কল সেন্টার

কল সেন্টার

রাত একটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।খালিদ দরজায় দাঁড়িয়ে একনাগাড়ে কলিং বেল চেপেই যাচ্ছে। কিন্তু ভিতর থেকে তার বউ ছবির কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না।খালিদ জানে ছবি জেগেই আছে। হয়তো নিঃশব্দে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে স্বামীর পায়ের খচখচ শব্দ শুনছে।খালিদ ভয়ে ভয়ে দরজায় হাত দিয়ে ঢোক চেপে বলল,বউ আমার ভালো। দরজাটা খুলো না!

কিন্তু মনে মনে সে কিছুটা খুশি কারন দরজা খোলার সাথে সাথে ছবি তান্ডব শুরু করে দিবে।কথার গুলিতে তাকে ঝাঁঝড়া করে দিবে।এ তাদের রোজকার ঘটনা।ফাঁসির আসামি যেমন এক মুহুর্ত সময় পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে মনে মনে শত শত দোয়া করে তেমনই করছে খালিদ।সে কলিং বেল চাপচে ঠিকই,বউকে ডাকছে ঠিকই কিন্তু এটা চাচ্ছে না বউ তার এখুনি দরজা খুলে দিক।যতবার কলিং বেল চেপে চেপে ব্যর্থ হচ্ছে ততবার যেন একটু একটু করে জীবন ফিরে পাচ্ছে।

এভাবে ১৫ মিনিট কেটে যাওয়ার পর ছবি দরজা খুলল।কিন্তু আজ সে মুখে কিছুই বলছে না।অতিরিক্ত রেগে গেলে ছবি কথা বলতে পারে না। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে খালিদের দিকে তাকিয়ে ফোসফোস করছে শুধু।তার অগ্নি ঝরা চোখে একবার আড় চোখে তাকাতেই খালিদ যেন ঝলসে গেল।তড়িৎ গতিতে চোখ নামিয়ে নিল।উল্টো দিকে দৌড় দিবে নাকি বউকে গিয়ে সামলাবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।এদিকে তার প্রকৃতির চাপ পেয়েছে।পিছনে গেলেও হবে না।

সাহস করে খালিদ আবার বলল,ঘরে ঢুকতে দিবা না বউ? ছবির রাগ আরও বেড়ে গেল। সে নাক ফুলিয়ে চোখ দুটো অন্য দিকে সরিয়ে নিল।পরক্ষণে আবার স্বামীর দিকে একবার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে রাগে গিজগিজ করে দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। খালিদ ঘরে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল।সেখান থেকেই সাহস সঞ্চয় করে বলল,বউ ভাত বাড়ো।ক্ষুধা লাগছে তোমার জামাইর।

ঘরে কোন ডাইনিং টেবিল নেই।তাই ছবি মেঝেতে একটা মাদুর বিছিয়ে খাবার সাজিয়ে দিল।খালিদ এসে চুপচাপ খেতে বসল।আজ ছবি পালং শাক দিয়ে পুঁটি মাছের ঝোল করেছে।আর বাদাম ভর্তা।ছবির রান্না নিয়ে খালিদের কোনকালেই কোন অভিযোগ ছিল না।ছবি যদি ধুন্দুল পাতার ভর্তা করেও তাকে খেতে দেয় সে যেন সেটা দিয়েও কবজি ডুবিয়ে খেয়ে উঠতে পারে।

খালিদ মাথা নিচু করে খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে আর মাঝেমধ্যে সামনে বসা ছবির দিকে সামান্য মাথা উঠিয়ে আঁড় চোখে তাকাচ্ছে।যেই ছবির চোখে চোখ পড়ে অমনি খালিদ দ্রুতগতিতে চোখ নামিয়ে নিয়ে পুনরায় খাওয়া শুরু করে দেয়।ছবি এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।খাওয়াটা নির্বিঘ্নে মিটে গেলেই যেন খপ করে ধরে টপ করে খেয়ে ফেলবে। খালিদ খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলল,বউ আজ কিছু কইবা না?তুমি ঝাড়ি টারি না দিলে তো খাবার হজম হইব না।

