০১-০৫. রজত আর সুজাতা
দেখা হয়ে গেল দুজনের। রজত আর সুজাতার।
এতদিন পরে এমনি করে দুজনের আবার দেখা হয়ে যাবে কেউ কি ওরা ভেবেছিল! দুজনে দুদিকে যে ভাবে ছিটকে পড়েছিল, তারপর আবার কোন দিন যে দেখা হবে, তাও এক বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে, ব্যাপারটা দুজনের কাছেই ছিল সত্যি স্বপ্নতীত।
তবু দেখা হল দুজনের। রজত আর সুজাতার।
দুজনের একজন আসছিল লাহোর থেকে। অন্যজন লক্ষ্ণৌ থেকে। এবং দুজনেরই কলকাতায় আগমনের কারণ হচ্ছে একই লোকের কাছ থেকে পাওয়া দুখানা চিঠি।
আরও আশ্চর্য, যখন ওরা জানতে পারল একই দিনে নাকি দুজনে এই চিঠি দুখানা পেয়েছে।
একই তারিখে লেখা দুখানা চিঠি। এবং একই কথা অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে দুখানা চিঠিতে লেখা। আর সেই চিঠি পেয়েই লক্ষ্ণৌ থেকে সুজাতা ও লাহোর থেকে রজত একই দিনে রওনা হয়ে এক ঘণ্টা আগে-পিছে হাওড়া স্টেশনে এসে নামল।
পরবর্তী উত্তরপাড়া যাবার লোকাল ট্রেনটা ছিল ঘণ্টা দেড়েক পরে। দুজনের সঙ্গে সাক্ষাত হয়ে গেল তাই হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফরমের উপরেই।
এ কি, সুজাতা না! রজত প্রশ্ন করে বিস্ময়ে।
কে, ছোড়দা! সুজাতাও পাল্টা বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্নটা করে।
কোথায় যাচ্ছিস? লক্ষৌ থেকেই আসছিস নাকি?
হ্যাঁ, উত্তরপাড়া। ছোট্রকার একটা জরুরী চিঠি পেয়ে আসছি।
আশ্চর্য! আমিও তো ছোট্রকার জরুরী চিঠি পেয়েই উত্তরপাড়ায় যাচ্ছি। জবাবে বলে রজত।
রজত ও সুজাতা জ্যেঠতুত ও খুড়তুত ভাই-বোন। একজন থাকে লাহোরে, অন্যজন লক্ষৌতে। প্রায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে ভাই-বোনে সাক্ষাৎ।
এদিকে ট্রেন ছাড়বার শেষ ঘণ্টা তখন বাজতে শুরু করেছে। তাড়াতাড়ি দুজনে সামনের লোকাল ট্রেনটায় উঠে বসল।
শীতের বেলা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। বেলা সবে সাড়ে চারটে হলেও, বাইরের আলো ইতিমধ্যেই ঝিমিয়ে এসেছে।
ইতিমধ্যেই অফিস-ফেরতা নিত্যকার কেরানী যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়ে গেছে ট্রেনে। ট্রেনের কামরায় ঠেলাঠেসি গাদাগাদি। সেকেণ্ড ক্লাস কামরায় ভিড় থাকলেও ততটা ভিড় নেই। একটা বেঞ্চের একধারে ওরা কোনমতে একটু জায়গা করে নিয়ে গায়ে গা দিয়ে বসে পড়ল।
.
দুজনেই ভাবছিল বোধ হয় একই কথা।
ছোটকাকা বিনয়েন্দ্রর জরুরী চিঠি পেয়ে দুজনে, একজন লাহোর থেকে অন্যজন লক্ষৌ থেকে আসছে উত্তরপাড়ায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। জরুরী চিঠি পেয়ে আসছে ওরা কিন্তু তখনো জানে না কী ব্যাপারে জরুরী চিঠি দিয়ে তাদের আসতে বলা হয়েছে। অথচ গত দশ বছর ধরে তাদের ওই কাকা বিনয়েন্দ্র, যদিও আপনার কাকা, তাঁর সঙ্গে ওদের কোন সম্পর্কই ছিল না।
দেখা-সাক্ষাৎ বা মুখের আলাপে কুশল প্রশ্ন পর্যন্ত দূরের কথা, গত দশ বছর পরস্পরের মধ্যে ওদের কোন পত্র বিনিময় পর্যন্ত হয়নি। ওরাও সত্যি কথা বলতে কি ভুলেই গিয়েছিল যে, ওদের একজন আপনার কাকা এ সংসারে কেউ এখনো আছেন!
সেই কাকার কাছ থেকে জরুরী চিঠি। অত্যন্ত জরুরী তাগিদ, পত্র পাওয়ামাত্র যেন চলে আসে ওরা উত্তরপাড়ায়। ইতি অনুতপ্ত ছোট্কা। চিঠির মধ্যে কেবল এতকাল পরে আসবার জন্য এই জরুরী তাগিদটুকু থাকলেই ওরা এভাবে চিঠি পাওয়ামাত্রই চলে আসতে কিনা সন্দেহ। আরও কিছু ছিল সেই সংক্ষিপ্ত চিঠির মধ্যে যেটা গুরুত্বের দিক দিয়ে ওরা অস্বীকার করতে পারেনি। এবং যে কারণে ওরা চিঠি পাওয়ামাত্রই না এসেও পারেনি।
কল্যাণীয়েষু রজত,
আমার আর বেশী দিন নেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছি মৃত্যু আমার একেবারে সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়েছে। তার হাত থেকে আর আমার কোন মতেই নিস্তার নেই। দাদুর প্রেতাত্মার চেষ্টা এতদিনে বোধ হয় সফল হবেই বুঝেতে পারছি। আগে কেবল মধ্যে মধ্যে রাতের বেলা তাকে দেখতাম, এখন যেন তাকে দিনে রাত্রে সব সময়ই দেখতে পাচ্ছি। সেই প্রেত-ছায়া এবারে বোধ হয় আর আমাকে নিস্তার দেবে না। এতকাল যে কেন তোমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখিনি যাবার আগে অন্তত সে কথাটা তোমাকে জানিয়ে যদি না যাই এবং আমার যা কিছু তোমার হাতে তুলে না দিয়ে যেতে পারি তবে মরণের পরেও হয়তো আমার মুক্তি মিলবে না। তাই আমার শেষ অনুরোধ এই চিঠি পাওয়ামাত্রই রওনা হবে।
ইতি আশীবাদক, অনুতপ্ত, ভাগ্যহীন, তোমার ছোকা।
সুজাতার চিঠিতেও অক্ষরে অক্ষরে একই কথা লেখা। কেবল কল্যাণীয়েষু রজতের জায়গায় লেখা, কল্যাণীয়া মা সুজাতা।
তাই যত মন-কষাকষিই থাক, দীর্ঘদিনের সম্পর্কহীন এবং ছাড়াছাড়ি থাকা সত্ত্বেও রজত বা সুজাতা কেউই তাদের ছোট্কা বিনয়েন্দ্রর ওই চিঠি পড়ে রওনা না হয়ে পারেনি।
গত দশ বছরই না হয় ছোট্কার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই কিন্তু এমন একদিন তো ছিল যখন ওই ছোটকাই ছিল ওদের বাড়ির মধ্যে সবার প্রিয়। যত কিছু আদর আবদার ছিল ওদের ঐ ছোট্রকার কাছেই।
সেজন্য রজতের মাও কম তো বলেননি ওদের ছোট্কাকে।
প্রত্যুত্তরে হোটকা হেসেছেন শুধু ওদের দুজনকে পরম স্নেহে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে।
ছোট্রকার ওরা দুজনেই যে ছিল বাড়ির মধ্যে একমাত্র সঙ্গী সাথী। হাসতে হাসতে ছোেটা রজতের মাকে সম্বোধন করে বলেছেন, না না, ওদের তুমি অমন করে বোলো না।
রজতের মা জবাবে বলেছেন, না, বলবে না! আদর দিয়ে দিয়ে ওদের মাথা দুটো যে চিবিয়ে খাচ্ছ। দুটিই সমান ধিঙ্গি হয়েছে, লেখাপড়ার নামে ঘণ্টা। কেবল ছোটকা এটা দাও,ছোট্কা ওটা দাও, এটা করো ছোটকা, ওটা করো।
আহা, অমন করে বোলো না বউদি। একজন এই বয়সে বাপ হারিয়েছে, আর একজন তো বাপ মা দুটো বালাই-ই চুকিয়ে বসে আছে।
সত্যিই তো!
