মাইকিং

মাইকিং

সকালে লেপের মধ্যে শুয়ে আছি। এমন সময় শুনতে পেলাম মাইকে একটা মেয়ে চিৎকার করে বলছে ” রিফাত তুমি যেখানে থাকো না কেন আমার কাছে ফিরে এসো জান। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না”। মনে মনে ভাবলাম হয়তো ভুল শুনছি। তাই বিছানার সাইডে রাখা ছোটো ভাইয়ের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় একটা বারি দিলাম। ও’মাগো করে চিল্লাইয়া উঠে বুঝলাম আমি ঘুমের মধ্যে নাই। বাস্তবে আছি। কপালে ছোটখাটো একটা শিং গজিয়েছে। সত্যি সত্যি মাইকিং হচ্ছে।

লেপ এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে বারান্দায় ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি হ্যাঁ সত্যি সত্যি একটা মেয়ে আমার জন্য সকাল সকাল মাইক নিয়ে রিকশায় রাস্তায় ঘুরছে। আর এপাশ ওপাশে তাকিয়ে আমাকে খুঁজছে। সোজা বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম। দাঁতের উপরে নিচে ভালো ভাবে ধৌতকরণ করে আয়নার নিজের দাঁতের দিকে তাকিয়ে বললাম। এবার শুরু হলো আমার কাছে আসার গল্প। তারপর নতুন কেনা ফেস ওয়াশ পাঁচবার মুখে লাগিয়ে সোজা আব্বাহুজুরের কাছে ছুটে গেলাম।

আব্বাহুজুর ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। আব্বাকে দেখেই বললাম ” আপনি আমাকে এতদিন কি কইছেন? আমি অকর্মা? আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। দেখছেন আজ কি হইছে? এলাকায় কখনো এমন হইতে দেখছেন আব্বা? দেখেন আমার জন্য এক মেয়ে পথে নেমে গেছে। সেইদিন আপনার পায়ে ধরছিলাম একটা ফেস ওয়াশ কিনে দেওয়ার জন্য দেননাই আপনি। বরং কি কইছিলেন আমাকে? কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না? কিন্তু আব্বা আপনি ভুলে গেছেন কয়লার মধ্যে সোনা থাকে। ছোটভাই পাশেই ছিল। সে বললো ” ভাইয়া কয়লার মধ্যে তো হিরা থাকে”। ওরে একটা ধমক দিয়ে কইলাম আমরা ছোটবেলায় বইয়ে সোনাই পড়ছি। আর দেখতেছ না বড়রা কথা বলতেছে। এর মধ্যে কথা বইলো না।

আব্বাহুজুর মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে কইলেন “তুই কি শিওর মাইয়াডা তোর জন্য মাইকিং করতেছে”? আব্বা আপনি ভুলে গেছেন এই পাড়ায় রিফাত নামে দুইজন আছে। একটা আপনার গুনধর বড় ছেলে আর একটা আকন্দবাড়ির পিচ্চি”। আব্বা আমি আসি। আমার জন্য দোয়া করবেন।

বাসা থেকে বের হবো এমন সময় পিছন থেকে কে যেন হাত টেনে ধরলো। তাকিয়ে দেখি আব্বা। আব্বা আমার হাত ছাড়েন। আব্বা হাত ছাড়ে না৷ আব্বা আপনি কি চান? আমি বিয়ে করি না? সারাজীবন চিরকুমার থাকি? আপনি কখনো আমার কথা ভাবছেন আব্বা? পার্কে প্রেম করতে গেছি আপনি বাঁধা দিছেন। রিকশায় প্রেম করতে গেছি আপনি বাঁধা দিছেন। সিনেমা হলে প্রেম করতে গেছি তাতেও আপনি বাঁধা দিছেন আব্বা। আব্বা আমি বিয়ে করতে চাই আব্বা। এমন সময় দেখি আব্বার চোখে জল। আব্বা কাঁদতে কাঁদতে বললেন ” যা রিফাত যা, এই মেয়ের থেকে বেশি ভালবাসেতে তোকে কেউ পারবে না। যা রিফাত যা, জিলে আপনে জিন্দেগী”।আব্বা যে আমার এতো রোমান্টিক আমি জীবনে জানিনা। আব্বা আমায় ডিডিএলজের ডায়লগ দেয়।

সোজা দৌড়ে গিয়ে মেয়েটার রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম” আমি এসে গেছি জান। কেউ আমাকে আর আটকাতে পারবে না। এখন থেকে আমি তোমার আর তুমি আমার। হঠাৎ দেখি রিকশাওয়ালা মামার ফোন বাজে ” ও বন্ধু লাল গুলাবী, ও বন্ধু লাল গুলাবী কই রইলা রে,এসো, এসো বুকে রাখবো তোরে । মেয়েটা রেগে গিয়ে রিকশাওয়ালা মামাকে বললো এই মামা এমন উদ্ভট রিংটোন বন্ধ করেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো ” আর আপনি কে?

আমি আকাশ থেকে পড়ার মতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম আমি কে মানে? আমি রিফাত। তোমার জান। যাকে পাওয়ায় জন্য তুমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছ। মেয়েটা হেসে বললো ” আপনার ভুল হচ্ছে মিঃ। আমি আসলে আমার বিড়াল রিফাত কে খুঁজছি। পাশের বাসার কুদ্দসের বিড়াল জরিনার সাথে ওকে মিসতে দেইনি বলে ও রাগ করে কাল বাসা থেকে চলে গেছে। তাই ওকে খুঁজতে মাইকিং করছি। আর আমার স্বামী আছে।

তীব্র শীতের মধ্যে কেউ লেপ কাঁথা কেড়ে নিলে যেমন হয়। আমার অবস্থা ঠিক তেমন। খুব অসহায় মনে হলো নিজেকে। এই মুখ আমি কিভাবে দেখাব আব্বাকে? তাই মুখে কয়লা মেখে আব্বার সামনে হাজির হলাম। আব্বা আমাকে দেখে বলে ” কে ভাই আপনি”? আম্মাকে বললাম ” যখন দুঃসময় আসে তখন নিজের বাপ ও চিনতে পারে না”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত