শুভ্রর মধ্যে একজন প্রেমিকের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কেবল আমিই তার অপ্রেমিকা। প্রতিটা সকালে সে ঘুম থেকে উঠেই আমাকে good morning বলে টেক্সট করবে। কিন্তু দুপুর বারোটার পর সেই টেক্সটের রিপ্লাইয়ে good noon বলা ছাড়া আমার আর উপায় থাকে না। কারন শুভ্রর সকাল দশটায় হলেও আমাকে সকাল সাতটা থেকেই প্রাইভেট ক্লাসে ছুটতে হয়। ক্লাস প্রাইভেট শেষ করে প্রতিদিন বারোটার পরেই আমার অবসর। যেদিন রাতের চ্যাটিং এ শুভ্র পুরোপুরি রোমান্টিক থাকে ঠিক পরের দিনটায়ই আমার ক্লাস টেস্ট থাকতেই হয়। অগত্যা তাকে good night বলে আমি বইয়ের পৃষ্ঠাতেই মুখ গুঁজে থাকি। অথচ শুভ্রকে সময় দেয়াটা আমার উচিত ছিল।
বিকেলে সব প্রেমিক-প্রেমিকারা যখন জুটি বেঁধে ফুসকার দোকানে ভিড় জমায় তখন আমিও শুভ্রর সাথে এক কোনে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাই। সব কিছু ঠিকঠাকই থাকে। কিন্তু যখনি সে ভালোবেসে একটা ফুসকা নিজ হাতে আমার মুখে পুরে দেয় তখনি সেটা আমার খাদ্যনালী মিস করে শ্বাসনালীতে চলে যায়। বেদম কাশাকাশিতে নাক চোখের জল এক হয়ে যায় আর চেহারাটা হয়ে ওঠে টকটকে লাল। বেচারা শুভ্র তখন কি করবে বুঝতে না পেরে দৌঁড়ে পানির বোতলটা নিয়ে এসে সামনে ধরে। সেটা নিতে গিয়েও আমার হাত কাঁপে। ফসকে পড়েও যায় কখনো কখনো।
এক বসন্তে সে আবদার করেছিল আমি যেনো লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে তার সাথে রিকশা ভ্রমন করি। সকাল থেকে আমার শাড়ি পড়ার তোড়জোড় শুরু হল। শুভ্রও তার সব টিউশন একদিনের জন্য বন্ধ করে দিল। তবু এত আয়োজন করেও সেদিন আর আমাদের বেড়ানো হলো না। কারন বহুবারের চেষ্টাতেও আমি শাড়িটা পড়তে পারিনি। অথচ শাড়িটা পড়া আমার উচিত ছিল।
এক রাতে চ্যাটিং করতে করতে চোখে অনেকটাই ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছিল। এরমধ্যে শুভ্র টেক্সট করল, “তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। বাসার সামনে আসি? একবার শুধু বারান্দায় দাঁড়াবে। প্লিজ!” ঘুম আমার চোখে এতই প্রবল ছিল যে ও কি লিখেছে না দেখেই কোনমতে “হুম” লিখে দিলাম। তারপরই মোবাইল হাতে নিয়েই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। সকালে যখন ঘুম ভাঙল হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি একশ চারটা মিসড কল শুভ্রর নাম্বার থেকে। সেই সাথে অনেকগুলো মেসেজ। ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই কিচ্ছু টের পাই নি। মেসেজগুলো পড়ার পর ওকে আর কল ব্যাক করার সাহস আমার হলো না। শুভ্র সারাটা রাত আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল আর আমি কিনা শান্তিতে ঘুমিয়েছি!
আসলে শুভ্রর সাথে আমার কোন কিছুতে মিল নেই। সে যদি হয় পুষ্পশোভিত বসন্ত তবে আমি পুষ্পশূন্য রিক্ত শীত। সে যদি হয় উত্তর মেরু তবে আমি দক্ষিন। সবকিছুতে আমরা বিপরীত। শুধু একটা বিষয়েই বোধহয় মিল আছে। আর সেটা হল আমরা দু’জনেই পরস্পরকে ভালোবাসি। হাজারটা অমিল থাকার পরও এই একটা মিলই আমাদের একসাথে নির্বিঘ্নে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু নির্বিঘ্ন শব্দটা প্রেমের সাথে যায় না। হঠাৎ এক সময় আমার বাবা উপলব্ধি করলেন, মেয়ে বড় হয়ে গেছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে।
আমার বাবা কথায় এবং কাজে একজন সুশীল ব্যক্তি। তিনি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। পরিবারের কর্তা তিনি। যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবারের সকল সদস্যের মতাতমত জেনে নেওয়াটা তার অভ্যাস। কিন্তু ওই জেনে নেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মতামত সবাই দিতে পারে তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাবাই নিয়ে থাকেন। আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে যায় আগেই। মতামত নেওয়াটা সিদ্ধান্ত জানানোর পূর্বের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কেননা মতামতের ছিটেফোঁটাও সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকে না। তাই বাবা যখনই পরিবারের সবাইকে কোন বিষয়ে মতামত দিতে বলেন তখন সবাই খুব আগ্রহের সাথে নিজেদের কথা বলে।
যদিও তারা জানে এগুলো স্রেফ বলার জন্য বলা। এরপর আরও আগ্রহের সাথে বাবার সিদ্ধান্ত শোনে। তারপর যে যার কাজে চলে যায়। কারও কোন অভিযোগ নেই কোন আফসোসও নেই। কারন আমরা সুশীল। সবকিছু হাসিমুখে বরন করতে পারি। তারচেয়েও বড় কথা আমার বাবার সিদ্ধান্ত আমাদের মানতেই হয়। এর বাইরে যাওয়ার কথা আমার দাদাও ভাবেন না আর আমার বড় ভাইও নয়। মা তো অবশ্যই না। আমার বিয়ের ব্যাপারেও এই একই ব্যাপার ঘটল। বাবা আমার কাছে জানতে চাইলেন আমার পছন্দের কোন ছেলে আছে কিনা। আমি জানতাম কোন লাভ হবে না। তবু মনে ক্ষীন আশা নিয়ে শুভ্রর কথা বললাম। আমার সুশীল বাবা এবারও পাতানো ম্যাচ খেললেন। তার বন্ধুর ছেলের সাথে শিক্ষায় যোগ্যতায় আচরনে শুভ্রর তুলনা করে তিনি হাসিমুখে শুভ্রকে নিকৃষ্ট প্রমান করে ওকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলেন।
বাবা তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। তার বন্ধুর বিদেশ ফেরত একমাত্র ছেলের সাথেই আমার বিয়ে দেবেন। আমি পাথরের মূর্তি হয়ে সবকিছু শুনলাম। সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সাধ্য আমার ছিল না। আমার বিয়ের কথা শুনে শুভ্র চূড়ান্ত পাগলামী করল। সে একসাথে কয়েকপাতা স্লিপিং পিল খেয়ে নিল। কিন্তু ওর রুম মেটরা দেখে ফেলেছিল বলে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে যাত্রা শুভ্র বেঁচে গিয়েছিল। সেদিন অপ্রেমিকা হয়েও আমি প্রেমিকার মত একটা কাজ করেছিলাম। গাঁয়ে হলুদের আসর থেকে পালিয়ে ওকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওর কেবিন পর্যন্ত যাওয়ার সাহস আমার হয় নি। কেবিনের বাইরে মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থেকেই চলে এসেছিলাম। অথচ ওর কাছে যাওয়াটা আমার উচিত ছিল।