রজতের বাবা অমরেন্দ্রনাথ সেক্রেটারিয়েটে বড় চাকরি করতেন। তিন ভাই অমরেন্দ্র, সুরেন্দ্র ও বিনয়েন্দ্রর মধ্যে তিনিই ছিলেন জ্যেষ্ঠ। অল্প বয়সেই দেখা দিল রক্তচাপাধিক্য, হঠাৎ করোনারী থ্রম্বসিসে একদিন দ্বিপ্রহরে অফিসে কাজ করতে করতেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। জ্ঞানহীন অমরেন্দ্রনাথকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসা হল কিন্তু লুপ্ত জ্ঞান আর তাঁর ফিরে এল না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল। রজতের বয়স তখন সবেমাত্র ন বছর। এক বছরও ঘুরল না, সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, একটা ব্রিজ কনস্ট্রাকসনের তদ্বির করে ফিরছিলেন সস্ত্রীক নিজের গাড়িতেই। ড্রাইভার ড্রাইভ করছিল। একটা রেলওয়ে ক্রশিংয়ের বাঁকের মুখে ড্রাইভার স্পীডের মুখে গাড়ি টার্ন নিতে গিয়ে গাড়ি উল্টে গিয়ে একই সঙ্গে ড্রাইভার ও সস্ত্রীক সুরেন্দ্রনাথের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে সঙ্গে সঙ্গেই।
সুজাতার বয়স তখন বছর ছয়েক মাত্র।
অতি অল্প বয়সে মা ও বাপকে একসঙ্গে হারালেও সুজাতার খুব বেশী অসুবিধা হয়নি। কারণ সে প্রকৃতপক্ষে তার জন্মের পর থেকেই আয়ার কোলে ও জ্যেঠাইমার তত্ত্বাবধানে মানুষ হচ্ছিল। বাপ-মার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব কমই ছিল। সুরেন্দ্রনাথ তাঁর কনট্রাকসনের কাজে বাইরে বাইরেই সর্বদা ঘুরে বেড়াতেন, সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়া। সুজাতার যা কিছু আদর-আবদার ছিল তার ছোট্কা বিনয়েন্দ্রনাথ ও জ্যেঠিমার কাছেই।
একটা বছরের মধ্যেই সাজানো-গোছানো সংসারটার মধ্যে যেন অকস্মাৎ একটা ঝড় বহে গেল। সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল।
সমস্ত ঝক্কি ও দায়িত্ব এসে পড়ল বিনয়েন্দ্রনাথের ঘাড়ে।
বিনয়েন্দ্রনাথ তখন রসায়নে এম. এস. সি. পাস করে এক বে-সরকারি কলেজে সবেমাত্র বছর দুই হল অধ্যাপনার কাজ নিয়েছেন ও ডক্টরেটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
সংসারের টাকাপয়সার ব্যাপারটা কোন দিনও তাঁকে ভাবতে হয়নি ইতিপূর্বে। যা আয় করতেন তার সবটাই তাঁর ইচ্ছামত রসায়ন শাস্ত্রের বই কিনে ও ভাইপো-ভাইঝিদের আদর-আবদার মেটাতেই ব্যয় হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ যেন মোটা রকমের উপার্জনক্ষম মাথার উপরে দুই ভায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে সমস্ত ঝক্কি এসে তাঁকে একেবারে বিব্রত করে তুলল।
কিন্তু অত্যুৎসাহী, সদাহাস্যময় আনন্দ ও জ্ঞানপাগল বিনয়েন্দ্রনাথকে দেখে সেটা বোঝবার। উপায় ছিল না।
অমরেন্দ্রনাথ যত্র আয় করতেন তত্র ব্যয় করতেন; কাজেই মৃত্যুর পর সামান্য হাজার দু-তিন টাকা ব্যাঙ্কে ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেননি এবং সময়ও পাননি।
সুরেন্দ্রনাথও তাই, তবে হাজার পনের টাকার জীবনবীমা ছিল তাঁর।
বিনয়েন্দ্রনাথ বউদির শত অনুরোধেও বিবাহ করলেন না, নিজের রিসার্চ ও ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়েই দিন কাটাতে লাগলেন।
এমনি করেই দীর্ঘ চোদ্দটা বছর কেটে গেল।
রজত বি. এ. পাস করে এম. এ. ক্লাসে ভর্তি হল ও সুজাতা বি. এ. ক্লাসে সবে নাম লিখিয়েছে এমন সময় অকস্মাৎ একটা ঘটনা ঘটল।
.
