মোহরের টাকা নিয়ে পাত্রীর এক চাচাতো ভাই আপত্তি তুলেছে। তার দাবি, ‘মাত্র একলক্ষ বিশ হাজার টাকা কোনভাবেই মোহরের জন্য যথেষ্ট নয়। বিয়ে হতে হলে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা মোহর ধার্য করতে হবে।’ বিয়ের আসরে এরকম যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যে কাউকেই চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। ছোটভাই আতিক এসে বিষয়টি সম্বন্ধে আমাকে অবগত করলো। আতিকের কাছে কথাগুলো শোনার পর আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। বুঝে উঠতে পারছিলামনা কি করব। তখনি পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিলাম পাত্রীর ছোটভাই তায়েফকে। রিসিভ করলো ও। ওপাশ থেকে তায়েফ,
-জ্বী ভাই, বলুন! আমি,
-তুমি কোথায় এখন? তায়েফ,
-ঘরে। একটু সমস্যা হয়েছে। আমি,
-আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবা? মানে, এখন কি আমার কাছে আসতে পারবা? তায়েফ,
-আচ্ছা আসতেছি।
ও কেটে দিলো ফোনটা। আমাদের নেত্রকোনার গ্রামেগঞ্জে সাধারণত বিয়ের রীতি হলো, বরপক্ষ পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে যাবে। সেখানে বর ও কনের অভিভাবক ও গ্রামের মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে কাজী সাহেব বিয়ে পরাবেন। অতঃপর সবাই বর ও কনের দাম্পত্যজীবনের কল্যানে মোনাজাত করত ভোজনে মেতে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর তায়েফ আসলো৷ ওকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। পাশে বসিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে বলতো আমায়! তায়েফ,
-একজন চাচাতো ভাই আছেন৷ ঢাকায় থাকেন উনি। কাল রাতে এসেছেন। উনি মোহরের টাকা নিয়ে আপত্তি করেছেন। বলেছেন পাঁচ লক্ষ টাকা নাকি মোহর দিতে হবে। এটা নিয়েই কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আমি,
-আচ্ছা, আমাকে একটু ভেতরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে? আমার মুখে এমন কথা শুনে তায়েফ কিছুটা অবাক হলো। বললো,
-পারবো। তবে, ঘরে জিজ্ঞেস করে আসতে হবে। আমি,
-কাকে জিজ্ঞেস করবে? তায়েফ,
-মাকে। আমি,
-আচ্ছা ঠিক আছে। জিজ্ঞেস করে এসো। ও চলে গেলো। তায়েফদের বাবা নেই। ওরা দুই ভাইবোন। তায়েফ এবার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আতিক এবার আমাকে বললো,
-ভাই, তুমি ঠিক কি করতে চাইছো বলতো? আমি,
-একটু অপেক্ষা কর, তারপর দেখ কি করি। ওর চোখেমুখে কৌতুহলের ছাপ স্পষ্ট। ভাবতেই পারছেনা কিছুক্ষণ পর ঠিক কি হতে চলেছে। এবার তায়েফ আসলো। আমি,
-কি বলেছেন তোমার মা? তায়েফ,
-হ্যা, আপনি চাইলে এসে কথা বলতে পারেন।
কাজী সাহেবসহ অন্যান্য যারা ছিলো তাদেরকে রেখেই আতিককে নিয়ে আমি গেলাম তায়েফের সাথে। নিজের বিয়ের দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধেই। কিছুই করার নেই। আমাকে দেখে সবাই যেমন অবাক হলো তেমন মুহুর্তের মধ্যে জায়গাও খালি করে দিলো। বলতে, সবাই দূরে সরে দাঁড়ালো। সকলের উদ্দেশ্য সালাম দিলাম আমি। তারাও হাসিমুখে জবাব দিলেন। পুরুষ মানুষ নেই বললেই চলে। সবাই মেয়েলোক। চাচী শাশুড়ী, মামী শাশুড়ী থেকে শুরু করে আরো অনেকে। শালিকাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। অনেকেই তো আমাকে দেখে মনে হলো নজর দেয়াও শুরু করে দিয়েছে! ফিসফিস করে বলতে শুরু করে দিয়েছে, ‘তানহার বরটা দেখছি কত্তো কিউট! একেবারে গুলুমুলু!’ আরো কত কি। সবাই নিরব। অবশ্য, এধরণের পরিস্থিতিতে সবাই নিরবই হয়ে যায় শুধুমাত্র পরিণতি দেখার জন্য। সকলের নিরবতা ভেঙে দিয়ে আমি বললাম,