কথাটা শেষ হতে না হতেই ছবির চোখ পানিতে ভরে গেলো।খালিদ জানে ছবি যখন রাগ মিটাতে না পারে তখন রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আর পরক্ষণেই কান্না করে দেয়।চোখ দিয়ে যেন ফুটন্ত গরম পানি বের হয় যার ধোঁয়ায় খালিদের শরীরের লোমগুলো খসে পড়ে। কিন্তু আজ খালিদ লক্ষ্য করল এই চোখে কোন রাগ নেই।আছে শুধু কষ্ট; স্বামীর প্রতি মায়া।খালিদ কিছু না বলে এঁটো প্লেট-গ্লাস,বাকি খাবার কিচেনে রেখে আসলো।ছবি ঠাঁয় বসে রইল।

খালিদ কিছুই বলতে পারল না।কারণ সে ছবির চোখের পানি সহ্য করতে পারছে না।ছবি তার রাগ মেটাতে এক সপ্তাহও যদি একনাগাড়ে চিৎকার চেচামেচি করে তবুও খালিদের কোনরূপ কষ্ট হয় না।কিন্তু আজ ছবির নিশ্চুপ কান্না খালিদের বুকের ভিতর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে লাগলো। তার গলা আটকে গেল;চোখ ভিজে উঠল।

খালিদ চুপচাপ বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লো।ছবি স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে স্বামীর পাশে গিয়ে সুয়ে পড়লো।খানিক পরে তার মাথা খালিদের বুকে রাখতেই তার চোখের গরম পানিতে খালিদ কেঁপে উঠলো।খালিদ নিঃশব্দে ছবির পিঠে হাত বুলিয়ে দিল।আর কিছুই বলতে পারল না।চাপা কান্নায় তার গলা আটকে গিয়েছে। ছবি নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিয়ে বলল,আজ তো তেইশ তারিখ।স্যালারি দিছে? খালিদ কান্না জড়ানো গলা একটু কেশে নিয়ে বলল,হ্যাঁ দিছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার আগ মুহূর্তে যে উত্তেজনা কাজ করে,মৃদু ভয়ে যেমন বুক ঢিপঢিপ করে এই মুহুর্তে ছবির ঠিক তেমন অনুভূতিই হচ্ছে। সে খানিকটা আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কত আসলো এই মাসে?
-১১,৪৯৯!
-হুম এই মাসে একটু বেশিই পাইছ।
-৪৯৯ টাকা তো আর কার্ড থেকে তোলা যাবে না বউ।আর ১ টাকা হলেই ৫০০ টাকা হয়ে যেত।তাহলেই ১১,৫০০ টাকা তুলতে পারতাম।এখন ১১,০০০ টাকা তুলতে হবে।
-হু জানি।
-বউ সামনে মাসে তিনটা ওটি করতে পারলে আর যদি কেপিআই মিট করতে পারি তাহলে তোমার বাবার বাড়ি বেড়াতে যাব।

(সমস্ত নিয়ম মেনে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারলে কেপিআই (KPI) মিট হয়।কেপিআই মিট হলে মাসিক বেতন তুলনামূলক বেশি আসে।আর ওটি (OT) বলতে কল সেন্টারে সরকারি ছুটির দিনও ছুটি না কাটিয়ে সেবা দেওয়াকে বোঝায়।ওটির হাজিরা মূল্য অন্যান্য দিনের থেকে দ্বিগুন হয়।) ছবি আর কিছুই বলল না। এই এক কথা সে গত চার মাস যাবত শুনে আসছে।মিথ্যা আশ্বাস শুনলেই তার রাগ উঠে যায়।কিন্তু আজ সে বড় ক্লান্ত। রাগারাগি করার কোন ইচ্ছে নেই তার। খালিদ আবার বলল, কি আজ তোমার রাগ উঠছে না এই এক কথা শুনে? ছবি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

-ঘুমাও জান!গুড নাই!লাভ ইউ!

ছবি মুহুর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল।স্বামীর বুকে মাথা রাখলে যত দঃখ,কষ্ট, ব্যর্থতা,হতাশা কাজ করুক না কেন সে মুহুর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে যায়। খালিদ ছবির মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মাথায় একটা চুমু খেয়ে নিল।আনমনে বউয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে, সে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যার্থ মানুষ।বউয়ের সামান্য ইচ্ছেটুকু সে পূরন করতে পারছে না। বিয়ের আগে ছবির কিছু শর্ত ছিল।তার মনে পড়ে যায় ছবির শর্তগুলো।ছবি আল্হাদি স্বরে বলেছিল,”প্রত্যেক সপ্তাহান্তে সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে হাটতে বের হতে হবে।রাস্তার পাশের সস্তা ফুসকা খাওয়াতে হবে।ভ্যান গাড়ির প্রসাধনী নেড়েচেড়ে দেখে ফিরে আসব ১০ টার পর।