বাসায় ফিরে ঠিক সময়েই হলুদের মঞ্চে উঠলাম। কেউ কিছু জানতেও পারল না। বিয়ের দিন রাতে আমি যখন বউ সেজে বসে ছিলাম, সবাই তখন বরকে নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততা গলে শুভ্র আমার ঘরে ঢুকে পড়েছিল। অনেক অনুরোধ করেছিল। আমাকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল। আমি তখনও পাথরের মূর্তির মত বসে ছিলাম। শুভ্র আমার সামনে বসে বারংবার অশ্রুপাত করেছে।
কিন্তু পাথর মানবীর হৃদয় গলে নি। নিষ্ঠুর হৃদয়হীনা প্রতারক বিশ্বাসঘাতক এমন আরও অনেক শব্দের বানে আমাকে বিদ্ধ করে শুভ্র সেদিন চলে যায়। আমি ওকে পিছু ডাকতে পারি না। বলতে পারি না, “শুভ্র, আমাকে নিয়ে যাও। এই পরিবার নামক কারাগার থেকে মুক্ত করে আমাকে নিয়ে যাও।” আমি বলতে পারিনি। অথচ কিছু বলাটা আমার উচিত ছিল। বিয়ে হয়ে যায় আমার। একটা অপরিচিত মানুষের হাত ধরে একটা অপরিচিত পৃথিবীতে অপরিচিত এক কারাগারে আবারও বন্দি হয়ে যাই আমি। আমার বন্দি জীবনের যেন কোন শেষ নেই আজ বাচ্চার স্কুলে প্যারেন্টস ডের ফাংশানে এসেছি। কাছেই কেউ নাম ধরে ডাকল।
: নীলি? ফিরে তাকাতেই দেখলাম শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছোট্ট মিষ্টি মেয়ের ছোট ছোট আঙুল জড়িয়ে আছে ওর হাতের আঙুলে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। যখনি মনে হচ্ছিল আমার বুকের মধ্যে খুব গভীরে কোথাও ব্যথা অনুভূত হচ্ছে তখনি আমার ছয় বছর বয়সী ছেলেটা আমাকে ডাকলো।
–আম্মু, পানি খাব।
আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ওয়াটার বটল নিয়ে ওকে পানি খাওয়ালাম। ততক্ষনে শুভ্র এগিয়ে এল। আমি ওর মুখোমুখি দাঁড়ালাম। আজ আট বছর পর শুভ্রর সাথে দেখা। কিন্তু স্যুটেড ব্যুটেড এই শুভ্রকে আমি চিনি না। বিয়ের পরেও আমি শুভ্রর খোঁজ নিতাম। ওর এক বন্ধুর ফোন নাম্বার ছিল আমার কাছে। তার কাছেই শুনেছিলাম ও নাকি সিগারেটের ধোঁয়ায় হারিয়ে গেছে। কয়েক মাস পরে দূর থেকে লুকিয়ে দেখেছিলাম ওকে। মাথা ভর্তি উষ্কখুস্ক চুল, মুখ ভর্তি দাড়ি। কি বীভৎস লাগছিল ওকে। আমি সেদিনও পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। আড়াল ভেঙে ওর কাছে যেতে পারিনি। পারিনি সব বাঁধা সব ব্যবধান ভুলে ওকে জড়িয়ে ধরতে। আমার ভালোবাসা দিয়ে ওর সব দীনতা ঘুচিয়ে দিতে পারিনি আমি। অথচ সেটা করাই আমার উচিত ছিল।
দূর থেকেই খোঁজ নিতাম ওর। কিন্তু একদিন সেই বন্ধুটির ফোন বন্ধ পেলাম। তারপর আর কখনো সেই বন্ধুটির সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। আমার স্বামী বদলি হয়ে খুলনায় চলে এলেন। সেই থেকে শুভ্রকে আমি পুরোপুরি হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু আট বছর আগে নীলির চলে যাওয়াতে বিধ্বস্ত সেই শুভ্রর সাথে এই শুভ্রর কোন মিল নেই। সে কি করে নিজেকে এতটা সামলে নিল? ওই হাসিমুখে কোন প্রতিহিংসা তো চোখে পড়ছে না। তার কি আজ আর নীলির উপর কোন অভিযোগ নেই? তবে কি আমার পরে শুভ্রর জীবনে কোন সত্যিকার প্রেমিকা এসেছিল? যে তাকে এমন করে সাজিয়ে ফেলেছে। কিন্তু কই আমি তো আজও সামলে নিতে পারলাম না নিজেকে। আজও আমি সংসারে পুরোপুরি মন বসাতে পারলাম না। কথায় কথায় স্বামী নামক মানুষটার সাথে ঝগড়া হয়। যদিও আমি চুপ করেই থাকি। তবু আজ পর্যন্ত কোন কাজে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারিনি। আজ শুভ্রর সাথে দেখা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি নিজেকে অপরাধী ভাবতাম। মনে হত শুভ্রর জীবনটা নষ্ট করার জন্য আমিই দায়ী। কিন্তু কে বলেছে শুভ্র ভালো নেই? সে তো দিব্যি ভালো আছে।