অমরেন্দ্র, সুরেন্দ্র ও বিনয়েন্দ্রর মাতামহ অনাদি চক্রবর্তী সেকালের একজন বর্ধিষ্ণু জমিদার, থাকতেন উত্তরপাড়ায়।
একদিন বিয়ে কলেজ থেকেই সেই যে তাঁর দাদুকে দেখতে গেলেন তাঁর উত্তরপাড়ার বাড়িতে, আর ফিরে এলেন না কলকাতার বাসায়।
সন্ধ্যার দিকে উত্তরপাড়া থেকে অবিশ্যি বিনয়েন্দ্রর একটা চিঠি একজন লোকের হাত দিয়ে এসেছিল রজতের মার নামে এবং তাতে লেখা ছিল:
বউদি,
দাদুর হঠাৎ অসুখের সংবাদ পেয়ে উত্তরপাড়ায় এসে দেখি তাঁর মস্তিষ্কবিকৃতিটা কয়েকদিন থেকে একটু বেশী রকমই বাড়াবাড়ি চলেছে। তাঁকে দেখবার কেউ নেই, এ অবস্থায় আঁকে একা একটিমাত্র চাকরের ভরসায় রেখে ফিরতে পারছি না। তবে একটু সুস্থ হলে যাব। রজতই যেন একরকম করে সব চালিয়ে নেয়।
ইতি বিনয়েন্দ্র
ওইটুকু সংবাদ ছাড়া ওদের কলকাতার বাসার ওই লোকগুলোর খরচপত্র কেমন করে কোথা থেকে চলবে তার কোন আভাস মাত্রও সে চিঠিতে ছিল না।
বিনয়েন্দ্রর পক্ষে ওই ধরনের চিঠি দেওয়াটা একটু বিচিত্রই বটে। যাহোক সেই যে বিনয়েন্দ্র উত্তরপাড়ায় চলে গেলেন আর সেখান থেকে ফিরলেন না। এবং দ্বিতীয় আর কোন সংবাদও দিলেন না দীর্ঘ তিন বছরের মধ্যে; এমন কি সকলে কে কেমন আছে এমনি ধরনের কোন একটি কুশল সংবাদ নিয়েও কোন সন্ধান বা পত্র এল না ওই দীর্ঘ তিন বছরে।
রজতের মা বিনয়েন্দ্রর এতাদৃশ ব্যবহারে বেশ কিছুটা মর্মাহত তো হলেনই এবং অভিমানও হল তাঁর সেই সঙ্গে।
আশ্চর্য! বিনয়েন্দ্র অকস্মাৎ সকলকে কেমন করে ভুলে গেল আর ভুলতে পারলই বা কী করে? যাহোক অভিমানের বশেই রজতকে পর্যন্ত তাঁর অনুরোধ সত্ত্বেও একদিনের জন্যও তিনি বিনয়েন্দ্রর সন্ধানে যেতে দিলেন না।
যাক সে যদি ভুলে থাকতে পারে, তাঁরাই বা কেন তাকে ভুলে থাকতে পারবেন না!
.
০২.
উত্তরপাড়ায় বিনয়েন্দ্রর যে মাতামহ ছিলেন অনাদি চক্রবর্তী, তাঁর বয়স প্রায় তখন সত্তরের কাছাকাছি।
এমন একদিন ছিল যে সময় উত্তরপাড়ায় চক্রবর্তীদের ধনসম্পদের প্রবাদটা কিংবদন্তীর মতই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে হচ্ছে রামানন্দ চক্রবর্তীর যুগ। অথচ খুব বেশী দিনের কথাও তো সেটা নয়। কলকাতায় সে সময় ইংরাজ কুঠিয়ালদের প্রতিপত্তি সবে শুরু হয়েছে। রামানন্দ ছিলেন ওইরূপ এক কুঠিরই মুছুদ্দি। রামানন্দ বিয়ে করেছিলেন ভাটপাড়ার বিখ্যাত গাঙ্গুলী পরিবারে। বউ লক্ষ্মীরাণী ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। কিন্তু সুখে বা আনন্দে সংসার তিনি করতে পারেননি।
হঠাৎ এক নিষুতি রাত্রে রামানন্দের ঘরে ডাকাত পড়ল। ডাকাতদের হাতে ছিল গাদা। বন্দুক আর জ্বলন্ত মশাল।
ডাকাতের দল কেবল যে রামানন্দর ধনদৌলতই লুঠ করল তাই নয়, লুঠ করে নিয়ে গেল ওই সঙ্গে তাঁর পরমাসুন্দরী যুবতী স্ত্রী লক্ষ্মীরাণীকেও।
সত্য কথাটা কিন্তু রামানন্দ কাউকেই জানতে দিলেন না। তিনি রটনা করে দিলেন ডাকাতদের হাতে লক্ষ্মীরাণীর মৃত্যু ঘটেছে।
দু-চারজন আত্মীয়স্বজন কথাটা বিশ্বাস না করলেও উচ্চবাক্ত করতে সাহস করল না বা রামানন্দর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও সাহস পেল না, রামানন্দের প্রতিপত্তি ও ধনৈশ্বর্যের জন্যই বোধ হয়।
রামানন্দের একটিমাত্র ছেলে যোগেন্দ্র চক্রবর্তী। যোগেন্দ্রকে বুকে নিয়ে রামানন্দ স্ত্রী-বিচ্ছেদের দুঃখটা ভুলবার চেষ্টা করতে লাগলেন কিন্তু কিছুতেই যেন ভুলতে পারেন না লক্ষ্মীরাণীকে।
সুরার আশ্রয় নিলেন। এবং শুধু সুরাই নয়, সেই সঙ্গে এসে জুটল বাগানবাড়িতে বাঈজী চন্দনাবাঈ। হু-হু করে সঞ্চিত অর্থ বের হয়ে যেতে লাগল।
তারপর একদিন যখন তাঁর মৃত্যুর পর তরুণ যুবা যোগেন্দ্রর হাতে বিষয়-সম্পত্তি এসে পড়ল, রামানন্দর অর্জিত বিপুল ঐশ্বর্যের অনেকখানিই তখন শুড়ীর দোকান দিয়ে সাগরপারে চালান হয়ে গেছে।