তখন রাস্তা কিছুটা ফাকা থাকবে।শহরের ফাকা রাস্তায় প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে বড্ড বেশি রোমান্টিক লাগে!তুমি কিন্তু নিষেধ করতে পারবা না!রোজ সন্ধ্যায় আমার জন্য পিয়াজু,সিঙ্গারা-পুরি,আইসক্রিম কিছু না কিছু নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে। শুক্রবার দুপুরে জিলেপি নিয়ে আসতে হবে।মাসে একবার হলেও কম বেশি কেনাকাটা করে দিতে হবে।এই শর্তে যদি তুমি রাজি থাক তাহলেই তোমাকে আমি বিয়ে করব।” এসব মনে পড়াতেই খালিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।এসব তো দূরের কথা সে যে বউয়ের সাথে সকালে এক কাপ চা খাওয়ারও সময় পায় না।এসব ভাবতেই সে নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করালো। আজ আর তার ঘুম আসবে না।

এই সামান্য ইচ্ছেটুকু খালিদ পূরণ করতে পারছে না।পারবে কিভাবে!সে যে সামান্য একজন কাস্টমার সার্ভিস অফিসার (Customer Service Officer).সংক্ষেপে CSO. সে রোজ চারটা ত্রিশ মিনিটে অফিসে পৌঁছায়।টানা নয় ঘন্টা সেবা দিয়ে ফিরে আসে রাত দুইটার কাছাকাছি।ঘুম থেকে উঠে দুপুর বারোটা থেকে একটা নাগাদ।তারপর গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে আবার ছুটে অফিসে।ছুটির দিনেও অফিসে গিয়ে সেবা দেয় কিছু বাড়তি টাকার আশায়। শুক্রবার তার ছুটির দিন নয়।মাঝেমধ্যেই ঘুমের জন্য জুম্মাও পড়তে পারে না।এই সামান্য বেতনে দুজন মানুষের খাওয়া খরচই মেটানোই প্রায় অসম্ভব সেখানে বউকে কেনাকাটা করে দিবে কিভাবে?শেষ কবে কেনাকাটা করেছে মনে নাই।অভাবের বেড়াজালে তাদের নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে। উত্তরার কোন এক ফ্ল্যাটে কারো সাবলেট হয়ে বাস করছে।

ফজরের নামাজ পড়ে ছবি বেলকুনির গ্রিল ধরে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ গলির সরু রাস্তার কয়েকজন মানুষের দিকে থাকলেও মন পড়ে রয়েছে স্বামীর বেতনের দিকে।সে মনে মনে হিসেব করে নিচ্ছে আগামী এক মাস কিভাবে এই সামান্য টাকা দিয়ে চলে যাওয়া যাবে।

বাসা ভাড়া ৪০০০ টাকা,২৫ কেজি চালের বস্তা ৯০০ টাকা, স্বামীর যাতায়াত আর হাত খরচ ২৬০০টাকা।মোট আবশ্যিক খরচ ৭৫০০ টাকা।বাকি থাকে ৩৫০০ টাকা।এই টাকা দিয়ে সারা মাসের কাঁচা তরকারি,মাছ, সয়াবিন,তেল,পেঁয়াজ, হলুদ, রশুন… না না রশুন আর হলুদ না হলেও তরকারি রান্না করা চলে।কিন্তু কাঁচা মরিচ, গুড়ো মরিচ,তেল,মাছ এসব তো লাগবেই।নিজের স্নোটাও শেষ। থাক এই মাসে আর কিনব না।সারাদিন তো বাসায়ই থাকি।বরং ওর জন্য একটা শেভিং ক্রিম কিনে নিব।রোজ ঘামে ভেজা শার্ট ধুয়ে দিতে হয়।ডিটারজেন্টও শেষ।এক মাসের ডিটারজেন্ট আর সাবানও লাগবে।এমন কত কিছুই সে একমনে ভাবছে।

