ভাসুর মশাই

ভাসুর মশাই

সেদিন প্রেমিকের সঙ্গে কি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চ‍্যাটিং করছিলাম।সে বললো তার নাকি খুব মাথা যন্ত্রণা করছে তাই কিছু বলতে চাইলে তার রবি নাম্বারে ফোন করে বলতে। আমি সাথে সাথে রবি নাম্বারে কল দিলাম। কিছুক্ষণ কল হওয়ার পর রিসিভ হতেই আমি হ‍্যালো বললাম ঠিকই কিন্তু ওপাশ থেকে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উত্তর আসলো, হুম। ভাবলাম মাথা হয়তো বেশি যন্ত্রণা করছে তাই বেশি কথা বলছেনা। আমিও বেশ জিজ্ঞেস করলাম, মাথা কি বেশি যন্ত্রণা করছে? তিনি ধীরে ধীরে বল্লেন, না।

-এখনই তো বললে মাথা ব্যাথা করছে।
-ছিল। এখন নাই।

এইবার গলাটা কেমন লাগলো। জিজ্ঞেস করলাম, গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলাটা আরেকটু বিকৃত করে বললেন, খাচ্ছি।

বোকা আমি তখনও বুঝতে না পেরে ওহ্ বলে হাসতে হাসতে যখন ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ভলিউম বাড়াতে সামনে আনলাম তখন ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠা নাম্বারটা চোখে পড়তেই আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা প্রচন্ড শীতল স্রোত বয়ে গেল। মুখের হাসি হাওয়া হয়ে গেছে ততক্ষনে।তাড়াহুড়োয় প্রেমিকের বদলে তার দজ্জাল টাইপ বড় ভাইকে ফোন দিয়ে ফেলেছি আমি। আর তিনিও ঠিকই বুঝতে পেরেছেন আমি আসলে তার গুণোধর ছোট ভাইটিকে ভেবেই কথা বলছি।আসলে দুই ভাইয়ের গলার আওয়াজ প্রায় কাছাকাছি।তাই তিনিও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ছোট ভাই প্রেম করছে কিনা তা হাতেনাতে ধরতে ছোট ভাই সেজেই কথা বলছেন। কিন্তু তিনি সের হলে, আমিও সোয়া সের ।ভাগ‍্যিস জান, বাবু, কলিজা, পিত্ত ডেকে বসিনি।এখন কল কাটলে ঠিক বুঝে ফেলবেন ঘাপলা আছে।

কানে নিয়ে বুকের ভিতরের ভয়ের দুগদুগ শব্দ চেপে স্বাভাবিক ভাবে প্রেমিকের বান্ধবী সেজে দু’চারটা এসাইনমেন্টৈর কথা বলে অভিনয় চালিয়ে গেলাম।আর তিনিও সুন্দরমতো নিজের ছোট ভাই সেজে কথা বলে গেলেন। আমি যে ভুলে তাকে ফোন দিয়েছি তা সংশোধনও করে দিলেন না।পুরাই মজা নিলেন। কোনোরকমে কথা শেষ করে প্রেমিককে যখন জানালাম যে এইমাত্র তাকে ভেবে তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে ফেলেছি তখন সে পারে তো আমাকে তুলে আছাড় মারে অবস্থা।বলে, এতোদিনেও কণ্ঠস্বর চেনোনা! আর তুমি পেলে কি করে ঐ নাম্বার? আমি তো কোনদিন ভাইয়ার ফোন থেকে কথা বলিনি তোমার সাথে।

আসলে ভাইয়ার সাথে আমার ফেক আইডিতে কানেক্টেড। উনি একবার শীত বস্ত্র বিতরনের জন্য তার সংগঠনের তরফ থেকে নাম্বার দিয়েছিলেন। আমি সেখান থেকে টুকে রেখেছিলাম। কিন্তু দুটো নাম্বারই এনক্রিপ্ট করে একই নামে সেভ করে রেখেছিলাম।পরে আর ঠিক করা হয়নি। কিন্তু এখন এই বিশেষ পন্ডিতির কথা জানানোর সাহস না দেখিয়ে ঢোক গিলে চুপ করে গেলাম। সে আবার ধমকে উঠলো, জানো ভাইয়ার ফোনে ট্রু কলার আছে।কি জানি কি যে দেখছে! আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, দেখলোই বা। আমি তো ভালো কথাই বলেছি। তোমাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি‌ তোমার বান্ধবী ।

