আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অতীব তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল! ঘটনা সাংঘাতিক!মস্ত একটা অপরাধ করে ফেলেছিলাম! ঘটনা হলো,এক বড় ভাই আমাকে একটা গোলাপ আর গানের একটা সিডি দিয়েছিলেন.. গান শুনতে ভালবাসতাম বলে কিছু চিন্তা না করেই মনের আনন্দে সেগুলি নিয়ে ধুমছে গান শোনা শুরু করছিলাম!আর গোলাপ টা পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম তাজা থাকবে বলে!বলাইবাহুল্য ওটাই আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ গোলাপ ছিল!
এত বড় অপরাধের শাস্তি হিসাবে বিয়ে টাই একমাত্র পথ ছিল! আমার বাবা অবশ্য মায়ের কথা খুব একটা শুনতেন না!মেয়ের প্রতি আহ্লাদ বেশিই ছিল!কিন্তু এই কথাটা কেন যেন শুনেছিলেন! ঘোষণা দিয়ে দিলেন মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দিবেন!এইবার মায়ের মন খারাপ!একটু শাসন করবে মেয়েকে তা না..বিয়ে দিয়ে দিবে!বাবার কথাই শেষ কথা..! তার কথার পর কারো কোন কথা চলে না!
তো যথারীতি ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে আসলো!বাবার প্রতি প্রচন্ড অভিমান বুকে চেপে শূন্য হৃদয়ে বসলাম ছেলেপক্ষের সামনে! তারা এসেছেন ৭ জন!ছেলে,তার বাবা-মা,ছেলের ফুফু,খালা আর দুইটা কাজিন!ছেলে দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর! বাবার মস্ত বিজনেস!ছেলে বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার! সোনায় সোহাগা! আমার ইন্টারভিউ চলছে!সুরা ফাতিহা পারি কিনা..রান্না জানি কিনা..ভবিষ্যতে আরো পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে কিনা!! আমি লক্ষী মেয়ের মত শেখানো বুলি আওরাচ্ছিলাম!মেয়ে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে!সবাই বলুন মাশাল্লাহ!!এবার ছেলে মেয়ে কথা বলবে!সবাই ডাইনিং টেবিলে আর আমরা সোফায়! ছেলে চুপ!আমিও চুপ!চুপচাপ… নীরবতা..! ছেলের কাজিনরা উঁকিঝুকি মারছে!গুটিগুটি পায়ে চলেই এল কাছে!এসেই বলল- ভাইয়া কিছু বলছ না কেন? এইবার মনে হয় তার জ্ঞান আসলো!সে গলা খাকরি দিয়ে কেন যেন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
:ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ট্রান্সলেট করো!
আমি তো অবাকই.. সাথে আমার চৌদ্দ গুষ্ঠিও! সাংঘাতিক অবাক হয়ে বললাম-জি??? তিনি তার চেয়েও দু গুন গলা চড়িয়ে বললেন- জানো?কি জানো না! চরম রাগান্বিত হলাম!ছাত্রী হিসাবে কখনোই খারাপ ছিলাম না!তাইবলে পাত্রী দেখার আসরে এমন প্রশ্ন? ট্রানস্লেট করলাম!ওদিকে ছেলে পক্ষের সবাই আর মেয়ে পক্ষের সবাই আমাদের ঘিরে ধরছে! ছেলের কাজিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললেন- সারাক্ষণ পড়াশোনা করে তো!পড়াশোনা ছাড়া মাথায় আর কিচ্ছু নেই! ছেলে এটা শুনে চরম রেগে গেল!মারমুখী হয়ে বলল- পড়াশোনা তুই করস..তোর বাপ করে..তোর পড়াশোনার মধ্যে আমি হাগি!! ছেলের ফুফু তাড়াহুড়ো করে বল্লেন – চরম দুষ্ট! সব জায়গায় দুষ্টুমি করার অভ্যাস! যা বোঝার আমি বুঝে গেছি!মনে মনে খুশিই হয়েছি! এবার বাপ কে টাইট দেওয়ার বুদ্ধি পেয়েছি!
