নিলুফার হিসহিস করে তর্জনী আঙুল ঠোটে চাপে আর রায়হান চুপ হয়ে যায়! পাশেই মেয়েটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ডাক্তার দম্পতি তাদের তেরো বছরের মেয়ে তনুকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। চুলোগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে তার মুখের ওপর। নিলুফার চুলগুলো সরাতে গিয়ে হাত গুটিয়ে ফেলে। চুলের ফাঁকে উঁকি দেওয়া তনুর ঠোঁটে কামড়ের নীলচে দাগ নিলুফারের নিঃশ্বাসকে চেপে ধরে।মুখে ওড়না চেপে নিলুফার গুঙিয়ে গুঙিয়ে ওঠে।রায়হান ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে সিলিংয়ের দিকে। পাথর সে!অথচ পাথরের ভিতরেও ভাঙচুর হচ্ছে; তার সন্তান, তার সম্মান আর মেয়েটা ঘুম থেকে জেগে উঠেছে আর তার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ার্ত মুহুর্তগুলোও!
— এই যে এইখানে মা, এইখানেও..দেখ, দেখ মা, চুলগুলো এইভাবে ধরেছে, এইখানে কামড় দিয়েছে , জামা সরিয়ে দেখায় খামচের দাগ, নিলুফারের হাতটা টেনে নিয়ে তলপেটে রাখে, আরও নিচে নামাতে গিয়ে থেমে যায়, হাত কাঁপে, ঠোট কাঁপে সে মূর্ছা যায়! নিলুফার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে,তার ফুলটাকে দেখে। তার রক্তে মাংসে গড়া যে ফুলটা একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল কাল এক হায়েনা দুমড়েমুচড়ে সব পাপড়ি ছিড়েখুঁড়ে শেষ করে দিয়ে গেছে, সেসব নির্বাক হয়ে দেখে,” এমন কেন হবে!কেন আমার সন্তানের সাথেই হবে? প্রশ্নগুলো আছড়ে পড়ে আলোর দিকে উড়তে চাওয়া পিঁপড়ের মত। তারপর হাজারখানেক আর্তনাদ করতে চাওয়া মেয়েটিকে হিসহিস করে ঠোটে আঙুল চেপে তার বাবা মা বলল,”এসব কাউকে বলা যাবেনা মা, কখনোই না!”
তনু কাউকে বলেনি, যে মানুষটা এখন তার পাশে শোয় তাকেও না।স্পর্শ, কামনা, ভালোবাসা, চূড়ান্ত মুহুর্ত কি সব যা তা গা ঘিনঘিন ব্যাপার সব, সেসবও সে পাশের মানুষটাকে বুঝতে দেয়নি।তনু মুখ টিপে হাসে তারপর সেই তর্জনী আঙুল তার ঠোঁটে চেপে ধরে, খানিক পরে খিলখিলয়ে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে, কেউ জানেনি, সে ও না সেই হিসহিস শব্দটা সে আবার শুনল , যখন তার পিঠে কয়েকটা কিল, গালে দু,চারটা চর আর তলপেটে কয়েকটা লাথি পড়লো। তার শাশুড়ি হিসহিস করে ঠোঁটে আঙুল চেপে বলল,” কাউকে জানানো যাবেনা, তাহলে সম্মান যাবে.. তোমার! ”
এরপরে তনু সেই হিসহিস শব্দ আরও হাজার বার শুনেছে, তারপর আবার শুনলো যখন তার ছোট ননদ ফিরে এল স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে। এবার সবার সাথে তনুও হিসহিস করে মুখে আঙুল চেপে ইশারা করলো; আওয়াজ করা যাবেনা, উহুটুকুও না। তোমার সম্মান তোমার যোনিতে, তোমার স্তনে,তোমার কাপড়ে আর সবচেয়ে বেশী তোমার গলার স্বরে, আওয়াজ করা যাবেনা.. একটুও না, আর্তনাদও না আর প্রতিবাদ? মাথা দুলিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় সে।
ইট সুরকির গাথুনি, তর্জনী আঙুলের ইশারায় হিসহিস শব্দ বাতাসের সাথে অন্ধকারে মিশে নয়ত চার দেয়ালে পচে যায়, এমনইতো হয়। কি অদ্ভুত, দুটো স্লিপিং পিল, গভীর ঘুম আর হিসহিস শব্দ! তাহলে এই শব্দ কোথায় ঘুমন্ত তনুদের মগেজেও….