-তুমি তুমি করে কথা বলছো?
-হু।
-বাহহ।
-কেন ফ্রেন্ডরা কি তুমি করে বলতে পারেনা নাকি! আমি তো সবাইকেই তুমি করেই বলি।
-সবাই তো আর জানেনা তোমার মতো মানুষও আছে দুনিয়ায়।

এরপর আমরা বেশ কিছুদিন ভয়ে ছিলাম কবে জানি বড় ভাইয়া ধরে ফেলেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার তিনি ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। আমরা ভেবে নিয়েছিলাম তার সন্দেহ থেকে বেঁচে গেছি। কিন্তু তিনি যে হাতেনাতে ধরবেন বলে তক্কে তক্কে আছেন তা কে জানতো।

সেদিন শাড়ি পড়ে সেজেগুজে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছি।ভাবলাম প্রেমিক পুরুষটি তো কখনো শাড়ি পড়ে দেখেনি। একবার ডেকে নেই।ম‍্যাসেজে ঠিকানা দিয়ে জলদি আসতে বলে আমি অধীর আগ্রহে বসে আছি। বান্ধবীরা বেশ দূরে ফটোশুটিং এ ব‍্যস্ত।বেশ খানিকক্ষণ পর ফোন থেকে চোখ তুলে দেখি বফের বাইক। খুশিতে লাফিয়ে উঠে পাশে তাকিয়ে চোখমুখ সাদা হয়ে গেল আমার। স্বয়ং ভাসুর মশাই দাঁড়িয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছেন।
আমি কি আর জানতাম বড় ভাইয়া ঢাকা থেকে কালকেই এসেছেন আর আজ আমার ম‍্যাসেজটা তার চোখেই পড়েছিল ।

আমি যখন ভালোরকম কট খেয়ে গেছি, বফ তখন বিকেলের সুখনিদ্রায় ব‍্যাস্ত। যেখানটায় তাকে আসতে বলেছিলাম সেখানে একা আমিই বসে আছি। বান্ধবীরা অনেক দূরে।আশেপাশে আর কোন মেয়ে নেই তাই ভাসুর মশায়ের আমাকে নিয়ে কোন সন্দেহও নেই। তিনি এগিয়ে আসছেন দেখে ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে শুঁটকি হয়ে যাচ্ছে।আজ আর রক্ষে নেই, যেই ডেঞ্জারাস বিবরণ শুনেছি ভাইয়ার । তিনি সামনে এসে চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন। দৌড়ে যে পালাবো সে উপায়ও নেই শাড়ি পায়ে বেধে পড়ে গেলে আর মুখ দেখানো যাবেনা। অগত্যা মাথা নিচু করে হাঁটু কাঁপাকাঁপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি শুধু বললেন, ছাগলটার দেখি চয়েস মন্দ না। কিন্তু তুমি কি দেখে ঐ রামছাগলটার কাছে পটে গেলে বলো দেখি!

আমি বিস্ময়ে, খুশিতে হড়বড় করে বলে ফেললাম, ও পটায়নিতো। আমি ওকে অনেক কষ্টে পটিয়েছি । কথাটা বলে ফেলে লজ্জায় মুখে হাত চেপে ধরেছি আর উনি হাসিতে ফেটে পড়ছেন। তারপর তিনি বান্ধবীদেরসহ আমাকে রেস্টুরেন্টে খাওয়ালেন, গল্প করলেন।আর বলে গেলেন ওনার বিয়েটা হয়ে গেলেই জলদি জলদি বাড়ির এই ছোট বউটাকেও নিয়ে যাবেন। সেই থেকে আমিও অপেক্ষায় আছি কবে ভাসুর বিয়ে করবে, তবে আমি ঐ কুম্ভকর্ণটার ঘাড় মটকাবো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত