মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। ছোট্ট একটা মোচর দিয়ে চোখ খুলতেই দেখি একদম মুখের সামনে আমার বউ তার বিখ্যাত মুখখানা রেখে তাকিয়ে আছে। ডিম লাইনের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার মুখ। আমি ভয় পেয়ে অমাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
এই তুমি এরকম লাফ দিয়া উঠলা কেন? (বউ) আমি বুঝলাম না মাঝরাতে আমার মুখের ঠিক সামনে এইভাবে মুখ রাখার কি দরকার। আমিতো ভয় পাইয়া গেছি। কেনন আমিকি তোমার মুখের সামনে মুখ রাতে পারিনা?(বউ) হ্যা রাখতে পারো। কিন্তু এই মাঝরাতে আমিতো ঘুমাচ্ছি। ঘুম ভেঙেই দেখি তোমার মুখ। প্রায় হার্ট এটার্ক খাইছিলাম। আচ্ছা বাদ দেও একটা গান গাও না। (বউ) মাথা খারাপ নাকি? এই মাঝরাতে গান মনে পড়ছে না আচ্ছা যা মনে পড়ছে তাই শুনাও প্লিজ। (বউ)
অকে,, “তুমি কার পোষা পাখি ট্যারা ট্যারা আখি ভূতের মতো দেখতে তোমার মুখ আমারে ভয় দেখাইয়া পাওকি সুখ” চোখ বন্ধ করে গানটা গেয়ে ফেললাম। বুঝতে পারছি এখন আমার কপালে আজাব আছে। তাই গান শেষ করে চোখ খুললাম না। আচমকা বউয়ের সাথে মাঝরাতে ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে। তাই বউয়ের ঝাড়িটা খাওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছি। খানিকটা সময় যাওয়ার পরও যখন বউয়ের কোনো রিয়েকশন পাচ্ছিলাম না চোখ খুললাম। একি! বউ কই? সামনে তো নাই। সাইডে তাকাই দেখি বউয়ের হাতে ঝাড়ু। আমার দিকে সত্যি সত্যি ভূতের মতো তাকিয়ে আছে, আমি ভূত! আমার চোখ ট্যারা ট্যারা?
আমি আর কথা বললাম না। খাটের অপর পাশদিয়ে নেমে এক দৌড়ে বাথরুমে। “এই বাথরুমে যাওয়ার পদ্ধতি অনেকদিন ধরে পালন করি। মিরাজ ভাইয়ের গল্পে পড়েছিলাম। তিনি বউয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাথরুমে অবতারণ করতেন। আমিও ইদানিং সেটাই শুরু করেছি।” বাইরে থেকে বউয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, তুই বের হ। ঝাড়ু দিয়ে বাইরাইয়া তোকে ঘর ছাড়া করবো। ওগো রাগ করছো কেন? কতো সুন্দর একটা গান গাইলাম। তবে যাইহোক, যাহা বলিয়া সত্য বলিয়াছি। (আমি) ওগো সত্যবাদী তুমি একটু বাথরুম থেকে বের হও। তোমায় একটু আদর করবো সোনা। (বউ) !না গো সোনা। কালকে আদর করো আজকে আর না। কেমন? (আমি)
বাইরে থেকে তোমাড় বেগে ঝড় আসতাছে বউয়ের। পরিবেশটা শান্ত করার জন্য ট্যাবে পানি ছেড়ে দিলাম। আর আমি চুপ হয়ে গেলাম। বউ ঘুমিয়ে গেলে আসতে করে গিয়ে শুয়ে পড়বো। ঘন্টাখানিক পড় মনে হলো চারিদিক শান্ত। এদিকে মশার কামড়ে বসে থাকা যাচ্ছে না। আস্তে করে দরজা খুলতে যাবো দেখি বাহির দিক থেকে ছিটকিনি দেওয়া। আজ আমি গেছি। বের হবো কিভাবে? এদিকে মশার অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছে না। একবার মনে হচ্ছে দরজায় জোড়ে লাথি মারি। কিন্তু এতো রাতেও লাথি মারা কি ঠিক হবে?
শান্ত কন্ঠে ডাক দিলাম, বউ ও বউউউ ওপাসে একদম নিরব। কোনো সারাশব্দ নেই। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। আবারো ডাক দিলাম। কিন্তু কোনো রেন্সপন্স নেই। কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম আমার ডাক শুনে শাকচুন্নিটা ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিছে। বাহ শালার বোন বাহ! এবার তো আমি ডাকলেও শুনবি না। নিজের অবগতির জন্যই হাইকমোডের ডাকনা মেরে ধীরাম করে বসে দুহাত দিয়ে মশা মারতে শুরু করে দিলাম। সকাল বেলা চোখ মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানায়। আহারে এর নামই বউ। রাতে নিশ্চই আমায় বাথরুম থেকে নিয়ে এসেছে বিছানায়। বিছানা ছাড়তে যাবো। তখনই খেয়াল করলাম আমি হাত পা নাড়াতে পারছি না। ওমা!! আমাকে বাধা হয়েছে। চিৎকার করে বউকে ডাকলাম। বউ ছুটে এসে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ওগো তোমার ঘুম ভেঙে গেছে?
রাগ তোর ঘুমের মায়েরে বাপ। আমারে বাধছে কে? আমি। নয়তো আর কে বাধবে? কার এতো বড় সাহস হবে আমার জামাইকে বাধার? আমিতো ওইটাই কই? তোমার জামাইকে তুমি বাধছো কে? কাল রাতের কথা ভুলে গেছো? কিন্তু আমি তো ভুলিনি। তাইতো শেষরাতে তোমায় বাথরুম থেকে নিয়ে এসে সুন্দর করে মনের মতো বেধেছি।
অবশেষে সন্ধায় আমায় বাধন মুক্ত করা হলো। সারাদিন এক গ্লাস পানিও দেওয়া হয়নি। সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো আমার মানিব্যাগ থেকে কার্ড উধাও। বাধন মুক্তকরেই বউ বললো, যাও রেডি হয়ে এসো। শপিং এ যাবো। আমি চুপচাপ রেডি হয়ে এলাম। এখন কথা বলা মনেই নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারা। অবশেষে শপিং শেষে রাত দশটায় আমায় খাবার দেওয়া হলো। মনে মনে বললাম, “রাত দুপুরে গান গাওয়া বিপজ্জনক জানতাম। তাই বলে এতোটা বিপজ্জনক!!!”