-বিয়ের কাজ যদি শেষ না করা হয় তাহলে কি করে কি হবে বলুন তো! আমাদেরও তো বাড়ি ফিরতে হবে নাকি।
আমার কথা শুনে ঢাকা ফেরত তায়েফের চাচাতো ভাই বেরিয়ে আসলেন। উনাকে এর আগে কখনো আমি দেখিনি। সালাম দিলাম আমি,
-আসসালামুআলাইকুম। উনি কোন জবাব দিলেননা। সরাসরি বললেন,
-ওহ, তাহলে আপনিই বর! তা, বিয়ে করতে এসেছেন অথচ এটা জানেননা যে, মোহরানা বেশি ধার্য করতে হয়? আমি,
-আসলে, ‘মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করা এখন আমাদের সমাজে সামাজিক ‘ঐতিহ্যে’ পরিণত হয়েছে। অতি ভালোবাসার ছলে কিংবা বাসরঘরের আনুষ্ঠানিকতার ছদ্মাবরণে ‘মোহর মাফ’ করে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।’ এটি বাঞ্ছনীয় নয়। আমাদের যার যেমন সামর্থ রয়েছে তেমনই মোহরানা ধার্য করা উচিৎ।
আমার কথাগুলো যেন উনার ভালো লাগেনি। এমন সময় তায়েফ এসে কানে ফিসফিস করে বললো, ‘ভাই, মা ফোনে কিছু বলতে চাইছেন আপনাকে। এখানে সবার সামনে আসতে পারবেননা। নিন, শুনে নিন!’ ওর কথা শুনে ওর থেকে ফোনটা হাতে নিলাম। সামনে উপস্থিত তায়েফের চাচাতো ভাইয়ের থেকে অনুমতি নিয়ে ফোনটা কানে লাগালাম। ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হবু শাশুড়ী মা বলতে লাগলেন,
-বাবা, তোমাকে মনে হয় আগেই সবকিছু খুলে বলা উচিৎ ছিলো। আসলে, তানহাকে বিয়ে করার জন্য ও পাগল ছিলো। কিন্ত আমার মেয়ে ওকে পছন্দ করতোনা। কখনোই না। এটি নিয়ে পারিবারিক নানান সমস্যাও হয়েছিলো আমাদের। বুঝতেই পারছো ও কেন আজ এমন করতেছে। আজ তানহার বাবা বেঁচে থাকলে এতকিছু হতোনা। এখন সব দায়িত্বই তোমার কাঁধে। তুমি সবকিছু সামলে নাও বাবা। আর পাড়ার মানুষ কিছু বলবেনা। সবাই শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখবে। কথাগুলো উনি বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। আমার যা বুঝার তা বুঝে নিয়েছি। এবার তায়েফের হাতে ফোনটা দিয়ে দিলাম। বললাম,
-বিয়ের মোহর এক লক্ষ বিশ হাজার টাকাই ধার্য করা হবে। আমার দৃঢ়কণ্ঠে এমন কথা শুনে রেগে গেলেন উনি। বললেন,
-না, এটা মানিনা আমি। আমি,
-আপনি মানেন বা না মানেন তাতে কিছু যায় আসেনা। পাত্রী নিজে যদি এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং সম্মতি হয় তাহলেই হবে। এবার আর কিছু বললেননা উনি। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি বললাম,
-দুজন ভেতরে যান এবং পাত্রীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন তিনি এতে রাজি কিনা।
কথামতো দুজন মহিলা ভেতরে গেলেন এবং জেনে এসে বললেন পাত্রী এতে সন্তুষ্ট এবং রাজি। তা দেখে ভদ্রলোক আরো ক্ষেপে গেলেন এবং এবার আমাকে পার্সোনালি এ্যাটাক করে বসলেন। তায়েফের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-ছি তায়েফ ছি, অবশেষে কিনা এরকম একটা ম্যানারলেস ছেলের কাছে বিয়ে দিচ্ছিস তোরা! কথাটি বলে উনি চলে যাচ্ছিলেন এমনসময় আমি আতিকের ঘাড়ে হাত রেখে বললাম,
-কিরে আতিক, কেউ সালাম দিলে যে তার জবাব দিতে হয় সেটাও জানিস না নাকি! নাকি এটা তোর ম্যানারের মধ্যে পরেনা? আতিক আমার কথা শুনে হেসে দিয়ে বললো,
-কি যে বলোনা ভাই। তুমিও না। ততক্ষণে সবাই যে যার কাজে চলে গেছে। মোহর ধার্য নিয়ে আর কোন ঝামেলা রইলোনা। এবার আতিক বললো,
-আচ্ছা ভাই, মোহরানা কেন এবং কি কি কারণে দিতে হয় বলতো আমায়! আমি,
-“পাঁচটি কারণে ইসলামী শরিয়ত নারীকে মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
১. মোহরানা স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও অনুরাগ প্রকাশের একটি মাধ্যম। স্ত্রী তাঁর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে স্বামীর ঘরে আসেন। এই কঠিনতম ত্যাগ স্বীকার করে তিনি আসেন অতিথির বেশে। তাই ইসলামী শরিয়ত মোহরানা ও বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে এই অতিথিকে বরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই মোহরানা যে এক ধরনের উপঢৌকন এবং সেটা সন্তুষ্টচিত্তে দিতে হয়, সে বিষয়টি কোরআনের ভাষায়, ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করো…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)
২. মোহরানা নারীর সৌন্দর্য, মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে। কেননা অর্থকড়ি পার্থিব জীবনের শোভা ও সৌন্দর্যের পরিচায়ক। ইরশাদ হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের শোভা…।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)
৩. ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ একটি চুক্তি। ইসলাম এই চুক্তির শর্ত হিসেবে অর্থ দেওয়ার কথা বলেছে। কেননা অর্থবিনিময় চুক্তিকে সুদৃঢ় করে। কিন্তু ইসলামে স্ত্রীর কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়টিকে এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে স্থির করা হয়নি। তাই বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীর কাছ থেকে দৈহিকভাবে উপকৃত না হয়েও যদি কেউ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, তবু মোহরানার অধিকার বলবৎ থাকে। কেননা পুরুষ সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। তবে পুরুষ যেন সবদিক থেকে বঞ্চিত না হন, সে কথা বিবেচনা করে ইসলাম চুক্তিকৃত মোহরানার অর্ধেক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি তাদের স্পর্শ করার আগে তালাক দাও অথচ মোহরানা ধার্য করে থাক, তাহলে যা তোমরা ধার্য করেছ, তার অর্ধেক (আদায় করবে)…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৭)
৪. ইসলাম পরিবার ও পারিবারিক জীবনকে একটি প্রতিষ্ঠান কল্পনা করে। দুটি কারণে ইসলাম সেই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এক. পুরুষ নারীর অর্থ ব্যয় করে থাকেন, যদিও নারী বিত্তবান হন। দুই. বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তা ও দৈহিক শক্তিমত্তা। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে ইসলাম পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব স্বামী তথা পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এ বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য এমন : ‘পুরুষ নারীদের ওপর দায়িত্বশীল। কেননা আল্লাহ তাদের একজনকে অন্যজনের ওপর (সৃষ্টিগতভাবে) শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)
কিন্তু ইসলাম একদিকে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টিকে সামনে এনে পুরুষের ওপর পরিবারের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেছে, অন্যদিকে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানে মর্যাদায় ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে নারীর জন্য একটি বিশাল অ্যামাউন্ট বরাদ্দ করে নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছে। ইসলামের ভাষায় এটাকে মোহরানা বলা হয়।
