলো?সামনে এগোতে গিয়ে ও গেলাম না।নাহ যদি এত লোকের সামনে মারধর করে তাহলে আর ইজ্জত থাকবে না।সোজা বাসায় গিয়ে দাদির ফোন খুঁজতে লাগলাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফোনটা পেলাম।হাতে নিয়ে কল লিস্ট চেক করলাম।আমি আকাশ থেকে নিচে না পড়ে যেন সাগরে পরলাম।কাল রাতে ব্যাটারি লো নামক কন্টাক্ট থেকে অনেকবার কথা হয়েছে।দ্রুত কল রেকডিং এ গেলাম।কি কথা হয়েছে জানতেই হবে।কল রেকডিং অন করেই শুনি মেহেদি দাদিকে বলছে-
-হ্যালো বেবি।তুমি কোথায় আছো।জান তোমাকে খুব মিস করছি।একটা কিসি দাও না বাবু।
-আমি দাদির পাশে।এখন পারব না। কাল কলেজে দেখা করো।তারপর দিব।(ফিসফিস করে)
-আচ্ছা বাবু তোমার কন্ঠ ওই বুড়িটার মত লাগছে কেন?
-আরে ফুসফিস করে কথা বলছি না।তাই হয়তো।
-ফুসফিস?ওহ আচ্ছা ফিসফিস বুঝেছি।নটি গার্ল।
-আচ্ছা বাবু।রাখি।
-আচ্ছা বাবু।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি।কথা এখানেই শেষ না আরো আছে।শুনে দেখি এরপরে আবার কি বলার জন্য কল দিয়েছিল।
-বাবু, তোমাকে খুব মিস করছি।বুড়িটা এখনও ঘুমোইনি কেন?একটু রোমান্স করতে ও দেয় না।কাল তুমি কখন আসবা বাবু?
-বললাম তো সকালে আসব।(ফিসফিস করে)
-বলছিলাম বাবু একটা কিসি দাও না?
-তুমি দেখছি কথা শুনতেই চাও না।দাড়াও দিচ্ছি।
আমি আর শুনলাম না।বুঝতে বাকি রইলো না কাল রাতে ঠিক কি হয়েছে।এখন যদি মেহেদিকে কাছে পেতাম।খুন করতে এক মিনিট ও দেরি হতো না।আল্লাহ এতদিন প্রেম করলাম ভয়েস টাও চিনে না। চুপচাপ বসে আছি।দাদি এই মাত্রই বাসায় আসলো।এসেই বাবার ঘরে ঢুকেছে।টেনশনে বসে থাকতেও পারছি না দাঁড়াতেও পারছি না।বিয়ের ঘন্টা যে বেজে গেছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না।দাদি বাবার ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই ছুটে গেলাম। কিন্তু কিছু বলতে পারছি না।চুপ করে করে দাঁড়িয়ে আছি।
-কি বেহায়ারে তুই।
-সরি দাদি।আর হবে না।
-আর হতে দিব ও না।বিয়ের জন্য তৈরি হও।কাল দেখতে আসবে।
-দাদি কাঁদতে কাঁদতে দাদির পা জরিয়ে দরলাম।কিন্তু চোখ দিয়ে বিন্দুমাত্র পানি বের হচ্ছে না।সমানে শুধু চিল্লাছি কয়েকবার দাদি দাদি করে।
-এই পা ছাড়।নাটক বন্ধ কর।
-দাদি সারাজীবন তোমার সেবা করব।তোমার পান বানিয়ে দিব।রাতে কোলবালিশটাও তোমাকে দিব।মশারিটাও আমি টানাবো।রাতে পা ও টিপে দিব।শুধু বিয়েটা দিও না দাদি।
-সব মানবিতো।
-হ্যাঁ সব মানবো।
-পরে পালটি খাবি না তো?
-না দাদি।পাক্কা প্রমিজ।
-আচ্ছা ঠিক আছে যা।তোর বাবার সাথে কথা বলছি, তোকে যেন ওই লো ব্যাটারির সাথে বিয়ে না দেয়।
-সত্যি বলবে তো?
-হুম বলবো।
উঠে খুশির ঠ্যালায় চলে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ মনে পড়লো দাদি লো ব্যাটারি কেন বললো?তার মানে আমার বিয়ে…… দাদি বলে এসে জাপটে ধরলাম-
-কিরে ভাঙ্গবো বিয়ে?তোর বাবাকে বলবো?
-একবার যেহেতু বলেই ফেলেছো। আবার বললে বাবা কি ভাব্বে তার থেকে বিয়েটা হোক না।
-কি বলিস?বিয়ে হলে আমার শর্তের কি হবে?এই যে বললি আমার সেবা করবি?
-সারাজীবন তোমার সেবা করব।একা নয় এবার দুজনে মিলে।
-হাহাহা পাগলী।আয় কাছে আয়।
.আমাকে জাপটে ধরে আছে দাদি।কাছের মানুষের ভালোবাসা গুলো হয়তো এমনি হয়।ইতিমধ্যে মেহেদির ফোন।
-নে তোর ব্যাটারি লো কল দিয়েছে।আমি যাই বাবা।অনেক কাজ আমার।
দাদি চলে যাচ্ছে।আমি অপলকভাবে তাকিয়ে আছি।ভাবছি এই মানুষটার সাথেই আমি সারাদিন সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া করি।অথচ দাদি আমার জন্য যা করলো তা আমি কোন দিন ও ভুলবো না।খুব ইচ্ছা করছে দাদিকে পেছন থেকে ডেকে বলতে, দাদি ইউ আর বেষ্ট।লাভ ইউ।