এমন সময় খালিদ এসে পিছন থেকে ছবিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার বউটা এই সাত সকালে বাইরের দিকে তাকিয়ে কি দেখছে হুম? ছবি একটু বিরক্ত হয়ে বলল, তোমার মাথা আর আমার মন্ডু দেখছি।পরক্ষণেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো।খালিদও নাছোড়বান্দা। পিছন পিছন চলে গেল।ছবি বিছানা গুছিয়ে নিচ্ছে এমন সময় খালিদ কাঁথাটা টেনে ধরে বলল,গতরাতে তোমার চোখের পানিতে শহরের সব কিছু যে বানের জলের মতো ভেসে গেল সেই খেয়ালটা কি তোমার আছে? ছবি চোখ বড় বড় করে বলল,

-কোন শহর শুনি?
-কেন আমার শহর!
-এই সাহিত্যক কথাবার্তা বাদ দিয়ে বল,এত সকাল সকাল কেন উঠছো আজ?
-ঘুমাই আর অফিস করি।মাঝে কোন সময়ই পাই না।তাই ভাবলাম আজ একটু কম ঘুমিয়ে বউটাকে সময় দেই।
ছবির ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা দেখা দিলেও মুখে বলল,হু উদ্ধার করে ফেলছ আমাকে। এই অভিনয়টুকু খালিদের চোখ এড়িয়ে গেল না।সে ছবিকে এক টানে কোলের ভিতর নিয়ে এসে বলল,

-আমার পাগলি বউটা যে গত রাতে আমাকে মোতের চুরানি দিল না তার কারণটা কি আমি জানতে পারি? ছবি লজ্জা মুখে সত্য স্বীকার করে বলল,

-ভাবলাম অফিসে কাস্টমারদের ঝাড়ি খাও আবার বাসায় যদি আমিও ঝাড়ি দেই কেমন অমানবিক হয়ে যায় না?তাই একদিন ছাড় দিলাম আর কি!
-বাব্বাহ! এত বোঝে আমার বউটা!
-হু বুঝিতো।
-কিন্তু তোমার রাগি মুখটাই আমার বেশি ভালো লাগে? ছবি এবার খালিদের দিকে ফিরে চোখ গরম করে বলল,
-রাগব নাকি আবার?
-না না থাক।এখন বল,সকালের নাস্তার জন্য কি আছে?
-বাসি তরকারি।আর কিছইু নাই।
-খাব কি এখন?
-একটু আটা আছে।৪-৫ টা রুটি হবে। আমি বানিয়ে আনছি।এই বলে ছবি নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালে খালিদ আবার বলল, বউ চা কইরতো।

ছবি করুন দৃষ্টিতে খালিদের দিকে তাকাতেই খালিদ তার চোখের ভাষা পড়ে ফেলল।অভিনয় করে বলল, দুধ চা সাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তুমি রঙ চা করে আন। ছবি জানে খালিদ রঙ চা পছন্দ করে না।তাই সহজেই এই অভিনয়টুকু ধরে ফেলল।কিন্তু না বোঝার ভান করে মন খারাপের ডালি নিয়ে কিচেনে চলে গেল।

ছবি কিচেনে চলে গেলে খালিদ হাঁক দিয়ে বলল, বউ,বিয়ের পর হাতে গোনা দুই এক দিন বাজার করছি।আর এত দিন তো তুমিই করলা তাই ভাবছি আজ আমিই বাজারে যাব। ছবি সেখান থেকেই উত্তর দিল, কোন দরকার নাই।প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে আনবা হিসেব ছাড়া। পরে মাসের শেষে না খেয়ে থাকি আর কি!গেলে দুজন এক সাথেই যাব। খালিদ বউয়ের কথা মেনে নিয়ে কোন উত্তর দিল না।নাস্তা করতে করতে হঠাৎ খালিদের চোখ মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।বলল,বউ গতকাল যেই প্যান্টটা পড়ছিলাম আন তো ওইটা।

-কেন?
-আরে তোমারে বলছিলাম না মনিরের কাছে দুই হাজার টাকা পাই।বিয়ের আগে নিছিল যে।আমিতো ওইটা কুঋণ হিসেবেই ধরে নিছিলাম।কিন্তু গতকাল দিয়ে দিল।

-আল্লাহ তাকে সুমতি দিছে।
-হ বউ।ভাবছি তোমারে একটা শাড়ি কিনে দিব।
-গতকাল মা যে তোমাকে ফোন দিছিল ধর নাই কেনো?
-ফোন তো লকারে ছিল।
-তোমাকে না পেয়ে আমাকে ফোন দিছিল।
-কি বলল?ভালো আছে তো?
-না!বড় ভাই নাকি বলছে সে একা মায়ের সমস্ত খরচ বহন করতে পারবে না।তোমাকে কিছু বহন করতে বলে।