এদিকে উজ্জ্বলতার যে বিষ রামানন্দের রক্ত থেকে তাঁর সন্তানের রক্তের মধ্যেও ধীরে ধীরে সংক্রামিত হচ্ছিল, রামানন্দ কিন্তু সেটা জানতে পারলেন না এবং বাপের মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর এতদিনকার জানা উচ্ছঙ্খলত স্বমূর্তিতে যেন প্রকাশ পেল। এবং যোগেন্দ্র তাঁর উচ্ছলতায় বাপকেও ডিঙিয়ে গেলেন যেন। ফলে তাঁর মৃত্যু হল আরও অল্প বয়সে। তাঁর পুত্র অনাদির বয়ঃক্রম তখন মাত্র আঠারো বছর। সম্পত্তিও তখন অনেকটা বেহাত হয়ে গেছে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও অনাদি ছিলেন যাকে বলে সত্যিকারের উদ্যোগী পুরুষসিংহ। তিনি তাঁর চেষ্টায় ও অধ্যবসায়ের দ্বারা ক্রমশ সেই জীর্ণ দেউলকে সংস্কার করে ভাগ্যের চাকাটা আবার ফিরিয়ে দিলেন।
অনাদির কোন পুত্রসন্তান জন্মায়নি। জন্মেছিল মাত্র একটি কন্যা সুরধনী।
লক্ষ্মীরাণী চক্রবর্তী পরিবার থেকে লুষ্ঠিত হলেও তার রূপের যে ছাপ চক্রবর্তী পরিবারে রেখে গিয়েছিল সেটা পরিপূর্ণভাবে যেন ফুটে উঠেছিল সুরধনীর দেহে।
অপরূপা সুন্দরী ছিলেন সুরধনী। এবং চক্রবর্তীদের ঘরে লক্ষ্মীরাণীর যে অয়েলপেনটিংটা ছিল তার মুখের গঠন ও চেহারার নিখুত মিল যেন ছিল ওই সুরধনীর চেহারায়।
অনাদি চক্রবর্তী অল্প বয়সেই সুরধনীর বিবাহ দেন গরীবের ঘরের এক অসাধারণ মেধাবী ছাত্র মৃগেন্দ্রনাথের সঙ্গে।
অমরেন্দ্র ও সুরেন্দ্রের জন্মের পর তৃতীয়বার যখন সুরধনীর সন্তানসম্ভাবনা হল তিনি উত্তরপাড়ার পিতৃগৃহে আসেন কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে।
মৃগেন্দ্রনাথ অসাধারণ মেধাবী ছাত্র হলেও জীবনে তেমন উন্নতি করতে পারেননি। অথচ নিজে অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও আত্মাভিমানী ছিলেন বলে শ্বশুর অনাদি চক্রবর্তীর বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁর কোনরূপ সাহায্যও কখনো গ্রহণ করেননি। এবং স্ত্রীকেও সহজে পিতৃগৃহে যেতে দিতেন না।
এজন্য জামাই মৃগেন্দ্রর উপরে অনাদি চক্রবর্তী কোনদিন সন্তুষ্ট ছিলেন না। ঠাট্টা করে বলতেন, সাপ নয় তার কৃপানা চক্র।
ধনী পিতার আদরিণী ও সুন্দরী কন্যা সুরধনীও স্বামীর প্রতি কোন দিন খুব বেশী আকৃষ্ট হননি। কারণ তাঁর রূপের মত ধনেরও একটা অহঙ্কার ছিল।
সেবারে যখন অনেক অনুনয় বিনয় করবার পর দিন সাতেকের কড়ারে সুরধনী পিতৃগৃহে এলেন এবং সাতদিন পরেই ঠিক মৃগেন্দ্র স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এলেন, সুরধনী বললেন, আর কটা দিন তিনি থাকতে চান।
মৃগেন্দ্র রাজী হলেন না। বললেন, না, চল।
কেন, থাকি না আর কটা দিন?
না সুরো। গরীব আমি, আমার স্ত্রী বেশী দিন ধনী শ্বশুরের ঘরে থাকলে লোকে নানা কথা বলবে।
তা কেন বলতে যাবে। বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকব।
না, চল। মানুষকে তুমি চেন না, তারা বাঁকাভাবেই নেবে।
সবারই তো তোমার মত বাঁকা মন নয়।
কী বললে, আমার মন বাঁকা?
তা নয় তো কী। অন্য কোথাও নয়, এ আমার নিজের বাপের বাড়ি। থাকিই না কটা দিন আর। গিয়েই তো আবার সেই হাঁড়ি ঠেলা শুরু।
ও, সোনার পালঙ্কে দুদিন শুয়েই বুঝি আরাম ধরে গেছে!
কোথা থেকে কী হয়ে গেল।
সমান বক্রভাবে সুরধনী জবাব দিলেন, সোনার পালঙ্কে ছোটবেলা থেকেই শোওয়া আমার। অভ্যাস। তোমরাই বরং চিরদিন কুঁড়েঘরে থেকেছ, তোমাদেরই চোখে ধাঁধা লাগা সম্ভব দুদিনের সোনার পালঙ্কে শুয়ে, আমাদের নয়।
হুঁ। আচ্ছা বেশ, থাক তবে তুমি এখানেই।
মৃগেন্দ্র চলে গেলেন।
.
সত্যি সত্যি মৃগেন্দ্রর দিক থেকে পরে আর কোন ডাকই এল না।
সুরধনী এবং অনাদি চক্রবর্তী ভেবেছিলেন দু-একদিন পরেই হয়তো মৃগেন্দ্রর রাগ পড়বে কিন্তু দেখা গেল দু-একদিন বা দু-এক সপ্তাহ তো দূরের কথা দশ বছরেও মৃগেন্দ্র চক্রবর্তী বাড়ির ছায়াপর্যন্ত আর মাড়ালেন না। এমন কি সুরধনীর মৃত্যুসবাদ পেয়েও তিনি এলেন। কেবল জ্যেষ্ঠ পুত্র অমরেন্দ্রকে ও সঙ্গে একটি ভৃত্য পাঠিয়ে দিলেন তাদের হাতে এক নীলকুঠী চিঠি দিয়ে অবিলম্বে বিনয়েন্দ্রকে তাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেবার জন্যে।
বিনয়েন্দ্র চক্রবর্তী মামার বাড়িতেই জন্মেছিল এবং দাদুর আদরে মানুষ হচ্ছিল।
অনাদি ফেরত পাঠিয়ে দিলেন নাতিকে।
সেই থেকেই অনাদি চক্রবর্তীর সঙ্গে মৃগেন্দ্রদের আর কোন সম্পর্ক ছিল না। কোন পক্ষই কেউ কারোর সন্ধান করতেন না বা কোনরূপ খোঁজখবরও নিতেন না।
.
০৩.
আরও অনেকগুলো বছর গড়িয়ে গেল।
মৃগেন্দ্রও মারা গেলেন একদিন।
অমরেন্দ্র, সুরেন্দ্র লেখাপড়া শিখে উপার্জন শুরু করল, সংসার করল, তাদের ছেলেমেয়ে হল। কিন্তু চক্রবর্তী-বাড়ির সঙ্গে এ-বাড়ির আর যোগাযোগ ঘটে উঠল না। যক্ষের মত বৃদ্ধ অনাদি চক্রবর্তী একা একা তাঁর উত্তরপাড়ার বিরাট প্রাসাদোপম অট্টালিকা নীলকুঠিতে দিন কাটাতে লাগলেন।
অল্প বয়সে বিনয়েন্দ্র মাতামহের স্নেহের নীড় ছেড়ে এসে ক্রমে তাঁর দাদুকে ভুলতে পেরেছিলেন কিন্তু ভুলতে পারেননি অনাদি চক্রবর্তী। একটি বালকের স্মৃতি সর্বদা তাঁর মনের পদায় ভেসে বেড়াত।
তথাপি প্রচণ্ড অভিমানবশে কোন্দিনের জন্য বিনয়েন্দ্রর খোঁজখবর নেননি বা তাকে ডাকেননি অনাদি চক্রবর্তী।
চক্রবর্তী-বাড়ির পুরাতন ভৃত্য রামচরণ কিন্তু বুঝতে পারত বৃদ্ধ অনাদি চক্রবর্তীর মনের কোথায় ব্যথাটা। কিন্তু সে দু-একবার মুখ ফুটে অনাদি চক্রবর্তীকে কথাটা বলতে গিয়ে ধমক খেয়ে চুপ করে গিয়েছিল বলে আর উচ্চবাচ্য করেনি কোনদিন।
শেষের দিকে বৃদ্ধ অনাদি চক্রবর্তীর মাথায় কেমন একটু গোলমাল দেখা দিল।
প্রথম প্রথম সেটা তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য মনে হয়নি বলেই রামচরণ ততটা মাথা ঘামায়নি কিন্তু শেষটায় যখন একটু বাড়াবাড়ি শুরু হল, তখন সে অনন্যোপায় হয়ে বিনয়েন্দ্রনাথকেই তার কলেজে, সরকার মশাইকে দিয়ে তার নিজের জবানীতেই একটা চিঠি লিখে পাঠাল।
খোকাবাবু,
কর্তাবাবু, আপনার দাদুর অবস্থা খুবই খারাপ। আপনি হয়তো জানেন না আপনার চলে। যাওয়ার পর থেকেই বাবুর মাথার একটু একটু গোলমাল দেখা দেয়। এবং সেটা আপনারই। জন্য, আপনাকে হারিয়ে এবারে হয়তো আর বাঁচবেন না। তাই আপনাকে জানাচ্ছি একটিবার এ সময়ে যদি আসেন তো ভাল হয়।
ইতি রামুদা
চিঠিটা পেয়ে বিনয়েন্দ্র কলেজের লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে বসলেন।
একবার দুবার তিনবার চিঠিটা পড়লেন।
শৈশবের আনন্দ কলহাসি মুখরিত জীবনের অনেকগুলো পৃষ্ঠা যেন তাঁর মনের মধ্যে পর পর উল্টে যেতে লাগল। বহুকাল পরে আবার মনে পড়ল সেই বৃদ্ধ স্নেহময় দাদুর কথা। বিশেষ করে মধ্যে মধ্যে একটা কথা যা তাঁর দাদু তাঁকে প্রায়ই বলতেন, তোর বাবা যদি তোকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায় দাদুভাই, চলে যাবি না তো?
বিনয়েন্দ্র জবাবে বলেছেন, ইস, অমনি নিয়ে গেলেই হল কিনা, যাচ্ছে কে? তোমাকে কোনদিনও আমি ছেড়ে যাব না দাদু, দেখে নিও তুমি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাদু তাঁকে আটকে রাখতে পারেননি। ছেড়ে দিতেই হয়েছে। পরের জিনিসের উপর তাঁর জোর কোথায়।
বিনয়েন্দ্রর মনটা ছটফট করে ওঠে। তিনি তখুনি বের হয়ে পড়েন দাদুর ওখানে যাবার জন্যে।
.
দীর্ঘ একুশ বছর বাদে সেই পরিচিত বাড়িতে এসে প্রবেশ করলেন বিনয়েন্দ্র।
বিরাট প্রাসাদ শূন্য—যেন খাঁ খাঁ করছে। সিঁড়ির মুখেই বাড়ির পুরাতন ভৃত্য রামচরণের সঙ্গে দেখা হয়েগেল, রামচরণ প্রথমটায় ওঁকে চিনতে পারেনি কিন্তু বিয়ে ঠিকই চিনেছিলেন।
মাথার চুল সাদা হয়ে গেলেও মুখের চেহারা তার বিশেষ একটা পরিবর্তিত হয়নি।
রামুদা না?
কে?
আমাকে চিনতে পারছ না রামুদা, আমি খোকাবাবু, বিনু।
বিনু! খোকাবাবু, সত্যিসত্যিই তুমি এতদিন পরে এলে! চোখে জল এসে যায় রামচরণের।
দাদু—দাদু কেমন আছেন রামুদা?
চল। ওপরে চল।
রামচরণের পিছু পিছু বিনয়েন্দ্র দোতলায় যে ঘরে অনাদি চক্রবর্তী থাকতেন সেই ঘরে এসে প্রবেশ করলেন।
বিকৃত-মস্তিষ্ক অনাদি চক্রবর্তী তখন ঘরের মধ্যে একা একা পায়চারি করছিলেন আপন মনে ভূতের মত।
পদশব্দে ফিরে তাকালেন। দৃষ্টি ক্ষীণ—স্পষ্ট কিছুই দেখতে পান না।
রামচরণ বললে, এই জ্বর নিয়ে আবার বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন?
বেশ করছি। আমার খুশি। তোর বাবার কী!
এখুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন যে!
পড়ি পড়ব মাথা ঘুরে, তোর বাবার কী!
এমন সময় বিনয়েন্দ্র ডাকেন, দাদু!
কে?
চকিতে ঘুরে দাঁড়ালেন অনাদি চক্রবর্তী।
দাদু, আমি বিনু।
বিনু! বিনু!