ছেলেপক্ষ বিদায় নেবার পর বাপ কে সাফ জানিয়ে দিলাম ছেলে আমার পছন্দ হয়েছে!বিয়ে করলে এই ছেলেকেই করব!! শুনে বাবা মশাই আমতা আমতা শুরু করলেন! বললেন- ভেবে দেখি রে মা!আমি আগ্রহ করে বললাম- এত ভাবাভাবির কি আছে?সোনায় সোহাগা ছেলে!এমন ছেলে পাবা?বাবা গম্ভীরমুখে প্রস্থান করলেন! এদিকে পরদিন থেকে ছেলের বাড়ি থেকে ফোন!ছেলের বাবা মা আমার জন্যে পাগল!প্রতিদিন নিয়ম করে ফোন করে খোঁজ খবর নেন!মাঝে মাঝে রান্না করে আমার জন্য খাবার পাঠান! কিন্তু ছেলে আর ফোন দেয় না!প্রায় ১৫ দিন পর তাদের টনক নড়লো!ছেলে কে দিয়ে ফোন করালো!বোঝাই যাচ্ছিল আন্ডার প্রেশার! কাজিন রা কল দিয়ে ফোন ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে! ফোন ধরে সে বলল-বুঝছ গিন্নি,আমি কিন্তু মাঝে মাঝে রাতের বেলায় বিছানায় মুতি!! কাজিনরাই ফোন কেড়ে নিয়ে কেটে দিল!ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহ্বল!
তারপরের সিন! ছেলের পরিবার থেকে আংটি পড়ানোর তোড়জোড় চলছে!আমার বাবা মশাই গভীর চিন্তিত! তিনি আরো সময় চান!ছেলে পক্ষের কোন সমস্যা নেই! তারা বললেন- সময় নেন.. কিন্তু ছেলে মেয়ে তো মিট করতে পারে!ওরা নিজেদের জানুক..বুঝুক! নিমরাজি হয়েও বাবা পাঠালেন আামাকে রেস্টুরেন্টে মিট করতে! গেলাম!ছেলের সাথে যথারীতি সেই দুই কাজিন!আমাদের আলাদা টেবিলে দিয়ে ওরা পাশের টেবিলে বসল! ছেলে কিছু বলে না দেখে আমি কথা শুরু করলাম!
:কি খাবেন?
ছেলে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উগ্র মূর্তি ধারণ করে বলল – এত খাওয়া খাওয়া কর কেন?বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!স্টুপিড একটা! এরপরে তো আর কথা চলে না!চুপ করে বসে আছি! শেষ মেষ সেই কাজিনরাই অর্ডার দিল!খাবার আসলো! আর ছেলে হামলে পড়ল খেতে!আমি নড়িচড়ি না দেখে ওর কাজিনরাই আমাকে সার্ভ করলো! আমার সামনে থেকে আমার প্লেট টেনে নিয়ে সেটাও গোগ্রাসে গিলতে লাগলো! এভাবে বসে না থেকে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম!আসার সময় বিল টাও দিয়ে আসলাম!ঔ ছেলে দিয়ে ভরসা নাই.. আর কাজিন গুলা ছোট! বাসায় এসে ভূয়সী প্রশংসা করলাম!ছেলে অত্যন্ত ভালো! বাবা খুব একটা ভরসা পেলেন বলে মনে হলো না! বাবা ছেলে পক্ষের সাথে কথা বলে ছেলের সাথে একা মিট করতে চাইলেন!
পরদিন ছেলে একাই আসলো!দুই পায়ে দুই জুতা..শার্টের বোতাম উল্টা পাল্টা লাগানো..চশমার একটা গ্লাস ভাংগা..
বেশ দেখে আমার মজা সেই লেভেলের!! বাবা অবাক হয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন! বিড়বিড়িয়ে বললেন- হুম, যা ভাবছি তাই! ছেলে ঘাড় নাড়িয়ে বলল- হ ভাই.. হ! আমার বড়ভাই আর চুপ থাকতে পারল না!অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ছেলেকে মারতে গেল!তুই বের হ বাসা থেকে! ছেলে খপ করে আমার হাত ধরে বলা শুরু করল আমার বৌ আমি নিয়া যামু!আমার বৌ রেখে যাব না!বলে আমাকে টানতে শুরু করল!
মারাত্মক বিপদ! এমতাবস্থায় ছেলের বাবা মা প্রবেশ করলেন!ঘটনা দেখে তারা ফ্রিজ হয়ে গেলেন!ছেলের বাবা ধমক দিয়ে ছেলেকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেলেন! ছেলের মা আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলেন- যা ভাবতাছেন তা না!আমার ছেলে পাগল না! আমার বাবা ঠান্ডা গলায় শুধু বললেন- ছেলে নিয়ে বাসায় যান! বিকেলে চায়ের আসরে বাবাকে বললাম- আামর বিয়েটা কি তাহলে হবে না!!ছেলে তো খারাপ না! বাবা স্মিত হেসে শুধু বললেন- বিচ্ছু মেয়ে!যাও ঠিকমত পড়াশোনা করো! আমি এখনো সময় পেলে ভাবি- আমার হলেও হতে পারত জামাই টা এখন কোথায় আছে..কেমন আছে..??