: বাহ্! এটা বুঝি তোমার ছেলে? বেশ সুন্দর দেখতে।
শুভ্রর কন্ঠে কেমন একটা সুখী সুখী ভাব। আমারও বলা উচিত ছিল, তোমার মেয়েটাও খুব মিষ্টি দেখতে। কিন্তু আমি বলতে পারলাম না। অবশ্য শুভ্র তাতে কিছু মনে করল না। ও নিজের মনেই কথা বলে চলল।
: পড়ালেখায় কেমন তোমার ছেলে? আমার মেয়েটা কিন্তু দারুন ট্যালেন্টেড। এ বছরই স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। অবশ্য চৈতি ওকে বাসায় পড়ানো শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। বুঝলে, নীলি? মেয়ে আমার বাবা মা বলার আগেই অ আ পড়তে শিখেছে। নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে ওঠে শুভ্র। ওর চোখের সামনে একটা মানুষ যে ধীরে ধীরে পাথরের মূর্তি হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার দৃষ্টি নেই। তাহলে নিশ্চয়ই বলত না।
: অবশ্য এতে সব ক্রেডিট চৈতির। আসলে আমার জীবনে ভালো যা কিছু হয়েছে সবই চৈতির জন্য। দারুন কেয়ারিং স্বভাবের মেয়ে। আমার জীবনটা পুরো বদলে দিয়েছে।
শুভ্র বরাবরই একজন আদর্শ প্রেমিক ছিল। হয়ত আজও আছে। চৈতিও হয়ত একজন আদর্শ প্রেমিকা। আদর্শ স্ত্রীও বটে। স্বামীর জীবন থেকে প্রাক্তনকে মুছে দিয়েছে। কিন্তু এ কি পরিহাস চলছে? আমি সেদিনও এতটা কষ্ট পাই নি যেদিন শুভ্র আমাকে নিষ্ঠুর হৃদয়হীনা প্রভৃতি আরও অপবাদ দিয়েছিল। অথচ আজকে সে কি এমন হৃদয়বানের মত আচরন করছে যে আমার হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে? এখন পর্যন্ত আমি ওর সাথে একটা কথাও বলিনি তবু ওর কথার বান থামছে না। আমাকে ব্যথা দেবে বলেই কি জেনে শুনে এটা করছে ও? প্রতিশোধ নিচ্ছে? যন্ত্রনার ষোলকলা পূর্ন করতেই ও হয়ত কথাটা বলেই ফেলল।
: তুমি এখানেই দাঁড়াও, নীলি। আমি চৈতিকে নিয়ে আসছি। ও এখানেই আছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো। ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই তোমার। শুভ্র চলে গেল চৈতিকে ডাকতে। ও কি পরিচয় দেবে আমার? নিশ্চয়ই বলবে,
: নীলি,এই আমার স্ত্রী চৈতি। আর চৈতি, তোমাকে বলেছিলাম না নীলির কথা? এই আমার সেই অপ্রেমিকা। হয়তো চৈতি একটু বাঁকা হেসে বলবে,
–ওহ্! তাহলে এর জন্যই তুমি দেবদাস সেজেছিলে? শুভ্র লজ্জা পেয়ে হাসবে। সেই হাসির মানে, “কতটা বোকা ছিলাম আমি যে একটা মেয়ের জন্য…” আমি আর ভাবতে পারছি না। আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করাও আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি ছেলেটার হাত ধরে দ্রুত পায়ে গেটের দিকে চললাম। ছেলে আপত্তি জানালো।
–মা, ফাংশান তো শেষ হয়নি। আমরা এখনই যাচ্ছি কেন?
আমি ওর প্রশ্নের কোন জবাব দিলাম না। আমার পদক্ষেপ আরও দ্রুততর হলো। আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে গিয়ে ছোট ছেলেটাকে রীতিমত দৌঁড়াতে হচ্ছে।আমার হয়ত একটু আস্তে হাঁটা উচিত। কিন্তু আমি সেটা করতে পারলাম না। জীবনে এমন অনেক কিছুই আমি করতে পারিনি যেটা করা আমার উচিত ছিল। হয়ত এজন্যই আমি একজন অপ্রেমিকা হয়েই রয়ে গেলাম।