হঠাৎ অনাদি চক্রবর্তীর সমস্ত দেহটা থরথর করে কেঁপে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যাচ্ছিলেন উলে; কিন্তু চকিতে এগিয়ে গিয়ে বলিষ্ঠ দুহাতে বিনয়েন্দ্র ততক্ষণে পতনোম্মুখ বৃদ্ধকে ধরে ফেলেছেন।
আর ফেরা হল না বিনয়েন্দ্রর। চক্রবর্তীদের নীলকুঠিতেই রয়ে গেলেন। এবং মাস চারেক বাদে অনাদি চক্রবর্তী মারা গেলেন।
অনাদি চক্রবর্তী মারা যাবার পর দেখা গেল তিনি তাঁর স্থাবর-অস্থাবর যা কিছু সম্পত্তি ছিল সব এবং মায় চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স সব কিছু দিয়ে গিয়েছেন বিনয়েন্দ্রকেই।
কিন্তু তার মধ্যে দুটি শর্ত আছে।
বিনয়েন্দ্র জীবিতকালে তাঁর ঐ নীলকুঠি ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারবেন। তাহলেই তাঁর সমস্ত সম্পত্তি চলে যাবে ট্রাস্টির হাতে এবং তখন একটি কর্পদকও আর পাবেন না। দ্বিতীয়ত অমরেন্দ্র সুরেন্দ্রর সন্তানসন্ততিদের সঙ্গেও কোন সম্পর্ক রাখতে পারবেন না।
মৃগেন্দ্রর প্রথম দুই সন্তান অমরেন্দ্র ও সুরেন্দ্র তাদের বাপের মতই হয়েছিল। কখনও তারা দাদুর ওখানে আসেনি এবং দাদুর কথা কোনক্রমে উঠলে কখনও প্রীতিকর কথা বলত না।
সেই সব অনাদি চক্রবর্তীর কানে যাওয়ায় তিনি তাদের কোনদিনই ভাল চোখে দেখতে পারেননি। এবং সেই কারণেই হয়তো তিনি তাদের বঞ্চিত করে যাবতীয় সম্পত্তি একা বিনয়েন্দ্রকেই দিয়ে গিয়েছিলেন।
উইলটা অনাদি চক্রবর্তী মৃত্যুর পাঁচ বছর আগেই করেছিলেন।
বিনয়েন্দ্র উত্তরপাড়ার নীলকুঠি থেকে আর ফিরলেন না। সবাই আত্মীয়-অনাত্মীয়রা বুঝল এবং বললে, বিষয়-সম্পত্তি উইল অনুযায়ী সেখান থেকে এলে হাতছাড়া হয়ে যাবে বলেই তিনি সেখান থেকে আর এলেন না।
কিন্তু আসলে বিনয়েন্দ্র যে আর নীলকুঠি থেকে ফিরে আসেননি তার একমাত্র কারণ তার মধ্যে ঐ বিরাট সম্পত্তির ব্যাপারটা থাকলেও একমাত্র কারণ কিন্তু তা নয়। অন্য মুখ্য একটা কারণ ছিল।
বহুদিনের ইচ্ছা ছিল তাঁর একটি নিজস্ব ল্যাবরেটারী তৈরী করে নিজের ইচ্ছেমত গবেষণা নিয়ে থাকেন। কিন্তু তার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ তো তাঁর ছিল না। এখন দাদুর মৃত্যুতে সেই সুযোেগ হাতের মুঠোর মধ্যে আসায় বহুদিনের তাঁর অতৃপ্ত আকাঙ্খটি পূরণ করবার পক্ষে আর কোন বাধাই এখন অবশ্য রইল না। এবং দীর্ঘ তিন বছর পরে আবার সব কথা খুলে বলে তিনি রজতের মাকে একটা দীর্ঘ পত্র দিয়েছিলেন।
কিন্তু রজতের মা সে চিঠি পড়লেন না পর্যন্ত, খাম সমেত ছিড়ে টুকরো টুকরো করে জানলা গলিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন।
দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও বিনয়েন্দ্র চিঠির কোন জবাব পেলেন না।
আবার চিঠি দিলেন। দ্বিতীয় চিঠিও প্রথম চিঠিটার মতই অপঠিত অবস্থায় শতছিন্ন হয়ে জানলাপথে নিক্ষিপ্ত হল।
দীর্ঘ দুমাস অপেক্ষা করবার পরও যখন সেই দ্বিতীয় চিঠির কোন জবাব এল না, প্রচণ্ড অভিমানে বিনয়েন্দ্র আর ওপথ মাড়ালেন না।
তারপর আরও পাঁচটা বছর কালের বুকে মিলিয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন বিনয়েন্দ্র সংবাদ পেলেন, রজত লাহোরে চাকরি নিয়ে তার মাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল, সেখানেই বৌদির মৃত্যু হয়েছে। এবং সুজাতাও তার পরের বছর বি. এ. পাস করে লক্ষ্ণৌয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছে।
একজন লাহোরে, অন্যজন লক্ষ্ণৌতে।
.
০৪.
সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে রজত আর সুজাতা গঙ্গার ধারে নীলকুঠির লোহার ফটকটার সামনে এসে সাইকেল-রিকশা থেকে নেমে এবং রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় হঠাৎ বাধা পেয়ে তাদের দাঁড়াতে হল।
দাঁড়ান।
গেটের সামনে বাধা দিয়েছিল একজন লাল-পাগড়ি-পরিহিত কনস্টেবল।
কে আপনারা, কী ব্যাপার! দুজনেই থমকে দাঁড়ায়।
কোথা থেকে আসছেন?
রজত বললে, আমার নাম রজত সান্যাল আর ইনি আমার বোন সুজাতা সান্যাল। আমি আসছি লাহোর থেকে আর আমার বোন লক্ষ্ণৌ থেকে।
ও, তা এ বাড়ির মালিক—বিনয়েন্দ্র সান্যাল।
রজত আবার বললে, আমাদের কাকা।
বিনয়েন্দ্রবাবু তাহলে—
বললাম তো আমাদের কাকা।
আপনারা তাহলে কি কিছুই জানেন না?
কিছু জানি না মানে! কি জানি না?
গেটের সামনেই ঢোকার মুখে পুলিস কর্তৃক বাধা পেয়েই মনের মধ্যে উভয়েরই একটা অজানিত আশঙ্কা জাগছিল। এখন পুলিস প্রহরীদের কথায় সে আশঙ্কাটা যেন আরও ঘনীভূত হয়।
এ বাড়ির কত কাল রাতে খুন হয়েছেন।
অ্যাঁ! কি বললে? যুগপৎ একটা অস্ফুট আর্ত চিৎকারের মতই যেন একই মুহূর্তে দুজনের কণ্ঠ হতে কথাটা উচ্চারিত হল।
সংবাদটা শুধু আকস্মিকই নয়, অভাবনীয়।
হ্যাঁ বাবু, বড় দুঃখের বিষয়। এ বাড়ির কর্তাকে কাল রাত্রে কে যেন খুন করেছে।
রজত বা সুজাতা দুজনের একজনের ওষ্ঠ দিয়েও কথা সরে না। দুজনেই বাক্যহারা, বিস্মিত, স্তম্ভিত।
ভিতরে যান, ইন্সপেক্টারবাবু আছেন।
কিন্তু কি বলছ তুমি, আমি যে কিছুই মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছি না। এ বাড়ির কর্তা নিহত হয়েছেন মানে? রজত কোনমতে প্রশ্নটা করে।
পুলিস প্রহরীটি মৃদু কণ্ঠে বললে, সেই জন্যই তো বাড়িটা পুলিসের প্রহরায় আছে। যান, ভিতরে যান, ভিতরে দারোগাবাবু আছেন, তাঁর কাছেই সব জানতে পারবেন।
কিন্তু পা যেন আর চলে না।
অতর্কিত একটা বৈদ্যুতিক আঘাতে যেন সমস্ত চলচ্ছক্তি ওদের লোপ পেয়ে গেছে! এই চরম দুঃসংবাদের জন্যেই কি তারা এই দীর্ঘপথ অতিক্রম করে এল পত্র পাওয়া মাত্রই!
গেট পার হবার পর পায়ে-চলা একটা লাল সুরকি-ঢালা রাস্তা। শেষ হয়েছে গিয়ে সেটা প্রশস্ত একটা গাড়িবারান্দার নীচে।
গাড়িবারান্দায় উঠলেই সামনে যে হলঘরটা সেটাই বাইরের ঘর।
হলঘরের দরজাটা খোলা এবং সেই খোলা দরজা-পথে একটা আলোর ছটা বাইরের গাড়িবারান্দায় এসে পড়েছে। যন্ত্রচালিতের মতই দুজনে হলঘরটার মধ্যে খোলা দরজা-পথে গিয়ে প্রবেশ করল।
তাদের কাকা বিনয়েন্দ্রর আকস্মিক নিহত হবার সংবাদটা যেন দুজনেরই মনকে অতর্কিত আঘাতে একেবারে অবশ করে দিয়েছে। সত্যি কথা বটে দীর্ঘদিন ঐ কাকার সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্কই ছিল না। এমন কি দীর্ঘ গত দশ বছরে পরস্পরের মধ্যে কোন পত্রযোগে সংবাদের আদান-প্রদান পর্যন্ত ছিল না।
তথাপি সংবাদটা তাদের বিহ্বল করে দিয়েছে। ব্যাপারটা সঠিক কি হল, এখনও যেন তারা বুঝে উঠতে পারছে না।
হলঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তাই তারা দুজনেই যেন থমকে দাঁড়াল।
এ বাড়িতে ইতিপূর্বে ওরা কখনও আসেনি। এই প্রথম এল। বিরাট হলঘরটি। এক পাশে চৌকির উপরে বিস্তৃত ফরাস। তার উপর এদিক-ওদিক কয়েকটা মলিন তাকিয়া পড়ে আছে।
অন্য দিকে কয়েকটা পুরাতন আমলের রচটা, ভেলভেটের গদীমোড়া মলিন ভারি কারুকার্য করা সেগুন কাঠের তৈরী কাউচ।
দেওয়ালে বড় বড় কয়েকটি অয়েল-পেন্টিং।
চোগাচাপকান পরিহিত ও মাথায় পাগড়ি-আঁটা পুরুষের প্রতিকৃতি এগুলিচক্রবর্তীদের স্বনামধন্য সব পূর্বপুরুষদেরই প্রতিকৃতি বলেই মনে হচ্ছে।
মাথার উপরে সিলিং থেকে দোদুল্যমান বেলোয়ারী কাঁচের সেকেলে ঝাড়বাতি। তবে আগে হয়তো এককালে সেই সব বাতিদানের মধ্যে জ্বলত মোমবাতি, এখন জ্বলছে মাত্র দুটি অল্পশক্তির বিদ্যুৎবাতি। যাতে করে অত বড় হলঘরটায় আলোর খাঁকতি ঘটেছে।
স্বল্প আলোয় সর্বত্র যেন একটা ছমছমে ভাব। ঘরের মধ্যে কেউ নেই।
শুধু ঘরের মধ্যে কেন, এত বড় বিরাট নীলকুঠিটার মধ্যে কেউ আছে বলেই মনে হয়। কোন পরিত্যক্ত কবরখানার মতই একটা যেন মৃত্যুশীতল স্তব্ধতা সমস্ত বাড়িটার মধ্যে চেপে বসেছে।
এ বাড়িতে রজত বা সুজাতা ইতিপূর্বে একবারও আসেনি। অপরিচিত সব কিছু। দুজনে কিছুক্ষণ হলঘরটার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আবার একসময় সামনের ভেজানো দরজাটা খুলে অন্দরের দিকে পা বাড়ায়!
লম্বা একটা দীর্ঘ টানা বারান্দা। নির্জন খাঁ-খাঁ করছে।
এখানেও একটি স্বল্প শক্তির বিদ্যুবাতির জন্য রহস্যময় একটা আলোছায়ার থমথমে ভাব। বারান্দায় প্রবেশ করে রজত একবার চারিদিকে তার চোখের দৃষ্টিটা বুলিয়ে নিল। ঘরের মত সেই বারান্দাটাও শূন্য। এবং হঠাৎ তার নজরে পড়ল বারান্দার মাঝামাঝি জায়গায় অর্ধেক ভেজানো একটা দ্বারপথে ঘরের মধ্যকার একটা ক্ষীণ আলোর আভাস আসছে।
সেই ঘরের দিকেই এগুবে কিনা রজত ভাবছে, এমন সময় অল্প দূরে সামনেই দোতলায় উঠবার সিঁড়িতে ভারী জুতোর মচমচ শব্দ শোনা যেতেই উভয়েরই দৃষ্টি সেই দিকে গিয়ে নিবদ্ধ হল।
প্রশস্ত সিঁড়ি।
০৫.
সিঁড়ির খানিকটা দেখা যাচ্ছে, তারপরেই বাঁয়ে বাঁক নিয়ে উপরে উঠে গেছে বোঝা যায় সিঁড়িটা। মচমচ ভারি জুতোের শব্দটা আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নীচেই নেমে আসছে মনে হল।
আপাততঃ ওরা দুজনেই উদগ্রীব হয়ে শব্দটাকে লক্ষ্য করে ঐদিকেই তাকিয়ে থাকে। ক্রমে বারান্দায় অল্প আলোয় ওদের নজরে পড়ল দীর্ঘকায় এক পুরুষ মূর্তি।
পুরুষ মূর্তিটিই জুতোর শব্দ জাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন।
.
আগন্তুক দৈর্ঘ্যে প্রায় ছ ফুট হবেন।
পরিধানে মুসলমানী চোস্ত পায়জামা, গায়ে কালো সার্জের গলাবন্ধ স্কুল সরওয়ানী। পায়ে কালো ডার্বী জুতো। মুখখানি লম্বাটে ধরনের। কালো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। সরু গোঁফ। মাথার চুল ঘন কুঞ্চিত, চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। হাতে একটি মোটা লাঠি। লাঠিটা ডান হাতে ধরে উঁচু করে নামছিলেন ভদ্রলোক।
হঠাৎ সিঁড়ির নীচে অল্প দূরেই দণ্ডায়মান ওদের দুজনের দিকে নজর পড়তেই নামতে নামতে সিঁড়ির মাঝখানেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। এক হাতে লাঠিটা ধরে ওদের দিকে তাকালেন। চশমার লেন্সের ভিতর দিয়ে চোখের দৃষ্টিজোড়া যেন ওদের সর্বাঙ্গ লেহন করতে লাগল।
ওরাও নিঃশব্দে দণ্ডায়মান আগন্তুকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কোন পক্ষ থেকেই কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। কয়েকটা মুহূর্ত কেটে গেল এমনি। হঠাৎ এমন সময় সেই স্তব্ধটার মধ্যে একটা পুরুষের কণ্ঠস্বর পশ্চাৎ দিক থেকে শুনতে পেয়েই রজত ঘুরে ফিরে তাকাল পশ্চাতের দিকে।
এ কি! পুরন্দরবাবু, কোথায় বের হচ্ছেন?
