দুপুর প্রায় ২ টা বাজে। চায়ের দোকানে বসে আছে শিহাব। এসময় সাধারণত সবাই লাঞ্চ করে। কিন্তু শিহাব প্রতিদিন এসময় এই চায়ের দোকানে বসে বসে চা খায়। ওর চা খাওয়ার ধরণটা আলাদা। এক হাতে এক কাপ দুধ চা,অন্য হাতে দুধ ছাড়া চা। এক চুমুক দুধ চা খেলে পরের চুমুক খায় দুধ ছাড়া চা।দোকানদার তার এ অভ্যাসের সাথে পরিচিত। অন্য কেউ দোকানে থাকলে শিহাবের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শিহাব তাতে কিছু মনে করে না। কিছুক্ষণ পর পর ঘড়ি দেখে। ঘড়িও দুই হাতে দুইটা। একটা বেল্টের অন্যটা চেইনের। বন্ধুরা তার এসব অভ্যাসের জন্য তাকে “সব্যসাচী শিহাব” ডাকে।
চা টা শেষ করে উঠে দাড়ালো শিহাব। এখন নীহা চলে আসবে। পাশে রাখা পাটের ব্যাগটার মুখের বাঁধন খুললো। ভিতরে আস্তে আস্তে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলো ধবধবে সাদা খরগোশের বাচ্চা। বাচ্চাটা একটা বেতের ঝুড়িতে রাখা। ঝুড়িটা হাতে নিয়ে রাস্তার ধারে দাড়ালো। সামান্য দূরে নীহাকে দেখা যাচ্ছে। রিক্সাতে বসে বসে মোবাইল টিপছে। রিক্সা কাছাকাছি আসতেই রাস্তায় এসে দাড়ালো শিহাব। রিক্সা থামালো। নীহা বিরক্তি ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে। শিহাব মুখ খুললো-
:কেমন আছো নীহা?
:আচ্ছা আপনার কী কোনো কাজ নাই। সারাদিন এখানে দাড়াই থাকেন কেনো?
:কে বল্লো সারাদিন দাড়াই থাকি?২ টা থেকে তুমি আসার আগ পর্যন্ত দাড়াই থাকি।২ টার আগে কাজ করি আবার তুমি যাওয়ার পর কাজ করি।
:ওহ।আপনি কাজও করেন?তা কী কাজ করেন?
:আগে মাটি কাটতাম। কিন্তু বুঝলাম ওতে সংসার চালানো যাবে না। এখন রাজমিস্ত্রি পেশায় ঢুকছি।
:আমাকে কী আপনার বোকা মেয়ে মনে হয় যে ভার্সিটির ক্লাস ফাকি দিয়ে এখানে এসে রাজমিস্ত্রির গল্প শুনান?
:না। বোকা ভাববো কেনো!!বোকা মেয়ে আমার পছন্দ না। তুমি বোকা হলে এখানে তোমার জন্য গিফট নিয়ে দাড়াই থাকতাম না।
:বাহ!!গিফট আনছেন। এই খরগোশের বাচ্চা আমার জন্য?
:হ্যা তোমার জন্য।
:আপনি না সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় করেন। তাইলে বাচ্চা একটা কেনো?
:আচ্ছা এখন যাও। কাল এক জোড়া নিয়ে আসবো। বলেই হাটা ধরলো শিহাব। ঝুড়ি হাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব। নীহা আসছে রিক্সায় করে। সামনে আসার পর শিহাব বললো-
:কেমন আছো নীহা?
:এতক্ষণ ভালো ছিলাম। এখন ভালো নাই।
:ওহ। কেনো?
:আচ্ছা আপনি কী জানেন আমার পরিবারের সবাই আপনাকে বখাটে ভাবে?
:না। উনারা যা ইচ্ছা ভাবুক। তুমি কী ভাবো সেটা মূল কথা।
:আমি কী আমার পরিবারের বাইরে?
:না। আচ্ছা বাদ দাও। এই নাও গিফট।
:এখানে একটা খরগোশের বাচ্চা অন্যটা বিড়ালের বাচ্চা কেনো?
:কারণ আমার জোড়া সবসময় ভিন্ন হয়।
:ওহ।আচ্ছা আপনি কী সিগারেট খান?
:না। কেনো?