৫. ইসলামী শরিয়তে মানুষের প্রতিটি অঙ্গের একটি আর্থিক মূল্য আছে, যদিও মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ অমূল্য সম্পদ। তথাপি জাগতিক নিয়মে কেউ কারো অঙ্গহানি করলে এর বিনিময় প্রদান জরুরি। আর বিবাহের মাধ্যমে যেহেতু পুরুষের মাধ্যমে নারীর এক ধরনের অঙ্গহানি হয়, তাই ইসলামী শরিয়ত এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘…সুতরাং তাদের অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করবে এবং ন্যায়সংগতভাবে তাদের প্রতিমূল্য (মোহরানা) আদায় করবে…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৫) এ আয়াতের শব্দচয়ন থেকে বোঝা যায়, মোহরানা নারীর প্রাপ্য ও অধিকার। এর একটি বিনিময় মূল্য রয়েছে। এটি নারীর অধিকার। ছলে-বলে-কৌশলে কিছুতেই নারীকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।” আতিককে কথাগুলো বলতে বলতে আগের জায়গায় চলে এলাম যেখানে কিনা আমাদের বরপক্ষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এরপর আর কোন অসুবিধা হলোনা। সুষ্ঠুভাবেই বিয়ের বাকি সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। রাত দশটার দিকে বাসর ঘরে ঢুকার আমন্ত্রণ জানালো একটি টিম। টিম বলার কারণ হলো, ছোটবোন শান্তা, জেরিনসহ আরো কজন কি যেন কেনাকাটা করবে বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলো। আমিও সাদা মনে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর আতিকের থেকে জানতে পারি সেই টাকা দিয়ে নাকি ওরা কাঁচা ফুল কিনিয়ে এনেছে। আর এখন, এখন তাদের আবদার হলো, বাসর ঘর সাজানোর জন্য তাদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে এবং খাটতে হয়েছে। আর সেসবের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তারপর নাকি আমার বাসর ঘরে ঢুকতে হবে! যদিও আমার মাথায় আছে যে ওরা কৈ এর তৈলে কৈ ভাজতেছে। তথাপি, দুহাজার টাকা দিয়ে বিষয়টির দফারফা করে নিলাম। কারণ, ওদের ভাই তো আর প্রতিদিন বিয়ে করবেনা। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে না হয় কিছুটা মাস্তি করেই নিলো। আমাকে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা আটকে দিলো ওরা। যে রিয়াদ কখনো কারোর সামনে লজ্জা পায়না সেও আজ লজ্জা পাচ্ছে! ভাবা যায়! নিজেকে সামলে নিলাম আমি। সালাম দিলাম,
-আসসালামুআলাইকুম। মৃদুস্বরে তানহা উত্তর দিলো,
-ওয়ালাইকুমুসসালাম। বিছানায় বসে আছে ও। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে। বললাম,
-খাওয়াদাওয়া করেছ? তানহা,
-জ্বী। আপনি? আমি,
-হ্যা। তা কেমন লাগলো আমাদের বাড়ির পরিবেশ? তানহা,
-আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আমি,
-ননদ-ননদী, শাশুড়ী তাদের? তানহা,
-জ্বী, উনারাও খুব ভালো। এবার আমি দেনমোহরের এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-এই নাও, এটা রাখো। আজ থেকে এর একক মালিক তুমি। তুমি এই টাকা যেভাবে আর যখন খুশি খরচ করতে পারবে। এর উপর আমার কোন অধিকার নেই। তানহা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কিন্ত, টাকাটা এখনই দিচ্ছেন কেন? আর মোহর আদায়ে আপনি এত সিরিয়াস কেন? আমি,
-কারণ, মোহর হলো স্বামীর কাছে স্ত্রীর হক তথা অধিকার। এটি আদায় না করে তোমাকে স্পর্শ করলেও আমার পাপ হবে। মেলামেশা করলে তাতেও। আর সেই মেলামেশায় যদি সন্তানও জন্ম হয় তবে সেও হবে অবৈধ! কারণ, ‘যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদীস শরীফে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩) কথাগুলো শোনার পর তানহা একেবারে কেঁদেই ফেললো। টাকাগুলো রেখে উঠে এসে স্ব জোরে জড়িয়ে ধরলো আমায়। কান্নাভেজা স্বরে বলতে লাগলো,
-জানেন, আমার বাবা বলতেন, আমার স্বামী নাকি খুব ভালো হবে। আমাকে নাকি রাজ রাণীর মতো করে রাখবেন। বাবা, সবসময় একথা বলতেন আর দোয়া করতেন আমার জন্য। আল্লাহ্ তাঁকে বেসেহশ নসীব করুন। আজ যেন আমি আমার বাবার বলা প্রতিটি কথার বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। সত্যি, আমি বড়ই ভাগ্যবতী।