দ্বিতীয় আগন্তুককে দেখা মাত্রই রজতের বুঝতে কষ্ট হয় না তিনি কোন পুলিসের লোক। পরিধানে চিরন্তন পুলিসের পোশাক। লংস ও হাফসাট, কাঁধে পুলিসের ব্যাজ।
হ্যাঁ। একটু বাইরে থেকে ঘুরে না এলে মারা পড়ব, মিঃ বসাক।
পুরন্দরবাবুর প্রত্যুত্তরে পুলিস অফিসার মিঃ বসাক বললেন, কিন্তু আপনাকে তো সকালবেলাতেই বলে দিয়েছিলাম, আপাততঃ investigationশেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের কারোরই কোথাও এ বাড়ি থেকে বের হওয়া চলবে না মিঃ চৌধুরী।
বেশ রুক্ষ ও কর্কশ কঠেই এবারে পুরন্দর চৌধুরী প্রত্যুত্তর দিলেন, কিন্তু কেন বলুন তো? এ আপনাদের অন্যায় জুলুম নয় কী?
অন্যায় জুলুম বলছেন?
নিশ্চয়ই। আপনাদের কি ধারণা তাহলে আমিই বিনয়েন্দ্রকে হত্যা করেছি?
সে কথা তো আপনাকে আমি বলিনি।
তবে? তবে এভাবে আমাকে বাড়ির মধ্যে নজরবন্দী করে রাখবার মানেটা কী? কী উদ্দেশ্য বলতে পারেন?
উদ্দেশ্য যাই হোক, আপনাকে যেমন বলা হয়েছে তেমনি চলবেন।
আর যদি না চলি?
পুরন্দরবাবু, আপনি ছেলেমানুষ নন, জেনেশুনে আইন অমান্য করবার অপরাধে যে আপনাকে পড়তে হবে সেটা ভুলে যাবেন না।
বলেই যেন সম্পূর্ণ পুরন্দর চৌধুরীকে উপেক্ষা করে এবারে মিঃ বসাক দণ্ডায়মান রজত ও সুজাতার দিকে ফিরে তাকালেন।
বারান্দায় প্রবেশ করা মাত্রই ওদের প্রতি নজর পড়েছিল মিঃ বসাকের, কিন্তু পুরন্দর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলবার জন্যে ওদের সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলেননি বোধ হয়।
এবারে ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললেন, আপনারা?
রজত সংক্ষেপে নিজের ও সুজাতার পরিচয় দিল, আমি আর সুজাতা এই এখুনি আসছি।
কিন্তু আপনারা এত তাড়াতাড়ি এলেন কি করে?
কি বলছেন আপনি মিঃ বসাক? রজত প্রশ্ন করে।
মানে আমি বলছিলাম, আজই তো বেলা দশটা নাগাদ আপনাদের দুজনকে আসবার জন্য তার করেছি।
তার করেছেন?
হ্যাঁ। এ বাড়িতে গত রাত্রে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আমরা শুনেছি।
আপনারা শুনেছেন! শুনেছেন যে বিনয়েন্দ্রবাবু–
হ্যাঁ শুনেছি। বাইরে গেটের সামনে যে পুলিস প্রহরীটি আছে তার মুখেই শুনেছি। কিন্তু আমরা তো কাকার জরুরী চিঠি পেয়েই আসছি।
জরুরী চিঠি পেয়ে—মানে বিনয়েন্দ্রবাবুর চিঠি পেয়ে?
হ্যাঁ।
আশ্চর্য! আপনারাও কি তাহলে ওঁরই মত বিনয়েন্দ্রবাবুর চিঠি পেয়েই আসছেন নাকি? সত্যিই বিচিত্র ব্যাপার দেখছি! মিঃ বসাক বললেন।
হ্যাঁ।
যাক। তাহলে আমি একাই নয়। আপনারাও আমার দলে আছেন। কথাটা বললেন এবার পুরন্দর চৌধুরী।
সকলে আবার পুরন্দর চৌধুরীর দিকে ফিরে তাকালেন!
কই, কী চিঠি পেয়েছেন দেখি, আছে আপনাদের কাছে সে চিঠি?
হ্যাঁ।
রজতই প্রথমে তার পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দিতে দিতে সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললে, তোর চিঠিটা আছে তো?
হুঁ, এই যে। বলতে বলতে সুজাতাও তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা মুখছেড়া খামসমেত চিঠি বের করে মিঃ বসাকের হাতে তুলে দিল।
বারান্দার অল্প আলোতেই দুখানা চিঠি পর পর পড়লেন মিঃ বসাক। তারপর আবার মৃদু কণ্ঠে বললেন, আশ্চর্য! একই ধরনের চিঠি, একেবারে হুবহু এক।
নিন, থাকুন এবারে এখানে আমার মতই নজরবন্দী হয়ে। পুরন্দর চৌধুরী আবার কথা বললেন।
মিঃ বসাক কিন্তু পুরন্দর চৌধুরীর ওই ধরনের কথায় মুখে কোনরূপ মন্তব্য না করলেও একবার তীব্র দৃষ্টিতে পুরন্দর চৌধুরীর দিকে তাকালেন, তারপর আবার ওদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, আপনাদের সঙ্গে কোন জিনিসপত্র আনেননি রজতবাবু?
বিশেষ কিছু তো সঙ্গে আনিনি, ওর একটা আর আমার একটা বেডিং ও দুজনের দুটো সুটকেস।
সেগুলো কোথায়?
বাইরে দারোয়ানের ছোট ঘরটাতেই রেখে এসেছি।
ঠিক আছে। আসুন, আপাততঃ আমার ঐ ঘরেই।
মিঃ বসাক ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন, রজত ও সুজাতা তাঁকে অনুসরণ করল এবং পুরন্দরবাবুকে কিছু না বলা সত্ত্বেও তিনিও ওদের সঙ্গে সঙ্গেই অগ্রসর হলেন।
দরজার কাছাকাছি যেতেই একজন প্রৌঢ় ব্যক্তিকে বারান্দার অপর প্রান্ত থেকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল।
এই যে রামচরণ! শোন, এদিকে এস।
ঐ প্রৌঢ়ই এ বাড়ির পুরাতন ভৃত্য রামচরণ।
পরের পর্ব :
০৬-১০. রামচরণ মাত্র আঠারো বছর বয়সে
১১-১৫. সমস্ত ঘটনাটা সংক্ষেপে বর্ণনা
১৬-২০. পুরন্দর চৌধুরী আবার বলতে লাগলেন
২১-২৫. গত রাত্রে নীচের তলায়
২৬-৩০. ঘরের মধ্যে ঢুকতেই চোখাচোখি
৩১-৩৫. নীলকুঠির আশেপাশে
৩৬-৪২. থানা-ইনচার্জ রামানন্দ সেন