:না ভাবছিলাম কেউ যদি দুই হাতে দুইটা সিগারেট নিয়ে খায় কেমন লাগবে।
:ওও।আচ্ছা আমি যাই। এই নাও গিফট।
:এটা আমি নিতে পারবো না।
:কেনো?
:আপনার কাছ থেকে আমি গিফট নিবো কেনো?
:তাও ঠিক। আচ্ছা এই নাও ঝুড়িটা ধরো। সামনে কবরস্থানের পাশে এগুলো ফেলে চলে যেও।
কথাগুলো বলেই হাটা ধরলো শিহাব। পেছন থেকে নীহার ডাক পাত্তাই দিলো না। চা খেয়ে দোকান থেকে দুইটা সিগারেট কিনে জ্বালালো শিহাব। একটা ব্যানসন এন্ড হ্যাজেজ(B&H) ব্র্যান্ডের,অন্যটা ডার্বি ব্র্যান্ডের।জ্বলন্ত সিগারেট দুটো হাতে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। সিগারেটে টান দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। নীহাকে দেখা যাচ্ছে। আজ নীল ড্রেস পরেছে। এই ড্রেসে পরীর মত লাগছে তাকে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে শিহাব। আজ পাশে এসে নীহাই প্রথম কথা বললো।
:কাল ডাকছিলাম যে শুনেন নাই?
:ওওও।
:ও কী?দার্শনিকের মত ভাব নিচ্ছেন?
:না।
:হাতে সিগারেট কেনো?
:কাল না তুমি বললে দুই হাতে দুইটা সিগারেট দেখতে কেমন লাগে সেটা দেখবা।
:আমি বলছি সিগারেট খাওয়া অবস্থায় দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। হাতে নিয়ে দাঁড়াই থাকা অবস্থায় না।মুখে লাগাইয়া টান দেন। দেখি।
:অতি রুপবতীদের সামনে সিগারেট খাওয়া উচিত না। এতে রুপবতীদের অপমান হয়। আর রুপবতীদের অপমান মানে প্রকৃতির অপমান।
:হুমায়ুন আহমেদ ভাবেন নিজেকে?আর আমি বললে সব খাবেন?
:না। হুমায়ুন আহমেদের অতি ক্ষুদ্র ভক্ত ভাবি নিজেকে।আর তুমি বললে অবশ্যই সব খাবো।তুমি যদি বলো তাইলে একজোড়া তেলাপোকা কচকচ করে চাবাইয়া খেয়ে ফেলবো। একটা মেয়ে তেলাপোকা অন্যটা ছেলে তেলাপোকা।
:আপ্নে এত খবিস কেনো?
:আচ্ছা আমি এখন যাই।
:এই শুনেন। ফাইজলামি করেন?আপনার যখন ইচ্ছা চলে যাবেন?রিক্সায় উঠেন।
:কী?
:বলছি রিক্সায় উঠেন। কথা আছে।
:কী কথা?
:রিক্সায় উঠেন আগে। তারপর বলবো। শিহাব ইতস্ততভাবে রিক্সায় উঠে পড়লো।কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর শিহাব নিজেই নীরবতা ভাঙ্গলো-
:কী কথা বলবে?
:আপ্নে সব জোড়ায় জোড়ায় করেন কেনো?
:মনে নাই। ছোটবেলা থেকেই এরকম।
:ওও। তাইলে তো আপ্নে বিয়াও একজোড়া করবেন তাই না?
: না না। ২য় বিবাহ করতে হলে তো ১ম বৌয়ের অনুমতি লাগে। তুমি অনুমতি না দিলেই হলো?
:মানে??আপনার ১ম বৌয়ের সাথে আমার সম্পর্ক কী??
:না….তেমন কিছু না।
:নামেন রিক্সা থেকে। এক্ষণ নামেন।
:এই মাঝরাস্তায় কই নামবো?
:নামতে বলছি না?নামেন।
:আচ্ছা। নামছি। রিক্সা থেকে নেমে হাটা ধরলো শিহাব। পেছন থেকে নীহার ডাক শুনে ফিরে তাকালো।
:কী হলো। এখন ডাকো কেনো আবার?
:কাল থেকে হাতে যেনো আর সিগারেট না দেখি,ডানহাতে যেনো কাল থেকে ঘড়ি না থাকে।
:আর কিছু?
:হাতে সিগারেটের বদলে একটা কদম ফুল থাকলেই চলবে।