খালিদ শুকনো মুখে উত্তর দিল, আমরা তো নিজেরাই খুব অভাবে আছি।এই সামান্য টাকায় উত্তরা শহরে থাকা কত কঠিন! ছবি শাড়ির লোভ ছেড়ে বলল,এই দুই হাজার তো কুঋণ ছিল।তার আশা তো তোমার ছিল না,তাই না?আজ যখন পেয়েই গেছ মাকে না হয় পাঠিয়ে দাও।

খালিদ অবাক হয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে, কি দিয়েছি এই মেয়েটাকে আমি?অথচ সচ্ছল ঘরের মেয়ে হয়েও আমার অসচ্ছল ঘরে শত অভাবের মাঝে কেমন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।আকাঁ ছবির মতোই সুন্দরী মেয়ে ছবি। চাইলেই সচ্ছল পরিবারে বিয়ে করে ভালো থাকতে পারতো।কিন্তু আমাকেই বিয়ে করল।রাগী মেয়ের জেদ বলে কথা! তার ভাবনায় নাড়া দিয়ে ছবি বলল,অত চিন্তা কিসের।তোমার অবস্থা কি সারাজীবন এমন থাকবে নাকি?যখন ভালো কোন চাকরি পেয়ে যাবা তখন মাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসব। খালিদ সংক্ষেপে উত্তর দিল,আচ্ছা।

সকালের নাস্তা খেয়ে খালিদ ও ছবি বাজার করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো।ছবি গলির মোড়ের ভ্যান গাড়ি থেকে এক পোয়া ঢেড়শ,এক পোয়া কাঁচা মরিচ,এক ফালি মিষ্টি কুমড়ো কিনে নিল।এবার তারা মাছ বাজারে গেল।খালিদ জানে ছবি মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে চিংড়ি মাছ খেতে খুব ভালোবাসে।খালিদ প্রথমেই চিংড়ি মাছ দাম করল।দাম শুনে ছবি বলল,এই মাছ কিনতে হবে না।চল তেলাপিয়া মাছ কিনি।খালিদ এবার চোখ গরম করে ছবির দিকে তাকালো।ছবি আর বাঁধা দিল না।খালিদ চিংড়ি মাছ কিনেই ছাড়লো। আর ছবি মনে মনে ভাবছে, এই হারামিটারে না আনলেই ভালো হতো। সবশেষে মুদি দোকান থেকে ২৫ কেজির এক বস্তা চাল,এক কেজি ডাল,দুই কেজি আলু,এক কেজি পেয়াজ আর টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনে একটা রিকশা করে বাসায় ফিরে আসল।

দুপুরের খাওয়ার সময় যখন খালিদ বলল,”বউ আর ইট্টু ঝোল দাও” তখন ছবি রাজ্যের রাগ আর বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কথা শুনে কেউ বলবে তুমি কল সেন্টারে চাকরি কর? খালিদ তার কথায় আঞ্চলিকতার সব ভাব ঢেলে দিয়ে আবার বলল,বউ দিনে নয় ঘন্টা তো শুুদ্ধ ভাষায় পকপক করিই।বাসায় আইয়া যদি মায়ের ভাষায় ইট্টু কতা কইতে না পারি কেমন যেন দম বন্ধ লাগে। ছবি আর কিছুই বলল না।

ভাতঘুম দিয়ে ৩:৫০ এর দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে খালিদ ছবিকে বলল,ভাড়ার টাকা দাও।
ছবি ১০০ টাকা বের করে দিলে খালিদ বলে, ১০০ টাকা লাগবে না। তুমি ৫০ টাকা দাও। যাতায়াত ভাড়া আসতে যেতে ১০ টাকা। বাকি ৪০ টাকা থেকে কাস্টমার গালি দিলে একটা সিগারেট খাব।আর বাকি টাকা দিয়ে ৫-৬ টা পুরি খাব ক্ষুধার জালা সহ্য করতে না পারলে। ছবি কিছুই বলতে পারছে না।স্বামীর চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। এই মুহুর্তে ছবি সিদ্ধান্ত নিল সাবলেট আপুরা পুজোর ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসলে টিউশনির বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। দুই তিনটা টিউশনি করতে পারলে কিছুটা হলেও সংসারের অবস্থা পরিবর্তন হবে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত